৩৩৩৩ সালের জানুয়ারি মাস চলছে।
সপ্তাহে শুক্র, শনি, রবি পরাপর তিনদিন থাকে ছুটির দিন। আজ শুক্রবার অর্থাৎ ছুটির দিনের প্রথম দিন। আজকের পর আরো দুই দিন অর্থাৎ শনি ও রবিবার হাতে থাকবে। ছুটির দিনগুলো প্রায় একই ভাবে কাটে আবিরের, ফেস কন্ট্রল গেমস খেলে অথবা বন্ধুদের সাথে অনলাইনে কথা বলে। আবিরের নাকে একটা সুগন্ধ ভেসে এল। নতুন প্রজাতির উদ্ভিদের ছালের তৈরী সুগন্ধীটা আগের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে। ফলে এখন গন্ধটা বেশ লোভনীয়। আবির নতুন একটা ফেস কন্ট্রল গেম নামিয়ে খেলতে শুরু করল। ফেস কন্ট্রল গেমের সুবিধা হল গেমগুলো নড়াচড়া না করেই খেলা যায়। এমনকি হাতও নাড়ানর প্রয়োজন পরেনা। শুধু মুখভঙ্গির মাধ্যমেই গেমগুলো নিয়ন্ত্রন করা যায়। তবে আই কন্ট্রল গেমে মুখভঙ্গি করারও প্রয়োজন পরেনা। কিন্তু আই কন্ট্রল গেম এখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। আবিরের মা কফি গরম করে এনে কাপটা আবিরের টেবিলের উপর রাখল। আবির কাপটা আরো একটু কাছে এনে কফির ঘ্রান নিয়ে আবার গেম খেলতে শুরু করল।
-আর কিছু লাগবে বাবা? আবির সুগন্ধী কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল, তুমি অযথা এত কষ্ট করছ কেন মা? তুমি অসুস্থ মানুষ, বলেছি বাসায় দুটো রোবম্যান নিয়ে আসি। ওরাই সব কাজ করত। আবিরের মা হাসল, দুটি রোবম্যান কেন? আবির বলল, কেন আবার, একটা তোমার কাজ করে দেবে আরেকটি আমার। আবিরের মা আবার হাসলেন, রোবম্যান যদি সব কাজ করে দেয় তাহলে আমি কি করব। আবির বলল, তুমি আরামে বসে থাকেব, স্ক্রীনে ফেস কন্ট্রল খেলবে। আবিরের মা বলল, ফেসকন্ট্রল খেলার বয়স কি এখন আছে? ডাক্তার বলেছে অল্প অল্প পরিশ্রম করতে যাতে শরীরটা ভাল থাকে। তাইতো বাসায় কোন রোবম্যান আনতে নিষেধ করছি। আবিরের কফি খাওয়া শেষ হল। আবিরের মা বলল, আর কিছু খাবি কিনা বললিনাতো। আবির মাথা নেড়ে জবাব দিল, না। আবিরের মা কাপটা টেবিল থেকে সরিয়ে অন্য আরেকটা টেবিলে রাখল। কাপ থেকে তখনও সুগন্ধ ভেষে আসছিল। আবির আরেকটি ফেস কন্ট্রল নামিয়ে খেলতে শুরু করল। আবিরের মা বলল, আবির গতকাল একটা গবেষনার ফল বেরিয়েছে, কিছু জেনেছিস? আবির বলল, কি ব্যাপারে মা?
:ফেস কন্ট্রলের ব্যাপারে। ফেস কন্ট্রলে খেললে শারিরীক মারাত্মক ক্ষতির প্রমান পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছে ফেসকন্ট্রল খেললে আয়ু অনেক কমে যায়। আবির অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকাল।
আবিরের মা নিশ্চিত করে বলল, হ্যা আবির। আবির স্ক্রিন থেকে ফেস কন্ট্রল কেটে দিয়ে নিউজ মিডিয়া ওপেন করে দেখতে লাগল। সম্প্রতিক নিউজে ঢোকার পর কয়েকটা ভিডিও চালু হয়ে গেল। ফেস কন্ট্রল গেমের উপরে গবেষনা নিয়ে একটি ভিডিও খুব মনযোগ দিয়ে দেখতে লাগল আবির। পৃথিবীর একজন সেরা বিজ্ঞানী ঘোষনা করে চলছেন ফেসকন্ট্রল গেমের ক্ষতির বিষয়ে। তার পাশে দাড়িয়ে আছেন আরো অনেক প্রবীন বিজ্ঞানী। তারাও নানা তত্ব প্রমান সাংবাদিকদের বলে চলছেন। গবেষনা করে তারা এটাই প্রমান করতে পেরেছেন যে ফেস কন্ট্রল গেম খেললে মানুষের গড় আয়ুর চারভাগের একভাগ কমে যায়। আবিরের মন খারাপ হয়ে গেল। আবিরের মা বলল, ফেস কন্ট্রল গেম খেলা ছেড়ে দেয়া উচিৎ তোমার। আবির কোন কথা বলল না। ও ভাবতে লাগল, ফেসকন্ট্রল খেলার এত দিনের অভ্যাস কিভাবে ছাড়তে পারবে। আর ওর মত আরো কত মানুষ আছে যারা ফেসকন্ট্রলে আশক্ত। তারাও কি তাহলে ফেসকন্ট্রল খেলা ছেড়ে দেবে? এতে সমাজে বিশাল একটা প্রভাব পরবে। আবিরের মা বলল, শুনেছি খুব তারাতারি ফেসকন্ট্রল নিশিদ্ধ হয়ে হবে। আবির নিচু স্বরে বলল, তাহলেই ভাল হবে। আবিরের মা বলল, তুমি ফেসকন্ট্রল ছেড়ে দাও। আবির বলল, হ্যা ছেড়েই দিতে হবে। আবিরের মা বলল, আমারও একসময় ফেসকন্ট্রলের নেশা ছিল, না জানি কত আয়ু কমে গেছে।
আবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু রনিকে নক করল। রনির চেহারা স্ক্রিনে ভেসে উঠল মুহুর্তে। রনি বলল, কি খবর দোস্ত, ফেসকন্ট্রললের ব্যাপারে কিছু জেনেছিস? আবির বলল, হ্যা এই মাত্র জানলাম সব কিছু। তোরা কি ফেসকন্ট্রল খেলা ছেড়ে দিয়েছিস? রনি বলল, আমিতো খবরটা জানার সাথে সাথেই ফেসকন্ট্রল খেলা ছেড়েদিয়েছি। তুই কি খেলছিস নাকি? আবির বলল, আমিও আর খেলব না। আবির আর রনির মধ্যে কিছুক্ষন কথা চলল। আবিরের মা তার নিজের রুমে চলে গেল।
আবিরের সময় কাটেনা। সময় যেটুকু কাটত তা ফেস কন্ট্রল খেলে। এখন আর ফেস কন্ট্রল খেলা ঠিক হবেনা। খেললে আয়ু অনেক কমে যাবে। একটা হিসাব করল আবির, সেই ২০ বছর বয়স থেকে ফেসকন্ট্রল খেলে আসছে, এখন বয়স প্রায় ৮০ ছুই ছুই করছে। তারমানে ৬০ বছর ধরে সপ্তাহে তিনদিন ফেসকন্ট্রল খেলে আসছে সে। এতে আয়ু কত কমে গেছে তার হিসাব করতে চাইল না আবির। যা হবার তা হয়ে গেছে, কিছুই করার নেই। বিকেলবেলা আবির বাইরে ঘুরতে বের হল। খুব সুন্দর আবহাওয়া। সূর্যটা উজ্জল আলো ছড়াচ্ছে পশ্চিম আকাশ থেকে। অসংখ্য উচু দালান কোঠার ফাকে ফাকে সবুজ গাছপালা বেড়ে উঠেছে। আকাশে মাঝে মাঝে এয়ার জানের সাই সাই শব্দে উড়ে যাচ্ছে। এয়ারযান একটা অদ্ভুত জিনিস, একটা এয়ারযানে সর্বোচ্চ দুইজন চড়তে পারে, অনেকটা আদিম যুগের সাইকেলের মত। খুব দ্রুত উড়ে হট ডোরের সামনে এসে হঠাৎ থেমে যায়। তারপর আস্তে আস্তে হট ডোর খুলে গেলে এয়ারযান রুমের ভিতরে ঢুকে যায়। মানুষ যতক্ষণ এয়ারযানের মধ্যে থাকে ততক্ষন বাইরের কিছুই দেখতে পায়না। কারন এয়ারযানের ভিতর থেকে বাইরে তাকানর কোন ব্যাবস্থা থাকেনা। আর বাইরে দেখার