
লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই বাংলার মাটি স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। বাংলার মানুষ পেয়েছে লাল-সবুজ পতাকা। যে পতাকা আনতে গিয়ে মা হারিয়েছে সন্তানকে, বোন হারিয়েছে ভাইকে, স্ত্রী হারিয়েছে স্বামীকে, সন্তান হারিয়েছে পিতাকে। এই বীর সেনাদের স্মৃতি চিরভাস্বর হয়ে আছে বাঙালি জাতির মননে। দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে যারা যুদ্ধে গিয়েছে তারা সকল মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে জীবন বাজি রেখে করেছে যুদ্ধ। একটাই পণ স্বাধীনতা আনবো ঘরে আর নয় পরাধীনতা।
বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে লক্ষ শহীদ। সেই হারিয়ে যাওয়া সহযোদ্ধাদের দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে আমাদের লাল সবুজ পতাকাকে মাথা উঁচু করে সাথে নিয়ে ফিরেছে লক্ষ বীর যোদ্ধা। যাদের অবদান দেশের মানুষের এখনো জানা অজানাই রয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে ১৯৭১ সাল এমন একটি বছর যা কোনদিন ভুলবে না এই জাতি। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনেক কিছু হারানোর বেদনা যেমন আছে তেমন আছে চির মূল্যবান স্বাধীনতা প্রাপ্তি। এ স্বাধীনতা আমাদের সকল প্রজন্মের অহংকার যা পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ নামের একটি দেশের।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে এক দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ফলশ্রুতি। ১৯৭১ সালে হঠাৎ করে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল এমন ধারণা সঠিক নয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রাম এমনকি সশস্ত্র প্রস্তুতি এবং অনেক মনীষা ও সংগঠনের মেধা ও স্বপ্ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের জন্ম লাভের সম্ভাবনা হিসেবে কাজ করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর সেনারা তাদের বীরত্ব দিয়ে পাকিস্তানিদের পরাস্ত করেছেন। কখনো হয়েছেন পরাজিত, কখনো প্রিয়। সহযোদ্ধাদের ফেলে এসেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে কিন্তু তারপরেও হার মানেননি হানাদারদের কাছে।
সময়ের আবর্তনে ইতিহাস মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। যেমন করে একাত্তরে বাঙালি জাতি বুঝেছে বৃটিশ থেকে শোষণের যে ধারা তা পাকিস্তান আমলেও অব্যাহত রয়েছে। এই পরাধীনতার বেড়ি এবার ভাঙতেই হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনাবোধ জাগ্রত করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিল সারা বাংলা। বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর ইশারায় এদেশের মানুষ, লক্ষ মুক্তিসেনারা ভুলে গেল নিজেদের সকল ভেদাভেদ। সবার একটাই স্বপ্ন- মুক্ত দেশ, স্বাধীন পতাকা।
এমন চেতনাবোধের কালের সাক্ষী হলেন বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা। প্রকৃত অর্থে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল জনগণের যুদ্ধ। কেউ হয়তো অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছে; কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে পথ দেখিয়ে, খাবার দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে। ১৯৭১ সালে প্রতিটি ঘর হয়ে উঠেছিল এক একটি দুর্গ। তাই মুক্তিযুদ্ধকে বলা হয় জনযুদ্ধ। কৃষক-শ্রমিক-জনতা অল্পসময়ের প্রশিক্ষনে যেভাবে যুদ্ধ করেছে শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে, তা হতবাক করে দেয় বিশ্বকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি শুধু গল্প নয়, এ যেন বাঙালির সেই অস্তিত্ব যা আমাদের দিয়েছে আত্মপরিচয়।
বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চার দশক ইতিমধ্যেই পার হয়ে যাওয়ার এই পটভূমিতে এসে দেখা যাচ্ছে ১৯৭২ সালে যারা কাঁধে রাইফেল নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের আবেগ এবং বর্তমান প্রজন্মের সে সম্পর্কিত ধারণা ঠিক এক সমান নয়।
