বাংলা ভাষার স্থায়িত্ব নিয়ে আমি বেশ সন্দিহান। দিনদিন বাংলা ভাষার উপর যেভাবে অহেতুক বল প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতে এর স্থায়িত্ব কতদিন থাকবে তা বেশ চিন্তার বিষয়।
বাল্যকালে পাঠশালায় না গিয়ে যখন ঘরে বসে আদর্শলিপি পড়তাম, তখন বেশ কিছু বর্ণের সাথে পরিচিত ছিলাম, যেগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। ৠ, ঌ এবং ৡ বর্ণ সমূহ স্বরবর্ণ হতে বহু আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। বাংলা বর্ণমালায় একসময় ‘ক্ষ’ এর প্রচলন থাকলেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তা বর্ণমালা হতে অপসারণ করেন। ক এবং ষ মিলে একত্রে ‘ক্ষ’ হয় বলে তিনি একে যুক্তবর্ণ হিসেবে অভিহিত করেন। অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলা বর্ণমালায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়। মানুষের সুবিধা এবং বানান ভুল হতে কিছুটা রক্ষার জন্যও এমন পরিবর্তন করা হয়। তবুও আমরা আজও ভুল করি। এমনকি ভুল লিখতেও ভুল করি।
২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণীর জাতীয় পাঠ্য পুস্তকে বেশ কিছু ভুল ছিল। নতুন ছাত্রছাত্রীদের বছরটি শুরুই হয়েছিলো ভুলে ভরা বই হাতে নিয়ে। ভুল বানান সম্বলিত এমন পুস্তকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে কতটা লজ্জিত ছিল জানি না। তবে আমার কাছে ব্যাপারটি ছিল বেশ ঘৃণা এবং কষ্টের।
আমরা অনেকেই আমাদের সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ইংরেজি মাধ্যমে পড়াই। ব্যাপারটিকে আমি নেতিবাচক হিসেবে দেখি না। কিন্তু ওদিকে যে আমার সন্তান উল্টাপাল্টা বাংলা বলা কিংবা লিখা শুরু করে দিয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখি না। এদেশে গত ১০ বছরে কি পরিমাণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বেড়েছে তা সহজেই আমরা অনুমান করতে পারি।
ইদানিং কিছুকিছু ইয়ো ইয়ো টাইপের ছেলেপুলেকে প্রায়ই দেখি, যারা কথায় কথায় ইংরেজি আওরায়। বাংলা ভাষাকে সেকেলে মনে করে। এদের মধ্যে আবার অনেকেই আছে যারা বাংলাকে ইংরেজির মতো করে বলে। আমি মনেমনে ভাবি, বাংলায় কথা বলতেই তোদের যে অবস্থা লিখতে বললে না জানি কি করবি!!
রাস্তাঘাট, দোকানপাট কিংবা আশেপাশে বাংলা বানানে ব্যাপক ভুল দেখি। সেদিন গেলাম প্রগতি সরণি। এই ‘সরণি’ বানান নিয়েও দেখলাম বিভিন্ন তামাশা। কোনও কোনও জায়গায় লেখা দেখলাম, সরনি, সরণী, স্বরনি এবং স্মরণী।
আমাদের সময়ে মেট্রিক কিংবা এস.এস.সি পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে ৬০/৭০ নম্বর পাওয়া বেশ দুরূহ ছিল। আর এখন বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রীই শতকরা ৮০ নম্বর পায়। সবই সৃজনশীল পদ্ধতির অবদান! অথচ এদের মধ্যে অনেকেই ‘এ’ এবং ‘ত্র’ এর মধ্যে পার্থক্যই বোঝে না। আপনি যদি ওদের লিখতে বলেন, “পাঁচশত টাকা মাত্র”, ওরা লিখেবে, “পাঁচশত টাকা মাএ”। এদিকে আবার শুরু হয়েছে ‘ঈ’ এবং ‘ই’ নিয়ে হট্টগোল।
এত কিছুর পরেও এটাই প্রত্যাশা,
সঠিক বাংলা ভাষা টিকে থাকুক, এই মোদের আশা।