জন্য ব্যাবস্থা থাকলেও চলমান অবস্থায় কিছুঈ দেখা যেতনা। কারন এয়ারযান খুব দ্রত চলে। কোন কোন এয়ারযান ৯০০০ হাজার কিলোমিটার বেগে চলে। আর এত গতিতে কোন চোখ কোন কিছু স্পষ্ট দেখতে পারবেনা এটাই স্বাভাবিক। আবির রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে একটা খোলা যায়গায় আসল। রাস্তায় কোন মানুষজন দেখা যায়না, মাঝে মাঝে দুএকটা রোবম্যান দেখা যায় দ্রুত হেটে চলে যাচ্ছে। আবির খোলা যায়গাটায় এসে আপন মনে চারদিক দেখতে লাগল। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে সব কিছু। সবখানে প্রযুক্তির ছোয়া, আকাশে কৃতিম উপগ্রহ ভেসে বেড়াচ্ছে, এয়ারযান সাই সাই করে উড়ে চলে যাচ্ছে, রোবম্যান রাস্তায় হেটে বেড়াচ্ছে। বড় বড় দালান কোঠার মাঝে বিভিন্ন প্রকার সবুজ গাছপালা, ফুল গাছের সংখাই বেশি। দিন দিন নতুন প্রজাতির গাছ আবিস্কার করছে বিজ্ঞানীরা। রোবম্যানরা এসে সেই গাছগুলো দালান কোঠার ফাকে ফাকে রোপন করে দেয়। ফলে পরিবেশে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়না। সে হিসিবে রোবম্যানের অবদান অনেক বেশি। ওরা সব কাজ করতে পারে, ক্লান্ত হয়না। আবির ভাবতে লাগল, হাজার হাজার বছর পরে পৃথিবী কেমন হবে, কিকি পরিবর্তন ঘটবে পৃথিবীতে, নতুন আর কি কি প্রযুক্তি আবিস্কার হতে পারে। কিন্তু কিছুই ধারনা করতে পারলনা ও। রক্তিম সূর্যটা পশ্চিম আকাশে তলিয়ে যাচ্ছে। একটা লম্বা গাছ সূর্যটাকে কিছুটা আড়াল করে রেখেছে। তবুও কিছুটা লাল আলো আবিরের গায়ে এসে পড়ল। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই রাস্তার উজ্জল বাতিগুলো জলে উঠল। আবির বাসায় ফিরে আসল।
২.
আবির ঘরে এসে দেখল তার মা বিছানায় শুয়ে আছে। স্বাধারনতো এসময়ে মাকে শুয়ে থাকতে দেখা যায় না। তাই আবির মায়ের কাছে এসে বসল, মা তোমার শরীর খারাপ করছেনাতো? আবিরের মা প্রশ্নটা যেন শুনেও শুনল না। বরং বলল,
:কোথায় গিয়েছিলে বাবা?
:অনেকদিন পরে বাইরে ঘুরে আসলাম।
:কিছু দেখতে পেলে?
:তেমন কিছু দেখতে পাইনি। আগেতো রাস্তায় দুএকজন মানুষ দেখা যেত, এখনতো দেখছি শুরু রোবম্যান ঘুর ঘুর করছে।
:এখনতো সবার রোবম্যান আছে, আমাদের সময় ছিলনা। তাই এখন মানুষ সব কাজ রোবম্যান দিয়েই করায় আর নিজে ঘরে বসে থাকে। বাইরে বের হয়না।
:কিন্তু মা, আমি অন্তত এখন থেকে বাইরে ঘুরতে যাব। বাইরে দারুন পরিবেশ দেখে এলাম।
:আমারও মাঝে মাঝে যেতে হবে। ডাক্তার বলেছে একটু হাটাচলা করতে। শরীরের যা অবস্থা। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।
:কি সব কথা বলছ মা! তোমার কিছু হবেনা। তোমাকে আরো বড় ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাব। তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।
:আরে বাবা, চিকিৎসা করিয়ে কি বার্দ্ধক্য দুর করা যাবে? এমন কোন প্রযুক্তি কি আবিস্কার হয়েছে?
আবির কোন কথা বলেনা। শুধু চুপ করে বন্ধ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। স্ক্রিনটা দেয়ালের শাদা রংয়ের সাথে এমন ভাবে ম্যাচ করেছে যে হঠাৎ দেখলে মনে হয় ওখানে কোন স্ক্রিন নেই।
আবিরের মা বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পারলনা। আবির বিষয়টা ভালভাবে খেয়াল করেছে। আবির বলল, মা সত্যি করে বল তোমার শরীর খারাপ করছেনাত?
