“কেও বলে, প্রাপ্ত বয়ষ্ক দুজন নর-নারীর একসাথে বসবাসের সামাজীক এবং ধর্মীয় রীতি-নীতি”। “কেও বলে, প্রাপ্ত বয়ষ্কদের যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে সন্তান-সন্ততি লালন পালনের মাধ্যম”।
আমাদের সাব-কন্টিনেন্টে বিয়েটা যতটা না ধর্মীয় উৎসব তাঁর চেয়ে বেশি সামাজিক উৎসব হিসাবে পালন করা হয়। এখানে, বিয়েটা হয় একটা পরিবারের সাথে আরেকটা পরিবারের নতুন একটা আত্ত্বীয়তা তৈরীর মাধ্যম ,নতুন একটা কমিনিউটি তৈরীর মাধ্যম।
বিয়ে সব সমাজে সবখানে সব সময়ই দুটি মানুষের মাঝে একটা অঙ্গিকার হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
বর-কনে দুজনেই সমান ভাবে দুজনকে বিশ্বাস করার, ভালবাসার, সন্মান করার ,সাড়া জীবন পাশে থাকার অঙ্গীকার করে।
এই অঙ্গীকার কোথাও কোথাও দালিলিক বা আইনী ভাবে বা ধর্মীয় ভাবে সংরক্ষিত থাকে।
কিন্তু দিনিশেষে এর বাইরেও বর-কনে অলিখিত কিছু অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়। যদি তারা পারিবারিক ভাবে, ধর্মিয় এবং আইনী ভাবে বিয়ে না করে,তবে সেখানে থাকে ভালবাসা নামক অলিখিত একটি অঙ্গীকার।
এই ভালবাসা নামক অঙ্গীকারে থাকে-
প্রতিটা মুহূর্ত পাশে থাকার অঙ্গীকার,
প্রতিটা বর্ষায় কদম দেয়ার অঙ্গীকার
প্রতিটা বিরহে পাশে থাকার অঙ্গীকার
প্রতিটা জোতসনায় একসাথে কফি-পানের অঙ্গীকার
প্রতিটা শীৎকারে পাশে থাকার অঙ্গীকার
প্রতিটা প্রসব বেদনায় প্রেয়সীর হাত খামচে ধরার অঙ্গীকার। 🙂
এই বিংশ শতাব্দিতে এসে বিয়ের রূপ-রঙ্গে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
এখন বিয়ে শুধুই চৌধুরী বা খান বংশের সাথে হয়না!
এখন বিয়ে হয় কনে ইঞ্জিঃ এবং বর কবি’র সাথে।
এখন বিয়ে মানে, গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসা গাভী/ষাড় দর্শন নয়!
এখন বিয়ে মানে, “তোমরা একে অপরকে জেনে নাও”।:)
এখন বিয়েতে কনের বাবা হাজার বর যাত্রীর ভুড়ি-ভোজ,সিকু-ফাইভ ঘড়ি বা মোটর বাইক যৌতুক দেয় না!
এখন সাথে দেয় মেয়ের মাস্টার্স সার্টিফিকেট। 🙂
এখন বিয়ে মানে সাদা চাদরে রক্ত বা সঙ্গীর বুকে মাংসের গন্ধ খুজা নয়!
এখন বিয়ে মানে, সঙ্গীর বুকে বিশ্বাস আর ভালবাসার সুভাষ খুজা 🙂
বিয়ে এখন আর জনতার সামনে ‘এগ্রি এগ্রি এগ্রি’, ‘কবুল কবুল কবুল’ বা সাত পাকে ঘুরা না!
এখন বিয়ে মানে সামিয়ানায় শত মানুষের হুল্লুর,মেজবানি,আর শুভ-কামনায় হাতে হাত রেখে অনন্তকাল পথ চলার প্রত্যয়। 🙂
এখন নর-নারীর মাঝে বিয়ে মানে শুধুই লিখিত যৌন-সঙ্গম বা সন্তান উৎপাদন নয়!
