বড় হয়ে কী হতে চাও? বই।

আকবর হোসেন রবিন ৮ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ১২:২৮:১২পূর্বাহ্ন মুভি রিভিউ ২৮ মন্তব্য

ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘বই’ কবিতা পড়েছেন? অসম্ভব দারুণ এক কবিতা।আমি কতবার যে পাঠ করেছি তার হিসেব তো নিজের কাছেও নেই। কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনি এই কবিতার মূলভাব অবলম্বনে যে একটা চিত্রনাট্য রচনা করা যায়। এটি করে দেখিয়েছেন তরুণ নির্মাতা লস্কর নিয়াজ মাহমুদ। তিনি নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘যদি জানতে’।

মেরিল-প্রথম আলোর ভালো উদ্যোগের একটি হচ্ছে ‘আগামীর নির্মাতা’ প্রতিযোগিতা।২০১৯ সালে প্রথম প্রতিযোগীতায় ১০ জনকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়। তারা ফেইম ফ্যাক্টরির পৃষ্ঠপোষকতায় একটি করে মোট ১০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানানোর সুযোগ পান। পরে এরমধ্য থেকে সেরা তিন চলচ্চিত্রকার সুযোগ পান তাদের স্বপ্নের ছবি নির্মাণে। এই তিনজনের একজন হলেন লস্কর নিয়াজ মাহমুদ। তিনি নির্মাণ করেন ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘যদি জানতে’। এতে কেন্দ্রীয় দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি।

ছবির গল্পটি সাজানো হয়েছে বইপাগল একজন কবির কাহিনী দিয়ে। সে ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পারে পড়াশোনার বই বাদেও আরো বই আছে যেগুলো পড়ে মজা পাওয়া যায়। তাইতো স্কুল ছুটির দিনগুলো কাটিয়ে দেয় লাইব্রেরীতে বসে। কখনও আবার টর্চলাইটের আলো জ্বালিয়ে পড়তে থাকে গভীর রাতে; মশারির ভেতর লুকিয়ে লুকিয়ে। বাবা  দেখলে বকবে, মারবে। মার অবশ্য খেতে হয়েছে, তবে বাবার হাতে নয়, স্কুলের স্যারের কাছে। তখন তার কৈশোর বয়স। একদিন ক্লাসে স্যার জিঙ্গেস করলো, ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’ জবাব ছিলো, ‘আমি বই হতে চাই’। সবাই যখন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, ছেলেটির স্বপ্ন তখন বই হওয়ার। এমন জবাব শুনেই ক্ষেপে যায় তার শিক্ষক ! আচ্ছা, একবার যার মাথায় বই হওয়ার স্বপ্ন ডুকে যায়, তাকে কি থামাতে পারে কেউ?

 

বাড়ির কাছে সুগন্ধা নদী। নদীর তীরে একটি গাছ। ক্লাস শেষে সে এই গাছের নিচে এসে শুয়ে থাকে। ভাবে আর শব্দের পিঠে শব্দ বসিয়ে লিখে। কবিতা লিখে। এভাবে পড়ে-ভেবে-লিখতে লিখতে ছেলেটি একদিন বড় হয়। শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ। তারপর বাড়ি থেকে চলে যায় দূরে বহুদূরে। সেখানে কবির জীবনে প্রেম আসে। শুরু হয় আরেক গল্প।

এই গল্প দেখাতে গিয়ে নির্মাতা নব্বই দশকের পরিবেশ তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। ব্যবহার করেছেন মফস্বলের অলিগলি, সুগন্ধা নদী। এছাড়াও গল্পে ইমতিয়াজ মাহমুদ, জয় গোস্বামী ও নির্মাতার নিজের লেখা কবিতার ব্যবহার দেখা যায়। অর্থাৎ পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে কবিতা বা সাহিত্য পর্দায় তুলে আনার একটা দারুণ চেষ্টা ছিলো। এই ব্যাপারটা আমাকে স্পর্শ করেছে। এই চলচ্চিত্রের নির্মাতার পাশাপাশি আর যাদের প্রশংসা করতে হয়, তাদের একজন চিত্রগ্রাহক রিপন চৌধুরী। কবিতার সাথে লোকেশনের যে  মিলবন্ধন তিনি উপস্থাপন করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘শহর’ কবিতা সিনেমার পর্দায় যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছে তা  দর্শককে খুব সহজেই মোহিত করবে। কবি কৈশোরে গাছের তলে শুয়ে যখন লিখেন,‘এ শহরের আকাশে মৃত বালকেরা ঘুড়ি ওড়ায় আর পাখির মতন গাছের ডালে বসে থাকে।’  ঠিক তখন সেই গাছের ডালে কয়েকটি বালক বসে থাকে। এক ডাল থেকে অন্য ডালে  চলাফেরা করে।  আবার যখন লিখেন, ‘যারা সাঁতার জানে না ফেরেশতারার তাদের সাঁতার শেখায়।’ তখন গাছের ডালে বসে থাকা বালকরা নদীতে লাফ দেয়। এভাবে ‘শহর’ কবিতার সাথে সিনেমার যে দৃশ্যগুলো দেখানো হয়েছে, তা দেখার পর আমি আর এগুতো পারছিলাম না। টেনে টেনে বারবার একই দৃশ্য দেখেছি। যত দেখি চোখ যেন ততই আরামবোধ করে।

কবির শৈশব ও কৈশোরের চরিত্রে অভিনয় করেছে দুই শিশুশিল্পী। তাদের এবং কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র ইয়াশ রোহান ও সুমাইয়া হিমির অভিনয় নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। সব ছিলো সাবলীল।  যতটুকু অভিনয় করার প্রয়োজন ছিলো, ঠিক ততটুকু তারা করতে পেরেছে। তাই সব মিলিয়ে এটুকু বলতে পারি, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যাবে।

ছবি: অনলাইন থেকে নেওয়া

 

 

3 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress