এভাবে হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে পড়বে, কল্পনাও করেনি ইরিন। কিভাবে যেন সব উলটপালট হয়ে গেল! সামান্য একটা সিস্টোস্কোপি করাতে গিয়ে এমন ইনফেকশন হয়ে পড়বে, সেটা ভাবনার অতীত ছিল। হাসপাতাল থেকে মাকে আনার পর সবটা সময় বাসার সবাই মাকে নিয়েই আছে।
কেইবা থাকে বাসায় তেমন! মা, বাবা, ছোট ভাই আর ইরিন। মা অসুস্থ বলে বাসার সব কাজই তাকে করতে হচ্ছে...নাস্তা বানানো, দুপুরের রান্না করা, থালাবাসন ধোয়া, ঘর গুছানো, মাকে গোসল করানো, ইঞ্জেকশন দেয়া! কাজ করতে করতে সে খুব অবাক হয়, এতো কাজ মা এক হাতে সামলায় কিভাবে?
রাতেও ঘুমাতে পারেনা ইরিন মায়ের চিন্তায়; মা ঘুমাতে পারছে তো, মায়ের জ্বরটা বাড়েনি তো...কবে যে মা পুরোপুরি সুস্থ হবে, খুব হাঁপিয়ে উঠেছে সে!
ইরিন সদ্যপাসকৃত এমবিবিএস ডাক্তার।
খুব সিরিয়াসলি সে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ইংল্যান্ডের হাসপাতালে চাকরি পাওয়ার পরীক্ষার জন্য।
দেশের ডাক্তারদের যেই অবস্থা, না আছে সম্মান, না আছে নিরাপত্তা! এর চেয়ে বিদেশ পাড়ি দেয়াই ভালো। তার অনেক পরিচিত সিনিয়রই আছেন ওখানে, দিব্যি চাকরি করছেন সেখানের হাসপাতালগুলোতে। বেতনও ঢের বেশি, ছুটিছাটাও নেহাত কম নয়।
বাবা কিছুটা নাখোশ হলেও মায়ের মানা নেই। মায়ের কথা, "মন যেটা চায়, সেটাই করো। দেশে চাকরি করে এভাবে মার খাওয়ার মানে নেই!" বাবা বলে, "এভাবে মা-বাবাকে শেষ বয়সে ছেড়ে চলে যাবে? আর যেখানেই যাও, নিজের দেশে সরকারী ডাক্তার হওয়ার মত সম্মান কী আর পাবে?"
ইরিন কিছুই কানে নিচ্ছে না, ও এই দেশে থাকবে না!
কিন্তু হঠাৎ মায়ের এই অসুস্থতা তাকে থমকে দিলো।
অসুস্থ হওয়ার পর মা পুরোপুরি তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বাবাও কেবল তাকিয়ে থাকে তার আশায়। ছোট ভাইটা অসহায় হয়ে মায়ের মাথার পাশে বসে থাকে।
ইরিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।
আচ্ছা, দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর মা কিংবা বাবা এমন অসুস্থ হয়ে পড়লে সে কি পারবে দূরদেশে পড়ে থাকতে? কে দেখাশোনা করবে তাদের? সব কাজ শেষে নিজের রুমে বসে চুপ করে ভাবে সে।
ছেলেমেয়েদের মঙ্গলের কথা ভেবে সন্তানজন্মের পর কতোকিছুই না করেছেন মা-বাবা! বাবা তো তার সবটুকু সঞ্চয় রেখেই দিয়েছেন ইরিন আর তার ভাইয়ের জন্য, আর মা তার এতো ভাল একটা চাকরি বাদ দিয়ে বাসায় থেকেছেন শুধুমাত্র তাদের দুজনকে ভাল মানুষ করে তোলার জন্য। তাদের অবদান ছাড়া ইরিন কী কখনোই এতদূর আসতে পারতো!
