
একটু থেমেই হেঁটে চলছি আবার, দীর্ঘ হচ্ছে পথ, বাড়ছে দুরত্ব, শেষ হতেই চাচ্ছেনা যেন এ চলা। একটু পর হঠাৎ থমকে দাড়াই, হাঁটু গেড়ে বসে পরি মাটিতে। মাথায় হাত, ক্লান্ত শরীর, ঝিমিয়ে আসছে দুচোখ। ঘোলাটে হয়ে আসছে পৃথিবী।
চোখ দুটো একবার ঘুরিয়ে নিলাম চারিদিক, আমার মত করেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে অসংখ্য অভাগা, মাটিতে লোটে পড়েছে আবার কেউ কেউ।
অসহ্য যন্ত্রনা, বেদনারা চিমটি কাটছে অন্তরে, মনের অজান্তেই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে পানি। অনেক দুর যেতে হবে, পারি দিতে হবে অনেক পথ। দুশ্চিন্তারা বাসা বেধেছে অন্তরে, গিলে খাচ্ছে এগিয়ে চলার সবটুকু সাহস।
লাশকাটা ঘরে পরে আছে নিথর দেহ, ঘুনোপোকারা শুঁ শুঁ শব্দ করছে, মাছি উড়ছে ভ্যান ভ্যান শব্দ করে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তার, এ মৃত্যু গুলো ভয়ংকর, স্বাদ নিতে চায়না কেউ, অস্বাভাবিক মৃত্যুগুলোও এক ধরনের পাপ, যে পাপের কঠিন শাস্তি দেয়া হয় লাশ কাটা ঘরে। কেটে নেয়া হয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। একটু পরেই শাস্তি শুরু হয়ে যাবে, বিচারক এখন মদ গিলছে, মাতাল হতে হবে অনেক, নয়ত লাশ কাটায় তৃপ্তি আসবেনা। বাহিরে দাড়িয়ে আছে লাশের দাবিদার। মা বাবা, ভাই বোন, বউ, ছেলে মেয়েরা।
আহ, মা আহহ….
বেচে থাকা অবস্থায় যেখানে তার আদরের ছেলের গায়ে একটা টোকাও পরতে দেন নাই আজ সে শরীর টাকে কেটে টুকরো টুকরো করবে। বাহির করে নিবে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। বস্তা সেলানো সুঁই দিয়ে সেলাই করে পাটিতে রেখে বেধে বাহিরে ফেলে যাবে। মা দাড়িয়ে আছে অধীর আগ্রহে। বাবা আজ তার সমস্ত শক্তি দিয়েও পারলোনা ছেলেকে বাচাতে, লাশ কাটা ঘরে না ঢুকাতে। ছেলে মেয়ে গুলো কাঁদছে হু হা করে। বউয়ের হাত থেকে এখনো মেহেদির গন্ধ ভেসে আসছে, মনে হচ্ছে সেদিন ই বিয়ে হয়েছিল তাদের
বালিশ চেপে ধরে কাঁদছে প্রেমিকা, এ কান্না থামার নয়, কিংবা থামিয়ে দেয়াটাও উচিত নয়। বুকে জড়িয়ে রেখেছে হাজারো স্মৃতি, অন্তরে পুষেছে কত ভালোবাসা, আজ যেন কিছুই নেই, পৃথিবীটা তার দৃষ্টিতে খুবি খারাপ কিংবা কঠিন। সব ছেলেরাই যেন বেঈমান, সব মানুষ ই যেন ঠকবাজ। মুটো ফোনে কল আসবেনা আর, মেসেজ করে বলবেনা কেউ খেয়ে নিতে, সাজুগুজু করে আর বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন পরবেনা, রাগারাগি করে আর কেউ সরি বলতে আসবেনা কান ধরে। জগতের সব কিছুই এখন তার কাছে মূল্যহীন।
চাকরীর খোজে দীর্ঘ পথ হাঁটতে থাকা ছেলেটি এখন চুপচাপ, সিভি বানানোর মত আর কোন টাকা নেই তার পকেটে, গোল্ডলিফের নিভিয়ে রাখা শেষ অংশটুকু বের করে টানছে আনমনে, এখানে পৃথিবীটা নিষ্টুর, মানুষ গুলো জানোয়ার, বাতাস গুলো দূষিত, নিশ্বাস গুলো বিষাক্ত
আমি আবারো হাঁটতে শুরু করেছি পথ, যে পথ শেষ হবার নয়, শুধু দীর্ঘ হবে, বাড়বে দুরত্ব, মাঝপথে থমকে দাড়াবো আবার, মাটিতে লুটে পরবো কোথাও। লাশ কাটা ঘরে পরে থাকবে নিথর দেহ, বালিশ চেপে ধরে কাঁদবে প্রেমিকা, রাস্তায় পরে থাকবে হাজারো বেকার….