সত্যিকার করে বলতে, বর্তমান তরুণ যুবক যারা ১৯৭২ সালে নিতান্তই শিশু অথবা যাদের অনেকের সেদিন জন্মই হয়নি তারা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানেন না। অনেকেই এখনও শোনেননি সেই সময় আসলে ঠিক কি ঘটেছিল। কেন বাঙালিরা পাকিস্তানি সৈন্য ও এদেশে তাদের সমর্থক রাজাকার-আলবদর বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে সেদিন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যা জানি তা প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত রূপ মাত্র। তারা তাই জেনেছে যা তাদের শেখানো হয়েছে। তার সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল প্রেরণার কোনো সম্পর্ক নেই।
বস্তুত বাঙালিরা এমন একটি জাতি যার ইতিহাস এমনি করে বারবার মার খেয়েছে বিকৃতি আর অসত্যের কাছে। মিথ্যা ইতিহাসকে তারা সত্য বলে জেনেছে, ভুল তথ্যকে আঁকড়ে ধরে থেকেছে বুকে। আমাদের ইতিহাসের এই বিকৃতি শুরু হয়েছিল সেই প্রাচীনকাল থেকে যেদিন আর্য-অনার্য যুদ্ধে এখানকার আদিবাসী অনার্যরা হেরে গিয়েছিল।
আদিবাসীরা বিভিন্ন টোটেম বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল সেসময় রাক্ষস, পাখি, নাগ, দৈত্য, অসুর ইত্যাদি ছিল এখনকার আদিবাসীদের বিভিন্ন গোষ্ঠী, শ্রেণী ইত্যাদিরই নাম। তাদের নাম শুনে বুঝতে অসুবিধা হয় না আদিবাসি অনার্যরা আর্যদের বিরুদ্ধে গেরিলা পদ্ধতি ও সামনাসামনি মুক্তির লড়াই অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু জয় শেষ পর্যন্ত আর্যদেরই হয়েছিল। তাড়াতে তাড়াতে অনার্যদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুদূর শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। সেখানেও লড়াই হয়। রাম রাবণের যুদ্ধ হয়তো তারই স্মৃতিবাহী।
অথচ কী আশ্চর্য! আমরাই আমাদের সন্তানদের রাক্ষস খোক্ষসের রোমাঞ্চকর নেতিমূলক গল্পগুলি শোনাচ্ছি এবং সেগুলো প্রতিনিয়ত বলছি। আর এমন করে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের কাছে ভীতির এবং ইয়ার্কির পাত্র হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। নিজেরাই ঘৃণা করছি নিজেদের আদিবাসী পূর্বপুরুষদের সাথে। রাক্ষসদের এই গল্পের রচয়িতা আর্যরা এবং তাদের এদেশীয় অনুচররা। আর্যরা সফল হয়েছিল ইতিহাস বিকৃত করতে। কারন আজকে আর কখনই কেউ রাক্ষসদের মানুষ হিসেবে মেনে নিতে চাইবেনা, কেউ স্বীকার করতে চাইবেনা পূর্বপুরুষ হিসেবে তাদের মেনে নিতে।
১২ শতকের প্রথমার্ধে তুর্কীরা আসে এই দেশে। ইতিহাসের গল্পে আছে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি মাত্র ১২ জন ঘোড়-সৈন্য নিয়ে বাংলা দখল করেন এবং বাঙালির বিজাতীয় রাজা লক্ষণ সেন পিছনের দরজা দিয়ে বাড়ি থেকে পলায়ন করেন। এর ঐতিহাসিকতা এবং সত্য মিথ্যার বিতর্কে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু গল্পটি পড়ে অনেক বাঙালি মুসলমান গর্ববোধ করেন। এর মনস্তাত্ত্বিক কারণটি হলো এই যে, বখতিয়ার খলজি ছিলেন মুসলমান অথচ এদেশে ইসলাম প্রচার করার উদ্দেশ্যে আসেননি, এদেশে ইসলাম প্রচার করেছেন আউলিয়া-দরবেশরা। কিন্তু তুর্কী খলজীরা এসেছিলেন শাসকের চেহারাতেই। সুতরাং, আটশত বছর আগে তুর্কিদের কাছে হেরে গিয়েছিল- এই খবরে জাতি হিসেবে এদেশবাসীর উল্লাসিত হবার কোন কারণ নেই।
১৯৫৭ সালে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হারিয়ে ইংরেজ বণিক ক্লাইভ এদেশের ক্ষমতা দখল করেছিল। ইংরেজদের অনুচর মীর জাফর আলী খানকে সৎ ও বীরপুরুষ বলে পরিচিত করে বলা হয়েছিল, সিরাজউদ্দৌলা ছিল দুর্নীতিপরায়ণ ও কুশাসক। ইতিহাসে এই মিথ্যাচার কয়েকশত বছরে চললেও শেষ বিচারে বাংলার জনগণ এই মুল্যায়ন অবশ্য গ্রহণ করেনি। মীর জাফর চিহ্নিত হয়েছে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আর সিরাজউদ্দৌলা সাধারণের হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন।
বাংলার ইতিহাস কি আরও একবার মার খেতে যাচ্ছে? এই আশঙ্কা আজ আমাদের একার নয়। বাংলাদেশের যে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ১৯৭১ সালে এসে চূড়ান্ত রূপ পায় তার ইতিহাস আজ বিকৃত হতে চলেছে। কতক ক্ষেত্রে তা বিকৃতরূপও পাচ্ছে। এই আশঙ্কা বিপর্যয়ের কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে কিন্তু।
