
গত কয়েকদিন আগের কথা, নিউজে দেখা গেলো সদ্য যোগ দেওয়া বোয়িং ড্রিমলাইনার “সোনারতরী” ম্যানচেস্টার – ঢাকার প্রথম ফ্লাইটেই ঘটে গেলো দুঃখজনক অপ্রীতিকর ঘটনা, ম্যানচেস্টার থেকে উঠা বাঙ্গালী যাত্রী / যাত্রীদের কয়েকজন বিমানের সিটের এলইডি ডিসপ্লে টেনে ভেঙ্গে ফেলেছে।
কতটা অসভ্য বর্বর হলে লন্ডন ফেরত যাত্রী এই কাজ করতে পারে যা আমাকে যেমন অবাক করেছে, তেমনই আহত করেছে।
বিশ্বাস করুন, এই অসভ্যতা দেখে নিজেই নিজেকে দোষারোপ করছি বাঙ্গালী হিসাবে, মনে মনে নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছি যেন বাঙ্গালী হিসাবে, ভাবছি এই অসভ্যতার শেষ কোথায়?
বুঝতে পারছেন লন্ডন ফেরত যাত্রী কতটা সভ্য হওয়া উচিত ছিলো, কিন্তু দুঃখজনক ভাবে তারাই এমনটা অসভ্যতা করলো, ছিঃ।
শুধু কি সোনারতরী বিমানে, আরেক ড্রিমলাইনারের আংশিক ভিডিও দেখলাম গতকাল, এ ড্রিমলাইনারও বেশি সময় হয়নি বাংলাদেশ বিমান বহরে যোগ হয়েছিলো।
এই বিমানের টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ধাক্কা দিয়ে, আসেপাশে প্রচুর ময়লা ছড়িয়ে আছে, এক যাত্রী সিটে দাঁড়িয়ে লাফাচ্ছে।
আমার জিজ্ঞাসা হলো, কেন আপনারা নিজ সম্পদ এইভাবে ক্ষতিসাধন করছেন, এই ক্ষতিপূরণ তো আপনাদেরকে নয়, আমাদেরকেও দিতে হবে।
আপনারা এতো অসভ্য বর্বর কেন, আপনাদের বিবেক বলতে কি কিছুই নেই, নাকি সবই বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন?
ছিঃ ছিঃ ছিঃ, লজ্জার কি মাথা খেয়েছেন?
আজ এমনই কিছু আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি যা সত্যি আমাকে পীড়িত করেছে, বাঙ্গালী হিসাবে করেছে লজ্জিত।
ঘটনা ১ঃ
যথাসম্ভব ৯২/৯৩ সনের ঘটনা, আমি যাচ্ছি ইটালির পন্টেডেরাতে, পথিমধ্যে লন্ডন ও মিলান হয়ে যাবো।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ইকোনমির যাত্রী আমি, রাতের ফ্লাইট থাকায় এরোপ্লেন টেকঅফের কিছু সময় পর আমাদের ড্রিংক্স সার্ভ করা হলো, আমি দুই পেগ খেয়ে ইস্তফা দিয়ে ডিনারের অপেক্ষায় আছি, কিছু সময় পর ডিনার করে দিলাম ঘুম।
হটাৎ চেচামেচি শুনে ঘুম ছুটে গেলো, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম পিছনের মাঝের সিটের এক ভদ্রলোক এয়ারহোস্টের সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে, ‘কেন তাকে আর মদ দেওয়া হচ্ছেনা”?
ব্যাটা দেখছি খেয়ে পাড় মাতাল হয়ে আছে, এরপরেও হুইস্কি চাইছে, এয়ারহোস্ট আসেপাশের যাত্রীদের সহায়তা চাইলো, বেশ কয়েকজন ভদ্রলোককে বুঝানোর চেষ্টা করছে, এক সময় বুঝিয়ে কুলাতে না পেরে কয়েকজন দিলো ধমকি পেটাবে বলে।
মাতাল দেখলাম একটু নরম হলো, সিটে বসে পড়ে প্যানপ্যান করে ঘুমিয়ে গেলো।
ঘটনা ২ঃ
সকালে ব্রেকফাস্ট দেওয়া হয়েছে, ব্রেকফাস্ট শেষে অপর পাশের সিটের এক মহিলাকে দেখলাম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের স্টেইনলেস স্টিলের কাটলারিজ গুলো ব্যাগে ভরে রাখছে, বলা যায় চুরিই করছে।
দেখেই আমি হতবাক, সত্যি এরা করছে কি, কাটলারিজ গুলো তো কিনতেই পাওয়া যায়, না কিনে চুরি করার দরকার কি?
