
একসময় ছেঁড়া খাতা আর ভাঙা কলম দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে টেনেটুনে পাস করে ফেললাম। অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলাম। রোল নং আগে যেখানে ছিল ৮, সেখানে হয়েছে ১০। রোল নম্বর দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাংলা, অঙ্ক, সমাজ বিজ্ঞানে যা-ই ছিলাম, ইংরেজিতে ছিলাম কাঁচা। ইংরেজিতে আর পাকতে পারিনি সংসারের অভাবের কারণে। এর ফলস্বরূপ রোল নম্বর ১০ হয়ে গেল। তখনকার সময়ে জিপিএ প্লাস মাইনাস ছিল না। ছিল ডিভিশন। ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন। আর এখনকার ভিশন হলো, জিপিএ প্লাস, মাইনাস, স্টার মার্ক, গোল্ডেন মার্ক-সহ আরও অনেককিছু।
তো আমার রোল নম্বর পিছিয়ে যাবার আরও অনেক কারণ ছিল। সেই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, দারিদ্রতা। স্কুলে যাবার তেমন কোনও ভালো জামা ছিল না। মাসের পর মাস স্কুলে যেতাম খালি পায়ে। পায়ের স্যান্ডেল ছিল না। বছর শুরুতে নতুন বই তো কপালে জুটতোই না। পরীক্ষায় পাস করে উপর ক্লাসে ওঠা এমন ছাত্রদের কাছ থেকে পুরাতন বই কিনে পড়া হতো। আমার সাথের অনেকেই ভালো মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তো। বর্তমানে যাকে বলে কোচিং। এই কোচিং বানিজ্য আগে ছিল না। কোচিঙের নামও কেউ শুনেনি। স্কুলে মাস্টার কর্তৃক ব্যাচ নামের শিক্ষাব্যবস্থাও ছিল না। সেসময় শিক্ষকরা এমন ব্যবসা করতোও না। তাঁরা শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াতো। প্রাইভেট মানে, একজন শিক্ষকের কাছে বা শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে পড়ার নাম প্রাইভেট। আবার অনেক শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে এসে পড়াতো। কিন্তু আমার কপালে প্রাইভেট পড়া জুটেনি। অর্থভাবে প্রাইভেট পড়ার ইচ্ছেও তখন ছিল না।
তবে ইংরেজিতে খুবই কাঁচা ছিলাম বলে, বাসার পাশে থাকা এক ভদ্রলোককে মাঝে মাঝে বিরক্ত করতাম। সম্মানিত ভদ্রলোক তখনকার সময়ে বিএ পাস করা লোক। পুলিশে একটা চাকরি নেওয়ার জন্য বড় ভাইয়ের কাছে আসা। আসা মানে বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতো। বড় ভাইয়ের নাম, সুভাষ। ভদ্রলোকের নাম ছিল, শ্রীবাস। আমি ভদ্রলোককে শীবাস দাদা বলেই ডাকতাম। শ্রীবাস দাদার বড়ভাই থাকতো নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানাধীন আদর্শ কটন মিল অভ্যন্তরে। সেই সুবাদে তিনিও মিল অভ্যন্তরে বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতো। আমরাও থাকতাম আমার বড় দাদার চাকরির সুবাদে, মিলের শ্রমিক কোয়ার্টারে। শ্রীবাস দাদা আমাকে সুন্দরভাবে ইংরেজি বুঝিয়ে দিতেন। তখনকার সময়ে এভাবেই চলছিল আমার লেখাপড়া।
তারপরও সপ্তম শ্রেণির বাৎসরিক পরীক্ষায় টেনেটুনে পাস করে ফেললাম। পাস করেও শুরু হলো আরেক জ্বালা। জ্বালা মানে অষ্টম শ্রেণির বই নেই। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর, একজনের কাছে কয়েকটা ছেঁড়া-ফাঁড়া বই পেলাম। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর পুরো সেট পাইনি। যা পেয়েছি তার সাথে দু’একটা মেইন বই আর ক’টা নোটবই হলেই আমার হয়ে যায়। কিন্তু মা-বাবা এবং বড়দা’র কাছে বই কেনার মত টাকা হচ্ছে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মিলের বেতন না হচ্ছে। মিলের শ্রমিকদের বেতন হবার বাকি আরও ১০দিন। সেই অপেক্ষায় থেকেই যে কয়টা বই ছিল, তা নিয়েই স্কুলে আসা-যাওয়া শুরু করলাম।
তখন বছর বছর ভর্তির ঝামেলা ছিল না। একবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক ভর্তিতেই হয়ে যেতো। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারলেই, একেবারে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলতো। এরমধ্যে দিতে হতো শুধু মাসিক বেতন বাবদ সীমিত কিছু টাকা। আর এখনকার সময়ে সরকারি বেসরকারি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছর বছর ভর্তি দিতে দিতে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের নাভিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস উঠে যায়। তবুও অভিভাবকগণ নিরুপায় হয়ে যার যার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে বাধ্য। যাক সে কথা। নিজের কথায় আসা যাক!
