মাধবীলতার এলোমেলো দোলনে সেই যে বেজেছিল হাহাকার ঘন্টা, দিনের পর দিন পেরিয়ে দীর্ঘশ্বাস আর চাপা আর্তনাদে মন আজ নিষ্প্রভ ঘরবন্দী কালের গহীন অন্ধকারে। জোনাকির আলোয় মাঝেমধ্যে এলোকেশীর শুভ্র মুখচ্ছবি যাও বা চোখে ভাসে সে যেন ক্ষণিক মায়া ছাড়া আর কিছু নয়।
থরথর কেঁপে ওঠা সুপারি গাছের পাতায় রুদ্রমূর্তি শিবনৃত্য দেখে বুক ধড়ফড় করে। মাথার উপর ছায়া দেয়া ঘরের চালটিকে দূরে উড়িয়ে নিতে চায় শিবানী। রক্ষে করো মা জননী! একটিবার শান্ত হও। নিজ হাতে গড়া সাধের বাগানকে তছনছ হতে দেখে চোখের নোনাপানি আর বৃষ্টিকে আলাদা করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার।
জুবুথুবু বিরসবদন ময়না শালিক আর গাংচিল ঠাঁই নিয়েছে একমাত্র বিছানাটিতে। কেঁচো, সাপ, গোক্ষুরের ভয়ে ত্রাহিত্রাহি চিৎকার করা দুধেল গাঁইয়ের রশি খুলে দিয়েছিলাম কবেই তবে আমায় ছেড়ে যায়নি সে আজও। এটা ঠিক ভালোবাসা নয়, এটি জীবননাশের ভয়। এ ভয় আমার তোমার গৃহপালিত পশুর সকলের। আত্মারাম খিঁচে দৌড় দেয়ার থেকে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখাই এখন শ্রেয়!
অথচ এ বন্যায় কতজনাই নেমকহারামী করলো। নিজেদের আশ্রয়ের এক হাত জায়গাও বানভাসিদের দেয়নি, না খাবার না একটু মুখের হাসি! প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস, ভেসে গিয়েছে অনেকেই। তাদের আর্তচিৎকার শুনে বুঝেছি অপঘাতে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া মানুষের কাতারে সামিল হয়েছে তারা। ক্ষুধার্ত রাতজাগা প্যাঁচার মত আমি ভালোবাসার ছোট্ট কুটিরে আজও বেঁচে আছি নিভে যাওয়া প্রদীপের মতন।
কোমর পানি একসময় নেমে যাবে, আবার সবুজ সমারোহে সেজে উঠবে উঠোনবাগান। পাখিদের কোলাহল মুখরিত আমগাছে আসবে নতুন কুঁড়ি। সে দিন খুববেশি দূরে নয়। এখন শুধুই অপেক্ষা, একমুষ্টি ভাত আর একচিমটি লবনের। বড্ড ক্ষুধার্ত আমি আর আমার বানভাসি জীবনসঙ্গীরা।
(ছবি- নেট থেকে নেয়া)
২৫টি মন্তব্য
ইঞ্জা
মাধবীলতার এলোমেলো দোলনে সেই যে বেজেছিল হাহাকার ঘন্টা, দিনের পর দিন পেরিয়ে দীর্ঘশ্বাস আর চাপা আর্তনাদে মন আজ নিষ্প্রভ ঘরবন্দী কালের গহীন অন্ধকারে। জোনাকির আলোয় মাঝেমধ্যে এলোকেশীর শুভ্র মুখচ্ছবি যাও বা চোখে ভাসে সে যেন ক্ষণিক মায়া ছাড়া আর কিছু নয়।
সত্যি আমরা কেমন যেন, অন্যের কষ্টে এগিয়ে না গিয়ে দূরে থেকে তামশা দেখি, সত্যি নেমকহারামই।
তৌহিদ
এই ঈদে অনেকের মনে আনন্দ নেই, বন্যায় সহায়সম্বল হারিয়ে নদীপাড়ের মানুষ বিপর্যস্ত দাদা। তাদের কথা চিন্তা করে ব্যথিত হচ্ছি।
ভালো থাকুন ভাই।
ইঞ্জা
হাঁ ভাই, ব্যাতিত আমরা সবাই, কিন্তু করোনাকালে ওরা এবার আরও বিপদ হয়েছে বেশি।😢
প্রদীপ চক্রবর্তী
এখন শুধুই অপেক্ষা, একমুষ্টি ভাত আর একচিমটি লবনের। বড্ড ক্ষুধার্ত আমি আর আমার বানভাসি জীবনসঙ্গীরা।
ঈশ্বর আর প্রকৃতি সহায় হোক তাদের প্রতি।
নেমকহারামি না করে আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। কেননা মানুষ মানুষের জন্য।
তৌহিদ
বন্যার্তদের পাশে বিত্তবানদের দাঁড়ানো উচিত। করোনা সেইসাথে বন্যায় নদীপাড়ের মানুষ একেবারেই নাকাল।
ভালো থাকুন দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
বানভাসীদের যন্ত্রণা আপনি যেন হৃদয় থেকেই অনুভবে এনেছেন।
মায়া কান্না আমরা অনেক করি, প্রকৃত দরদ নিয়ে খুব কম জন ই পাশে দাঁড়ায়।
তবুও প্রার্থনা করি এহেন দুর্দিন আমাদের দ্রুত মুক্তি দিক।
তৌহিদ
ভাইজান, তিস্তাপাড়েই আমার গ্রামের বাড়ি। বানভাসি মানুষদের দূরাবস্থা চোখের সামনে দেখছি। এবারের ঈদে তাদের মুখে হাসি নেই। অথচ বিত্তবানরা নিজেদের আনন্দে মত্ত হয়ে আছি আমরা।
আল্লাহ সহায়, ভালো থাকুন ভাই
সাদিয়া শারমীন