ঘটনা ৩ঃ
সেইসময় মাত্রই স্মোকিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আমি ফিরছি ইটালি থেকে থাই এয়ারওয়েজে, আমার দুই সিট পিছেই এক বাঙ্গালী সিগারেট ধরিয়ে টানছে, আমার নাকে গন্ধ লাগতেই ফিরে তাকালাম, এরমধ্যে এয়ারহোস্ট দৌড়ে এলো, এসেই বলছে সিগারেট নিভানোর জন্য।
আবাল বাঙ্গালী তো কথায় শুনতে নারাজ, সে স্মোক করবেই, এতে কেউ বাধা দিতে পারবেনা, সে ডলার খরচা করে সিট বুকিং দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত চিফ পার্সার এসে ইংরেজিতে বললো, হয় তুমি স্মোকিং বন্ধ করো, নয়ত তোমাকে ঘাড় ধরে থাইল্যান্ড পুলিশের হাতে তুলে দেবো।
অসভ্যটা সিগারেট এস্ট্রেতে সিগারেট নিভানোর আগে আরও দুই টান দিয়ে নিভালো।
পরে অন্য ফ্লাইট গুলোতে দেখলাম এস্ট্রে একদম নেই হয়ে গেছে।
ঘটনা ৪ঃ
মালেশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাচ্ছি নিউজিল্যান্ড, এক রাত মালেশিয়া স্টে করে পরদিন ফ্লাই করবো নিউজিল্যান্ডের পথে, সাথে উঠেছে অসংখ্য বাঙ্গালী শ্রমিক, ফ্লাইট টেকঅফের পর শুরু হলো মাছের বাজার।
চিৎকার করে করে একে আরেকজনের খোঁজ নিচ্ছে, গল্প করছে।
কিছুক্ষণ পর শুরু হলো খাবার দেওয়া, প্রিমিয়াম সিট থেকে খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে দেখে পিছনের সিটের শ্রমিকরা ভাবলো ওদের খাবার দেওয়া হবেনা নিশ্চয়, সবগুলো সামনে চলে এসেছে খাবার নেওয়ার জন্য।
এইসব দেখে এয়ারহোস্ট গুলো দিলো ধমক, যদি ভদ্রভাবে সিটে গিয়ে না বসে, তাহলে ওদের খাবার দেওয়া হবেনা।
এতেই কাজ হলো, সবকটি সিটে ফিরে গিয়ে চুপচাপ উঁকিযুকি মেরে দেখতে লাগলো, যেন খাবার শেষ নাহয়ে যায়।
যখন খাবার পেলো তখন মহা খুশি ওরা, খাবার শেষে ওদের কয়েকজন দিলো উঠে দৌড়, টয়লেট হলো ওদের উদ্দেশ্য।
কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম এয়ারহোস্ট এবং চিফ পার্সার দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দুই টয়লেটের দরজা ধাক্কাছে, ঘটনা কি?