আবিরের মা বলল, চিন্তা করিশ না বাবা ঠিক হয়ে যাবে। আবির বলল, আমি কি ডাক্তার ডাকব মা? আবিরের মা বলল, দরকার নেই বাবা। আমার কিছু হয়নি। আবিরের মা উঠে কিচেনের দিকে যেতে শুরু করল। আবির বলল, কিচেনে যাচ্ছ কেন মা? আবিরের মা বলল, খাবার গরম করে নিয়ে আসি। আবির বলল, তুমি শুয়ে থাক। আমি গিয়ে খাবার গরম করে আনি। আবিরের মা বলল, পারবি তুই? আবির বলল, কেন পারব না মা? আমিকি এর আগে খাবার গরম করিনি।
আবিরের মা বলল, না আমি তা বলছিনা। আমি বলছি তোর কষ্ট হবেনা?
আবির বলল, তুমি অসুস্থ মানুষ হয়েও যদি তোমার কষ্ট না হয় আমার কষ্ট হবে কেন? আবিরের মা আবার বিছানায় শুয়ে পরল। আবির কিচেনে খাবার গরম করতে চলে গেল। খাবার গরম করা খুবই সহজ। প্রথমে ফায়ার পট চালু করে তার মধ্যে সুপ ঢেলে দিতে হবে তারপর মাসরুমের তৈরী মোরব্বা সুপের মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। ২ মিনিটের মধ্যেই খাবার গরম হয়ে যাবে। আবির কিচেন থেকে চেচিয়ে বলল, কফি খাবে মা? আবিরের মা বলল, পারবি বাবা?
আবির অটোফ্লাক্সে দুই লিটার কফি গরম করল। কাপে ঢালতেই সুগন্ধটা ছড়িয়ে পরল ঘর জুড়ে। কফির ঘ্রানে ঘর এখন ম ম করছে।
৩.
শনিবার সকাল ১১ টা। আবির ঘুম থেকে উঠল। উঠে কিছুটা চিন্তিত হল। মা এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। প্রতিদিন ১০ টার পরই ঘুম থেকে উঠে যায়।
আবির মায়ের রুমের সামনে এসে দাড়াল। আবিরের মা আবিরের ছবি দেখতে পেল স্ক্রীনে। সাথে সাথে রুমের দরজা খুলে গেল। আবির মায়ের পাশে এসে বলল। আবিরের মা বলল, কখন উঠলি ঘুম থেকে? আবির নির্লিপ্তভাবে বলল, এই মাত্র। তোমার শরীর খারাপ করছে মা? আবিরের মা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল, শরীরটা ইদানিং খুব খারাপ লাগছে। আবির বলল, তুমি চিন্তা করনা মা। আমি ডাক্তার ডাকছি। চিকিৎসা করলে তোমার শরীর ঠিক হয়ে যাবে। আবির ডাক্তার সোলায়মানকে নক করল। ডা সোলায়মান ভাল নামকরা ডাক্তার। চিকিৎসার অনেক ক্ষ্যাতি আছে শহরে। কিছুক্ষন পরে ডাক্তার সোলায়মানের এয়ারজান এসে হট ডোরের সামনে থামল। আবির হট ডোর খুলে দিলে ডাক্তারের এয়ারযান রুমের ভিতর প্রবেশ করল। এয়ারযানের ভিতর থেকে ডাক্তার সোলায়মান বেরিয়ে আসলেন। সাথে সাথে বেরিয়ে আসল তার সহকারী একটি রোবম্যান। ডাক্তার আবিরের মাকে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখার পর আবিরকে আলাদা রুমে ডাকলেন। ডাক্তার বললেন, উনি আপনার কি হন? আবির বলল, আমার মা হন। ডাক্তার বললেন, ওনার বয়স কত হতে পারে? আবির বলল, ২২০ বছর প্রায়। ডাক্তার বললেন, দেখুন ওনার কোন রোগ নেই। আবির অবাক হয়ে তাকাল ডাক্তারের দিকে, তাহলে? ডাক্তার বলল, দেখুন আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ কর। উনি এখন অনেক বৃদ্ধ্যা হয়ে গেছেন। খুব তারাতারি মারা যেতে পারেন উনি। আবির অবাক হয়ে বলল, কিন্তু আমার মায়ের বয়সতো মাত্র ২২০ বছর? অনেকেতো ৩০০ বছরও বেচে থাকে। ডাক্তার বললেন, আপনার মা কি আগে ফেসকন্ট্রল খেলতেন? আবির মাথা নেড়ে উত্তর দিল, হ্যা। ডাক্তার বললেন, সে কারনেই হয়ত তার আয়ু কমে গেছে। আবির বলল, ফেসকন্ট্রল খেললে আয়ু কমে কেন? ডাক্তার বললেন, ফেসকন্ট্রল গেম খেলার সময় এক ধরনের ক্ষতিকর রেড়িয়েশন নির্গত হয় স্ক্রিন থেকে।
আবির কিছুক্ষন চুপ করে থাকল। ডাক্তার চেয়ারে বসে আছেন রোবম্যান দাড়িয়ে আছে ডাক্তারের পাশে।
আবির বলল, ডাক্তার সাহেব, মানুষকে বুড়ো থেকে যুবক বানানর চিকিৎসা নেই?
