ভূতের মায়ের সুস্থতা

হালিম নজরুল ১ জুন ২০২০, সোমবার, ০৮:১৫:৫০অপরাহ্ন ছোটগল্প ৩১ মন্তব্য

নন্দীভূতের সাথে টুম্পার  সম্পর্কটি বেশ কিছুদিনের। তার বিভিন্ন রকম ভাল কাজের জন্য সে প্রায়ই ভূতের দেশে ভ্রমণের সুযোগ পায়। এবারও তাই সে ভূতের দেশে ভ্রমণ করতে এসেছে। অন্যবারের মত এবারও সে ভ্রমণে খুব মুগ্ধ হচ্ছে।

ভূতের স্কুলটি টুম্পার খুব প্রিয় একটি জায়গা। এখানে এসে সে অনেক সমাজসেবামূলক ভাল কাজ শিখেছে। আজও হয়তো কোন ভাল কাজের প্রেরণা পাবে, তাই তার মনটা খুবই ভাল। সে ভূতের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে নিজের দেশের নানান গল্প বলছে। ওরাও তাকে ওদের দেশের নানান গল্প শোনাচ্ছে।

গল্পে গল্পে সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ টুম্পার চোখ পড়লো মন্টি নামের একটা ছোট্ট ছাত্র মাঠের এক কোনায় মনমরা হয়ে বসে আছে। সে প্রথমে আশ্চর্য হলো। এতগুলো ছাত্রছাত্রী সবাই তার সাথে এত আনন্দ ভাগাভাগি করছে, অথচ মন্টি কি না একা মন খারাপ করে বসে আছে ! অনেকটা কৌতুহল নিয়ে টুম্পা তার দিকে এগিয়ে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলো- "কি হয়েছে তোমার? এখানে মন খারাপ করে বসে আছো কেন?" কিন্তু সে কোন উত্তর না দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

 

টুম্পার মত অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও এবার মন্টির দিকে এগিয়ে গেল। সবাই তাকে জিজ্ঞেস করলো"তোমার কি হয়েছে মন্টি ? আমরা  তোমার বন্ধু। তোমার সমস্যা জানলে আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করবো।" টুম্পাও তাকে শান্ত্বনা দেবার জন্য মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।

 

কিছুক্ষণ পর মন্টি কান্না থামিয়ে কথা বলতে লাগলো। সে বললো গতবছর জানুয়ারী মাসে তার বাবা মারা গিয়েছিল। আর কোন ভাই-বোন নেই। শুধুমাত্র মা'ই তার দেখাশোনা করতেন। কিন্তু আজ দুইদিন হলো মা খুবই অসুস্থ। মায়ের স্বল্প আয়ে তাদের সংসার চলে। কিন্তু আজ দুইদিন হলো মা কোন কাজে যেতে পারেনি। ওদিকে ঘরে যে ক'টা টাকা-পয়সা ছিল, স্কুলের বেতন আর পরীক্ষার ফী দিতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মায়ের চিকিৎসার জন্য এখন হাতে কোন টাকা নেই। মাকে বাঁচাতে না পারলে তার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যাবে! তাই আজ তার মনটা ভীষণ খারাপ।

 

মন্টির কথা শুনে অন্য সবারও মন খারাপ হয়ে গেল।কিন্তু মাস্টার মশাই সবাইকে বললেন "তোমরা মন খারাপ করো না। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে মন্টির মা রোগ থেকে মুক্তি পাবেন, মন্টিরও লেখাপড়ার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এই কঠিন কাজটি কারো একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এর জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।"

 

মাস্টার মশাইয়ের কথা শুনে সবার মনে সাহস ফিরে এলো। রিমু বললো "আমার মা আমাকে স্কুলে আসার সময় প্রতিদিন দশ টাকা করে দেন। আমি এটা-সেটা কিনে খাই। আজ থেকে আমি আর এইসব বাড়তি খরচ করবো না। এটা সাহায্য ফান্ডে জমা করবো।" কিমু বললো "আমিও আজেবাজে খেলনা কিনে অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করি। আজ থেকে আমিও ওই টাকাটা সাহায্য ফান্ডে জমা করবো।"

 

রিমু ভূত আর কিমু ভূতের কথা শুনে অন্যরাও খুব উতসাহী হয়ে উঠলো। সবাই বললো "আজ থেকেই আমাদের সাহায্য ফান্ড গঠন করা হলো। মন্টির মাকে দিয়েই আমাদের এই সহযোগিতার কাজ শুরু করলাম। আজই আমরা আমাদের সবার টিফিনের টাকা দিয়ে মন্টির মায়ের ঔষধ কিনবো। তাকে আমরা সবাই মিলে দ্রুত সুস্থ করে তুলবো। আজ থেকে আমাদের যে কোন বন্ধু যত বিপদেই পড়ুক না কেন, আমরা সকলে মিলে তা মোকাবেলা করবো। একে অপরকে সাহায্য- সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা একটি সুখী ও সুন্দর সমাজ গড়ে তুলবো।"

 

কথামতো সবাই মিলে একটা ফান্ড গঠন করলো। তাদের সহযোগিতায় কয়েকদিনের মধ্যেই মন্টিভূতের মা সুস্থ হয়ে গেল। এভাবে তাদের প্রচেষ্টায় কিছুদিনের মধ্যেই একটি সুখী ও সুন্দর সমাজ গড়ে উঠলো।

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