জানতে পারলাম টয়লেটে ওরা সিগারেট টানছে, ওদের বের করে ধমক দিয়ে নিজ সিটে ফেরত যেতে বাধ্য করা হলো।
এক এয়ারহোস্টকে বলতে শুনলাম, ওরা কখনোই ভালো হবেনা।
দুঃখজনক ভাবে কথা গুলো সত্যই, আমরা বাঙ্গালীরা কখনোই ভালো হবোনা, আমাদের রক্তেই বিষ আছে নিশ্চয়, নাহলে কি কবি বলেছিলো “স্বাধীনতা তুমি আমাদের বাঙ্গালী করেছো, মানুষ কোরোনি”।
সমাপ্ত।
৩৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
হুম।দুঃখজনক হলেও সত্য যে এ সব ঘটনা নতুন কিছুই নয়।দেশকে ছোট করা অনেক বাঙ্গালীর কাছে যেন একপ্রকার আনন্দই মনে হয়।খুব ভাল পোষ্ট।
ইঞ্জা
দুঃখ লাগেরে ভাই, এইসব অসভ্যতা কবে বন্ধ হবে তা আল্লাহই জানেন।
নৃ মাসুদ রানা
অনেক ভয়ংকর
ইঞ্জা
আমি হতবাক, আহত। 🙁
মোঃ মজিবর রহমান
কবি ভানু সিংহের বাণী যথার্থ। হে মুগ্ধ জননী সাড়ে সাত কোটি সন্তানকে রেখেছ বাংগালী করে, মানুষ করনি।
ইঞ্জা
হ্যাঁ এইটাও আছে ভাই, ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
আমরা দলের স্বার্থে কর্ম করি। গতকাল স্প্যান বসানো হলে প্রথম আলয় একটি লেখায় একজন কমেন্ট করেছেন দেশমাতা বলেছেন ঐ পদ্মার ব্রিজে উঠলে ভেঙ্গে যাবে তাই উঠবনা।
কত দলের কানা অন্ধ ভক্ত বলাও পাপ। এদের কিভাবে ঘৃণা করব বুঝতেও পারিনা।
ইঞ্জা
হাঁ এরা তো জঘন্য, এরা দরকার হলে নিজের নাক কেটে হলেও অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করবে।
সুপায়ন বড়ুয়া
যারা বিমানের ক্ষতি করে
তারা ইচ্ছে করে করে ,
আর অন্যরা বিনয়ি হতে পারে না
বলে আকাম গুলি করে।
আর বাঙালী মানুষ বলে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
আর যারা স্বাধীনতা চায়নি তারা ও আছে এদেশে
ভুলে গেলেতো চলবে না।
শুভ কামনা ভাইজান।
ইঞ্জা
সবই ঠিক বলেছেন ভাই, কিন্তু বাঙ্গালীর অসভ্যতা সর্বজন বিধিত, এ আর নতুন কিছুই নয়।
নিতাই বাবু
কয়লা যায় না ধুইলে, আর বাঙালির খাইচ্ছত যাবে না মরলে। আসলে আমরা মনে হয় এই পৃথিবী নামক গ্রহটার প্রাণীজগতের সবচাইতে অসভ্য দুষ্ট প্রকৃতির পেরাণী(প্রাণী)। আমাদের যেমন মানসম্মান নেই, তেমনি নেই বিবেকবুদ্ধি!
ইঞ্জা
অপ্রিয় হলেও অতি সত্য বলেছেন দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা এইটা এখন আমাদের অব্যাশে পরিনত হয়েছে।
ইঞ্জা
দুঃখজনক দাদা, সত্যি আমি লজ্জিত।
সঞ্জয় মালাকার
ঠিকই বলেছেন দাদা লজ্জিত হওয়া ছাড়া আন কিছু নেই,
ইঞ্জা
আমি প্ল্যান করেছি, ভবিষ্যতে এগুলারে পিটাবো।
রেহানা বীথি
বাঙালি আর মানুষ হল না! ভীষণ লজ্জাজনক।
ইঞ্জা
দুঃখজনক, আমরা আমাদের ভালো দেখতে পারিনা। 😢
তৌহিদ
আশ্চর্য কথা! আমাদের স্বভাব পরিবর্তন হলোনা। এ কারনেই অন্যান্য দেশে বাঙ্গালিদের এত হেয় প্রতিপন্ন করা হয়।
আশাকরি লেখাটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে। আমাদের নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী।
ধন্যবাদ দাদা, এমন একটি বিষয় সবার সাথে শেয়ার করার জন্য।
ইঞ্জা
ভাই বিষয়টি দেখে আমি মর্মাহত হয়েই লেখাটি লিখেছি, আমাদের সবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, কেন আমরা সভ্য জাতি হচ্ছিনা?
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাঙালি সবসময় ভয়ানক ভয়াবহ ভয়ংকর।
ধন্যবাদ দাদা এরূপ পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ইঞ্জা
দাদা, আমি মর্মাহত। 😢
ছাইরাছ হেলাল
ভাই, দেখলে কষ্ট লাগে, কিছু করা যায় না, সহ্য ও করা যায় না।
জানি না কবে কিভাবে এর উত্তরণ হবে!
অনেক দিন পরে হলেও লিখছেন, দেখে সত্যি আনন্দিত।
ইঞ্জা
আমরা আমাদেরই ভালো বুঝিনা, এ কেমন জাতি ভাই?
