শহীদ সাহেব ও হাশিম সাহেব পরামর্শ করে পাঁচজনের নাম ঠিক করলেন: ১. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী ২. আবুল হাশিম ৩. মওলানা রাগীব আহসান ৪. আহমদ হোসেন এবং ৫. লাল মিয়া আমাদের পক্ষের, অন্য পক্ষ থেকে নাজিমুদ্দীন সাহেবও পাঁচজনের নাম দিলেন। এই সময় ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব পার্লামেন্টারি বোরডের সদস্য হবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন ও ভীষণ ক্যানভাস শুরু করেন। আমিও তাঁর জন্য তদবির করেছিলাম। শহীদ সাহেবও প্রায় রাজী হয়ে গিয়েছিলেন। লাল মিয়াকে বাদ দিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরীকে নেওয়া হবে, তখনও ফাইনাল হয় নাই। এই অবস্থায় রাতে ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেব নাজিমুদ্দীন সাহেবের সাথে দেখা করলেন এবং তাঁকে নমিনেশন দিলে তিনি চট্টগ্রাম গ্রুপ নিয়ে তাঁর দলে যোগদান করবেন বলে প্রস্তাব দিলেন। শহীদ সাহেব রাতেই খবর পেলেন এবং বললেন, "কিছুতেই ওকে নমিনেশন দেওয়া হবে না, কারণ এই বয়সেই ওর এত লোভ।" ওদিকে নাজিমুদ্দীন সাহেবও তাঁকে তাঁর দল থেকে নমিনেশন দিতে রাজী হলেন না। শেষ পর্যন্ত চৌধুরী সাহেব শহীদ সাহেবের দলকেই ভোট দিলেন। তাঁর দলের সকলেই শহীদ সাহেবের ভক্ত। এম.এ. আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, আবুল খায়ের সিদ্দিকী, আজিজুর রহমান চৌধুরী সকলেই শহীদ সাহেবের ভক্ত ছিলেন। চৌধুরী সাহেবের এই ব্যবহারে তাঁরাও কিছুটা মনোক্ষুন্নই হয়েছিলেন। এরা সবাই আমার ব্যক্তিগত বন্ধু।
কাউন্সিল সভা যখন শুরু হল, মওলানা আকরম খাঁ সাহেব কিছু সময় বক্তৃতা করলেন। তারপরই আবুল হাশিম সাহেব সেক্রেটারি হিসাবে বক্তৃতা দিতে উঠলেন। কিছু সময় বক্তৃতা দেওয়ার পরই নাজিমুদ্দীন সাহেবের দলের কয়েকজন তাঁর বক্তৃতার সময় গোলমাল করতে আরম্ভ করলেন। আমরাও তার প্রতিবাদ করলাম, সাথে সাথে গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল। সমস্ত যুবক সদস্যই ছিল শহীদ সাহেবের দলে, আমাদের সাথে টিকবে কেমন করে! নাজিমুদ্দীন সাহেবকে কেউ কিছু বলল না। তবে তাঁর দলের সকলেরই কিছু কিছু মারপিট কপালে জুটেছিল। আমি ও আমার বন্ধু আজিজ সাহেব দেখলাম, শাহ আজিজুর রহমান সাহেব ফাইল নিয়ে নাজিমুদ্দীন সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ও আজিজ পরামর্শ করছি শাহ সাহেবের কাছ থেকে এই খাতাগুলি কেড়ে নিতে হবে, আমাদের ছাত্রলীগের কাজে সাহায্য হবে। নাজিমুদ্দীন সাহেব যখন চলে যাচ্ছিলেন, শাহ সাহেবও রওয়ানা করলেন, আজিজ তাঁকে ধরে ফেলল। আমি খাতাগুলি কেড়ে নিয়ে বললাম, কথা বলবেন না, চলে যাবেন। আজকাল যখন শাহ সাহেবের সাথে কথা হয় ও দেখা হয় তখন সেই কথা মনে করে হাসাহাসি করি। শাহ সাহেব ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ন্যাশনাল এসেম্বলিতে আওয়ামী লীগ পার্টির নেতা ও বিরোধী দলের ডেপুটি লিডার হন। তাঁর সাথে আমার মতবিরোধ ১৯৫৮ সালের মার্শাল 'ল জারি হওয়া পর্যন্ত চলে।
মওলানা সাহেব পরের দিন পর্যন্ত সভা মুলতবি রাখলেন এবং দশটায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে বলে ঘোষণা করলেন। ব্যালট করা হল। পাশের রুমে বাক্স রাখা হল। একজন পাঁচটা করে ভোট দিতে পারবে। আমি ভিতরের গেটে দাঁড়িয়ে ক্যানভাস করছিলাম, মওলানা সাহেবের কাছে কে যেন নালিশ করেছে। তিনি আমাকে বললেন, "তুমি ওখানে কি করছ ছোকরা?" আমি বললাম, "আমিও একজন সদস্য, ছোকরা না।" মওলানা সাহেব হেসে চলে গেলেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৪৩ হতে ৪৫)
Thumbnails managed by ThumbPress
৯টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
মজা লাগলো এই পর্ব পড়ে। মারপিটের কারণে এই মজা 🙂 শাহ আজিজ আবার পরে স্বাধীনতার বিপক্ষেও কাজ করেছিলেন না? এই শাহ আজিজই তো প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হুম ! সজীব ভাইয়া।
এই সেই শাহ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, পর্বটা মজার ছিলো।
মিষ্টি জিন
মাএ কিছুদিন আগে আমি সোনেলায় এসেছি। তখন থেকেই আপনার এই পোষ্ট টা পড়ছি।
প্রতেকটা পর্বই ভাললাগছে।বংগবন্ধু সমন্ধে অনেক কিছু জানতাম না, যা আপনার এই লেখার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
ভাল থাকবেন আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শুনে ভালো লাগলো। একটু একটু করে দেয়াতে প্রতিটা পর্বেই নতুন কিছু জানা যায়, উপলব্ধি করা হয়।
মোঃ মজিবর রহমান
পরবটা ভালই লাগলো খুব ইমেজিং বটে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y) মজার ঘটনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু এই পর্বটা বেশ লাগলো। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, যখন কেউ একবার বিশ্বাসভঙ্গ করে, সে আজীবনই করে যাবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এটা ব্যক্তির সহজাত বৈশিষ্ট্য। এর থেকে বেরুবে কি করে।