বললাম, ঢাকা যেতে হবে, শামসুল হক সাহেব খবর দিয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মীদের একটা সভা হবে। পরে আবার একবার এসে দেখা করব।" বললেন, "এস।"
নূরুদ্দিন এল না, কারণ সামনেই তার এম এ পরীক্ষা। পরীক্ষার পরি চলে আসবে। নূরুদ্দিনের নানা অসুবিধা, তার স্ত্রী তখন মেডিকেল কলেজে পড়ে। তাকেও আনতে হবে।
আমি ভাবতাম, পাকিস্তান কায়েম হয়েছে, আর চিন্তা কি? এখন ঢাকায় যেয়ে ল' ক্লাসে ভর্তি হয়ে কিছুদিন মন দিয়ে লেখাপড়া করা যাবে। চেষ্টা করব, সমস্ত লীগ কর্মীদের নিয়ে যাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা না হয়।
আব্বা, মা ও রেণুর কাছে কয়েকদিন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা এলাম। পূর্বে দু'একবার এসেছি বেড়াতে। পথ ঘাট ভাল করে চিনি না। আত্মীয়স্বজন, যারা চাকরিজীবী, কে কোথায় আছেন, জানি না। ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে প্রথমে উঠব ঠিক করলাম। শওকত মিয়া মোগলটুলী অফিসের দেখাশোনা করে। মুসলিম লীগের পুরানা কর্মী। আমার বন্ধুও। শামসুল হক সাহেব ওখানেই থাকেন। মুসলিম লীগ ও অন্যান্য দলের কর্মীদের সভা ডেকেছেন শামসুল হক সাহেব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে। আমাকে খবর দিয়েছেন পূর্বেই। তাই কয়েকদিন পূর্বেই এসে হাজির হতে হল। ঘোড়ার গাড়ি ঠিক করলাম, ১৫০ মোগলটুলীতে পৌঁছে দিতে। দেখলাম, রসিক গাড়ওয়ান মোগলটুলী লীগ অফিস চেনে। আমাকে বলল, "আপনি লীগ অফিসে যাইবেন, চলেন সাব আমি চিনি।" পয়সাও বেশি নিল বলে মনে হল না। অনেক গল্প শুনেছি এদের সম্পর্কে। কিন্তু আমার সাথে দর কষাকষিও করল না। শামসুল হক সাহেব ও শওকত সাহেব আমাকে পেয়ে খুবই খুশি। শওকত আমাকে নিয়ে যে কি করবে ভেবেই পায় না। তার একটা আলাদা রুম ছিল। আমাকে তার রুমেই জায়গা দিল। আমি তাকে শওকত ভাই বলতাম। সে আমাকে মুজিব ভাই বলত। তিন-চার দিন পরেই কনফারেন্স হবে। বহু কর্মী এসেছে বিভিন্ন জেলা থেকে। অনেকেই মোগলটুলীতে উঠেছে। শামসুল হক সাহেব বললেন, "জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, কোথায় কনফারেন্স করব? সরকার নাকি এটাকে ভাল চোখে দেখছে না। আমাদের কনফারেন্স যাতে না হয় সেই চেষ্টা করছে এবং গোলমাল করে কনফারেন্স ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।" আমি বললাম, "এত তাড়াতাড়ি এরা আমাদের ভুলে গেল হক সাহেব।" হক সাহেব হেসে দিয়ে বললেন, "এই তো দুনিয়া!"
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৮২ ও ৮৩)
৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
অসাধারণ পোষ্টটি এখনো লিখে যাচ্ছেন দেখে খুব ভালো লাগলো আপু, আগের কয়েকটি পর্ব পড়া হয়নি, সময় করে পড়ে নেবো।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ। কিন্তু ধৈর্যহারা হয়ে যাচ্ছি মনে হয়।
ইঞ্জা
আপু, এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখছেন যে, ধৈর্য্য হারালেই সব শেষ, লিখে যান আপু।
জিসান শা ইকরাম
বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে দেশ বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে,
মানসিক ভাবে মেনে নিতে পারছি না আর।
লেখুন নিয়মিত ভাবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আর লিখে কি হবে! যে উদ্দেশ্য নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম, উলটো গতি দেখে লিখার ইচ্ছা মরে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্চি আমরা!!!
নীলাঞ্জনা নীলা
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ আজ আর নেই কোথাও! 🙁
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কোত্থাও নেই নীলাদি, বড় কষ্ট হয়।