
বিহারে বিচরণের একাল সেকাল পেরিয়ে এসেছি সিন্ধুপারে। এক কাপ চায়ে তৃপ্তিকর চুমুকে চুমুকে বয়ে যাওয়া এই অস্থির সময়ে। আমিও আছি তুমিও আছ, হয়তো মিলিয়ে যাবো মধুগুঞ্জন সমারোহে বাতায়নবর্তিনী আলিঙ্গনে। বন্ধু দেখা হবে কি অস্পৃশ্য আলাপনে?
যতনে যাতনায় ভরাডুবিতে ডায়েরির পাতায় লেখা কালিও শুকিয়ে যাবে একদিন। হেসে কুটোকুটি হবার ক্ষণকালীন ব্যস্তবাগীশ নিয়তি হারিয়ে গেলেও জেনো এইতো আছি অনাদি অনন্তকালের কালোগহ্বরে। বন্ধু ভুলে যাবে কি সে কবিতার প্রেমাসক্ত পঙক্তিমালাকে?
সন্ধ্যাতারা রুপে এসেছিলাম, রাতের শেষে শুকতারা হলেও জেনো আছি সেই আগের আমি। রুপের মোহত্য নয় এতো বরেণ্য কৃচ্ছ্রসাধন। তুমি যা দেখো তার উল্টোপিঠেই আমার বসবাস। আঁচলে নয়, হয়তো পিঁড়ি পেতে দিয়ে বেহুলার গল্প শোনাবো তিমির রাত্রির বিহানবেলায়। বন্ধু আসবে কি একবার আমার নীড়ে?
ভীতিসঞ্চারী ভাবনায় নয়, উষ্ণাগম ঠোঁটের পরশে শুধাবো বৈষ্ণবী গান। কাশফুলের পেলব মায়ায়, শিশির ভেজা দূর্বাঘাস মাড়িয়ে নিয়ে যাবো হীরক রাজার দেশে। কাঠগোলাপের হলুদ মায়ায় নয়তো শিউলিতলায় ছড়িয়ে থাকা শুভ্রমৌলির রুপে হিমালয়ের উত্তরী কন্যার ডাগর আঁখিতে কাজল করে রাখবো তোমায়। ছুঁয়ে দেখো একদিন সময় করে। বন্ধু সাথে রবেতো আমার সুদিনের সে সময়ে?
হয়তো সে নামে নেই, তবে জেনো আছি ওজনের বেশী আঁকড়ে ধরে। বন্ধু সময় হলো হাত বাটাবার। এসো ধরো, মুক্ত করো আমায় বন্ধনী থেকে। এখন যে সময় তোমার প্রজ্জ্বলিত মশাল আঁকড়ে ধরার। একদিন ঋষিবন্ধু যে আলো আমায় সঁপেছিল আজ দিয়ে গেলাম তোমায়। বন্ধু আস্থা দেবে কি দিগ্বিদিক বিজয়ের?
চলে যেতে চাইলেও যাওয়া হয়না, যেতে নেই। যে ঘর আমায় আলোকিত করেছে তাকে অন্ধকারাবৃত করার অধিকার আমি পাইনি। তোমার সে অধিকারকেও কুক্ষিগত করে যাবো নিজ হাতে। যদি দ্যাখো আমি নেই, জেনো সে ক্ষণিকের ভ্রম। আমি ছিলাম, আছি থাকবো আড়ালে আবডালে, বাবুই পাখির সুর মূর্ছনায়। কান পেতে শুনে নিও সেতারের অবিচলিত মূর্ছাতুর ব্যঞ্জনা।
বন্ধু, বিদায়ের ইতিকথায় আমার নামের এপিটাফে লিখে রেখো-
হে বেদুঈন!
যে শুষ্ক মরুতে তুমি বৃষ্টি ঝড়িয়েছিলে
চেয়ে দ্যাখো আজ সেথায় নতুন কুঁড়ি এসেছে।
[ছবি- নেট থেকে]
১০টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
হে বেদুঈন!
যে শুষ্ক মরুতে তুমি বৃষ্টি ঝড়িয়েছিলে
চেয়ে দ্যাখো আজ সেথায় নতুন কুঁড়ি এসেছে।***মন কেড়ে নিল ভাই শব্দের সমাহার। সব শেষ হবে তবু থাকবার প্রয়াস। মন্তব্য সাহসের বাইরে তবুও লোভ হল। শুভ কামনা রইলো।🌹🌹
তৌহিদ
এসব কোন ব্যাপারই না, মন খুলে মন্তব্য লিখুন। যেতে চাইলেও আসলে যাওয়া হয়না। পাশেই আছিতো। শুভকামনা সবসময়।
ধন্যবাদ জানবেন আপু।
সাখাওয়াত হোসেন
মন্তব্য করতে সাহস পাচ্ছিনা, তারপরও করছি –
শেষ দু’টি লাইন দারুণ মনোমুগ্ধকর ছয়েছে। তৃপ্তি নিয়ে কয়েকবার পড়লাম। শুভেচ্ছা নিরন্তর, ভালো থাকবেন ভাইয়া।
তৌহিদ
সাখাওয়াত ভাই, আপনাকে স্বাগতম। মন্তব্য করার সাহস পাচ্ছেন না কেন? এখানে আপনি আমি আমরা একই কাতারে। তাই দ্বিধাহীনভাবে সোনেলায় বিচরণ করুন ভাই।
লেখায় শুধুমাত্র মনের কথামালাকে সাজিয়েছি পাঠকদের জন্য। আপনারা মন্তব্য করলে তবেইনা ভালো লাগবে?
মন্তব্যে প্রীত হলাম ভাই। ভালো থাকুন, পাশে থাকুন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া পুরো লেখাটা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এতো সাধারণ কথাগুলো তবুও যেন ভালবাসার অনবদ্য বহিঃপ্রকাশ। চলে যেতে হয় তবুও রেশ কিন্তু রয়ে যায় -আমি ছিলাম , আছি , থাকবো কোথাও না কোথাও।
“হে বেদুঈন!
যে শুষ্ক মরুতে তুমি বৃষ্টি ঝড়িয়েছিলে
চেয়ে দ্যাখো আজ সেথায় নতুন কুঁড়ি এসেছে।” চমৎকার পংক্তিমালা।
অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
আপ্লুত হলাম দি ভাই। আসলে পাঠক যখন লেখায় মুগ্ধতা প্রকাশ করে লেখক হিসেবে সেটি আমার পরম প্রাপ্তি।
ভালো থাকুন আপনিও। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা পুরো লেখাটা পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম,
আজ অনেক দিন পর ব্লগে এসে আপনার লেখা পড়লাম,।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা //
তৌহিদ
অনেকদিন হলো ব্লগে আপনার লেখা পাইনা দাদা, কেমন আছেন?
শুভকামনা আপনার জন্যেও।
আরজু মুক্তা
বন্ধু গোকে মিস করছি ভীষণ। গানটা মনে পরে গেলো
প্রকৃত বন্ধুকে পাওয়ার কি যে আকুলতা! অথচ দুনিয়াদারী শেষ করে আমাদের ঠিকই বিদায় নিতে হয়। ” All path of glory lead but to the grave. ” আসলেই তখন এপিটাফ লিখে অপেক্ষাই করতে হয় অন্তিম যাত্রার।
তৌহিদ
সুন্দর বললেন আপু। মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো।
শুভকামনা সবসময়।