বহুভুজ মন

জাকিয়া জেসমিন যূথী ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ১২:৩৫:১৮অপরাহ্ন উপন্যাস ৬ মন্তব্য

পর্ব-০৪


অঞ্জনার স্কুলে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন পরীক্ষার খাতা নিয়ে বাড়ি আসতে হচ্ছে। সাংসারিক সব কাজ গুছিয়ে এই খাতাগুলো দেখতে হয়। আজ বেশ ভালোই ঘুম পাচ্ছে। উঠতে হবে আবার সেই সকালে। তারপরে ছুটে চলা অবিরাম।
হঠাত ফোন বেজে উঠলো। নাম্বারটা চেনা লাগছে। বিশেষ করে শেষের তিনটা সংখ্যা। দেখা যাক কে সে। কল রিসিভ করলো ও, হ্যালো?
ভুতেরগলির ভুতি, আছো কেমন?
কে?
যাব্বাবা, চিনতেও পারছোনা দেখছি। তোমরা সবাই কি আমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টায় মেতেছো?
না, বলো। নাম্বারটা সেভ করাই তো ছিলো। এটা তাহলে কোন নাম্বার? নাম তো আসলো না।
হুহ, সেই তো। নাম্বার কেন সেভ করে রাখবা? আমি তোমাদের কে?
কী শুধু বারে বারে তোমাদের তোমাদের বলছো। আমি আর কে? অবনী?
হু, তোমরা সবাই।
আমরা সবাই কী করেছি? এত অভিমান কিসের?
না অভিমান না। কারো কথা নয়। তোমার কথাই বলো।
কী বলবো আর? চলছি। চাকরি, সংসার এসব নিয়েই কাটছে। আর তো কেউ নেই যাকে নিয়ে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখবো। মানুষ ভালোবাসা পেয়ে হারায়। আর আমি ভালোবাসবো বলে হাপিত্যেষ করে মরি সে লোকের দেখা নেই।
হু, ওই অপেক্ষা না করে বিয়ে করে ফেলো।
বিয়ে বললেই এত সোজা নাকি বলো। আজকাল ইচ্ছে করে না আর। সখগুলো মরে যাচ্ছে। বুড়িয়ে যাচ্ছি হয়তো।
কি আর এমন বয়েস তোমার বুড়িয়ে যাবে কেন?
ভালো লাগে না বন্ধু। কেউ কেন ভালোবাসবে না আমাকে? বলো তো?
ভালোবাসা ভালো নয়, অঞ্জনা। তুমিই ভালো আছো।
ভালো নেই গো। ভালোবাসতে ইচ্ছে করে খুব। তার জন্য সাজবো তার জন্য বাঁচবো, রাধবো। কেন পাইনা সেরকম কাউকে?
পৃথিবীটাই এমন বুঝলে? প্রেম থেকেও তো কিছু হয় না। মানুষের কত চাহিদা। শুধু ভালোবাসা দিয়ে সুখি আছে কয়জন?
এত অভিমান কেন? তোমার সে কোথায়? ঢাকায় আসতে বলে তোমাকে? তো আসো না!
বিষয়টা শুধু ঢাকা আসার নয়। আমি আসলে কারো যোগ্য নই। যাহ, এখন একাই বেশ আছি।
কী করছো তুমি এখন? বান্দরবানের সেই চাকরিতেই আছো? কেমন বেতন দেয়?
বেতন শুনে কী হবে? পাই আট দশ!
কী বললা? আট দশ? এই বেতনে সত্যি কিছু হয় না। এ সময়ের একটা মেয়ের হাত খরচই এটা। তুমি বিয়ে করলে তার জন্য বাসা ভাড়া করবে না? সংসার কি শুধু ভালোবাসা খেয়েই কেটে যাবে?
থাক না অঞ্জনা। যে গেছে চলে তাকে নিয়ে আর কথা না বাড়াই।
গিয়ে ভালোই করেছে। বেঁচে গেছে। অথবা বাঁচিয়ে দিয়েছে। ভালোবাসার দূর্নাম হতো শুধু শুধু।
ইস, তুমি এত বিধিয়ে বিধিয়ে কথা বলা শিখলে কবে থেকে? কেউ কি তোমাকে প্ররোচনা দিচ্ছে?
কে দিবে? তোমার সেই বান্ধবী? আমি তো চিনিনা তাকে। নামটা কও জেনে গিয়ে দেখে আসি তিনি কে!
থাক তার সাথে আর দেখা করে কাজ নেই। কোটিপতি মানুষ। আমাদের মত রাখালের সামান্য কথায় ভাবনায় ওদের এত সময় কোথায়?
ভারী অদ্ভুত তো। এই তুমি কি শুরু করলে? দুঃখ বিলাস ঝাড়ো না? দেখিয়ে দাও তাকে। যে তোমায় দুঃখ দিলো তাকে বুঝিয়ে দাও সে কি হারিয়েছে।
ধুর অঞ্জনা বাদ দাও না। কাউকে কিছু দেখাতে হবে না। নিজেকে নিয়ে সত্যি আমি সুখি।
