
পানখাইয়া পাড়া থেকে বেড়িয়ে আপার পেরাছড়া গ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তাটাকে বলে নিউজিল্যান্ড সড়ক। সড়কের দুইপাশে সবুজ ক্ষেত খামার, এটাই খাগড়াছড়ির একমাত্র সমতল ভূমি। সবুজ শস্যক্ষেত আর তার পিছনের পাহাড়ের মিতালি এক অসাধারণ নান্দনিক সৌন্দর্য এখানে ছড়িয়ে আছে। এরূপ দৃশের কারণে স্থানীয় মানুষজন একে নিউজিল্যান্ড নাম দিয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যায় পানখাইয়া পাড়া আর পেরাছড়ার কিছু অংশ নিয়েই নিউজিল্যান্ড গঠিত। তবে আলাদাভাবে কোন গ্রামের নাম নিউজিল্যান্ড আছে কিনা আমার জানা নাই। যেন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের এক টুকরো নিউজিল্যান্ড ঠাই নিয়েছে খাগড়াছড়িতে।
এখানকার প্রকৃতিতে গাঢ় সবুজ পাহাড়, কলকলে বয়ে যাওয়া নদী, দূরে ঝিরঝির শব্দের ঝর্ণা, ওপরে নীল আকাশ, মাঝে মাঝে সাদা মেঘ, বর্ষায় বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ, রাতের আকাশে চন্দ্র-তারা ও দিনের আলোয় লাল সূর্য মিলেমিশে একাকার। খাগড়াছড়ি শহরের পাশ দিয়ে সর্পিল এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া চেঙ্গী নদীর লালচে ঘোলা পানি কর্ণফুলী নদীর সাথে মিলেমিশে একাকার। মাঝে মাঝে নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, জুমঘর, কোথাও সবুজের চাদরে মোড়ানো জুম চাষের ক্ষেত- যা ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে।
লোক মুখে শোনা যায়, অনেক অনেক বছর আগে এক পাহাড়ি ভদ্রলোক এই এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের মতো বাতাস, সেই থেকে নাকি এলাকার নাম হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড পাড়া। তো আসুন আমার ক্যামেরায় দেখা হয়ে যাক বাংলার নিউজিল্যান্ডকে।
(২) খুব স্বল্প সময়ের জন্য বৈসাবি দেখতে গিয়েছিলাম খাগড়াছড়িতে। ( এ উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসুক, বৈসু বা বাইসু , মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। বৈসাবী নামকরনও করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের এর প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে। বৈ শব্দটি ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে, সা শব্দটি মারমাদের সাংগ্রাই থেকে এবং বি শব্দটি চাকমাদের বিজু থেকে। এই তিন শব্দের সম্মিলিত রূপ হলো বৈসাবি )।
(৩/৪) শেষ বিকালে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের শেষ অংক দেখেই আমরা পানখাইয়া পাড়া থেকে নিউজিল্যান্ড সড়ক ধরে পেরাছড়া গ্রামের দিকে গিয়েছিলাম।
(৫) নিউজিল্যান্ড সড়কটা শুরুতেই ভাঙ্গাচোড়া হলেও এলাকাটা দেখে আমরা সত্যিই মুগ্ধ হলাম।
(৬/৭) কোথাও সবুজ ধানক্ষেত, আবার কিছু এলাকা একেবারেই ন্যাড়া, দূরে কিছু বাড়ি ঘর আরো দূরে দাড়িয়ে আছে সবুজ উঁচু পাহাড়। শেষ বিকেলের ঝিরিঝিরি বাতাস সারাদিনের বৈসাবী দেখার ক্লান্তিকে নিমেষেই উড়িয়ে নিয়ে গেলো কোথায় কে জানে?