বাংলাদেশের আকাশে উত্থিত লাল-সবুজ পতাকাটি দিন পেরিয়ে মাস ঘুরিয়ে বছর ঘুরে ঘুরে পার করেছে চার দশক। সময়ের টানাপোড়নে হয়তোবা স্মৃতির পাতায় জমছে ধুলো কিন্তু মুছে যায়নি কিছুই। যখনই কোন মুক্তিযোদ্ধাকে সেই দিনগুলির স্মৃতিচারণ করতে বলি তারা বলেন- ভুলিনি সে দিনগুলো। তাদের ছলছল চোখ দেখে বুঝতে পারি কি সে ব্যথা। কি করে বলবেন যে তাদের হৃদয়ের গোপন কোন অংশ এখনো কোনো সহযোদ্ধার কথা মনে হলে চোখের কোণে জল আসে। এখনো কোনো সন্তান হারানো জননীকে দেখলে জড়িয়ে ধরেন বুকে। এখনো খুঁজে বেড়ান প্রিয় বন্ধু বা ভাইয়ের স্মৃতিমাখা অবয়ব।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে জানতে চায় না একথা ঠিক নয়। আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধাকে যখনই বলেছি তার কাছে আসবো তিনি শত ব্যস্ততার মাঝে আমাকে সময় দিয়েছেন। স্মৃতির পাতা খুলে পার করে দিয়েছেন ঘন্টা পর ঘন্টা। ১৯৭১ সালের রোমাঞ্চকর এবং বিভৎস কিংবা উৎকন্ঠিত স্মৃতিকথা শুনতে শুনতে কখন যে বেলা শেষে রাত নেমেছে, তারপরেও কথা যেন অসমাপ্ত রয়ে গেছে। না বলা রয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক স্মৃতি।
আজকের দিনে আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অনেক কিছুই জানে না। আবার তেমন ভাবে জানার সুযোগও পায় না। মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম,অতুলনীয় সংগ্রামের বিরুদ্ধে প্রচলিত ঘটনাগুলো এদেশের প্রজন্মেকে দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করে বলেই এর সঠিক ইতিহাস জানা আমাদের প্রয়োজন বলে করি।
দেশের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শৌর্যবীর্য। জাতি হয়তো তাদের তেমন কিছু দিতে পারেনি কিন্তু তারা থাকবে আমাদের চিন্তা-চেতনায় চিরদিন। বিজয়ের ৪৮ বছরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং এর মাহাত্ম্য বুকে ধারণ করাই হোক তরুণ প্রজন্মের অঙ্গীকার।
অনুপ্রেরণা-
১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং
২. ৭১ বীরত্ব বীরগাথা বিজয়।
২২টি মন্তব্য
মাছুম হাবিবী
মুক্তিযোদ্ধাদের সব সময় শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করি। উনাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের অহংকার, আমাদের প্রেরণা, আমাদের ভালোবাসা। আমরা সব সময় কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। তারপরও ছোট একটা কথা বলতে হয় এখনো অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তারা তাদের যোগ্য সম্মান পাচ্ছেনা। আমরা চাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দেশের সর্বোচ্ছ সুযোগ সুবিধা ভোগ করুক। নিপাক যাক অবৈধ মুক্তিযোদ্ধারা। লেখাটা মন ছুঁয়েছে ভাইয়া
তৌহিদ
এখনো অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তারা তাদের যোগ্য সম্মান পাচ্ছেনা। আমরা চাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দেশের সর্বোচ্ছ সুযোগ সুবিধা ভোগ করুক। নিপাক যাক অবৈধ মুক্তিযোদ্ধারা।
সুন্দর বলেছো ভাই ,ধন্যবাদ তোমাকে।
সুরাইয়া পারভিন
তরুণ প্রজন্মের জানা উচিত বিভৎস সেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, যাঁদের বুকের তাজা রক্তে অর্জিত এই বাংলাদেশ তাঁদের সম্পর্কেও। একটি স্বাধীন দেশ দেবে বলে ঝাপিয়ে পড়েছিল সেই শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে। সত্যিই আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধারা চির অম্লান হয়ে থাকুক তরুণ প্রজন্মের কাছে। হৃদয়ে থাকুক,মনে থাকুক মননে থাকুক 💓💓💓
তৌহিদ
হ্যা আপু একদম ঠিক বলেছেন। আমাদের প্রজন্মের জানা উচিত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। না হলে নিজেদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে ।আমাদের পরের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অজানাই থেকে যাবে হয়তো।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সুপায়ন বড়ুয়া
বিজয় তুমি লাখ শহীদের
রক্তস্নাত সোনলী সুর্যের দিন!
দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা
শোধিতে হইবে ঋন !
ভালোই হলো , বিজয়ী শুভেচ্ছা
তৌহিদ
আপনাকেও বিজয়ের শুভেচ্ছা দাদা। মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সঠিক ইতিহাস আজ চরমভাবে বিকৃত। ইতিহাস আজ অতীত কোনো ঘটনা নয় । ইতিহাস ফ্যাশনে,গল্পে পরিণত হয়েছে।
তৌহিদ
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা এবং জানানোর আমাদের প্রত্যেকেরই অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বারবার মার খাচ্ছে ।এর ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে এখনো সেই সব স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির দ্বারা। এই অবস্থার উত্তরণ জরুরি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু
সাবিনা ইয়াসমিন
নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছাতে না পারার বিভিন্ন কারণ আছে, তার মধ্যে একটা হলো বই পড়ার প্রতি অনীহা। এখনকার ছেলেমেয়েরা বই ঘেঁটে সঠিক ইতিহাস খোঁজার চাইতে অনলাইনে বিভিন্ন জনের স্ট্যাটাস পড়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা পেতে বেশি আগ্রহী। আরও আছে পাঠ্য বইতে তথ্য বিকৃতি। প্রতিবছর নতুন নতুন সিলেবাসে নতুন নতুন ইতিহাস যুক্ত করার কারনেও প্রকৃতি ইতিহাস জানার সুযোগ কমে যাচ্ছে। আমরা ছোটবেলায় যে ইতিহাস জেনে/ শিখে বড় হয়েছি তার বেশিরভাগ অংশই বদলে ফেলা হয়েছে। এখনকার স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ইতিহাস ভিন্ন তথ্যযুক্ত। আমরা যারা ৮০ এর পরে জন্মেছি তারাই সঠিক ইতিহাস এখনো সঠিক ভাবে জানি না, নতুনদের জানাবো কি?
