বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সরণে স্মরণে

ছন্নছাড়া ২০ ডিসেম্বর ২০১৩, শুক্রবার, ০২:২০:৩২অপরাহ্ন বিবিধ ২৪ মন্তব্য

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সংক্ষিপ্ত জীবনী :
নূর মোহাম্মদ শেখ
জন্ম : ২৬ এপ্রিল, ১৯৩৬
জন্মস্থান : নড়াইল জেলার মহেষখোলা গ্রামে।
পিতা : মোঃ আমানত শেখ।
মা : মোছাঃ জেন্নাতুন্নেসা।
স্ত্রী : তোতাল বিবি।
কর্মস্থল : ইপিআর।
যোগদান : ১৯৫৯ সাল।
পদবী : ল্যান্স নায়েক।
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৮নং সেক্টর।
মৃত্যু : ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সাল।
সমাধিস্থল : যশোরের কাশিপুর।

যেভাবে শহীদ হলেন
১৯৭১- এর ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষার সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ করা হয়। তবু পেট্রোলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এক সময়ে সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে নূর মোহাম্মদ নান্নু মিয়াকে কাঁধে তুলে নেন এবং হাতের এল.এম.জি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করলে শত্রুপক্ষ পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। ধরাশয়ী হওয়া মাত্র আহত নান্নু মিয়াকে বাঁচানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। হাতের এল.এম.জি সিপাহী মোস্তফাকে দিয়ে নান্নু মিয়াকে নিয়ে যেতে বললেন এবং মোস্তফার রাইফেল চেয়ে নিলেন যতক্ষণ না তাঁরা নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে সক্ষম হন ততক্ষণে ঐ রাইফেল দিয়ে শত্রুসৈন্য ঠেকিয়ে রাখবেন এবং শত্রুর মনোযোগ তাঁর দিকেই কেন্দ্রীভুত করে রাখবেন। অন্য সঙ্গীরা তাদের সাথে অনুরোধ করলেন যাওয়ার জন্যে। কিন্তু তাঁকে বহন করে নিয়ে যেতে গেলে সবাই মারা পড়বে এই আশঙ্কায় তিনি রণক্ষেত্র ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। বাকিদের অধিনায়োকোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। তাঁকে রেখে সন্তর্পণে সরে যেতে পারলেন বাকিরা। এদিকে সমানে গুলি ছুড়তে লাগলেন রক্তাক্ত নূর মোহাম্মদ। একদিকে পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনী, সঙ্গে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, অন্যদিকে মাত্র অর্ধমৃত সৈনিক (ই.পি.আর.) সম্বল একটি রাইফেল ও সীমিত গুলি। এই অসম অবিশ্বাস্য যুদ্ধে তিনি শত্রুপক্ষের এমন ক্ষতিসাধন করেন যে তারা এই মৃত্যুপথযাত্রী যোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে বিকৃত করে চোখ দুটো উপড়ে ফেলে। পরে প্রতিরক্ষার সৈনিকরা এসে পাশের একটি ঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই বীরসেনানীকে পরবর্তীতে যশোরের কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