এখন বিয়ে মানে, সব সমান ভাবে ভোগের অঙ্গীকার। 🙂
এখন বিয়ে মানে কাউকে শৃংখলে আবদ্ধ করে তার উড়তে চাওয়ার স্বপ্নকে ধামা-চাপা দেয়া না!
এখন বিয়ে মানে সঙ্গিনীকে উড়তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।:)
কবিতা লিখতে তাকে কাগজ-কলম এগিয়ে দেয়া। 🙂
এখন বিয়ে মানে, শুধুই নারীর কোমর-কাছা দিয়ে রান্না-বান্না না!
এখন বিয়ে মানে “ বৌ মা চলো, বাইরে থেকে হেটে আসি” বলে শ্বাসুরীর আহ্ববান। 🙂
এখন বিয়ে মানে শুধুই একাকী টুকিটাকি কেনাকাটা নয়
এখন বিয়ে মানে দুজনে একসাথে মলে গিয়ে শপিং।
এখন বিয়ে মানে শুধু রাজা কনডমে পরিবার পরিকল্পনা নয়!
এখন বিয়ে মানে ‘ একটি হলে ভাল হয় দুটির বেশি সন্তান নয়, প্রত্যেকে যেনো মাশরাফি-ওয়াস্ফিয়া হয়’। 🙂
তাই বিয়ে আর এখন শুধুই আইনী বা ধর্মীয় শপথ নয়, এখন বিয়ে মানে আগামীর মহানায়ক-মহানায়ীকার আতুড় ঘর। 🙂
একেকটি রুপকথার প্লট।
এখন বিয়ের পবিত্রতা শুধুই সিদূর বা ঘোমটায় বিচার্য্য নয়, এখন বিয়ের পবিত্রতা মানে,ভালবেসে যুগের পর যুগ একসাথে সিঙ্গেল বেডে কাটিয়ে দেয়া।
বিয়ে মানে তুমি-আমি টুনা-টুনি
জীবন-যাপনের মধুর ফিলোসফি।............
[বিঃদ্রঃ এক কথায় বিয়ে মানে, একটি কোলবালিশের হঠাৎ একা হয়ে যাওয়া ;( ]]
Thumbnails managed by ThumbPress
২৫টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সময়ের সাথে সাথে বিয়ের ধ্যান ধারনা এবং স্বরূপ পাল্টে গিয়েছে আসলে
ভালোই লেগেছে পোষ্ট।
শুভ কামনা।
ইমন
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂 কেমন আছেন ?
জিসান শা ইকরাম
ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ্
নববর্ষের শুভেচ্ছা -{@
ইমনকে আজকাল দেখি কম কম 🙂
ইমন
ভাইয়া চাকরি-বাকরি ছাইড়া হাবুডুবু অবস্থায় আছি। বাকিটা আপনি নিশ্চই জানেন। কিন্তু সোনেলাকে মিস করি। 🙂
ব্লগার সজীব
বিয়ে সম্পর্কে নতুন কিছু জানলাম। পোষ্ট ভালো হয়েছে 🙂
ইমন
ধন্যবাদ ভাইয়া। কেমন আছেন? 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
প্রথম কথাই আমার “ওয়াও…”
বিয়ে নিয়ে যা গবেষণা করলেন, তাতে অনেক দেরী করে হলেও সুন্দর একটা পোষ্ট পেলাম। আর বছরের শুরুতে এমন পোষ্ট মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়লাম। তবে ছোট্ট করে বলে নেই, মনে কিছু নেবেন না যেনো, বানানে একটু দৃষ্টি দিলে আরোও অনেক বেশী ভালো লাগতো।
বিয়ে নিয়ে বেশ কিছু কথা মাথায় আছে। যে হারে আজকাল ডিভোর্স কিংবা একই ঘরে কিন্তু দুজন দুই মেরুর মতো অবস্থান। সোজাভাবে বলা যায় একটি বেডরুম, দুজন আলাদা সত্ত্বা। যাক লিষ্টের প্রধান দুটি বলছি। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় যদিও খুব বেশী মাত্রায় সাহসী পদক্ষেপ,
১)প্রথমেই এইচ আই ভি টেষ্ট
২)বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমি মনে করি লিভ টুগেদার-এর
যদিও লিভ টুগেদার করলেই যে সংসার ভাঙ্গবে না, এমন গ্যারান্টি নেই। কিন্তু তুলনামূলক কমে আসবে। আমি আসলে ধর্ম-আইন এসব মেনে যে বিয়ে, তাতে বিশ্বাসী নই। ছিলামও না। কিন্তু সমাজ এবং পরিবার আমাদের মন-মানসিকতাকে সেই ভাবনাকে নিয়ে ভাবার সুযোগ করেই দেয়নি।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোষ্ট দিয়েছেন। তা না হলে না-বলা কথাগুলো আর কখনো বলাই হতোনা।
