:T
২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ রবিবারের বিএনপি-জামায়াত তথা নাম সর্বস্র ১৮ দল কথিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামের কর্মসূচীকে টার্গেট করে ৫ মে ২০১৩ হেফাজতে ইসলামের অরাজকতা ও ব্যাপক নাশকতার চেয়ে ভয়াবহ নাশকতা ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে আইএসআইয়ের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে উগ্র ধর্মান্ধ ও জামায়াত শিবিরের আড়ালে জঙ্গিসংগঠনগুলো। দেশের বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাকে সম্পূর্ণ অচল করে দিয়ে কয়েকদিন রাজপথে অবস্থান করে সরকার পতনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো কৌশল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াত-শিবির। এই কর্মসূচি সফল করতে প্রতি জেলা থেকে এক হাজার করে শিবির কর্মী ঢাকায় আসছে। এসব জঙ্গিদের ঢাকায় আনতে অবরোধ কর্মসূচি না দিয়ে যাতে ওরা সাধারণ যাত্রিবেশে ঢাকা আসতে পারে তার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জামায়াত নেতাদের মুক্তি ও ফাঁসির প্রতিশোধ নিতে চায় জামায়াত শিবির। তাই নাশকতার সুপরিকল্পিতভাবে ছক এঁকে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সাতক্ষীরা, বগুড়া চট্টগ্রাম বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ঢাকা নিয়ে আসা হচ্ছে শিবিরের দুর্ধর্ষ প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডারদের।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গত আড়াই বছর ধরে বিভিন্ন ধাপে হরতাল-অবরোধের মতো কঠিন আন্দোলনের ডাক দেয়া সত্ত্বেও মাঠে-ময়দানে বিএনপির মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী ক্যাডার ও জামায়াত-শিবির ছাড়া বাকি দলগুলোর কাউকে মিছিল বা কোন ধরনের সভাসমাবেশে দেখা যায়নি। তাই এই ঘোষিত বাহারি নামের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ আড়ালে নিজেরদের ভিতু কাপুরুষ নেতাকর্মীদের ওপর আর কিছুতেই আস্থাস্থাপন করতে না পেরে বিএনপি ও জোটের শরিকরা জামায়াত-শিবিরের ঘাড়েই ভর করে এই কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রার ঘোষণা দিলেও জামায়াত একে ‘নিজেদের নেতাদের মুক্তির চূড়ান্ত আন্দোলন’ ধরে ফাঁয়াদা লোটার ছক আঁকছে। বিএনপির এ জামায়াত নির্ভরতার অন্যতম কারণ হলো; বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীরাই এখন মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করছে একদিকে যৌথবাহিনীর অভিযান অন্যদিকে সেনাবাহিনী মাঠে আইনশৃংখলা রক্ষায় তৎপর রয়েছে। এ অবস্থায় মাঠে নেমে জেলখাটর ভয় তাদের সর্বদা তাড়িত করছে। শুধু তাই নয় গত দুইবছর বিশেষ করে অক্টোবর থেকে টানা দুইমাস সময় ধরে এত কঠোর কঠোর কর্মসূচি দিয়েও যেহেতু সরকার হটানো দূরে থাক একবিন্দু টনকও নাড়াতে পারেনি; কাজেই এখন এই যৌথবাহিনী ও সেনাবাহিনীর তৎপরতার মুখে কিছুই করা যাবে না। সেই কারণেই সক্রিয় নেতাকর্মী পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা কর্মীরা মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে বিএনপির পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে কিছুই করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন দলীয় শীর্ষ নেতারাও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন একই কথা। কিন্তু তবু শুধু মাত্র জামায়াত-শিবিরের চাপে বা ভরসায় এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও গোয়েন্দাদের মতে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ নামে ২৯ ডিসেম্বর কত ভয়াভয় নাশকতা চালাতে পারে তার অনেক প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে শেখ হাসিনা ও জয়ের জন্য বাঘেরহাটে জামাতিরা প্রতিকী কবর খুঁড়ে রেখেছে। যদি এ আন্দোলনে তারা সফল হয় এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর পুত্র জয়কে হত্যা করতে পারে তা হলে এখানে তাদের কবর দেয়া হবে। শুধু প্রতিকী কবর খুড়েই তারা থেমে থাকেনি বরং সেখানে শেখ হাসিনা ও জয়ের নাম ফলকও টানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় তারা ২৯ ডিসেম্বর কি পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে।