তৌহিদ
একদম ঠিক বলেছেন আপু ।মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য পাঠ্য বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। বর্তমানে আবার তা সংশোধন করা হচ্ছে । আমাদের প্রজন্ম বই না পড়ার থেকে নেট ঘেটে ঘেটেই ভুলভাল তথ্য জানছে যা মোটেও কাম্য নয় এই অবস্থার উত্তরণ জরুরি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন
ছাইরাছ হেলাল
শ্রদ্ধা বীর শহীদদের, যাদের রক্তাক্ত বুক আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী।
তবে সঠিক ইতিহাস একটি কঠিন বিষয়! জানিনা আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যেতে পারব।
অনেক ধন্যবাদ, এত বড় একটি ভাবনা শেয়ার করার জন্য।
তৌহিদ
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা আমাদের প্রত্যেকেরই অবশ্য-কর্তব্য ।একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি যারা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। আমাদের প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানুন এটাই কাম্য।
আরজু মুক্তা
আগামী প্রজন্মদের জানানোর দায়িত্ব আমাদের। কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে। তবে যাঁরা লেখক তাদের কাছে মিনতি, প্রতি বছর এভাবে লিখা দিতেই থাকুক, তাহলে ১০ জন থেকে দুজনও যদি জানে মন্দ কী।
সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।
তৌহিদ
হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছেন আমাদের লেখার মাধ্যমে যদি দুজন পাঠকও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছু জানতে পারেন তাই বা কম কিসে? সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
মনির হোসেন মমি
নতুন প্রজন্ম জানবে কী করে?তার পথতো আমরাই বন্ধ করেছি। পাকিদের পাঠ্য বইতে ১৯৭১ এর যুদ্ধকে একটি দুবৃত্ত বাঙ্গালীদের গন্ডগোল বলে তাদের ছেলে মেয়েদের ইতিহাস শিখাচ্ছেন আর আমরা কী করেছি কী করছি..?? আমরা কী আমাদের ছেলে মেয়েদের পাঠ্য বইতে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পেরেছি? স্বাধীনের এতোগুলো বছরে ১৯৭১ এর যুদ্ধে পাকি পক্ষদের পূর্ণাঙ্গ লিষ্ট পাকিদের করা আছে ,তেমনি একটি লিষ্ট ভারতেরও আছে আর আমরা এখনো করছি তাও ভুলবালে ভরা।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী যার মুক্তিযুদ্ধের কোন অবদানই নেই তিনি করছেন দেখছেন মুক্তিযুদ্ধের লিষ্ট!কখনো আমরা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াকে বলি কখনো বা বঙ্গবন্ধুকে এ ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্ম জানবে কী করে যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস।
অনেক কিছুই বলার আছে….
চমৎকার লেখা।
তৌহিদ
ভাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবুও ভালো লাগে যে নতুন করে তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এই তালিকা যেন সঠিক হয় এটাই কাম্য।
দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানো অবশ্য কর্তব্য। আমাদের পিছনে সব সময় লুকিয়ে আছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। ভালো থাকবেন ভাই
ইসিয়াক
আপনার লেখার প্রতিটি বাক্যের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষনা করছি।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানবেন।
তৌহিদ
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ইতিহাসকে বিকৃত করে দেওয়া হচ্ছে।
তাহলে আমাদের মত নতুন প্রজন্ম জানবে কেমন করে। যেখানে পাকিস্তানের লিস্ট দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানানো হয়। আর রাজাকার হয় মুক্তিযোদ্ধা।
.
সুন্দর উপস্থাপন দাদা।
তৌহিদ
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানা এবং জানানো আমাদের একজন নাগরিক হিসেবে অবশ্যকর্তব্য। না হলে বাংলার ইতিহাস মার খাবে বারবার ।ভালো থাকবেন দাদা।
জিসান শা ইকরাম
১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয় ক্ষমতায় থাকার জন্য।
দীর্ঘ ২১ বছর একনাগাড়ে চলে এই বিকৃত ইতিহাস। একটি বড় দলের পিঠে ভর করে, তাদের প্রশ্রয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস পালটে যেতে থাকে। এক নাগারে এই বিকৃত ইতিহাস পাঠ্য বইতে পড়তে পড়তে লাখ লাখ শিক্ষিত একটি মিথ্যে ইতিহাস নির্ভর প্রজন্ম তৈরী হয়।
আজ সময় এসেছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার।
যতটা পারা যায়, সচেতন মানুষ লেখনির মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করুক। তাহলে ধীরে ধীরে সত্য ইতিহাস নির্ভর একটি প্রজন্ম তৈরী হবে।
ভারতের মুসলিম শাসকরা কেহই বাঙ্গালী ছিলেন না, তারা এই দেশে এসে বাঙ্গালী শাসকদের পরাজিত করে শোষন করতে এসেছিল। এমনকি সিরাজউদ্দোউলার পিতামহ এসেছিলেন আফগান থেকে। তারাও বাঙ্গালী নন।
ভালো লিখেছেন ভাই,
অনেক ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
তৌহিদ
আমি বেশ কিছুদিন থেকে মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা কিছু বই পড়ছি। কিন্তু হাতে গোনা দু-একটি বই ছাড়া বেশিরভাগ বইয়ে তথ্যবিভ্রাট রয়েছে দেখলাম। যার কারণে অনেক ঘাটাঘাটি করতে হয়েছে। আশ্চর্য হয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষে নিজের মতন করে লেখা হয়েছে।
যদি এমনটাই চলতে থাকে তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আর জানবেই না মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস। এটা দুঃখজনক। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকবেন