ভারত ভ্রমণের গল্প-৭

নিতাই বাবু ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩০:১০অপরাহ্ন ভ্রমণ ৫ মন্তব্য

পর্ব-৬'এর শেষাংশ: হোটেল থেকে বাইর হয়ে রমেশ কানাইকে জিজ্ঞেস করলো, এবার কোথায় যাবি? কানাই বলল, ‘জীবনে তো হাওড়া ব্রিজ নাম শুনেছিস, এবার দেখে যা বাস্তবে।’
সেখান থেকে ট্রামে চড়ে গেলো হাওড়া।

পর্ব-৭ আরম্ভ:

ট্রাম থেকে নেমে হাওড়া ব্রিজের সামনে দিয়েই, দুইজনে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। ব্রিজে ওঠতেই রমেশের চোখে পড়ল, ব্রিজে লাগানো একটা সাইনবোর্ডের দিকে। সাইনবের্ডে লেখা আছে, এই ব্রিজটির নির্মাণকাল ও কিছু নির্দেশনা। ব্রিজটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রক্ষার জন্যও জনগণের প্রতি অনুরোধ করে লেখা।

হাওড়া ব্রিজটি উনিশ শতকের অন্যতম নিদর্শনের একটি। এটি হুগলি নদীর উপর অবস্থিত। এটি কলকাতা ও হুগলি শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতু। এই হাওড়া ব্রিজ ছাড়াও হুগলি নদির উপর আরও ব্রিজ আছে। সেগুলির মধ্যে এই হাওড়া ব্রিজ হলো অন্যতম। এটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে একমাত্র ভাসমান সেতু। ব্রিজটি সম্পূর্ণ লোহার এঙ্গেল ও নাট-বল্টু দ্বারা তৈরি। এর মাঝখানে কোনও পিলার বা খুঁটি নাই। দেখে কারোর মনে হবে, এটি যেন মাধ্যাকর্ষণের শক্তিতে ঝুলেছে। ব্রিজটি নির্মাণের পর একবার এক স্টিমারের নোঙর ছিঁড়ে ব্রিজের সাথে সংঘর্ষ হয়। এর ফলে ব্রিজটির মাঝখানের বেশকিছু অংশ বিধ্বস্ত হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করে, যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এই হাওড়া ব্রিজটির বিজ্ঞপ্তি নোটিশে লেখা আছে, ব্রিজটি ১,৫২৮ ফুট দীর্ঘ। এর প্রশস্ত লেখা না থাকলেও বোঝা যায়, ব্রিজটি প্রশস্ত ৫০ থেকে ৬০ ফুট হবে। ব্রিজটির মাঝখানে আছে যানবাহন চলাচলের জায়গা। দুই পাশে মানুষ চলাচলের জন্য ৬ থেকে ৭ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। ব্রজিটিতে তখন কোনও ভারি যানবাহন চলাচল করে না, আর ব্রিজ নিরাপত্তারক্ষীরা করতে দেয়ও না। এর মূল কারণ হল, ব্রিজটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তাই। এটি কোনও একসময় বিধ্বস্ত হয়ে যাবে ভেবে, ভারত সরকার ব্রিজটির পাশে আরেকটি ব্রিজ তৈরি করে রাখে। সেই ব্রিজটি ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে নামকরণ করা হয়। ব্রিজটির নাম- বিদ্যাসাগর সেতু। হাওড়া ব্রিজ থেকে একটু ডানদিকে তাকালেই বিদ্যাসাগর সেতুটি দেখা যায়।

কানাই বলল, ‘তোকে যদি রাতের বেলা এখানে আনতে পারতাম, তা হলে আরও ভালো লাগত। এখানে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগর সেতু যেভাবে দেখছিস, রাতে আরও সুন্দর দেখায়। তখন মনে হয় না যে, আমরা ভারত আছি। মনে হয় ইউরোপের কোনও এক শহরে দাঁড়িয়ে আছি!’