নিজের কথা হলো, বড় দাদার বেতন হবে। বাবার বেতন হবে। কিছু নতুন বই কেনা হবে। যদি সম্ভব হয় তো সাথে নতুন জামা-প্যান্টও হতে পারে। এসব আশা নিয়েই স্কুলে যেতাম, আসতাম। স্কুলে গেলে সাথের বন্ধুদের নতুন বইগুলো হাত বুলিয়ে দেখতাম। পড়তাম। কোত্থেকে, কোন লাইব্রেরি থেকে কেনা হয়েছে, জিজ্ঞেস করতাম। মনে মনে বলতাম, ‘দাদার বেতন হলে আমারও নতুন বই হবে’। এভাবে নিজের মনটাকে শান্তনা দিতে দিতে একসময় মিলে শ্রমিকদের বেতন হলো। বড়দা বেতন পেলেন। বাবা বেতন পেলেন। কিন্তু আমার বই কিনে দেওয়ার কোনও নামগন্ধ নেই! মাকে বলে-কয়ে ম্যানেজ করলাম। মা বড় দাদার কাছ থেকে দশ টাকা, আর বাবার কাছ থেকে নিলেন দশ টাকা। এই বিশ টাকাই ছিল আমাদের সংসারের বাড়তি একটা খরচ। তাও আমার লেখাপড়ার জন্যই বাড়তি ঝামেলাটা। তখনকার সময়ে বিশ টাকার অনেক মূল্য! অনেক দাম! তারপরও মায়ের চেষ্টার বিনিয়ে বিশ টাকা হাতে পেলাম। বই কিনতে হবে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে।
সেসময় প্রতি রবিবার সপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। কিন্তু মার্কেট বন্ধ থাকতো প্রতি শুক্রবার অর্ধেক বেলা। কোনও কোনও দোকানপাট শুক্রবারে সারা দিনই বন্ধ থাকতো। বিশেষ করে লাইব্রেরিগুলো বন্ধ থাকতো। তা আর আমার জানা ছিল না। আমি বিশ টাকা নিয়ে মনের আনন্দে শুক্রবার দুপুরের পরপর নারায়ণগঞ্জ শহরের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে রওনা হলাম, বই কেনার জন্য। নারায়ণগঞ্জ শহরে কালীর বাজার ঘুরে দেখলাম, সব লাইব্রেরি বন্ধ। গেলাম ডি.আই.টি মার্কেট। সেখানেও বইয়ের দোকান বন্ধ। গেলাম টানবাজার। সেখানেও কোনও লাইব্রেরি খোলা পেলাম না। পড়লাম বিপাকে। নিজেই নিজেকে বললাম, ‘এতো কষ্ট করে প্রায় সাড়ে তিন মাইল পথ হেঁটে শহরে এসেও খালি হাতে আমাকে বাসায় ফিরতে হচ্ছে! আবার হয়তো আমাকে আগামীকাল আসতে হচ্ছে।’ এই বলে নিজের মনটাকে শান্তনা দিয়ে খালি খালি হাঁটতে লাগলাম।