এবার নিজের কিছু কথা ঃ
এবার ঈদে আমি এবং আমার বন্ধু জয় গিয়েছিলাম বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিস্থল যশোরের কাশিপুরে , সেখানে গিয়ে যা দেখলাম সেটা খুবী কষ্টকর একজন বঙ্গ বীর বীরশ্রেষ্ঠের সমাধি পরে আছে কিনা অযত্ন আর অবহেলায় ।
আমি এবং আমার বন্ধু জয় বিকালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিস্থলে পউছালাম । আর ওখানে গিয়ে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম সেটা কখনোই আশা করি নাই । বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিস্থল বাংলাদেশ এবং ইন্দিয়ার বডারের কাছে । বীরশ্রেষ্ঠের সমাধির পরেই বাংলাদেশের সীমানা শেষ । আমি এবং আমার বন্ধু সমাধির সামনে দাঁড়াতেই ওখানে বসে থাকা এক বিজিবি আমাদেরকে বলছে আপনারা কোথার থেকে এসেছেন এখানে কি চান ?
তাঁর প্রশ্ন করার ভাব দেখেই আমাদের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমারা বল্লাম আমারা ঢাকা থেকে আসছি , কেন এখানে আশা কি নিশেদ নাকি ?
বিজিবির ওই লোক বল্ল এত কথা বইলেন না আপনাদের মটর ছাইকেল কোথায় রাইখা আইছেন ? এখানে কেন আসছেন?
আমরা কাহিনী কিছু বুঝতে পারলাম না এবং একটু ভয় ও পাইলাম আমরা বল্লাম আমরা তো কোন মটর ছাইকেল নিয়ে আশি নাই ?
ওই লোক বল্ল তাহলে আসছেন ক্যান এইখানে?
আমরা বল্লাম কেন আসছি মানে ... আমরা একজন বীরশ্রেষ্ঠের সমাধি দেকতে আসছি
এবার বিজিবির লোক যা বল্ল সেটার জন্য আমারা প্রস্তুত ছিলাম না সে বল্ল এইটা কোন দেখার জিনিস হইলো দেকতে চাইলে ছিলেট জান কক্সবাজার যান ?
এবার আমাদের মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেলো আমারা বল্লাম আপনার কাছে এইটা দেখার কোন বিষয় না হতে পারে কিন্তু আমাদের কাছে অনেক কিছু
এবার বিজিবির লোক বল্ল ৫মিনিটের মধ্যে যা দেখার দেখে এখান থেকে চোলে যান ।
আমারা বল্লাম কেন চোলে যেতে হবে কেন ?
সে বল্ল বেশী কথা না বলে চোলে যেতে বলেছি চোলে যান
আমাদের মনটা এবার খারাপ হয়ে গেলো এত কষ্ট করে আসলাম যদি একটু ঘুরে দেকতে না পারলাম ।
আমার বন্ধু বলতেছে চলো চোলে যাই ঝামেলা করার দরকার নাই
তখন আমারা বিজিবির আরেক জন মানুষকে দেকতে পেলাম সে একটু দূরে দারিয়ে আছে এবং তাঁর বয়স একটু বেশী আমারা তারকাছে গিয়ে বল্লাম আমাদের কথা আমারা ঢাকা থেকে আসছি এই এলাকা টা একটু ঘুরে দেকব তখন সে বল্ল আসেন আমার সাথে
সে আমাদের একদম কাঁটাতারের বেরার কাছে নিয়ে গেলো তাঁর সাথে অনেক কথা হল তাঁর কাছে জিজ্ঞাস করলাম আপনাদের ওই লোক আমাদের সাথে এমন করলো কেনো ?
সে বল্ল এইখানে কেউ সমাধি দেকতে আসে না
আমারা বল্লাম তাহলে কেন আসে ?
সে বল্ল এখানে আসে সবাই ফেঞ্চিডিল গাজা মদ এইসব কিনার জন্য
আমারা বল্লাম কি বলেন ?
সে বল্ল হা, এখানে কে ভালো কে খারাপ বুঝা যায় না । প্রতিদিন এখানে ফেঞ্চিডিল গাজা মদ সহ মানুষ ধরা খায় আমাদের হাতে আপনারা ভালো না খারাপ কি করে বুঝব আমারা
তাঁর সাথে অনেক কথা হলো তা আর নাই বা বল্লাম তবে যা বল্ল সেটা আমাদের জন্য মটেও ভালো কোন কথা না । সীমান্ত হত্যা নিয়ে সে যা বল্ল সেটা শুনে পুরাই টাস্কি খাইলাম
যাই হক আসল কথায় আশি ...।।
স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে আমারা দেকতে চাই না কোন বীরের সমাধিতে ছাগল ঘুরে বেরায় ।

কোন সাধারণ মানুষ নিরাপদে কোন বীরের সমাধি দেকতে পারবে না ।
কোন বীরের সমাধিতে জুতা পায়ে সমাধির উপরে বসে কেউ আড্ডা দিবে ।
বাংলার একজন বীরশ্রেষ্ঠের সমাধির সম্মান আমারা রক্ষা করতে পারছি না এই লজ্জা আমারা কোথায় রাখি ।
বীরশ্রেষ্ঠের সমাধির চারপাশে বেরিকেট দেওয়া হক কারন আমারা সভ্য জাতি না এজন্য বীরশ্রেষ্ঠের সমাধির সম্মান রাখার জন্য তাকে বেরিকেটের মাঝেই থাকতে হবে ।

বীরশ্রেষ্ঠের সমাধির কিছু ফটো

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