বিধাতা , আমি তোমাকে খুঁজি
খুঁজি ঘরসংসারে, আনাচে কানাচে সারা বাড়ীময়।
যেখানে যৌতুকের জন্য নিরপরাধ নববধু
কেরোসিনে পুড়ে মরে, অথবা
পাশের বাড়ীর ময়না বউ
স্বামী শাশুড়ির নির্দেশে ফি বছর বছর
মেয়েশিশু গর্ভপাত করে , নিস্পাপ প্রাণ হরন করে
অথচ ওরা নিজেদের ধার্মিক বলে।
বিধাতা , আমি তোমাকে খুঁজি
খুঁজি রাস্তার ধারে, খোলা ময়দানে
পার্ক কিংবা রেল স্টেশন এবং স্টিমার ঘাটে ।
যেখানে সাত বছরের অনাথ টোকাই মেয়ে
এক মুঠো ভাত খেতে না পেয়ে , যৌন পুতুল হয়ে খেলে ।
রক্তাক্ত ছিন্ন শিশু, হাসপাতালের দোরগোড়ায় একা ধুকে মরে ।
অথচ ওরা হরহামেশা শিশু অধিকারের কথা বলে ।
বিধাতা , তুমি কোথায় ? আমি যে তোমায় খুঁজি
খুঁজি হন্যে হয়ে , ইতিউতি চারিধার
ছিঁচকে চোর , দশ বছরে অভুক্ত শিশু
চুরি করে খেয়ে ছিল কটি সিঙ্গারা আর মিষ্টি
বেদম প্রহারে আধমরা রাস্তার একধার
সেকি উল্লাস উদ্বাহু নৃত্য যুবক ছেলেদের গুষ্টি ।
অথচ ওরা নাকি সবার জন্য নিবেদিত সমাজ সেবক বলে দাবি করে ।
কোথায় না খুঁজেছি তোমায় , সাগর সীমান্তে
পালতুলে হাল ধরে ছুটে যাই তোমার সন্ধানে
এখানে হরতাল হয় পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দলে
নেতারা অফিস চালায় , শীতাতপ নিয়ত্রিত কক্ষে বসে
চা কফি আর তাস খেলার আড্ডায় নিত্য নতুন বুদ্ধি খোলে।
রাজপথে সিএনজি পোড়ে , বাসে আগুন লাগে , শ্রমিক ড্রাইবার বলি হয়।
এসিদদগ্ধ স্টেশন ওয়াগানে গরীবের একমাত্র সন্তান ।
তারপরেও এরা বলে , ওরাই নাকি মানুষের তরে উৎসর্গকৃত প্রাণ
তারপরেও ওরাই জাতীর প্রবক্তা, করে মহামূল্য সংবিধান সংরক্ষণ ।
বিধাতা আমি তোমার সভায় হাজিরা দেই
যাই মসজিদ, মন্দির মঠ গির্জায়
তোমাকে দেখবো বলে , তোমার সভায় তমাকে খুঁজি ।
দেখি এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মাবলম্বীকে দ্বিধাহীন খুন করে
মসজিদ ভাঙে, মন্দির পোড়ায়, পোড়ায় মানুষের বিশ্বাস
ওরা জানে কাক কখনো কাকের মাংস খায় না,
অথচ ওরা নিজেদের ধর্মের প্রবক্তা বলে, ওরাই নাকি ধর্ম বাহক ।
বিধাতা , তুমি কোথায় , কোন নির্বাসনে
নিরন্তর তোমাকে খুঁজি , খুজে হয়রান ব্যর্থ আমি
শুনেছি তুমি নাকি পরিত্যাগ করেছ
মানুষ নামক অমানুষ হায়েনার অশুচি আত্ম কুঠি ।
আমি নিতান্তই অসহায় এক জীব, মানুষ নামে পরিচয়ে পাই ভয়
তাই আজ একান্ত তোমাকেই চাই, আমি দুর্বল আমাকে দাও ঠাই ।
১৭টি মন্তব্য
ইলিয়াস মাসুদ
এত সব সত্য কি এক সাথা পড়া যায় …
ধন্যবাদ দারুণ কবিতাটির জন্য
পারভীন সুলতানা
আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
অসম্ভব সুন্দর গদ্য কবিতাটি পড়লাম।
কঠিন কিন্তু কিছু মৌলিক জিজ্ঞাসা তুলে ধরেছেন।
আমারা তাঁর ই আশ্রয় প্রার্থনা করি।
পারভীন সুলতানা
আমরা সবাই এক কাতারে, তাই জিজ্ঞাসাও এক এবং আত্মিক । ধন্যবাদ
মোঃ মজিবর রহমান
বিধাতা , তুমি কোথায় , কোন নির্বাসনে
নিরন্তর তোমাকে খুঁজি , খুজে হয়রান ব্যর্থ আমি
শুনেছি তুমি নাকি পরিত্যাগ করেছ
আছে ধনীর ঘরে।
পারভীন সুলতানা
্মাঝে মাঝে তাই মনে হয় না’কি ?
তাইত মনে হয়।
মোঃ মজিবর রহমান
মনে হয় বলেই খুজিনা তারে।
অনিকেত নন্দিনী
বিধাতা জাল ফেলে অপেক্ষা করছেন তো করছেনই। কবে এই জাল গোটাবেন, কবে জাল বেছে রাঘব বোয়ালদের ধরবেন তা কেবল তিনিই জানেন। 🙁
পারভীন সুলতানা
মুলো ঝুলিয়ে রেখেছেন, না দেখা জীবনে অনেক প্রাপ্তি আছে।
অপার্থিব
ভাল লিখেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে জেলে পাড়ার বর্ণনা দিতে ব্যবহৃত একটা উক্তি মনে পড়লো -ঈশ্বর থাকেন ঐ ভদ্র পল্লীতে ,এই খানে তাহাকে খুজিয়া পাওয়া যাইবে না।
পারভীন সুলতানা
জী আমারও মাঝে মধ্যে তাই মনে হয় । নাকি একবার ধনী হয়ে জন্মে দেখতাম , আসলেও সত্য কিনা। ধনী আর ভদ্র কিন্তু সমার্থক শব্দ নয়।
জিসান শা ইকরাম
এমন লেখায় কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারছি না
বিধাতা তো সব স্থানেই থাকার কথা………
অথচ………
পারভীন সুলতানা
তাকে বিশ্বাস করি বলে মানতে হয়…………।।তার খেলা কি বুঝতে অক্ষম আমি ।
হতভাগ্য কবি
একগাদা সত্য কথা , লেখায় মুগ্ধতা
পারভীন সুলতানা
জীবন সত্য উপলব্ধি থেকে লেখা , তাই বুঝি সব সত্য কথা। আমি আনন্দিত।
হতভাগ্য কবি
-{@
পারভীন সুলতানা
কিছুই বললেন নাত?