হাঁটতে হাঁটতে একটু সামনে গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। সময়টা তখন মনে হয় ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময় ছিল। তখন ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের জয় জয়কার সময়। লোকের ভীড় সিনেমা হলের সামনে। সিনেমা হলের নাম, আশা আর মাশার। একসাথে দুটি সিনেমা হল। উপরে মাশার। নিচে আশা। আশা সিনেমা হলে চলছে, তখনকার সময়ে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘দি রেইন’ ছায়াছবি। যেই ছায়াছবির সংলাপ রেডিওতে দিনরাত শুনতাম, সেই ছায়াছবি এখানে চলছে? ছায়াছবির পোস্টার দেখে অবাক হয়ে গেলাম। লোভেও পড়ে গেলাম। বই কেনার কথা মুহূর্তে ভুলে গেলাম। সিনেমা হলের ভেতরে পেলাম। কিন্তু টিকেট কাউন্টারের সামনে আর এগুতে পারলাম না। মনটা আনচান আনচান শুরু করে দিলো।
এই জীবনে আর কখনো একা একা সিনেমা হলে ছবি দেখিনি। অনেক আগে নিজেদের বাড়ি থাকতে আমার বড় মামার সহায়তায় মায়ের সাথে বসে সিনেমা হলে ছায়াছবি দেখেছিলাম। সেই দেখা ছিল নোয়াখালীর চৌমুহনী টাউনে দর্পণ সিনেমা হলে। ছায়াছবির নাম ছিল, ‘মানুষের মন’। আর এখন আমি এক সিনেমা হলের সামনে দাঁড়ানো। সাথে আছে বিশ টাকা। তাও বই কেনার টাকা। তা থাকুক! বই যখন পাইনি, তখন সিনেমা দেখেই বাসায় যাবো। এমন চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়েই ব্ল্যাকারদের কাছ থেকে সেকেন্ড ক্লাসের একটা টিকেট কিনে ফেললাম। টিকেটের দাম মাত্র পাঁচ টাকা। যদি টিকেট কাউন্টার থেকে কিনতে পারতাম, তাহলে আড়াই টাকা দিয়েই কিনতে পারতাম। কিন্তু অনেক লোকের সমাগমের কারণে তা আর হয়নি। শেষতক আড়াই টাকার টিকেট ব্ল্যাকে পাঁচ টাকা দিয়ে কিনতে হলো। কিনলামও। বইয়ের কথা ভুলে সিনেমা দেখলাম। বিরতির সময় সিনেমা হল থেকে বের হয়ে তিন চার টাকা খরচও করে ফেললাম। সিনেমা দেখে বাসায় ফিরলাম রাত ৮টায়।
এদিকে আমার ফিরতে দেরি হওয়ায় মা খুব টেনশন করছে। এমনকি কান্নাকাটিও হচ্ছে। আমাকে খোঁজার জন্য বড় দাদা নারায়ণগঞ্জ যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় আমি বান্দা ভয়ে ভয়ে বাসার সামনে হাজির হলাম। সাথে বই নেই। অথচ টাকা আছে মাত্র দশ টাকা। মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় গিয়েছিলি?’ গিয়েছিলাম তো বই কেনার জন্যই। মায়ের প্রশ্ন,‘বই কোথায়?’ আজ তো শুক্রবার, তাই বইয়ের দোকান বন্ধ। কালকে আবার যেতে হবে, বললাম মাকে। ‘টাকা কোথায়?’ আমি চুপ করে আছি। বড় দাদা বুঝতে পেরেছে, ঘটনাটা কী ঘটেছে। ওমনি আমার পকেট তল্লাশি শুরু হয়ে গেল। পকেটে পেলো দশ টাকা। আনা হলো মোটা রশি, আর পেয়ারা গাছের শুকনো ডালা। এরপর তো শুরু হয়ে গেল রিমান্ড। যেই রিমান্ড আমাকে দেওয়া হয়েছিল, সেই কঠিন রিমান্ড মনে হয় পুলিশেরা গুরুতর অপরাধীকেও দেয় না। এরপরও ছিল সারা রাতের জন্য শাস্তি। আমার সজার সাথে আমার অভাগী মা-ও সারারাত জেগে সাজা ভোগ করেছিল। সারারাতের জন্য যেই শাস্তি আমাকে দেওয়া হয়েছিল, সেটা আর লেখায় প্রকাশ করলাম না। প্রিয় পাঠকবৃন্দ এমনিতেই বুঝে নিতে পারছে বলে মনে হয়।
সেই সাজা ভোগ করে যেমন শিক্ষা পেয়েছি, তারচেয়ে বেশি শিক্ষা জীবনে ধারণ করেছি। সেই শিক্ষা থেকে আর কখনো পড়ালেখার জন্য বড় দাদার টাকা নেইনি। বাবার টাকা দিয়ে সিনেমা দেখিনি। এমনকি মায়ের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েও কখনো বাজে কোন খরচ করিনি। যা করেছি, নিজের কামাই রোজগারের টাকা দিয়েই করেছি। লেখাপড়া করেছি নিজে কাজ করে। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে বিকেলের অবশিষ্ট সময়টুকু বাদাম বিক্রি করে শেষ করেছি। রবিবার স্কুল বন্ধের দিনে আদর্শ কটন মিলে রাজ যোগালি কাজ করেছি। দৈনিক মজুরি পেতাম মাত্র ৮টাকা। এছাড়াও যখন যা কাজ পেতাম, তা-ই করতাম। সপ্তাহে মজুরি যা পেয়েছি তা দিয়ে বই খাতা কলম-সহ স্কুলের মাসিক বেতনের খরচ জুগিয়েছি। তারপরও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের জাঁতায় বেশি অগ্রসর হতে পারিনি। এই অনম্য কপালের জন্য যতটুকু বরাদ্দ ছিল, ঠিক ততটুকুই করতে পেরেছি। তবে জীবন চলার মাঝে অতিরিক্ত লোভ করিনি। কোনও কাজে হতাশ না হয়ে, সফল হবার আশাই করেছি।
এভাবে চলতে চলতে আজ প্রায় বুড়ো হয়ে গেছি। মা, বাবা, বড় দাদা, বড় বোনদের স্বর্গে পাঠিয়েছি। আজ আমার গুরুজন বলতে দুই বড় বোন ছাড়া কেউ নেই। তাও তাঁরা পরের ঘরে। কিন্তু সেসব কথা আর স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। খুব মনে পড়ে।
২৯টি মন্তব্য
নাজমুল আহসান
দাদা, বহুদিন এমন মুগ্ধতা নিয়ে কিছু পড়িনি। বিশেষ করে শেষের কয়েকটা লাইন।
আমি নিজে স্ট্রাগল করেছি। বাবার টাকা ছিল না এমন না। যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সব সময় আমার মনে হয়েছে, নিজের দায়িত্বটুকু নিজে নিই না কেন!