২৩টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
লাশ কাটা ঘরে পরে থাকা লোকগুলো কি আসলেই কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে!! রেল লাইনের ছবিটা মনটাকে অন্য রকম একা অনুভুতি দেয় আমার।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
লাশ কাটা ঘরটা দুনিয়ার জাহান্নাম, এখানকার চিত্রটা খুবি ভয়ংকর…ভেতরে থাকা মানুষ গুলো খুবি ভয়ঙ্কর..
তারা জানেনা মায়া মমতা কি জিনিস। শুধু কাটতে জানে..
ধন্যবাদ দাদা
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মৃত্যু জড় জগত থেকে মুক্তি দেয়, অস্বাভাবিক মৃত্যু মহাপাপ।লাশকাটা ঘরের বর্ণনা যেভাবে দিলেন তাতে সমগ্র ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। ছবি ও লেখা অনবদ্য হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
লাশকাটা ঘরের বর্ণনা গুলো স্বাভাবিক অবস্থায় অনেক বেশি ভয়ঙ্কর, যা নিজ চোখে না দেখে বর্ণনা করা অসম্ভব প্রায়..
ধন্যবাদ আপু, দোয়া করবেন আমার জন্য
সাবিনা ইয়াসমিন
অস্বাভাবিক মৃত্যুর শেষ ঠিকানা আর এই পৃথিবীর নিকটতম নরক হলো লাশ কাটা ঘর। এখানে শুধু একটি মৃতদেহকে নয়, ব্যবচ্ছেদ করা হয় মৃতের সাথে জড়িয়ে থাকা আরও অনেকের গল্প।
মনটা খারাপ হয়ে গেছে লেখা পড়ে। 🙁
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
মৃত্যুটা হয় লাশের, কিন্তু শাস্তি পেতে হয় তার সকল আত্বীয়দের…
যেমন, মা বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী ছেলে মেয়ে ইত্যাদি
ধন্যবাদ আপু, দোয়ার করবেন আমার জন্য
অনন্য অর্ণব
মিজান কি লিখেছিস ভাই, সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায় তোর লেখায়। কয়েকটা শব্দের বানান একটু দেখে নিস। টুকাও, (টোকা ও) দেন্নাই (দেন নাই) দাঁড়াই, হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ি, এই রকম ছোটখাটো বানানগুলো সিনসিয়ারলি দেখবে। মনে রেখো সাহিত্য একটা দলিল। এখান থেকেই পরের প্রজন্ম শিক্ষা নেবে। ভুল শব্দ বাচ্চাদের মাথায় ঢুকে গেলে সারাজীবন ঐ ভুলটাই চোখে ভাসবে। ব্লগ থেকে ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করো যাতে সবাই ব্লগে পড়তে পারে। ধন্যবাদ।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
দাদা, আমি ছোট বেলায় মাদ্রাসায় পড়েছিলাম, যার কারনে বাংলা বানানটা শেখার সুযোগ হয়ে উঠেনাই।এখন চেষ্টা করছি শুধরে নেয়ার…
দোয়ার করবেন আমার জন্য
ছাইরাছ হেলাল
বেকার জীবনের অসহ্যবোধ থেকে উঠে আসা হতাশা লেখায় উঠে এসেছে।
আমাদের প্রিয় কবি অনন্য অর্নব এর কথা গুলো যথার্থ, একটু খেয়ালে নিন।
আমরা পাঠক আপনার সাথেই থাকি।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ দাদা, দোয়া করবেন আমার জন্য
ভুল গুলো যে শুধরে নিতে পারি
ফয়জুল মহী
গাম্ভীর্যতা আছে। লেখা পড়ে মন পুলকিত হলো।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ দাদা, আপনাদের দোয়া
তৌহিদ
চমৎকার একটি লেখা, এক নাগাড়ে পড়ে গেলাম। আপনি ভালো লেখেন ভাই। নিয়মিত লিখুন।
শুভকামনা রইলো।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ ভাই, দোয়া করবেন আমার জন্য…
দালান জাহান
সুন্দর উপলব্ধি। কথায় বলে কেউ মরে পাপে কেউ মরে তাপে।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ দাদা
Arshad Uddin Khan
এমন করে মানুষের মনের ব্যথা বলে দিতে আছে ভাই? কষ্ট বেড়ে যায় তো!
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
কি করবো ভাই, সবি তো বাস্তব…
সোনালী
এক নিঃশ্বাসে পড়ে নিলাম পুরো গল্প।আহ্ মৃত্যু! গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই লেখা। লেখার হাত দুর্দান্ত
উপস্থাপন ও চমৎকার।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ আপু, দোয়ার করবেন আমার জন্য
পর্তুলিকা
নান্দনিক লেখাটা পড়ে অভিভূত। কত সহজে নির্মম কথা গুলো লিখেছেন! সাধুবাদ জানাই।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ আপনাকে
দোয়া করবেন আমার জন্য