ইমন
আপু বানান 🙁 আমি ছত্র খুবই খারাপ। তাই খালি ভুল হয়। তবে চেষ্টা করব অবশ্যই।
আর আপনার মন্তব্য পড়ে সাহস পেলাম, যা আরোও ভিতরে গিয়ে লেখার পাথেয় হবে।
দ্বিতীয় যে কথাটা বলেছেন, সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। কারণ , আফটার অল, পুরুষ মানুষ বলে কথা। যদি, এই টার্ম চালু হয় আর তা সুযোগ হিসাবে ব্যাবহার করে তবে সম্পর্ক তৈরী আর হবেনা। লুটেপুটে লাপাত্তা হবে। ভাবনার বিষয় আপু। আর যদি তুমি , শারীরিক তৃপ্তির ব্যাপারে মিন করে থাক তবে আমি, হয়ত কিছুটা পক্ষপাতি তোমার মতের সাথে। কিন্তু সেই সাথে , ব্যাপার্টা ইমপ্লিমেন্টেশনের একটা হেপা আছে। আমাদের জনগুষ্ঠি কি এখন এমন উদার মনস্তাত্বিক স্টেজে আছে!
আবু খায়ের আনিছ
বিয়ে মানেই দুইটা মানুষ এক সাথে থাকার সামাজিক একটা সম্মতি এক সাথে থাকার। নতুন কিছু জানলাম।
ইমন
আনিছ ভাইয়া, এটা নতুন না পুরান কথা। আমি শুধু আপনাদের মনে করিয়ে দিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
অরুনি মায়া
উহু বিয়ে মানেই ঝগড়া ঝাটি কথা কাটাকাটি |
উফফ এই কাজ মানুষ করে ^:^
ইমন
ঝগড়াটে কে বিয়ে করলেতো তাই হবে :p করতে হবে আমাদের মত কাউকে \|/
অপার্থিব
পোস্ট ভাল লেগেছে । কিন্ত এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও এই ধারনাগুলোর বাস্তবায়ন থেকে আমাদের সমাজ এখনো বহু দূরে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বিয়ে সম্পর্কে পুরনো ধারণাকে এখনো পরিবর্তন করেনি বরং সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছুটা আপডেট করেছে। যেমন উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে এখন যৌতুক চলে উপহারের নামে । মেডিক্যাল -ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অসংখ্য মেয়ে এখনো বিয়ের পর পেশাগত ক্যারিয়ার ফেলে ঘর সংসারে মনযোগী হচ্ছে। কত তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে এখনো বিশ্বাস করে নারীরা তৈরী করা হয়েছে তাদের স্বামীর হাড় দিয়ে!! নিজেদের অধিকার বিষয়ে নারীদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতাও খুব কম। আর সবচেয়ে বড় কথা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রান্তিক নারী যারা তাদের অবস্থানের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি । প্রান্তিক পুরুষদেরও বিয়ে বা নারীর প্রতি দৃষ্টি ভঙ্গী এখনো আগের মতই। এ কারনে দেখবেন প্রান্তিক সমাজ গুলোতে কন্যা দায় গ্রস্থ পিতারও অভাব নেই।
ইমন
অপার্থিব ভাইয়া, আপনাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই। আর আপনি আসলে বিংশ শতাব্দির কথা বলতেছেন। এখন কিন্তু এক-বিংশ শতাব্দি। আর চেঞ্জ হচ্ছে কিন্তু আস্তে আস্তে। এই যে আমি আর আপনি এসব ভাবতেছি 🙂 আমি আর আপনি যে পরিবার গড়ব তা নিশ্চই এমন উদার এবং সমতা ভিত্তিক হবে। তাই না 🙂 আর হাজার বছর ধরে চলে আসা একটা প্রথা পালটাতে একটু সময় অবশ্যই লাগবে।
অনিকেত নন্দিনী
পোস্টে কেমন প্রেম প্রেম গন্ধ পাই।
বিয়ের আগমনবার্তাও আছে মনে হচ্ছে! ;?