প্রচুর পরিশ্রম করেছি। বন্ধুরা যখন মদ-গাঁজার আসরে বা বড় বড় রেস্টুরেন্ট-ফাস্টফুডে আড্ডা দিয়েছে, তখন আমি নিভৃতে কাজ করে গেছি। এই পরিশ্রমের ফল হয়তো কিঞ্চিৎ পেয়েছি। সে গল্প আরেকদিন বলা যাবে। কিন্তু আমি জানি, জীবনের আসল শিক্ষাগুলো নিতে হবে আপনাদের কাছ থেকে।
যেদিন সাক্ষাৎ হবে, সেদিন আপনার কাছে কষ্টের গল্পগুলো শুনব।
অনেক শুভকামনা রইল দাদা।
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় নাজমুল দাদা, আমি এখনো অত্যন্ত পরিশ্রমী। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি। তবে দুপুরে অন্তত ২ঘণ্টা ঘুমাতে পারি। আর এখনো আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই সমানতালে কাজ করে দিনাতিপাত করি। সামান্য আয় যা থাকে, তা মেয়ের তিন সন্তানের লেখাপড়ার জন্য বরাদ্দ থাকে। এই হলো, আমার বর্তমান জীবন। তবুও ভালো আছি দাদা। সম্মানের মাঝেই আছি। এটাই আমার জন্য অনেককিছু দাদা।
শুভকামনা আপনার জন্য এবং ব্লগের সবার জন্য। জয় হোক সোনেলার।
মনির হোসেন মমি
দাদা আমি কই আছিলাম আপনার পাশের গ্রামের তখনতো গ্রাম ছিলো। আশা হল আগো হইছিল মাশার হল পরে হইছে।আমি রাত ৮ টায় রিক্সাওয়ালাগো কাছ থেকে রিক্সা পাচ টাকা দিয়া কিনে নিজে চালািয়া আশায় ছবি দেখি। তবে আপনার শিক্ষা জীবন অভিভুত! যদিও আমি আপনার মতই কষ্ট করেছি তবে বাবায় আদমজী জুট মিলের সর্দার ছিলো বলে সপ্তাহে যা বেতন পেত তাতেই মোটামোটি টানপোড়নে চলত।
নয়ন ভেজাঁ লেখা।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, মনির দাদা। আগে ছিল আশা, তারপর মাশার। তো দাদা, মাশার সিনেমা হলে ইংলিশ ছবি বেশি চলতো। বেশি মানে খুবই বেশি। ইংলিশ ছায়াছবির জন্য এদিকে মাশার, এরপর নিউ মেট্রো, আর গুলশান সিনেমাহল। তো এখন সবই স্মৃতি।
ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় মনি দাদা।
মনির হোসেন মমি
হ্যা ঠিক তাই। তবে হংস হলের পর্দার ছবি ছিলো অন্য সব হলের চেয়ে অনেক পরিষ্কার।
নিতাই বাবু
হংস সিনেমাহল ছিল নারায়ণগঞ্জ শহরে থাকা সিনেমা হলগুলোর মধ্য সবচেয়ে ছোট। তবে আয়তনের দিক দিয়ে ছোট হলেও, হিংস সিনেমাহল পর্দার জন্য ছিল বিখ্যাত। অনেই সিনেমা দেখার জন্য এই হংস সিনেমা হলকেই বেছে নিত।
তৌহিদ
লেখা পড়ে আপ্লুত হলাম দাদা। জীবনের অনেক ঘটনা মনকে নাড়া দিয়ে যায়। আপনার বাস্তবিক লেখাগুলো পড়লে সত্যি জীবনবোধের শিক্ষা পাই। আমার কাছে সেই প্রকৃত মানুষ যিনি নিজের কষ্টার্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ হয়েছেন। ধনী গরিব বিষয় নয়। আমি মুল্যায়ন করি তার আদর্শকে।
স্যালুট জানাই আপনাকে। ভালোবাসা রইলো দাদাভাই।
নিতাই বাবু
আমি দাদা, ধনী গরিবের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাইও না। কিন্তু অনেই এর সাপোর্টার। তবে দাদা, আমি এখনো খুবই পরিশ্রম করেই দিনাতিপাত করছি। তারপরও কিন্তু সুখে আছি। শান্তিতে আছি। কামনা করি, এভাবে থেকেই যেন জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকু পার করতে পারি। আপনাদের সকলের আশীর্বাদ প্রার্থী।
শুভকামনা সকলের জন্য।
তৌহিদ
