বোবা ভাষা (পর্ব-০১)

এস.জেড বাবু ১৭ জুন ২০২০, বুধবার, ০১:১০:৪৯অপরাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

দিবা-নিশি কল্পনায় আল্পনায় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কথা আর অনুভুতি কখনো ভালোলাগার মানুষটার সামনে কথায় কথায় পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায়?

আসলে কখনো মনের মানুষটাকে চিঠি লিখে বা এসএমএস পাঠিয়ে কেউ পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেনা যে তাকে সে কতটা ভালোবাসে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তর না হবে। কারণ- ভালোবাসার সব রকম অনুভুতি বহিঃপ্রকাশ এর ক্ষেত্রে লিখা বা বলার জন্য প্রয়োজনিয় শব্দভান্ডার কোন প্রচলিত ভাষার দখলে নেই।

হৃদয়ের অনিয়ন্ত্রিত একান্ত অনুভুতিগুলোর শব্দগত প্রকাশ এর সীমারেখা অতি অল্প। যেসব কথা বর্ণে বা উচ্চারণে প্রকাশ করা যায় না তা প্রকাশ করার অনণ্য কৌশল হচ্ছে “বোবা ভাষা”।

শারিরীক অঙ্গভঙ্গি, তোতলামো, চালচলন, অস্থিরতা বা অতিরিক্ত স্ব- স্বভাব বিরুদ্ধ নিরবতা হলো বোবা ভাষা, যে ভাষার সাধারণত কোনও অর্থ না থাকলেও- মনের মানুষেরা সত্যি সত্যিই সে ভাষায় প্রকাশিত কথা ভাবসম্প্রসারণ সহই বুঝে।

‘চোখ যে মনের কথা বলে’- এখানে চোখ ইশারায় যা বলে সেটাও একরকম বোবা ভাষা। কখনো ভিষণ ভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করে চোখ, চোখের চাহনি, পিটপিট পাঁপড়ি। চোখের জলও ভালোবাসা প্রকাশ করে। আবার চোখের জল ভালোবাসা আদায় ও করে।

এমন অনেকেই আছেন যাদের মুখের চেয়ে চোখ বেশি কথা বলে। বিশেষ করে নারীরা। তারা অতি আপনজনের সামনে অঙ্গভঙ্গি আর ইশারায় হাজারো কথা বলে। আমার হিসেবে সে নারী বিশেষ সৌভাগ্যবতী হয় যাদের আপনজন এই বোবা ভাষায় চোখের কথার মর্মার্থ বুঝে।

তেমন মেয়েদের মধ্যে রীতা একজন বিশেষ সৌভাগ্যবতী নারী। সেই প্রথম দেখার পর থেকে আজ পর্যন্ত রীতার সব রকম শারীরিক ভাষার সমস্ত উপঢৌকন মাসুদ অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারে। কখনো রান্না করা তরকারিতে লবন বেশি হলেও মাসুদ খাওয়ার ফাঁকে রীতার নতজানু বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি অবলোকন করে লবন বেশি হওয়ার কারণ বুঝতে পারে। মৃদূ শব্দে প্রশ্ন করে- বাড়ি যাবে? মাকে দেখতে ইচ্ছে করছে?

মূহুর্তেই উদ্ভাসিত হয়ে উঠে স্বল্পভাষী রীতার চোখ। যেন ভূতের সিনেমা পাল্টে কেউ টম এন্ড জেরীর চেনেল চালু করেছে। পরক্ষনেই রীতার গাল দুটো ফুলে উঠে। ঠোঁটজোড়া কাঁপতে থাকে আর চোক্ষ্মুজোড়া স্থীর হয়ে বসে মাসুদের চোখে।

মাসুদ এই ভাষার সারমর্ম ও বুঝে, উত্তর ও জানে। তবু প্রশ্ন করে, কি হয়েছে আবার ?

তোমার জন্য খারাপ লাগছে। এ কয়দিন তুমি কি খাবে? রান্না করবে কে?

হাসতে হাসতে মাসুদ জবাব দেয়- তুমি তো আর সারা জীবনের জন্য যাচ্ছো না। সন্ধ্যেবেলা ভিডিও কল দিয়ে তোমার মুখে শুনে শুনে আইড় মাছের ঝোল রান্না করা শিখে নিবো।

তোমাকে না গেলবার শিখালাম ? মুখে প্রশ্নের সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকে চোখেও প্রশ্নভরা চাহনি।

মাসুদ জবাব দেয় না। মনে মনে ভাবে সেই ছেলেবেলা বোর্ডিং এ থাকতে সে টুকটাক রান্না করতে পারে। মায়ের সাথে রান্নাঘরে মাসুদের রেগুলার উপস্থিতির কারণে তার রান্নার হাত অনেকের চেয়ে ভালো। তবুও বৌ বাপের বাড়ি গেলে সন্ধ্যেবেলা বাসায় ফিরে ভিডিও কলে রেসিপি শুনে তরকারি রান্না করতে পছন্দ করে।

এসব কি মাসুদ ! তোমাকে একই কথা বারবার বলতে হয় কেন? তোমাকে দিয়ে রান্না হবে না।

সামান্য ঝাল ভরা ঝাড়ি খেতে মন্দ লাগে না মাসুদের। আর এই একটাই কর্মে রীতা বরাবর গুরুত্ব সহকারে টিচার টিচার ভাব নিয়ে করে। অনর্গল কথা বলে ভ্রু বাঁকিয়ে ধমক দেয়। আর এই সবই মাসুদ প্রাণভরে উপভোগ করে।

এইটুকু সম্ভবত যথেষ্ট মাসুদ রীতার বিবাহিত জীবনে রসায়নের গভীরতর বিক্রিয়া অনুমান করার জন্য।

রীতা মুখে না বললেও তার সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গের মুভমেন্ট এ মাসুদের জন্য ভালোবাসা মিশে থাকে। আর এই একটা মাত্র কারণে হয়ত মাসুদ জীবনের সমস্ত ইতিহাস মুছে নিজের হৃদয়ে ভিন্ন রংয়ের নতুন আস্তরে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে। গভীর ভালোবাসার কাছে হেরে যায় অনেকেই। মাসুদ হার মেনে নিয়েছে রীতার বোবা ভাষার ভালোবাসার কাছে।

 

চলবে______।

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