১৪টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সত্যিই হয়তো বাংলার বিলুপ্তি ঘটবে খুব তাড়াতাড়ি। মেজাজ তখন আরো বেশি খারাপ হয় যখন দেখি সবাইকে বাংলিশে লিখতে। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা প্রাণের ভাষা অথচ সেই বাংলাকে বিকৃতি করে কথা বলা হয়। ব্যাপারটা সত্যি লজ্জাজনক।
রুমন আশরাফ
বাংলাভাষা বিকৃত করে কথা বলা সত্যিই লজ্জাজনক।
মাহবুবুল আলম
হ্যা ঠিক বলেছেন। তবে এ কথাও মানতে হবে যুগ যুগ ধরেই ভাষা বর্ণ বা শব্দ পরিবর্তন হচ্ছে। বর্ণতো বিলুপ্ত হচ্ছেই যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক ভাষাও বিলুপ্ত হযে যাচ্ছে। আক্ষেপ করে লাভ নেই। সময় আমাদের যেখানে নিয়ে যায় সেখানেই আমাদের যেতে হবে। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।
রুমন আশরাফ
ঠিক বলেছেন মাহবুব ভাই। ভাষা পরিবর্তনশীল। আবার ভাষারও বিলুপ্তি ঘটে এটা ঠিক। কিন্তু বর্তমান সঠিক বাংলাকে এভাবে পরিবর্তন করা কিংবা বিকৃত করা কাম্য নয়।
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা,
এত কিছুর পরেও এটাই প্রত্যাশা,
সঠিক বাংলা ভাষা টিকে থাকুক, এই মোদের আশা।
রুমন আশরাফ
টিকে থাকুক আমাদের বাংলাভাষা।
এস.জেড বাবু
ডেড, ডেডি আর পাপ্পা বলার মতো মানুষের কাছে “বাবা” শব্দটা প্রাচীন। হিন্দি সিরিয়াল কেড়ে নিচ্ছে সম্বোধন,যদিও এই পরিবর্তন হচ্ছে অল্প গতিতে।
মূল্যবান বিষয়বস্তু নিয়ে চমৎকার পোষ্ট।
বাংলা ভাষা টা টিকে থাকুক।
রুমন আশরাফ
টিকে থাকুক বাংলাভাষা।
সাবিনা ইয়াসমিন
অক্ষরের বিবর্তন প্রাচীনকাল থেকেই চলে এসেছে, আগামীতেও চলবে। প্রয়োজনের তাগিদে সব কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। এটা ইতিবাচক।
ভাষার জন্যে প্রান দেয়ার একমাত্র দেশ ও জাতি আমরা। নিজেরাই যদি সঠিক সুন্দর করে নিজ ভাষায় বলতে লিখতে উদাসীন হই, তাহলে ভাষা শহীদদের রক্তস্রোতকে বৃথা করতে হবে। একটি দেশ ও জাতির কাছে এরচেয়ে বড় কলঙ্ক কি হতে পারে!
নতুন প্রজন্মরা ভাষার প্রতি যত্নশীল হোক এটাই কাম্য।
খুব সুন্দর লিখেছেন রুমন ভাই 🙂
রুমন আশরাফ
অনেক ধন্যবাদ সাবিনা আপু।
রেহানা বীথি
ভীষণ হতাশ হই। এখন জাতীয় পত্রিকায় কিংবা টিভি চ্যানেলগুলোতেও বানান ভুলের মহড়া চলে। আর এ যুগের ছেলেমেয়েদের মুখে হিন্দি আর ইংরেজির মিশ্রণে যে ভাষা শুনি, তা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারি না। মনে প্রশ্ন জাগে, ভবিষ্যতে রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের বাংলা ভাষাটা টিকে থাকবে তো?
চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
রুমন আশরাফ
ভাষা পরিবর্তনশীল। আবার ভাষারও বিলুপ্তি ঘটে। সত্যিই অনেক জাতীয় পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে বানান ভুলের মহড়া চলে। আপনি সঠিক বলেছেন। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
এখন তো আদর্শ লিপিই নেই,
বাংলা ভাষা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করে আমার মধ্যেও। ইংরেজী না জানাকে ব্যাক ডেটেট ভাবা আরম্ভ হয়েছে বহু আগেই।
ভালো লিখছেন, এই বিষয় নিয়ে ভাবা দরকার আমাদের সবার।
শুভ কামনা।
রুমন আশরাফ
সত্যিই ব্যাপারটি অনেক ভাবায় আমাকে।