ডাক্তার বললেন, দেখুন মানুষের যে কোন রোগের চিকিৎসা আছে। কিন্তু কেউ যদি বৃদ্ধ হয়ে যায় তাকে যুবক বানার চিকিৎসা এখনও আবিস্কার হয়নি। আর ভনিষ্যতে হতে পারে তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না।
আবির বলল, আমার মা আর কত দিন বাঁচতে পারেন? ডাক্তার বলল, বেশি হলে এক সপ্তাহ।
ডাক্তার সোলেমানের এয়ারযাটা উড়ে চলে গেল দ্রুত। আবিরের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। আর মাত্র এক সপ্তাহ মাকে দেখতে পারবে আবির। তারপর আর কোনদিন দেখা হবেনা। আবিরের মাই তার একমাত্র আপনজন। বাবা মারা গেছে প্রায় ৩০ বছর আগে। তারও ফেসকন্ট্রল খেলার খুব নেশা ছিল।
আবিরের মা আবিরকে ডেকে বলল, ডাক্তার কি বললরে আবির? আবির বলল, সব ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই। আর এই ওষুধগুলো খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আবিরের মা ওশুধুলো নেড়ে চেড়ে দেখল। ওগুলো স্বাধারন একপ্রাকার বলবৃদ্ধিকারক ওশুধ। খেলে গায়ে বল পাওয়া যায়।
আবিরের মা বলল, তুই যদি চাশ রোবম্যান কিনে আনতে পারিশ। আবির বলল, দরকার নেই মা। আমি নিজেই সব কাজ করতে পারব।
কিছুদিন পরে পৃথিবীর সব খানে ফেসকন্ট্রল নিষিদ্ধ করা হল।
৪.
৩৩৩৬ সালের জানুয়ারি মাস। একটা রোবম্যান সি এন আর কিনে এনেছে আবির। স্ক্রিনের সামনে বসে বন্ধু রনির সাথে কথা বলছে। রোবম্যান সি এন আর কফি তৈরী করছে। ওর নাম সি এন আর কিন্তু আবির সংক্ষেপে শুধু সি বলে ডাকে। সি কফি নিয়ে এসে কাপটা টেবিলের উপর রাখল। খুব সুন্দর গন্ধ আসছে কফি থেকে। আবির কফিতে চুমুক দিল। সি বলল, আর কিছু লাগবে?
নিজের অজান্তেই আবিরের মায়ের কথা মনে পরল। প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে আবিরের মা মারা গেছে, অল্প বয়সে। ডাক্তার বলেছিল, ফেসকন্ট্রল খেলার কারনেই আয়ু কমে গিয়েছিল।
আবিরের চোখ থেকে একফোটা পানি গড়িয়ে পরল। সি দেখেছে কিন্তু কোন প্রশ্ন করলনা। কারন ওতো মানুষ না, মানুষের আবেগের কি বুঝবে?
৪টি মন্তব্য
আবু জাকারিয়া
দুঃখিত, লেখার মান সম্প্রতি খারাপ হয়ে গেছে। মান ভাল না করে আর পোষ্ট করব না।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
পড়লাম। কাহিনীটা বুঝতে পারকনি। অথবা মুল বক্তব্য। জাস্ট বুঝলাম ভবিষ্যতের একটা জিনিস লহারাপ ছিলো, তাই সেটা নিষিদ্ধ করা হল। মানবিক ব্যাপার কিছু এসেছে, কিন্তু সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনী হিসেবে এটাকে জাসয়িফাই করেনা। আমার দুর্বল লাগলো কেন জানি।
খেয়ালী মেয়ে
পড়েছি আপনার লেখাটা–বুঝারও চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোথায় যেন কিছু একটা মিসিং মনে হলো–অবশ্যই আমার ধারনা ভুলও হতে পারে….
খসড়া
আরও লিখুন লিখতে লিখতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।