বিদায়ঘণ্টা (১)

পথহারা পাখি ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ০৬:৩৩:৪৭অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩ মন্তব্য

প্রতিদিন সকালে মেহনাজের ঘুম ভাঙে ফজরের ওয়াক্তে তার বাবার ইকামাত শুনে। নামাজের শুরুতে বাবা যখন সুরেলা আওয়াজে ইকামাত পড়েন, কেমন একটা ভালোলাগা যেন ঘিরে ফেলে তাকে! এরপর কানে আসে মায়ের কুরআন পাঠের সুর। অদ্ভুত এক ভালো লাগা! ভাবতেই চোখে পানি এসে পড়ে মেহনাজের, কী করে পারবে সে এসব ছেড়ে থাকতে?

রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিংয়ের দিকে যেতেই চোখে পড়ে, মা-বাবা দুজনই নাস্তা তৈরিতে খুব ব্যস্ত। তার বাবা এখন অবসরপ্রাপ্ত, তাই বাসাতেই থাকেন বেশিরভাগ সময়।
আর ছোট ভাই রেডি হচ্ছে, ভার্সিটিতে যাবে। আচ্ছা, এই মানুষগুলোকে না দেখে দিন শুরু করতে পারবে সে?

তাদের বাসার চারপাশটা বেশ খোলামেলা। বাসার পেছনে বেশ খানিকটা সরকারী খাস জমি। সেখানে সারাবছর বড় বড় ঘাস থাকে। আর শরৎ আসলেই ভরে যায় শুভ্র কাশফুলে। কী যে ভালো লাগে দেখতে! বর্ষায় কি আর কখনো জানালার কাছে একটানা চুপচাপ বসে বষ্টি দেখার সু্যোগ তার হবে? কিংবা পূর্ণিমায় যখন চাঁদের আলো পড়ে তার রুম ঝলমল করতে থাকে, সেই স্বর্গীয় পরিবেশ আর কি সে পাবে?

ভার্সিটি লাইফে মেহনাজের ব্যাচে এমন কেউ ছিল না, যে হলে থাকতো না। আর স্যার-ম্যাডামদের তো কড়া আদেশ ছিল, "পাস করতে চাইলে হলে থেকে গ্রুপ স্টাডি মাষ্ট!" কিন্তু প্রতিদিন ২/৩ দফায় বাস পরিবর্তন করে অনেক ভীড় ঠেলে হলেও মেহনাজ বাসা থেকেই ক্লাস করতো কষ্ট করে। মা, বাবা, ভাইকে না দেখে একটা দিন শুরু করার কথা সে ভাবতেই পারতো না!

অনেক অনেক নতুন অভ্যাস তৈরি করতে হবে। অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হবে। নিজের ইচ্ছা মতো থাকার দিন শেষ তার। সময় ঘনিয়ে আসছে, বিদায়ঘণ্টা বাজার...

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