ধন্যবাদ ভাইজান।
অনন্য অর্ণব
ভাই পড়ে যতটা হাসলাম তারচেয়ে বেশি কষ্ট পেলাম। দেশ স্বাধীন হয়েছে পঞ্চাশ বছর, অথচ আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ কেবল নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত দেশ আর জাতিকে প্রতিনিয়তই ধর্ষণ করেছে তারা।
ইঞ্জা
সত্যই তাই আর তাদের আখের গোছাতে গিয়ে দরকার হলে খুন করতেও তারা রাজি।
ফয়জুল মহী
ধিক।
ইঞ্জা
এতে ওদের লজ্জা হয়না ভাই, ধিক্কারে ওদের কিছুই যায় আসেনা।
কামাল উদ্দিন
হুমম, কিছুটা দেখার অভিজ্ঞতা আমারও আছে। পাঁচ সাত জন এক সাথে থাকলে আমরা উচ্চস্বরে বিমানের ভেতরটাকে নিজের বাড়ির মতো মনে করি।
ইঞ্জা
দুঃখজনক ভাই, আমাদের উচিত নিজেকে সভ্য করে তোলা।
সুরাইয়া পারভীন
নিজের বাঙালি জাতি ভাবতেই লজ্জা হয়। কতোটা নিকৃষ্ট আর মস্তিষ্ক বিকৃতি হলে কেউ চুরি থেকে শুরু করে এমন অসভ্য আচরণ করতে পারে ভাবুন একবার।😰😰
ইঞ্জা
আমরা সত্যই বাঙ্গালী হিসাবে লজ্জিত আপু। 😢
রুমন আশরাফ
কত ধরণের মানুষ যে আছে আমাদের এই দেশে! গত অক্টোবরে কোলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরছি বিমানে। বাংলাদেশী বাঙালি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু বাঙালি ছিল ঐ ফ্লাইটে। বিমানে কিছু বাংলাদেশীদের কার্যকলাপ দেখে পিছন থেকে এক দাদা বাবু বলে উঠলেন, “দুই বাংলা এক থাকলে ভাল হতো। অন্তত বাংলাদেশীরা কিছুটা হলেও আমাদের কাছ থেকে ম্যানার শিখতো।” ওনার কথা শুনে আমি নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। খুবই ছোট মনে হল নিজেকে। আর আমাদের বিমানবন্দরের কথা নাইবা বললাম। সবারই জানা।
ইঞ্জা
দুঃখজনক ভাই, আমরা আর ভব্য হতে পারলামনা, বিদেশে গেলে কত প্রশ্ন যে সইতে হয় শুধু বাঙ্গালী হওয়ার কারণে। 😒
জিসান শা ইকরাম
এই দুই বিমান যাত্রিকে ধরা খুব সহজ ছিল, এদের গ্রেফতার করে পিটিয়ে পাছার চামড়া তুলে দেয়া যেত, ক্ষতিপুরন আদায় করা যেত দশ লাখ। কিন্তু বিমান তা করবে না। যদি দৃস্টান্তমুলক সাঁজা দেয়া হলে এমন অপকর্ম আর কেউ করত না।
অন্য ঘটনা যা পড়লাম তাতে লজ্জায় মাথা নুইয়ে আসে।
আমরা কখনো আর ভাল হতে পারব না।
ইঞ্জা
আমি নিজেও হতবাক, এতোদিন হয়ে গেলো কিন্তু দোষীদের এখনো ধরা হলোনা, অথচ কত সহজেই না এদের ধরা যেতো?
ভাইজান বলতে পারবেন কেন তাদেত ধরা হলোনা?
আমরা প্রতি পদে পদেই লজ্জিত হই, এই জন্যই এখন বাঙ্গালী মালেশিয়া গেলে প্রথমে গারদে ভরে, এরপর যাচাই বাছাই করে মালেশিয়াতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে কিনা?
কি লজ্জা। 😩
পর্তুলিকা
চোরের কাজ চুরি করা। চুরির সুযোগ বাঙাল অবাঙাল কেউ ছাড়েনা।
ইঞ্জা
সমস্যা হলো এরোপ্লেনের এলসিডি চুরি করার মতো নির্বোধ চোর এই দেশেই হতে পারে।