দেখা হলো হাওড়া ব্রিজ। পায়ে হেঁটে দুইজনে গেল ওপারে। আবার শুরু হলো পায়ে হেঁটে এপারে আসার পালা। তখন সূর্যটা ডুববে ডুববে মনে হচ্ছিল রমেশের কাছে। রমেশ ভাবছিল, আরেকটু দেরী করে রাতের সৌন্দর্যটা উপভোগ করি। কিন্তু তা আর হল না কানাইর জন্য। ও রমেশকে সিনেমা দেখাবে, তাই তাড়াতাড়ি করে ট্রামে ওঠল। যাবো টালিগঞ্জ। ছায়াছবি দেখা হবে, মেনকা সিনেমা-হলে। সিনামা দেখবো রাত্রিকালীন শো। শো আরম্ভ হবে রাত ৯ টায়, শেষ হবে রাত ১২টায়। ছায়াছবি ‘বাজিগর’ নায়ক শাহরুখ খান, নায়িকা কাজল।

ভারতের সিনেমা-হলে বসে বড় পর্দায় সিনেমা। ভারতের প্রত্যেক মানুষই সিনেমা প্রেমী। আবার সেখানকার মানুষ খুবই সংস্কৃতি প্রিয়। একবেলা খাবার না খেয়ে, সেই টাকা দিয়ে তারা সিনেমা দেখবে। এমনও পরিবার দেখা যায়, তাদের রান্না-বান্না চলে পাথর-কয়লা দিয়ে। সেই কয়লা থেকে একটুকরা দুইটুকরা করে কয়লা প্রতিদিন রেখে দেয়। যখন একদিন রান্না করার মত কয়লা হয়, তখন গৃহিণী তার স্বামীর কাছ থেকে সেই কয়লার টাকা আদায় করে নেয়।

পরে সেই টাকা দিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী দুইজনে গিয়ে সিনেমা দেখে। যেদিন সিনেমা দেখবে, সেদিন ঘরে ফিরে আর রান্না-বান্না করবে না। সিনেমা দেখে আসার সময় কিছু চানাচুর বা বিস্কুট সাথে নিয়ে এসে তা-ই খেয়ে থাকবে। তবু সিনেমা দেখা চাই-ই চাই। এ ছাড়াও যেকোন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে-দলে যোগদান করে থাকে। যেমন- যাত্রাপালা, লোকনাট্য, থিয়েটার, কবিগান সহ নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। আর বাংলাদেশে বর্তমানে সিনেমা হলে তো কেউ যায় ই না। বহু জাগায় দর্শক সংকটে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সিনেমা দেখে সেদিন বাসায় ফিরতে রমাশদের রাত হয়েছিল প্রায় দেড়টা। কানাই আগেই জানত যে, এত রাতে বাসায় গেলে বাড়িওয়ালার ঘর বন্ধ থাকবে। তাই সিনেমা দেখে আসার সময়ই দুইটা পাউরুটি কিনেছিল। বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে একটা পাউরুটি খেয়ে রমেশ বিছানায় গেল শুতে। কিন্তু কিছুতেই রমেশের ঘুম আসছে না, মনটা কেমন যেন ছটফট করছে। রমেশের মনে পড়ছে, স্ত্রী ও সন্তানের কথা আর দাদা বৌদির কথা। আবার ভাবছে নিজের পকেটের কথাও। ভাবছে যেখানে যাবে সেখানকার কথা। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরির মধ্যে রমেশের বেশকিছু টাকা খরচও হয়ে গেল। পকেট শূন্য হয়ে গেলে কানাই যদি সহযোগিতা না করে? হয়ত করবে। তা-ও  ক’দিন করবে, ওরও তো এখানে একটা সংসারের মতো আছে। যদিও বিয়ে সাদি এখনও করেনি, তাতে কী হয়েছে? দুইটা বোন তো সাথে আছে। রমেশকে একা বাসায় রেখে কানাই কোনও কাজে কর্মেও যেতে পারছে না। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে রমেশ ঘুমিয়ে পড়ল, তা রমেশ নিজেও জানে না।

এভাবে কানাইর ওখানে ঘুরাঘুরি করতে করতে কেটে গেল ৪/৫দিন। ছ’দিনের মাথায় কানাই বলল, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় নিয়ে রেডি হয়ে নে, ফুলিয়া যাবো। কানাইর কথা শুনে রমেশ জামাকাপড় ব্যাগের ভেতরে ভরে প্রস্তুত। রমেশ বাড়িওয়ালার ঘরে গিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। কানাইর দুবোনকে বলল, এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসেছিস, ভালোভাবে চলাফেরা করবি। এমনভাবে চলবি, যাতে অন্য কেহ কোনও খারাপ মন্তব্য না করতে পারে। এরমধেই কানাই রেডি হয়ে রমেশকে ডাকল। রমেশ কানাইর সামনে এসে বলল, আমি রেডি আছি, চল বাইর হই।

চলবে...

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