বয়কট বলিউড আন্দোলন

ফারজানা তৈয়ূব ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার, ০৯:৩৮:২৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১২ মন্তব্য
  • সারা পৃথিবী জুড়ে যত মুভি তৈরি হয় তার মধ্যে ১ নাম্বারে অবস্থান করছে হলিউড মুভি।তারপরে যে মুভি ইন্ডাস্ট্রির কথা বলা হয় সেটা হলো বলিউড মুভি। কিন্তু হঠাৎ করে নেটিজেনরা নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য হচ্ছে। গত ২৭ মাস ধরে বলিউড মুভির আকাল শুরু হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ১৫ হাজার কোটি রুপি লোকশান গুনেছে।সবাই ভেবেছিল করোনার কারণে   মনে হয় এই পরিস্থিতি। কিন্তু সকলের ধারণাকে ভুল প্রমানিত করে করোনা পরর্বতী সকল মুভি বক্স অফিসে চরমভাবে মুখথুবড়ে পড়ছে।
  • এই অবস্থার আসল কারণ জানতে ঘুরে দেখতে হবে ২৭ মাস আগে।কি ঘটেছিল?২০২০ সালের ১৪ জুন দুপুর ১২.৩০ মিনিট। ভারতীয় গণমাধ্যমে এক বলিউড অভিনেতার মৃত্যু সংবাদ প্রচার কতে লাগলো।সেদিনকার প্রতিটা চ্যানেল একই খবর প্রচার করে চলেছে। যার মৃত্যুর খবরে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো তিনি ভারতের হার্টথ্র‍্যব নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুত। তিনি ভারতের যুবকদের কাছে  ইউথ আইকন ছিলেন । প্রচন্ড বুদ্ধিদীপ্ত এবং আত্মবিশ্বাসী এক যুবক।তিনি নাকি তার বান্দ্র‍্যার মাউন্ট ব্ল্যান্ক এপার্টমেন্টে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। সারা দুনিয়া স্তব্ধ হয়ে গেলো মুহূর্তে।এতোটায় প্রতিভাবান ছিলেন তিনি একই সাথে দুই হাতে লিখতে পারতেন। ২০০৩ সালের অল ইন্ডিয়া ইন্জিনিয়ারিং এক্সামে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। পরে দিল্লি কলেজ অব ইন্জিনিয়ারিং এ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হন।প্রচুর বই পড়তে ভালোবাসতেন তিনি।ভক্তদের জন্য  বুকক্লাব খুলেছিলেন।সেখানে প্রতিদিন নতুন নতুন বইয়ের রিভিউ দিতেন। বিশ্বের নামীদামী গাড়ির কালেকশন ছিল তাঁর দখলে।পৃথিবীর সবচেয়ে দামী টেলিস্কোপ কিনেছিলেন মহাকাশের তারা,নক্ষত্র দেখার জন্য। বিজ্ঞানের প্রতি তার প্রচন্ড ঝোঁক ছিল।,চাঁদে নিজের নামে জমি কিনেছিলেন। শোনা যায় করোনা নিয়ে গবেষণা করে এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন যেটার সামনে দাঁড়ালেই যন্ত্র বলে দিতে পারবে আপনার করোনা হয়েছে কিনা।শিশুদের জন্য মজার মজার কিছু গেইম বানিয়েছিলেন যেগুলো প্রকাশ করার আগেই তিনি চলে গেলেন। শিশুদের তিনি খুব ভালোবাসতেন।চকলেট আর আইসক্রিম খেতে ভালোবাসতেন। দু'হাতে মানুষের জন্য দান করতেন। কেরালার পানির সমস্যা নিরসনে ১.২৫ কোটি রুপি দান করেছিলেন এক ভক্তের অনুরোধে।  এছাড়া নাগাল্যান্ডের বন্যা কবলিতদের জন্য ১ কোটি রুপি দান করেছিলেন।এসব তথ্য তাঁর মৃত্যুর পরে এই দুই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্র‍্যীরা জানিয়েছিলেন।