গত দুই মাস ধরে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত যে ভাবে নাশকতার মাধ্যমে দেশকে মৃত্যুকূপে পরিনত করেছে এতে দেশের মানুষ তাদের দিক থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মনে করে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়াকেফহাল মহল এবং বিএনপির প্রগতিধারা ও মুক্তিযোদ্ধা নেতারা। তারা মনে করছেন জামায়াত ইতিমধ্যেই একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষিত ও চিহ্নিত হয়েছে। দেশের উচ্চাদালতও জামায়াতকে একটি ক্রিমিন্যাল সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে। কাজে এমন একটি ক্রিমিন্যাল সংগঠনের দাবার ঘুটি হয়ে বিএনপি যে একের পর এক দেশবিরোধী, নাশকতামূলক কর্মসূচি দিয়ে চলেছেন এতে দল যে কতবড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে তা অনুমান করতে ব্যর্থ হলে দল হিসেবে বিএনপি অস্থিত্বসংকটে পড়তে সময় লাগলেবেনা। সচচেয়ে বড় কথা বিএনপি-জামায়াত যে একের পর এক অবরোধ ডেকে মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে এতে দলের সাধারণ সমর্থরা পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। একদিন বিএনপির মূল চালিকাশক্তি ছাত্রদল ও তরুণসমাজ এখন নিক্রিয়। তারা ধীরে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে বিএনপি হলো আসলেই একটি স্বাধীনতাবিরোধীদের একটি প্লেটফরম। সেই কারণেই বিএনপি-জামায়াতের ডাকা পরপর দুই দফা অবরোধ শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়েছিল। এই অবরোধ ও হরতালে একজনও সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেননি বিএনপি-জামায়াত। শুধুমাত্র পাকিস্তানী গোয়েন্দাসংস্থা আইএসআইয়ের মদদ ও অর্থপুষ্ট জামায়াত, ছাত্র শিবির, ছাত্র দল ও যুবদলের কিছু সন্ত্রাসী নেতাকর্মী যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, জবাই করে হত্যা করেছে, বাস, ট্রেন পুড়িয়েছে। ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে ট্রেনকে দুর্ঘটনার কবলে ফেলে মানুষ হত্যা করে মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করে এই অবরোধ সফল করতে চেয়েছে তাতে দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এদের ওপর ভীষণ ক্ষুব্দ।

এই গোষ্ঠী বিভিন্ন নাশতকতা সৃষ্টির মাধ্যমে গত দুই মাসে শতাধিক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এমনকি তারা গরু, ছাগল অবধি পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ প্রসংগে গতকাল ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ দৈনিক জনকন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় তাঁর‘২৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে ‘অপারেশন ১৯৭১’নামের উপসম্পাদকীয় শিরোনামে বলেছেন, “...মার্চ ফর ডেমোক্রেসির আসল উদ্দেশ্য দুটি। এক, দেশে একটি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন করে ফেলা। যার ভেতর দিয়ে তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বের করে আনবেন এবং কোনক্রমেই কোন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া নয়। কারণ, বেগম জিয়া নিজেই বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি সকল যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দেবেন। তিনি ভালভাবে জানেন যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিতে গেলে তিনি এক ঘণ্টাও ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। তখন শুধু শাহবাগ নয়, সারাদেশ গণজাগরণ মঞ্চ হবে। তাই তাদের ক্ষমতায় যেতে হবে তালেবানী স্টাইলে। সারাদেশকে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে আনার পরে। যাতে সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসের মাধ্যমে যেন সাধারণ মানুষকে প্রতিহত করতে পারে।”

জনকন্ঠের বিভাষ বাড়ৈ’র অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,“গত দুইমাস ধরে দেশব্যাপী এই ভয়াবহ সন্ত্রাস চালানোর পরেও এখন দুটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, বেগম জিয়া ও জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ঢাকায় বড় কোন সন্ত্রাস করতে না পারার কারণে তারা কোন মতেই সরকারের নিয়ন্ত্রণের ওপর আঘাত হানতে পারছে না। অন্যদিকে ঢাকায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় থাকায় ইতোমধ্যে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে সরকার মোটামুটিভাবে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন সস্ত্রাসীদের দখলে থাকা স্থানগুলোর দখল পুনরুদ্ধার করেছে যথেষ্ট পরিমাণে। আর এ কারণেই বেগম জিয়ার এখন এই নতুন কৌশল। অর্থাৎ দেশের বেশিরভাগ সন্ত্রাসীকে ঢাকায় নিয়ে আসা। বেগম জিয়া বলতে পারেন আমি তো আলেম ওলামাদেরও আসতে বলেছি। তারা কি সন্ত্রাসী? দেশের প্রকৃত কোন আলেম ওলামা সন্ত্রাসী নয়। কিন্তু যারা বেগম জিয়ার মেহমান। যারা গত ৫ মে ঢাকায় এসে ঢাকাকে প্রায় ধ্বংস করে দেবার কাজে নেমেছিল তারা যে সন্ত্রাসী তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই এখন একটি বিষয় একেবারে খুবই পরিষ্কার যে, বেগম জিয়ার ডাকে ২৯ তারিখ কোন সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসবে না।”