(৮) নিউজিল্যান্ড সড়ক ধরে ছুটা যাওয়া স্থানীয় কিছু যানবাহন।
(৯) পাহাড়ের কোল ঘেষে দাড়িয়ে থাকা বাড়ি ঘর গুলো দেখতে সত্যিই অন্য রকম।
(১০) নিউজিল্যান্ডের বুলবুলিদের দেখতে অনেকটা বাঙালী বুলবুলিদের মতোই মনে হয় 😀
(১১) এটা নিউজিল্যান্ডের একটা মেটো পথ।
(১২) হাটতে হাটতে আমরা নিউজিল্যান্ডের অপর পাড়ের গ্রাম আপার পেরাছড়ায় চলে এলাম।
(১৩ পেড়াছরা গ্রামে ঢুকেই দেখা হয়েছিলো এই চাকমা পরিবারের সাথে ওদের আতিথেয়তার কথা জীবনেও ভুলব না, আদিবাসিদের আতিথেয়তা নিয়ে সব সময়ই আমার ধরণা অতি উঁচু, কিন্তু ওরা যেনো সেসবকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।
(১৪/১৫) ওদের সাথে আমাদের টিমের দেখা হতেই ওরা আমাদেরকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেলো, এবং এতো প্রকার খাবার দাবার দিলো যাতে আমরা সত্যিই অভিভূত। এর মধ্যে সব চেয়ে বড় পাওয়া ছিলো ওদের বিজু উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ৩৬ রকমের পদ দিয়ে তৈরি পাজন।
(১৬/১৭) এতো খাবার দাবারের পর ঐ বাড়ির এমন ফলগুলোর দিকে আমাদের আর তাকানোর দরকার পড়েনি।
(১৮/২০) এক সময় সূর্য্যি মামা তার শেষ গন্তব্যে চলে যায়, আমরাও সেদিনের মতো নিউজিল্যান্ডে আমাদের শেষ ছবিটা তুলে আস্তে আস্তে বিদাই হই।
৩৫টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
প্রকৃতির মতো উদার মানুষ গুলোর মন
প্রকৃতির মতো সুন্দর।
সেখানে আজ বিষ বৃক্ষের শিখর গেড়েছে
তাই মাঝে মাঝে অনাকাঙ্খিত ঘটনা গুলো
খবরের পাতায় আসে।
সুন্দর ভাবে তুলে ধরলেন। শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
কিছু দুষ্ট চক্র সর্বত্রই বিরাজমান, তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। শুভ কামনা জানবেন দাদা।
শামীম চৌধুরী
নৃগোষ্ঠিদের নিয়ে ভ্রমন কাহিনীতে দারুন ভাবে তুলে ধরলেন ভাই।
মনোমুগ্ধকর লেখা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ শামীম ভাই, আপনাদের এমন মন্তব্য আমাকে ব্লগিংএ উৎসাহ যোগায় সব সময়…….শুভ কামনা জানবেন।
ইসিয়াক
দারুন সুন্দর ছবি। এক কথায় মনোমুগ্ধকর। শুভেচ্ছা কামাল ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকুন সব সময়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
তাদের সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ লাগলো,দাদা।
ভ্রমণ কাহিনী খুবি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
কামাল উদ্দিন
ওদের আচার অনুষ্ঠান গুলো সত্যিই অন্য রকম। দেখতে ভালোলাগে বে……….ভালো থাকবেন দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহা কি সুন্দর বাংলা নিউজিল্যান্ড দেখলাম। ওদের আথিতিয়তা দেখে মুগ্ধ হলাম। সূর্যাস্তের ছবিটা অসাধারণ লেগেছে। চমৎকার ছবি ব্লগ। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ কামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
আমি যতোবার পাহাড়ে গিয়েছি ততোবারই ওদের আতিথেয়তা তথা আচার আচরণে মুগ্ধ হয়েছি………শুভ সকাল আপু।
ফয়জুল মহী
স্নিগ্ধোজ্জ্বল
নন্দিত অনুভূতি
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ
ছাইরাছ হেলাল
নবম ছবিটির দিকে অনেকক্ষণ তাকয়ে থাকলাম।
বাংলাদেশে যে নিউজিল্যান্ড আছে এই ই প্রথম জানলাম।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বড় ভাই, এমন তথ্যগুলো শুনলেই ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে ওসব দেখে মনটা শান্ত করি………শুভ রাত্রি।
আরজু মুক্তা
একখণ্ড নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে।
ভালো লাগলো জেনে
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, প্রথম জেনে আমিও খুবই আগ্রহ অনুভব করছিলাম, ভালো থাকবেন সব সময়।
হালিম নজরুল
এক সময় সূর্য্যি মামা তার শেষ গন্তব্যে চলে যায়,
ছবিটা দেখে জীবনের অস্তবেলা কল্পনা করলাম। চমৎকার পোস্ট
কামাল উদ্দিন
হুমম, এমন করে ভাবলে মনটা কোথায় যেন হারিয়ে যায় নজরুল ভাই।
………………….শুভ কামনা জানবেন।
মুহাম্মাদ মাসুদ
বরাবরের মতোই আপনার লেখা আর ছবির প্রেম পড়ে যাই!