বানভাসি মানুষের দুঃখ মোচন হোক আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক তারা সেই কামনা রইলো।অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। কিছু মানুষ বৃষ্টি বিলাস করে আর কিছু মানুষ অতি বৃষ্টির কূফল ভোগ করে।
তৌহিদ
আল্লাহ সহায় আপু। তারা যেন দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরে পান এটাই প্রার্থণা।
শুভকামনা সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে আমাদের আরো একটি অনবদ্য লেখা উপহার দিলেন। প্রকৃতি আর বানভাসি মানুষেরা আজ একই কাতারে বন্দী, অসহায় । সর্বনাশা বন্যা হিংস্র পশুকেও একতারে বেঁধে দেয় বানভাসিদের সাথে। কিন্তু কিছু স্বার্থানেষী মানুষ গা বাঁচিয়ে চলে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও। ভালো থাকবেন ভাইয়া।
তৌহিদ
এটাই সত্য আপু। আমরা সামর্থবানরা যদি তাদের পাশে সবাই মিলে দাঁড়াতাম তাহলে হয়তো কিছুটা কষ্ট লাঘব হতো।
আপনিও ভালো থাকুন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
বানভাসি মানুষের আকুতি ফুটে উঠেছে আপনার লেখায়। খুব কাছ থেকে দেখলে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করলে এমন উপলব্ধি আনা যায়। মানুষ মানুষের জন্যে, আবার মানুষের যত অমানুষিকতা তাও মানুষের সাথেই। সৃষ্টিকর্তার সবল সহায়তা ছাড়া এই দুর্দশা থেকে মুক্তি নেই।
ভালো থাকুন তৌহিদ ভাই। অন্তর এমন করেই প্রসস্থ রাখুন জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত। মানুষের মন নিয়ে মানবতার মাঝে বাঁচুন। শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
তৌহিদ
আপু আমার বাড়ি একদম নদীর ধারেই। গ্রামে গেলেই নদীপাড়ের মানুষের দুর্দশা চোখে পড়ে। আমি সহ্য করতে পারিনা তাদের এই কস্ট। তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে দ্রুত ফিরে আসুক এটাই প্রার্থনা।
আপনিও আপনি ভালো থাকুন আপু।
নিতাই বাবু
আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বন্যা আতঙ্কে থাকতে হয়, দাদা। তাই বানভাসির এই কষ্ট বেশি দিনের জন্য নয়, সমসাময়িক! সময়মত আবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে নিশ্চয়! তবে হ্যাঁ, ওঁদের কষ্ট আপনার লেখায় যথার্থভাবে ফুটে উঠেছে।
সময়োপযোগী লেখা পড়ে ভালো লাগলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
তৌহিদ
ধন্যাবাদ দাদা, আসলে আমিওতো গ্রামের ছেলে, তাদেরই একজন। তারা ভালো থাকুক এটাই প্রার্থনা।
শুভকামনা রইলো দাদা।
ফয়জুল মহী
আজ এই ঈদ মহামারী ও বন্যার মাঝে খাওয়ার জন্য ও নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানো জন্য একটু আশ্রয়স্থলের জন্য যারা সংগ্রামে লিপ্ত তাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষার ঈদ । ঈদ সাম্য আনতে পারেনি বৈষম্য কমাতে পারিনি।
তৌহিদ
একদম ঠিক মহী ভাই। আমরা মনের পশুকে কোরবানি দিতে পারিনা অনেকেই।
ভালো থাকুন ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
বানবাসী মানুষের নিত্যদিনের সমস্যাটা তুলে আনলেন।
এখন বড় দু:সময়। কাটে অনেক কষ্টে
তবু মানুষ বাঁচুক জীবন।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
তারা ভালো থাকুক প্রার্থনায় এটাই চাই সবসময়। আপনিও ভালো থাকুন দাদা। শুভকামনা রইলো।
জান্নাতুল ফেরদৌস সায়মা
তাদের স্বাভাবিক জীবন কামনা করি।ফী আমানিল্লাহ
তৌহিদ
আল্লাহ্ সহায়। ভালো থাকুন আপু।
মাহবুবুল আলম
তৌহিদ ভাই! একেতো করোনা, তার ওপর বন্য। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুন।ভাল থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
তৌহিদ
জ্বী ভাই, ঠিক বলেছেন। আল্লাহ সহায়।
ভালো থাকুন ভাই।
আরজু মুক্তা
করোনা, বন্যা সব কেড়ে নিয়েছে
তৌহিদ
আল্লাহ সহায়, ভালো থাকুন আপু।