বর্ষার নীলাদ্রি

কামাল উদ্দিন ১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ০৭:২০:৩৩পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ৩২ মন্তব্য

কেউ কেউ বলেন বাংলার কাশ্মীর, মূলত এটা একটা পরিত্যক্ত লাইম-স্টোন লেক, যা কেয়ারী লাইম স্টোন লেক নামে পরিচিত। এছাড়া কেয়ারী লেক, আবার অনেকে নীলাদ্রি নামে ডেকে থাকেন নীল পানির কারণে। তবে ইদানিং ভ্রমণ পিপাসুরা নীলাদ্রি নামটাকেই মনে হয় বেশী পছন্দ করছেন। তবে জায়গাটাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন সৌন্দর্য্যে যে কেউ জায়গাটার প্রেমে পড়তে বাধ্য।
সিমান্তের উপারের মেঘালয়ে পাহাড়ের সর্বশেষ অংশটা এই লেকের পানিতে এসে ডুবে গেছে। এই লেকটাও এক সময় ঐ পাহাড়েরই একটা অংশ ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ অংশের চুনা পাথরগুলো উঠিয়ে ফেলার কারণেই এই লেকের সৃষ্টি হয়েছে, আর অন্য দিকে সিমান্ত ওপারের বিশাল চুনা পাথরের পাহাড়টা এখনো পুরোপুরি অক্ষত। আর আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওড়ের শুরুটাও এখান থেকেই বলা চলে।
পাহাড়ের নিচু অংশে রয়েছে ভারতের কাটা তারের বেড়া। লেকের পাড়েই চুনা পাথরের একটি পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরি, সাথেই আছে ব্রিটিশ আমলের রেলওয়ে সিস্টেম। আর অগনিত লোহা লক্কর আর বিশালাকার পরিত্যক্ত দুটি ক্রেন। এককালে যে এখানে কোলাহলপূর্ণ কর্মযজ্ঞের যৌবন ছিল তার চিহ্ন বর্তমান।

সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত এই কোয়ারীটি ১৯৪০ সালে চুনাপাথর সংগ্রহ শুরু করে। এখানে চুনাপাথর সংগ্রহ করে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় নির্মিত আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটানো হত। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এর সকল কার্যক্রম।
পরে ১৯৬০ সালে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী চালু রাখার জন্য চুনা পাথরের প্রয়োজনে ভূমি জরিপ চালিয়ে সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট এলাকায় ৩২৭ একর জায়গায় চুনাপাথরের সন্ধান পায় বিসিআইসি কতৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে খনিজ পাথর প্রকল্পটি মাইনিংয়ের মাধ্যমে র্দীঘদিন পাথর উত্তোলন করা হয়। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোয়ারী থেকে চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। আর সেটাই বর্তমান সময়ে আমাদের কাছে হয়ে উঠে এই সময়ের নীলাদ্রি।


(২) সুনামগঞ্জ থেকে নিলাদ্রী যাওয়ার পথেই দেখা পেলাম কয়েকটি শামুক খোল পাখি।


(৩) যাদুকাটা নদীর তীরে এটা একটা প্রাচীন রাজ্য। যা লাউর রাজ্য নামে পরিচিত ছিল, এখন একটা ছোট্ট সুন্দর গ্রাম যা ভারত বাংলাদেশ সিমান্তে অবস্থিত। যাদুকাটা নদী থেকে তোলা পাথর ব হন করছে শ্রমিকরা।


(৪) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের উপর মেঘ জমেছে, এপারের সমতলে সবুজ ধান ক্ষেত, দেখলে দৃষ্টি জুড়িয়ে যায়।


(৫) যাদুকাটায় মাছ ধছে জেলেরা।


(৬/৭) যাদুকাটা নদী পারি দিতে হলে বর্ষায় দুটি পথ, বর্ষায় ট্রলার কিংবা বাইকে আর শুকনো মৌশুমে শুধু মাত্র বাইকে।


(৮) যাদুকাটা পারি দিলেই বারিক টিলার উপর ১২০৩ নং সিমানা পিলার। আগে ওপেন ছিল এখন পিলারের গায়ে বাশের বেড়া।


(৯)সিমান্তের ওপারে যাখানটায় শাহ আরেফিনের মাজার বলে লোকজন আমাকে দেখিয়েছিলো ওখানটায় বর্যায় দেখছি ঝর্ণার সৃষ্টি হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের দোলপূর্ণিমার ১৩ দিন পর লাউড়ের গড়ের অদূরে পূণ্যতীর্থ ধামে হয় বারুণী স্নান ও মেলা। একই দিনে লাউড়ের গড়ে শুরু হয় শাহ আরেফিনের মেলা, চলে ৩ দিন। এই দুই মেলাকে ঘিরে এখানে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসে লক্ষ লক্ষ মানুষ। ঠিক কত বছর আগে শাহ্ আরেফিনের মেলা শুরু হয়েছিল সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এটুকু জানা যায় এই মেলার বয়স ১০০ বছরেরও বেশী। আগে এই মেলার দিনে বিডিআর বিএসএফের সমঝোতায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হত। দু’দেশের লোক জমায়েত হত তখন এই মেলায়। কিন্তু মেলায় গন্ডগোলের পর থেকে এখন আর সীমান্ত খোলা হয় না।


(১০) ঘোড়ার প্রচলনটাও এই এলাকায় বেশ।


(১১/১২) লাউড়ের গড়, যাদুকাটা আর বারিক টিলা পারিদিয়ে এক সময় আমরা পৌছে যাই কাংখিত চুনাপাথরের লেকএ। কিছু উঁচু ঢিবি মাঝখানে লেক ওপারে সুউচ্চ খাসিয়া পাহাড়, সত্যিই অপরূপ।


(১৩/১৪) স্কুল সবে মাত্র ছুটি হয়েছে, আর শুরু হয়েছে বড় বড় ফোটার বৃষ্টি। বাচ্চারা ছুটছে বাড়ির দিকে।


(১৫/১৬) যখন এখানটার যৌবন ছিল তখনকার কিছু স্মৃতি।


(১৭/১৮) মুলত এই লেকের পাড় থেকেই টাঙ্গুয়ার হাওড় শুরু হয়েছে।


(১৯) এখানে রয়েছে এমন কিছু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।


(২০/২১) আর এখানে গেলে গ্রীষ্মের লাল কিংবা বর্ষার সবুজ শিমুল বন দেখতে ভুল করাটা ঠিক হবে না।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