সিদ্ধান্তহীনতায় কুঁকড়ে পড়ে সে।
মা-বাবার কোনো প্রয়োজনে সে যদি পাশে না-ই থাকতে পারে, তবে কি মূল্য তার এতো পড়াশোনার? কি লাভ পরবাসে গিয়ে চড়া বেতন আয় করে? কোনো উত্তর পেলো না নিজের অস্থির মনের কাছে।
টেবিলে পড়ে থাকা বইগুলো সরিয়ে বিসিএস গাইডটা নিয়ে বসলো সে...মা-বাবার শত বিসর্জনের ঋণ সামান্য হলেও শোধ করতে পারার আশায়। ।
১৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
ইরিনের মতো সন্তান আজকাল খুব কম-ই দেখা যায়। আমাদের মা-বাবা কতো কষ্ট করে একটা সন্তানকে মানুষ করতে। আমরা কতোটুকুই বা তাঁদের কথা ভাবি?
গল্পটা ভালো লেগেছে।
ভালো লিখেছেন আপনি।
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ!
অস্থির মনের কথাগুলো গুছিয়ে লিখতে পারিনি মনমতো। আরো অনুশীলন দরকার আমার।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর গল্প জন্মদাতাদের যদি কাজের না আসে সে জীবন বৃথা।
পথহারা পাখি
জি, সেটাই! মা-বাবার জন্য নিজের সাধ্যমত করা উচিত…
সাবিনা ইয়াসমিন
বাবা মা সন্তানের জন্যে ত্যাগ স্বিকার করেন।সন্তানরা সেটা খুব ভালো করেই জানেন, বোঝেন।কোনো কোনো সময় বাবা মায়ের জন্যেও কিছু ত্যাগ করার পরিস্থিতি আসে।তখন যে সন্তান সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেই পরবর্তীতে সফল হন।
অনেক ভালো লিখেছেন।শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো।আপনার আরো অনেক লেখা পড়তে চাই।
পথহারা পাখি
আশা করি, বাবা-মায়ের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা সন্তানেরা ভবিষ্যতে সফল হবেন… 🙂
জিসান শা ইকরাম
ইরিন থাকুক বাবা মা এর কাছেই,
সে না যাক বিদেশে।
ভাল চিন্তা প্রসুত লেখা,
শুভ কামনা।
পথহারা পাখি
🙂🙂🙂
জিসান শা ইকরাম
এটি আসলে ইরিনের বিসর্জন নয়, বরং অর্জন।
পথহারা পাখি
জ্বী! মা-বাবার বিসর্জন, ইরিনের অর্জন 🙂
রিতু জাহান
চোখ বুলিয়ে গেলাম শুধু। আসছি।
পথহারা পাখি
🙂
মাহমুদ আল মেহেদী
অস্বাধারন একটা বিষয় নিয়ে চমৎকার একটা লেখা পড়লাম । অনেক ভালো লাগলো লেখাটা। এমন সন্তান এখনো আছে আমাদের এই পৃথিবীতে তা না হলে পরিবার নামক শব্দটা বেঁচে থাকতো না।
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ! 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সন্তান এমনিই হওয়া উচিত।খুব ভাল লাগল লেখাটা -{@
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ 🙂
মায়াবতী
আমাদের আম্মা বলতেন, একটা সন্তান মানুষ করতে মায়ের একটা করে অংগ নষ্ট হয়ে যায়। আমার নিজের দুটি সন্তান আছে তাই তাদের মানুষ না বড় করতে ই আমার পঞ্চ ইন্দ্রিয় ই অকেজো লাগে খুব।ছেলে মেয়ে দুই জন ই আমার আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে ভাল রেসাল্ট করে করে বড় হচ্ছে কিন্ত সত্যিকার আসল মানুষ কত টুকু হচ্ছে এখনো ভাল করে বুঝি না আমি! স্বয়ং আমি যাপিত জীবনে মা বাবার জন্য অজস্র বিষর্জন দিয়েছি জানি না যে গুলো অর্জন আদৌ ছিল কি না! তবে নিজ সন্তানের শুধু অর্জন টা ই আমি দেখে যেতে চাই শুধু।
খুব ভাল লেগেছে আপনার লেখ টা। ভাল থাকুন।
পথহারা পাখি
আমার মা তার বিসিএস চাকরী ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র আমাদের পড়াশোনা করিয়ে ভালো রেসাল্ট করানোর জন্য। বাবা তার সর্বস্বটা দিয়ে দিয়েছেন আমাদের জন্য।
এখন তাদের প্রয়োজনে যদি আমরা না ভাবি, তাহলে এই বয়সে কার উপর ভরসা করবেন তারা?
দুআ করবেন সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।