আপনার জন্যেও শুভকামনা রইলো। আশাকরি অচিরেই দেখা হবে দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনার প্রতিটি লেখা বাস্তবতা কে সাড়া দিয়ে যায়।।
অনেকটা আপ্লুত হলাম দাদা।
প্রত্যেক ব্যক্তির আদর্শকে মূল্যায়ন করা উচিত।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, শ্রদ্ধেয় দাদা, আমার বাস্তব জীবনটা কিন্তু এমনই। যা লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছি, এরচেয়েও কষ্টের দাদা। তবুও আপনাদের সকলের আশীর্বাদে আমি ভালো আছি। শান্তিতে আছি। এভাবেই যেন চলে যেতে পারি, এই কামনাই করি দাদা।
জিসান শা ইকরাম
দাদা এমন ভাবে লিখলেন যেন চোখের সামনেই কিশোর দাদাকে দেখতে পেলাম৷
আজকালকার ছেলে মেয়েরা এমন অবস্থা কল্পনাই করতে পারবেনা।
জীবনে স্ট্রাগল আমিও কম করিনি। তবে আপনার স্ট্রাগলের কাছে তা কিছুই না৷
ইংরেজিতে আমিও খুব কাঁচা ছিলাম, কখনোই চল্লিশের উপরে নাম্বার পেতাম না। একটি সাবজেক্টএ দুর্বল থাকায় কখনো ফার্স্ট সেকেন্ড হতে পারিনি। অন্য বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ নাম্বার পেলেও একমাত্র ইংরেজীতে কম নাম্বার পাবার কারনে ক্লাসে থার্ড হতাম।
অলিভিয়া ওয়াসিম এর দি রেইন ছবিটি হলে গিয়ে দেখেছি আমিও।
আপনার সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে, অকপটে সব বলে যান আপনি, এটি সবাই পারেনা বা বলে না।
ভালো থাকবেন দাদা,
শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার একটি আলাদা স্থানে রয়ে গেলেন আমার মনের মধ্যে আপনি।
শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় দাদা, আমি কিন্তু এখনো অত্যন্ত পরিশ্রমী। আর অনেক কঠিন পরিশ্রমকেও আমি ভয় পাই না। এখনো প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি। তবে দুপুরে অন্তত ২ঘণ্টা ঘুমাতে পারি। আর এখনো আমরা স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই সমানতালে কাজ করে দিনাতিপাত করি। সামান্য আয় যা থাকে, তা মেয়ের তিন সন্তানের লেখাপড়ার জন্য বরাদ্দ থাকে। এই হলো, আমার বর্তমান জীবন। তবুও ভালো আছি দাদা। সম্মানের মাঝেই আছি। এটাই আমার জন্য অনেককিছু দাদা।
শুভকামনা আপনার জন্য এবং ব্লগের সবার জন্য। জয় হোক সোনেলার।
জিসান শা ইকরাম
আপনার এই সংগ্রামী জীবন কাহিনী আমি আমার ছেলেদের পড়িয়েছি,
এটি তাঁদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য অনুকরনীয় হিসেবে থাকবে।
নিরন্তর শুভ কামনা দাদা।
নিতাই বাবু
আপনার প্রতি অনেক অনেক শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনার পুত্রদ্বয়ের জন্য রইল শুভকামনা। সোনার প্রতি আমার ভক্তি শ্রদ্ধা আরও অনেক বেড়ে গেল। জয় হোক সোনেলার।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার এ লেখা পড়ে কী লিখব বুঝতে পারছি না।
জীবনের যে কঠিন দিক আপনি দেখেছেন তা সত্যি সত্যি-ই যন্ত্রণার।
আর কিছু লিখতে পারছি না।
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় দাদা, পরিশ্রমে নাকি ধন আনে। আমি কিন্তু পরিশ্রম করে ধন আনতে পারিনি। তবে আমি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছি, দাদা। এলাকার মানুষ আমাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করে। সম্মান করে। অনেকে কাছে ডাকে। এটাই তো আমার জন্য অনেককিছু দাদা। আমি মহান স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞ থেকে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে-সহ সোনেলা ব্লগের সকলকে। সাথে সবার জন্য শুভকামনা। জয় হোক সোনেলার।