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, ছবির পাগল আমি সব সময়, আর ছবি আপনাদের ভালোলাগে শুনলে আমারও মনটা ভালো হয়ে যায়।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর প্রকৃতি সুন্দর মন
গাছগাছালি তাই ভরায় প্রাণ
যেমন মনোরম পাহাড়ী দৃশ্য
আকিয়েবুকিয়ে অতুলনীয় ধানি মাঠ
গ্রাম্য রাস্তায় চলার অবিরাম রাস্তাঘাট
ভুলিয়ে যায় ক্লান্ত মনটা।
পাহাড়ী আতিথেয়তা মুগ্ধ অন্তরটা।
যায়দিন যায় সুর্য্যি অস্তান্তে
মন থেকে রয় সেইখানেতে।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ কবি মজিবর ভাই, আমার পুরো ছবিব্লগটাকে কাব্যে রূপান্তর করে দিলেন।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার ছিবিটাই প্রাণ ফুটিয়ে দিল।
খাদিজাতুল কুবরা
ভীষণ সুন্দর সবগুলো ছবি। আমাদের দেশটা সত্যি সুন্দর। কোথাও কোথাও সৌন্দর্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ড জায়গাটা সেরকমই মনে হলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, দেশের সবগুলো অঞ্চলই আমার কাছে ভালোলাগে, তাইতো সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়াতে চাই সব সময়।
তৌহিদ
ভিন্নধর্মী তথ্য জানলাম এই লেখা থেকে। বাংলাদেশেও নিউজিল্যান্ড নামের জায়গা আছে জানতামনা না।
ছবিগুলি বরাবরের মতই সুন্দর। ভালো থাকুন ভাই।
কামাল উদ্দিন
বাংলাদেশে দার্জিলিং আছে নিউজিল্যান্ড আছে, আরো অনেক কিছুই হয়তো আছে, কতোটা আর আমরা জানি……….শুভ কামনা জানবেন তৌহিদ ভাই।
রেহানা বীথি
বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ড? জানা ছিল না তো! দারুণ পোস্ট। ছবিগুলো দৃষ্টিকাড়া।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, শুভ কামনা সব সময়।
জিসান শা ইকরাম
খাগড়াছড়িতে সমতল ভূমি আছে তা আপনার এই পোষ্ট না পড়লে জানা হতো না।
চমৎকার শব্দ বুননে ছবি ব্লগের প্রথম অংশ পড়ে তো মুগ্ধ হয়ে গেলাম ভাই।
দুঃখ একটাই, দেশে থেকেও আজ পর্যন্ত এই পাহাড়ি এলাকায় যাওয়া হলো না।
অনেক কিছুই জানছি আপনার বিভিন্ন পোষ্ট পড়ে।
ছত্রিশ পদের খাবার! এদের আতিথেয়তা এমন আন্তরিক!
অনেক ভালো লাগলো পোষ্ট।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
পাহাড়ে কম বেশী ভ্রমণ করায় ওদের সাথে মেশার যথেষ্ট সুযোগ হয়েছে আমার। প্রতিটা সময়েই ওরা আমাকে মুগ্ধ করেছে। অথচ কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসীর জন্য ওদের প্রতি সমতলের বাসিন্দাদের মনোভাব একেবারেই ভিন্ন…….শ্রদ্ধা জানবেন ভাই।
উর্বশী
প্রকৃতির সাথে মিশেই গেলাম।অপরুপ সব ছবি। একদিন আমরা সবাই ও শেষ গন্তব্যে চলে যাব শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আমি একবার শুনেছিলাম নিউজিল্যান্ডের কথা।বেশ ভাল লাগলো, অনেক কিছু জানা হলো। চমৎকার পোষ্ট। ভাল থাকুন,শুভ কামনা সব সময়।
কামাল উদ্দিন
হুমম, চলে তো যেতেই হবে, কিন্তু যাওয়ার আগে যতোটা সম্ভব পৃথিবীর রূপ রস গ্রহণ করে তবেই যেতে চাই……..শুভ সকাল আপু।
উর্বশী
কামাল উদ্দিন ভাইয়া,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
সহমত পোষণ করছি। শুভ দুপুর। খুব ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, শুভ রাত্রী।