বানভাসির দীর্ঘশ্বাস

তৌহিদুল ইসলাম ৩০ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪১:৩৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৫ মন্তব্য

মাধবীলতার এলোমেলো দোলনে সেই যে বেজেছিল হাহাকার ঘন্টা, দিনের পর দিন পেরিয়ে দীর্ঘশ্বাস আর চাপা আর্তনাদে মন আজ নিষ্প্রভ ঘরবন্দী কালের গহীন অন্ধকারে। জোনাকির আলোয় মাঝেমধ্যে এলোকেশীর শুভ্র মুখচ্ছবি যাও বা চোখে ভাসে সে যেন ক্ষণিক মায়া ছাড়া আর কিছু নয়।

থরথর কেঁপে ওঠা সুপারি গাছের পাতায় রুদ্রমূর্তি শিবনৃত্য দেখে বুক ধড়ফড় করে। মাথার উপর ছায়া দেয়া ঘরের চালটিকে দূরে উড়িয়ে নিতে চায় শিবানী। রক্ষে করো মা জননী! একটিবার শান্ত হও। নিজ হাতে গড়া সাধের বাগানকে তছনছ হতে দেখে চোখের নোনাপানি আর বৃষ্টিকে আলাদা করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার।

জুবুথুবু বিরসবদন ময়না শালিক আর গাংচিল ঠাঁই নিয়েছে একমাত্র বিছানাটিতে। কেঁচো, সাপ, গোক্ষুরের ভয়ে ত্রাহিত্রাহি চিৎকার করা দুধেল গাঁইয়ের রশি খুলে দিয়েছিলাম কবেই তবে আমায় ছেড়ে যায়নি সে আজও। এটা ঠিক ভালোবাসা নয়, এটি জীবননাশের ভয়। এ ভয় আমার তোমার গৃহপালিত পশুর সকলের। আত্মারাম খিঁচে দৌড় দেয়ার থেকে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখাই এখন শ্রেয়!

অথচ এ বন্যায় কতজনাই নেমকহারামী করলো। নিজেদের আশ্রয়ের এক হাত জায়গাও বানভাসিদের দেয়নি, না খাবার না একটু মুখের হাসি! প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস, ভেসে গিয়েছে অনেকেই। তাদের আর্তচিৎকার শুনে বুঝেছি অপঘাতে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া মানুষের কাতারে সামিল হয়েছে তারা। ক্ষুধার্ত রাতজাগা প্যাঁচার মত আমি ভালোবাসার ছোট্ট কুটিরে আজও বেঁচে আছি নিভে যাওয়া প্রদীপের মতন।

কোমর পানি একসময় নেমে যাবে, আবার সবুজ সমারোহে সেজে উঠবে উঠোনবাগান। পাখিদের কোলাহল মুখরিত আমগাছে আসবে নতুন কুঁড়ি। সে দিন খুববেশি দূরে নয়। এখন শুধুই অপেক্ষা, একমুষ্টি ভাত আর একচিমটি লবনের। বড্ড ক্ষুধার্ত আমি আর আমার বানভাসি জীবনসঙ্গীরা।

(ছবি- নেট থেকে নেয়া)

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