মোঃ মজিবর রহমান
হাজারো শ্রদ্ধা আপনার সংরামের প্ররতি। আমিও পুরাতন বইয়ে পড়েছি। তবে বাবার ক্রিশি টাকায়। গাওগ্রামে।
জামা প্যান্ট পুরাতিনব্যাবহার করেছি।
যা আপনার কাছে খুবই নগন্য। আপনার এই লেখায় আপনার সারথক। ভাল থাকুন।
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় মজিবর দাদা, আপনি কিন্তু আমার জীবনসংগ্রামের অনেক কাহিনিই জানেন। আমি দাদা সবসময়ই আপনাদের আশীর্বাদ প্রার্থী হয়ে আছি। আশা করি ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় দাদা।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা দাদা আপনার জীবন কাহিনি আপনার মুখ নিহিত কথা শুনেছি। আশা করি একবার সাক্ষাত হবেই এই সোনেলার মিলন মেলাতে।
তৌহিদ
লেখাটি স্টিকি করার জন্য মডারেটরকে ধন্যবাদ। ব্লগারদের এমন মৌলিক লেখাগুলি স্টিকি হবারই যোগ্য।
নিতাই বাবু
কৃতজ্ঞতার সাথে শ্রদ্ধা-সহ অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় দাদা।
ইঞ্জা
জীবনের শিক্ষাটাই হলো আসল শিক্ষা য আপনাকে আজীবন টেনে নিয়ে যাবে।
দাদা, আপনার লেখাটি পড়ে চোখ ভিজে উঠলো। 😢
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, শ্রদ্ধেয় ইঞ্জা দাদা। ঠিক তা-ই! তাই আমি আমার অতীত জীবনকে সামনে রেখে পথ চলি। যাকিছু করি, আমি আমার অতীতকে সামনে দেখতে পাই। তখন আর বাজে কিছু করতে পারি না। অতীত আমাকে বাধা দেয়।
রেহানা বীথি
ভীষণ আবেগতাড়িত হয়ে পড়লাম দাদা। আপনার এই সংগ্রামী জীবনকে শ্রদ্ধা জানাই। ভালো থাকবেন, খুব খুব ভালো থাকবেন ।
নিতাই বাবু
আপনিও ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় দিদি। শুভকামনা কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
সংগ্রামী মানুষের জীবন একটা লাইব্রেরীর চেয়ে কম নয়। পুরোনো বই কিনে পড়া ছাত্রটি যখন বড় হয়ে বড় কিছু হয়ে যায়, আমরা সবাই তাকে বাহবা দেই। তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছু মানুষ দিনে পর দিন একই কস্ট করে বড় হয়ে যায়। তার সংগ্রামী জীবনের পরতে পরতে শুধু সাংঘর্ষিক ঘটনার জন্ম হতে থাকে। একদিন সকল কষ্টের অবসান হয়। নিষ্প্রাণ দেহটায় লেখা থাকে তার তার সংগ্রামী জীবনের গল্প।
দাদা, এই লেখাতে আপনাকে নতুনভাবে পেলাম। ভালো থাকুন সব সময় শুভ কামনা আর শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে। 🌹🌹
নিতাই বাবু
হ্যাঁ, দিদি, আমার সত্যিকারের জীবনীও এই তথ্যপ্রযুক্তির অনলাইনবিত্তিক সাইটগুলোতে চির অমর হয়ে থাকবে। আমার তিনটে নাতি নাতিন আছে, ওঁরা পড়বে। পড়ে, ওঁদের মাকে বাবাকে শুনাবে। আমার আত্মার শান্তির জন্য মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করবে। আমি শান্তি পাবো। এটাই আমার একমাত্র শেষ আশা।
আরজু মুক্তা
জীবনের কঠিন দিক। কখনো বুঝিনি
তবে, মেয়েকে এমন শিক্ষা দেই। কখন যে সময় পাল্টে যায়।