তার সবগুলো মুভি ব্যবসা সফল ছিল। কাই পুুচে, এমএসধোনি,ছিচোড়ে, পিকে,কেদারনাথ,দিলবেচারা,শুদ্ধ দেশি রোমান্স  সহ সব মুভিই ব্যবসাসফল হয়েছিল। জ্বী টিভির জনপ্রিয় ধারাবাহিক পবিত্র রিস্তা সিরিয়ালে মানব দেশমুখ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। এই চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সেরা টিভি নায়কের এওয়ার্ড জিতেছিলেন। এমএস ধোনি মুভির জন্য সেরা নায়কের পুরষ্কার পেয়েছিলেন।তিনি বলতেন, ভালো অভিনেতা হওয়া খুবই কঠিন কাজ,আর তার চেয়েও বেশি কঠিন কাজ ভালো মানুষ হওয়া।আমি দুটো হতে চাই এই জায়গা ছেড়ে যাবার আগে। তাঁর বেডরুমে একটা কফিন ছিল  সেটাতে তার পাওয়া যাবতীয় উপহার ফিল্ম ফেয়ার  এওয়ার্ড  রেখে দিতেন যাতে তার মধ্যে কোনো অহংকারের জন্ম না হয়। ১০০ ভারতীয় স্কুল শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ নিজ খরচে ট্রেনিং দিতে নাসা'তে পাঠিয়েছিলেন ।তিনি ভগবান শিবের ভক্ত ছিলেন।প্রতিনিয়ত পূজা অর্চনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় তিনি প্রচন্ড প্রচার বিমুখ মানুষ ছিলেন। নীতিতে ছিলেন অটল। তার এতোসব গুণাবলি তার সহকর্মীদের কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলা হতো।হেনস্তা করা হতো।এগুলো তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিনিয়ম মিডিয়ায় এসব খবর আসতে থাকে। তিনি নায়ক শাহরুখ খানের ভক্ত ছিলেন।
  • কেউ মেনে নিতে পারলোনা। পরেরদিনই দলে দলে মানুষ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে এলো।তাদের একটা দাবি সুশান্তকে ন্যায়বিচার দিতে হবে। কারন তারা দাবি করলো সুশান্ত হত্যা করা হয়েছে। মিডিয়ায় যে বিছানায় পরে থাকা মরদেহের ছবি প্রকাশিত হলো তাতে ফাঁসি কোনো আলামত নেই। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল এটা হত্যা।সবচেয়ে অবাক করা বিষয় তাঁর এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কোনো সহকর্মী একটা টু শব্দ করলোনা। কোনোরকম প্রতিবাদ কেউ করলোনা। কিন্তু সাধারণ মানুষ বলিউডের বিরুদ্ধে কঠিনভাবে এই ঘটনার জবাব দিলো।ভারত সরকার দিল্লির একটা রাস্তা  এবং বিহারের একটা রাস্তার নামকরণ করা হয়"সুশান্ত সিং রাজপুত "সড়ক।এছাড়া কেদারনাথ পাহাড়ের একটা নিদিষ্ট জায়গার নামকরণ করা হয় সুশান্ত সিং রাজপুতের নাম।সারা ভারতজুড়ে এখন দাবি উঠেছে সুশান্ত সিং রাজপুতের নামে একটা নতুন ফিল্মসিটি তৈরি করতে হবে যেটাতে যোগ্য লোকজনই কাজ করার সুযোগ পাবে।
  • সারা পৃথিবীতে তার ন্যায়বিচারের দাবিতে  সোচ্চার  হয়ে গেলো।যে ঘটনা কখনোই ঘটেনি।আলাদা আলাদা শহর থেকে বিচারের দাবি জানাতে লাগলো কোটি কোটি মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয়ে উঠলো।বলিউডের নোংরা চেহারা একের পর এক বেরিয়ে আসতে লাগলো।নেপোটিজমের আখড়া বলিউড ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রি। এখানে আউট সাইডারকে কোনোরকম সুযোগ দিতে কেউ রাজি নয়।সারা পৃথিবী জুড়ে ছিহ ছিহ আর ধিক্কারের মধ্যে পড়লো বলিউড। যার পরিনতি আজকের বয়কট বলিউড আন্দোলন।

অনেক ফিল্ম সমালোচক  বলেছিলেন করোনা কাটলে বয়কট বলিউড আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সবার সব হিসাব নিকাশকে ভুল প্রমাণিত করে দিনে দিনে বয়কট বলিউড আন্দোলন আরো জোরালো হচ্ছে।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