ইমন
যার বিয়ে তার খুজ নাই
পাড়া-পড়শির ঘুম নাই :@
অনিকেত নন্দিনী
খুজ নাই, খোঁজ তো আছে ঠিকই। তাই তো কই, ইমনকে আজকাল ব্লগে এত্ত কম কম দেখি ক্যারে!! ;?
আমি পাড়াপড়শি হইলাম কবে? :@
আমারে না জানাইয়া বিয়া করলে খবরই আছে মামা! -:-
মোঃ মজিবর রহমান
বিয়ে না করাই শ্রেয়ও।
পস্তাতে পস্তাতে শেষ।
ইমন
আমি কিছু কমুনা \|/ :p
শুন্য শুন্যালয়
অনিকেত আপুর কথাগুলো আমিও সবার আগে ভাবছি 😀
দারুন ভাল্লাগলো পোস্টটা। আপনারে কি আগাম শুভেচ্ছা দেব ইমন ভাই? :p
ইমন
এসব কি আপু :p
শুন্য শুন্যালয়
না কিছুনা। টিপস লাগলে চেয়েন ভাইয়া। যেমন বিয়ের পর মশারী কে খাটাবে এইটা একটা ইম্পর্টেন্ট ফ্যাক্টর। এইটা নিয়া বহুত কাইজ্জা হয়। এরপর টিভির সাউন্ড দুজনের মিউচুয়ালে কতটা রাখলে ভালো হয়, এসবেরও একটা সুরাহা আগেই করা উচিৎ। :p
অনিকেত নন্দিনী
আরো আছে।
সপ্তাহে সাতদিন না হইলে একটা ঝামেলা থাইক্যা বাঁচন যাইতো। এই সাতদিনের মধ্যে তিনদিন কেডায় রান্ধবো আর চাইরদিন কেডায় রান্ধবো হেইডাও বেজায় চিন্তার কথা। ;?
তরকারির ঝাল কেমন হপে সেইটাও মীমাংসার বিষয়।
টিভিতে কেডায় কোন চ্যানেল কতক্ষণ দেখপে সেইটারও একটা বিহিত হওয়া উচিত।
বাসার বারান্দায় ফুলের গাছ থাকপে কিনা, থাকলে সেই গাছে পানি কে দিপে সেইটাও বিবেচ্য বটে! -:-
আপাতত আর কিছু কমুনা। সময় সুযোগ বুইঝ্যা আবার মুখ খুলমু।
অল দ্যা বেস্ট মামু। :v
ইমন
শূন্য আপু 😀 চায়না কয়েল কিনে নিব। মশারির ঝামেলা শেষ \|/ \|/ \|/ \|/
ইমন
নন্দিনী ;( ;( ;( আমি কিছু কমুনা ;( ;(