বেগম খালেদা জিয়া ২৪ ডিসেম্বর সংবাদ ব্রিফিংএ বলেছেন (এটাকে সংবাদ সম্মেলন বললেও তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি তাই এটা সংবাদ সম্মেলন নয় এটা ছিল সংবাদ ব্রিফিং) সেই সংবাদ ব্রিফিংএ তিনি বলেছেন, বিচারালয়ে ও বিচারপতিদের বাড়ির সামনে বোমা মারছে সরকার। অর্থাৎ তারা ওইদিন ঢাকার যাবতীয় আদালত ভবন আক্রমণ করবে এবং একইভাবে দোষ চাপাবে সরকারের উপর। সেদিন বেশি আক্রান্ত হতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে গঠিত আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বেগম জিয়াও এই ট্রাইব্যুনাল এর আগে ভেঙ্গে দিতে বলেছেন। আর জামায়াত তো সব সময়ই বলছে। অন্যদিকে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। তাই ট্রাইব্যুনাল থেকে সুপ্রীমকোর্ট কোন কিছুই তাদের হামালার বাইরে থাকবে না। অন্যদিকে আলেম ওলামাদের বেগম জিয়া ঢাকা আসতে বলেছেন, এই আলেম ওলামারা ৫ মে ঢাকায় কি তান্ডব চালিয়েছিল তা মানুষ ভুলে যায়নি। সেদিন তারা বাংলাদেশ ব্যাংক পিুড়িয়ে দিতে না পারলেও এবার তা করবেন। থানা ও পুলিশ ব্যারাক আক্রমণ করার টার্গেটও তাদের আছে। সম্ভব হলে আক্রমণ করবে জেলখানাও। টার্গেট হবে মন্ত্রীপাড়া একই সাথে বড় বড় বিপণী বিতান ওব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও ধ্বংস করবে।

এর মধ্যে দেশের ফটিকছড়ি, সাতক্ষীরা, বগুড়া, উখিয়া, সীতাকুণ্ড, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট, সুন্দলগঞ্জ, সাথিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ নানান স্থানে ভয়াবহ সন্ত্রাস হয়েছে। কোন কোন এলাকাকে সন্ত্রাসীরা ‘মিনি পাকিস্তান’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কোথাও কোথাও তারা পাকিস্তানী পতাকাও উড়িয়েছিল। এবার ঢাকা দখল করে এখানেও পাকিস্তানী পতাকা উড়ার চেষ্টা করবে। তাই যে কোনোভাবেই হোক ‘মার্চ ফর ডেমোক্রিসির উছিলায় রাজধানী ঢাকা দখল নেবার চেষ্টা চালাবে তারা। তাদের অর্থের কোন অভাব নেই। টাকা আসছে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কাছ থেকে। দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থার তথ্যমতে এই মার্চ ফর ডেমোক্রেসির পরিকল্পনা হয় ২২ ডিসেম্বরের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের বাসায় বসে। সেই গোপন সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চার শীর্ষ নেতা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচানার ভিতর দিয়ে এই পরিকল্পনা প্রস্তুত হয়। তাই বাস্তবে ২৯ ডিসেম্বর।

পরিশেষে বলতে চাই, বিএনপি-জামায়াত-উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী তথা ১৮ দলীয় জোটির এই কর্মসূচি নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। কি জানি এ দিন কি হয়। কেননা, ৫ মে ২০১৩ বেগম জিয়ার হেফাজতি মেহমানরা মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে অবস্থান নিয়ে যে নাশকতা চালায় সে স্মৃতি মানুষের মন থেকে বিস্মৃত হয়ে যায়নি। এ অবস্থায় সরকারের উচিত কঠোরভাবে আইনশৃংখলা রক্ষার মাধ্যমে তাদের মনের শঙ্কা দূর করা।

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