মোনালিসা(ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বিজয় দিবসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। এসেই বাবার কাছে আবদার করেছে একটি সেলফি স্টিক কিনে দেয়ার জন্য। তার বাবা যিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, মেয়ের আবদার ফেলতে পারেননি। অতি আদরের মেয়ের জন্য অনেক খুঁজে সেলফি স্টিক কিনে এনেছেন।
পরদিন (আজ) বিজয় দিবসে মোনালিসা লাল সবুজ শাড়ি পরে শহীদ মিনারে তার বন্ধুদের সাথে সারাদিন অনেক ছবি তুলেছে। রাতে বাসায় ফিরে যখন সে তার বাবাকে ছবিগুলো দেখাতে যায়, বাবার চোখ তখন কান্নায় ভিজে আসে নিজের অজান্তেই।
অতি আদরের মেয়েকে তিনি তার চোখের নোনা পানি দেখতে দেননি। শুধু মেয়েকে বলেছেন- মারে তুমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান হয়ে, একজন বাংলাদেশী হয়ে কিভাবে পারলে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠতে?
ত্রিশলক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা আজ যে স্বাধীনতা পেয়েছি, যে জায়গায় তাদের স্বরণ করার জন্য লক্ষ কোটি বাঙালী আজ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে; সেই স্মৃতিস্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে ছবি তুলেছো। হাজার টাকার সেলফি স্টিকের চেয়ে তোমার কি দশটি টাকাও ছিলোনা একটি ফুল কিনে তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার?
শুধু এতটুকু বলেই বাবা ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। আর মোনালিসা বসে বসে ভাবতে থাকে- আজ বিজয় দিবসে সবাই সেলফি স্টিক দিয়ে ছবি তুলছে, তাহলে তার অন্যায়টা কোথায়?
এই গল্প অবতারণার উদ্দেশ্য হচ্ছে- আজকে আমি যখন শহীদ মিনারে গিয়েছি তখন অনেক তরুণীকেই দেখলাম অতিমাত্রায় সাজুগুজু করে শহীদ মিনারে এসেছেন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। যাকে বলে পার্লার থেকে সেজে এসেছেন লাল টুকটুকে শাড়ী পরে। তারা শহীদ মিনারে অতি সাধের সেলফি স্টিকের সাহায্যে মোবাইল দিয়ে বন্ধুদের সাথে ছবি তোলার নামে পায়ে জুতা-স্যান্ডেল নিয়ে শহীদ মিনারের বেদীর ফুল মাড়িয়ে যে মচ্ছব করলেন তা দেখে বিজয়ের ভাবগাম্ভীর্যতা আমরা কতটুকু ধারণ করতে পেরেছি সেটাই আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে যায়।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেড়িয়ে এসে এখনও আমরা জানিনা কার জন্য, কিসের বিনিময়ে, কাদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ থাকলে আজ আমরা কি পারতাম হাসিমুখে নিজের সন্তানকে কোলে নিতে? পারতাম বাংলায় কথা বলতে? পারতাম নিজেদের স্বাধীনচেতা মতামত প্রকাশ করতে?
লজ্জায় অবনত মস্তকে আমি নীরবে দাঁড়িয়ে আছি শহীদ মিনারের সামনে। কনকনে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে কারা যেন কানে কানে বলে যাচ্ছে- নিজেদের রক্তের বিনিময়ে তোমায় যে স্বাধীনতা দিলাম, আমাদের প্রাপ্য সম্মান তোমরা ফিরিয়ে দাও হে পথিক!
আমি এখনো নিরুত্তরভাবে দাড়িয়ে মোবাইলে টাইপ করেই যাচ্ছি....
২৭টি মন্তব্য
সঞ্জয় মালাকার
ঠিকই বলছে দাদা আমরা সম্মান করতে জানিনা।
যাদের রক্তের বিনিময়ে আমার এই স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের সম্মান করতে আমরা জানিনা।
নিজেদের রক্তের বিনিময়ে তোমায় যে স্বাধীনতা দিলাম, আমাদের প্রাপ্য সম্মান তোমরা ফিরিয়ে দাও হে পথিক!