ঘোড়ারডিমের সুখি তুমি। বিয়েথা কর। সংসারী হও। বিবাগী কবি হয়ে পাহাড় পর্বতে ঘুরে বেরিয়ে কী হবে? বাবা মায়ের বয়েস হচ্ছে না? তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে তো। তুমি না বাড়ির বড় ছেলে?
সবার সব ক্ষমতা নেই অঞ্জনা। এসব মেনে নিতে হয়। আমি জানি আমার দৌড় কতটা। তাই নিজেকে নিয়ে বেশ আছি।
উঁহু বন্ধু। তুমি বুঝতে পারো নি। কেন কারো হৃদয় ভেঙে দিচ্ছো? যাকে চেয়েছো তাকে এখনো সময় আছে তো তাকে ফিরে নাও না!
কেউ ফিরে চায়নি আমায়, অঞ্জনা। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে। আমি যা করার সময় মতই করবো। সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে সব। কেউ বুঝুক না বুঝুক আমার জন্য সময় থাক না থাক আমার সময় কেটে যাবে, যাচ্ছে।
এ তোমার জেদের কথা। এত ঘাউড়া কেন তুমি? কেন আরও একটু সহজ নও?
সহজই তো আমি, অঞ্জনা। তুমিও এ কথা বলো না। আমি জানি তুমি মানুষ বোঝ। আমাকে বোঝ। আমি কেন আরেকজন মানুষের ইচ্ছের দাস হবো? কেন কেউ আমার এই আমিত্বকে ভালোবেসে পাশে থাকতে পারবে না?
শুধু শুধু রাগ করছো, বোকা ছেলে। একটা মেয়ের কী কী ব্যক্তিগত খরচ লাগে তুমি তার সবটা জানো? প্রতি মাসেই নুন্যতম কিছু খরচ আছে আমাদের। সেসব নিশ্চয়ই শাশুড়ির কাছে আমরা হাত পাতবো না তাইনা? তোমার না থাকলে সে তাহলে তোমার কাছেও চাইতে পারবে না। তাহলে এই ঢাকা শহরের সুখে থাকা মেয়েটা কি তোমায় সুখ দিতে পারবে? তোমার নিজের জন্যেই বলছি, বন্ধু। যেন সে ভালো থাকে। যেন তুমিও ভালো থাকো।
তোমরা কেউই আমার কথা বুঝ না। কেন শুধু ভালোবাসা নিয়ে আমার সাথে বাঁচা যায় না? আমি তো তাকে গাছতলায় রাখবো না। এতটুক বিশ্বাস যদি না থাকে তাহলে আর ভালোবাসার কথা উচ্চারণ করা কেন?
তোমাকে বোঝানো আমার কম্ম নয় যা দেখছি। আরে বাবা বিয়ে করে বউ কই রাখবে? তোমার বুকের ঊপরে?
দরকার পরলে সেরকমই। তাও যদি রাজী হয়।
হুহ, এই স্বপ্ন নিয়েই বাঁচো তুমি। কবে শুনবে বিয়েই হয়ে গেছে তার অন্য কোথাও।
হয়ে গেলে ভালো কথা। আমার সাথে যার সুখ নেই সে অন্য কোথাও সুখি হতে চাইলে আমি বাঁধা দিবো কেন?
তুমি কোন ধাতুতে গড়া বলো তো বন্ধু? এত জনম ভালোবেসে তাকে অন্য লোকের হাতে তুলে দিচ্ছো মন কাঁপে না তোমার?
কাঁপে? নাহ! কাঁপবে কেন? আমি তো চাই সবাই সুখি হোক।
উফ কথায় পারা যাবে না! আমার ঢের অন্যায় হয়েছে তোমার সাথে এই নিয়ে বক বক করে।
তুমি রাগ করছো কেন?
আমি তোমাদের দুজনকে এক হতে দেখতে চেয়েছিলাম।
সব স্বপ্নের পূর্ণতা কি আসে বলো? তুমিও তো যাকে পেতে চাও সে কি দেয় তোমাকে এতটুকু আশা? পৃথিবীটাই ঘুরছে। কার পেছনে কে ঘুরছে ঘুরে মরছে তার কোন হিসেব নেই। এভাবেই বুঝি প্রতিদিন অসংখ্য স্বপ্নের মৃত্যু হয়।

তুহিন আর সেই মেয়েটির সম্পর্কের ভীত কিভাবে নড়ে গেলো জানে না অঞ্জনা। অঞ্জনা জানে সে মেয়েটির নাম। তবু দুজনের কেউই মুখ খোলে না। অবনীর কাছেই শুনেছিলো হালকা পাতলা। অবনীও ভালো করে জানে না সবটা। সুন্দর মিষ্টি একটা জুটি বিয়েতে গড়াবে না কি সত্যিই? অবাক এ পৃথিবী! তার আবর্তন বোঝা কঠিন।

.
.

চলবে...

তৃতীয় পর্ব

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