মাহবুবুল আলম ||
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী কুখ্যাত খুনী রিসালদার মোসলেমউদ্দীন ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে আটক হয়েছে বলে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নিউজ পোট্রালে খবর বেরিয়েছে। একই সাথে যোগাযোগ মাধ্যমে কুখ্যাত খুনি মোসলেমউদ্দীনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

এনওয়াইমেইল২৪.কম এর ১৯ এপ্রিল ২০২০ প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম" বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে হত্যাকারী রিসালদার মোসলেমউদ্দীন ভারতে আটক" এর মাধ্যমে জানা যায় যে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেহউদ্দীন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। এসময় গোয়েন্দারা মোসলেমউদ্দীনের স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। তবে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন মোসলেমউদ্দীন। উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর রেলস্টেশন এলাকায় অপরিচিত কিছু ব‌্যক্তির সাথে তাকে সর্বশেষ দেখা যায়।
জানা যায় দীর্ঘদিন মোসলেমউদ্দীন গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। এই এলাকায় ডাক্তার দত্ত নামে পরিচিত ছিলেন এবং ”ইউনানী ফার্মাসী” নামে একটি প্রতিষ্টানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করতেন। ঠাকুরনগর রেলস্টেশনের এক নম্বর প্লাটফরমের পিছনে একটি বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এই এলাকায় প্রায় ৪০বছর ধরে বসবাস করছিলেন মোসলেমউদ্দীন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। যে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকান্ডের মিশনে অংশ নেয় তার মধ্যে রিসালদার মোসলেমউদ্দিন অন্যতম। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজহাতে গুলি করে হত্যা করে এই খুনি। এরপর অন্য খুনীদের সাথে সেও বঙ্গভবনে দায়িত্বপালন করেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনীদের সাথে তিনিও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তার কয়েকবছর পর চলে আসেন ভারতে এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

প্রায় একই রকম খবর পরিবেশন করে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা। এ ছাড়াও ইংরেজি নিউজ পোট্রাল দর্পণ এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ নিন্মে তুলে ধরা হলো-
"Indian agencies have nabbed an octogenarian man  from the border town of Bongaon in West Bengal, saying he has “striking resemblance” to Risaldar Mosleh Uddin, who had personally shot Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman on August 15, 1975.
Mosleh Uddin, who had long remained at large, is one of the convicted killers of Bangladesh’s Father of the Nation, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.
The detained man was running a traditional Unani and Ayurvedic medicine shop named “Dutta Pharmacy” at Thakurnagar in Bongaon, according to Indian intelligence sources."

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয় , ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসালদার মোসলেম উদ্দিনকে উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও নিউজ পোট্রালের খবর থেকে জানা গেছ মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গা ঢাকা দিয়েছে মোসলেম উদ্দিন। কিন্তু এ খুনি ও নরঘাতকের শেষ রক্ষা হয়নি এর মধ্যেই ভারতের গোয়েন্দাদের হাতে সে আটক হয়ে যায়। লকডাউনের সময় এ ভারত থেকে মোসলেহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতকে জানায়।
ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোনও একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে খবর বেরুলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দু'দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি।

পরিশেষে এই বলেই শেষ করতে চাই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি মাজেদ এবং মোসলেম উদ্দীন দীর্ঘদিন ভারতীর গোয়েন্দাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এবং কাদের সহযোগিতা বা প্ররোচনায় পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপন করে ছিল
তা নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানি না এ প্রশ্নের কখনো সুরাহা হবে কি-না।

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