তৌহিদ
শহীদ মিনারে এমন কর্মকাণ্ড মোটেই করা উচিত নয়। সবার বোধোদয় হোক এটাই কাম্য। ভালো থাকবেন দাদা
সঞ্জয় মালাকার
আপনিও ভালো থাকবে দাদা শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
আপনাকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধে দাদা , আপনাকেও বিজয়ের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
তৌহিদ
আপনাকেও বিজয় দিবসের অনেক শুভেচ্ছা রইল দাদা। ভালো থাকবেন।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
আমাদের এই সেলফিবাজির জন্য আমরা আশেপাশে তাকাই না। আমাদের সেলফি পাগলামীর জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ভুলে যাই। একটা ছবি তোলার জন্য আমরা পাগলাটে হয়ে যাই। এ খুব অনুচিত।
সুন্দর লিখেছেন।
তৌহিদ
ছবি তুলতেই পারে তবে শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্যতা বজায় রাখা উচিত। অনেকের এমন কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হই। লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু।
ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভিন
লজ্জিত হওয়া ছাড়া আমাদের আর কি করার আছে ভাইয়া।
যাঁদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হলো এই বাংলাদেশ তাঁদের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন করতে পারি না আমরা জাতি হিসেবে কতোটা অকৃতজ্ঞ ভাবুন একবার।
তৌহিদ
একদম ঠিক বলেছেন আপু। যারা এমন কর্মকাণ্ড করে, এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তাদের অজানা। সবার বোধোদয় হোক এটাই কাম্য।
ভালো থাকবেন আপু
রেহানা বীথি
কী যে বিরক্তিকর এদের আচরণ! কোনও বোধই যেন নেই। জুতা পায়ে শহিদ মিনারেে ওঠা যে কতবড় ধৃষ্টতা এরা সেটাও জানে না। সেলফিতে হাজার হাজার লাইক কমেন্ট পড়বে সেই আনন্দেই মশগুল। এদের দেখে নিজে নিজেই লজ্জিত হই।
তৌহিদ
এখন সবাই সেলফি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার জন্য। আপনার মন্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। স্বাধীনতার ইতিহাস যারা জানিনা তারাই আমরা এমন করি যা মোটেও উচিত নয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু
ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
এ দায় ঐ তরুণীকে দিয়ে লাভ নেই, আমরা তাদের কাছে যথাযথ উপস্থাপন
করতে পারিনি আমাদের লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা।
তৌহিদ
ভাই একদম ঠিক বলেছেন ।এর দায় আসলে আমাদের। আমরাই তাদের অনুভব করাতে পারিনি স্বাধীনতার সঠিক ভাবগাম্ভীর্যতা। আর এ কারণেই এমন কর্মকাণ্ড অনেকেই করছে যা মোটেও উচিত নয়। স্বাধীনতার ইতিহাস সকলেরই জানা উচিত।
আরজু মুক্তা
এইসব দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা।
অথবা আমরা যথাযথ বুঝাতে পারিনি।
এখনকার ছেলেমেয়েরা বই পড়েও কিছু জানে না
তৌহিদ
এই ব্যর্থতা আসলে আমাদের নিজেদের ।স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস এবং ভাবগাম্ভীর্যতা আমরা আমাদের সন্তানদের সঠিকভাবে দিতে পারিনি। বইয়ে অনেক ভুলভাল লেখা বের হয়েছিল একসময় যা বর্তমান সরকার নতুনভাবে সংস্কার করছে। সবার বোধোদয় হোক এটাই কাম্য।
ভালো থাকবেন আপু
জিসান শা ইকরাম
এই সমস্ত জাতীয় দিবস এই প্রজন্মের কাছে নিছক একটি অনুষ্ঠান মাত্র। এর জন্য আলাদা আলাদা ড্রেস আছে, যেমন শহীদ দিবসে সাদাকালো, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের জন্য লাল সবুজ।
তারা জানে না প্রকৃত ইতিহাস।
তৌহিদ
ডিজাইনার পোষাক পরে শহীদ মিনারে যাওয়া একটি নতুন ট্রেন্ড। আমার কথা শহীদ মিনারের সঠিক ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা উচিত। স্বাধীনতার ইতিহাস যে কতটা রক্তাক্ত তার সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই স্বাধীনতা ,ভাষা দিবস, শহীদ দিবস এর প্রকৃত ইতিহাস জানে না যা দুঃখজনক।
সবার বোধোদয় হোক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমি অনেক দেখেছি এসব। নাটক সিনেমায় তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে জুতা স্যান্ডেল পড়ে ভিডিও করে, বিশেষ দিন ছাড়া এসব নিত্যদিনের সঙ্গী, শহীদ মিনারের উপরে বসে নেশা করে, যুগলরা প্রেম করে। কিছু আবার বলাও যায় না। বললে আমাকেই আদিখ্যেতা, পাগল টিপ্পনী শুনতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। বিজয়ের শুভেচ্ছা রইল।
তৌহিদ
সমস্যা হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানে না। শহীদ মিনারের তাৎপর্য সম্পর্কে তাদের ন্যূনতম ধারণা নেই। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে আমরা সবাই শো অফ করতেই ব্যস্ত। লোক দেখানো শ্রদ্ধা কাম্য নয়। সবার বোধোদয় হোক।
ভালো থাকবেন আপু
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শ্রদ্ধা ভিতর থেকে আসতে হয়, পরিবার থেকে আসতে হয়।আজকাল কোনো কিছুতেই শ্রদ্ধা, ভক্তি, সম্মান নেই। সব ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
সুপায়ন বড়ুয়া
গল্পের ছলে জানা হল
বকে যাওয়া প্রজন্মকে ,
এদের ব্যাবহার করেই
মেধার আন্দোলনের নামে
নারী ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে
পিছিয়ে দেয়া হলো !
ধন্যবাদ , বিজয়ী শুভেচ্ছা
তৌহিদ
গল্পটি নিছক রূপক অর্থে আমি ব্যবহার করলেও বাস্তবতা কিন্তু এটিই। শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্যতা যারা বুকে ধারণ করেনা তারাই এমন আন্দোলন করছে। সবার বোধোদয় হোক এটাই কাম্য। লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।
ভালো থাকবেন।
নুর হোসেন
মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান হয়ে, একজন বাংলাদেশী হয়ে কিভাবে পারলে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠতে?
-উনিতো শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী মাত্র,
অনেক বড় বড় নেতাকে জুতাসহ উঠে শহীদ মিনারে ফুল দিতে দেখেছি!
আমাদের দেশের পরিস্হিতি আর একরোখা চেতনা বজায় রাখতে হলে স্মৃতিস্তম্ভ গুলো সংরক্ষনে রাখতে হবে,
জাতির কিছু গাঁজাখোর রাতে শহিদ মিনারে আড্ডা জমায় এগুলোও দেখার দরকার।
তৌহিদ
একদম ঠিক বলেছেন ভাই। ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
বড় বড় বয়স্ক নেতা/ পাতি নেতারাই যেখানে শহীদ মিনারের যথাযথ মর্যাদা দেয় না, তখন এসব নব প্রজন্মের ভুল গুলো তেমন চোখে লাগে না। তাদের শেখার, উপলব্ধির অনেক সময় আছে, কিন্তু তিনকাল পার হওয়া তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের কবে বোধোদয় হবে সেটাই ভাবি।
বিজয়ের শুভেচ্ছা রইলো তৌহিদ ভাই 🌹🌹
তৌহিদ
আমাদের বোধদয় হয়না এর কারন হচ্ছে দেশপ্রেমের অভাব এবং শিক্ষার ঘাটতি আছে আমাদের। নিজেদের চেতনাকে জাগ্রত করে এদেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসাই হতে পারে উত্তরণের চাবিকাঠি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু। বিজয়ের শুভেচ্ছা রইলো।