ফেসবুক থেকে যা শিখছি

নিতাই বাবু ১৭ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ০৭:৩৩:৫০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৪ মন্তব্য

আপনি কি ফেসবুক ব্যবহার করছেন? কী করছেন? এ-তে কী দেখতে পাচ্ছেন? কী শিখতে পারছেন? আমি কিন্তু ফেসবুক থেকে অনেককিছু শিখতে পারছি! আমি ফেসবুক ব্যবহার করছি, ২০১২ সাল থেকে। সেই থেকে এপর্যন্ত আমি অনেককিছু শিখেছি এবং দেখতেও পাচ্ছি!

১। ফেসবুক হলো অহংকারী ব্যক্তিদের চেনার একটা মেশিন। এসব অহংকারী ব্যক্তিরা আপনার আমার খুবই কাছের মানুষ এবং খুবই শিক্ষিত ব্যক্তি। আমি মনে করি যত শিক্ষা, তত অহংকার! অল্পশিক্ষিত মানুষের হিংসা অহংকার যা-ই থাকুক, শিক্ষিত লোকের অহংকার তার চেয়ে চারগুণ বেশি! আপনি ফেসবুকে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন এর সঠিক ফলাফল। ধরুন আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে কয়েকজন শিক্ষিত লোক অ্যাক্টিভ আছে। তাঁদের যেকোনো পোস্টে আপনি নিয়মিত লাইক/কমেন্ট দিয়ে আসছেন। কিন্তু আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা শিক্ষিত লোকগুলো আপনার কোনও পোস্টে লাইক/কমেন্ট তো দূরের কথা, আপনার পোস্টের দিকে একটিবারও ফিরে তাকাচ্ছে না। এর কারণ হলো, এতে নাকি শিক্ষিত লোকদের মান-ইজ্জতের ব্যাপার-স্যাপার হয়ে দাঁড়ায়!
আবার আছে কিছু বিত্তবান প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ! হতে পারে ওইসব ব্যক্তিরা আপনার এলাকার, নাহয় বাইরের কেউ। তা যেখানকারই হোক, তাঁরাও ফেসবুকে কারোর গুরুত্তপূর্ণ কোনও পোস্টে ভুলেও লাইক করবে না, উল্টো ঐ পোস্টের কমেন্ট বক্সে মন্তব্যে সমালোচনার প্রতিযোগিতা আসর জমাবে। তাই বলে কি ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে তাঁদের আনফ্রেন্ড করছি বা করবেন? না, একেবারেই না! আমি তাঁদের স্ব-সম্মানে বহালতবিয়তেই লিস্টে রেখেছি। কারণ, তাঁদের কাছে আমার আপনার অনেককিছুই শেখার আছে, তাই। তাঁদের করা কিছু শিক্ষনীয় পোস্ট থেকে কিছু শিখে নিতে পারি। তাঁরা কেমন ধরনের পোস্ট করে, তা দেখে নিজেও তাঁদের মত করার চেষ্টা করি।

২। আমি শিখেছি কীভাবে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে প্রচার করতে হয়। আর কীভাবে নিজের ভুল নিজে শোধরানো যায়। এমনও দেখা যায় কাগজ ✑ কলমে কিছুই লিখতে পড়তে পারে না! অথচ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে বাংলা কীবোর্ডে টাচ করে একজন একজন পন্ডিতের চেয়েও অনেক ভালো কিছু লিখে ফেলছে। এঁরাই অনেকসময় ভুল করে শোনা কথায় নিজে কিছু বানিয়ে লিখে ফেসবুকে পোস্ট করে। সেসব পোস্ট কপালগুনে সময় সময় ভাইরাল হয়ে গুজবে পরিণত হয়। তখনই গেলে যায় হুলুস্থুল! শুরু হয় ধরপাকড়! অনেকসময় তাঁদের সেসব পোস্ট দেখি! অবাক হই! কিছু শিখেও নেই! আবার এ থেকে নিজেও সতর্ক হই!

৩। ফেসবুকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু লোক আছে। তাঁরা তাঁদের মধ্যে কেউ অনেক শিক্ষিত, কেউ অল্পশিক্ষিত, কেউ অশিক্ষিত। তা যা-ই থাকুক, এঁরা ফেসবুকে হিন্দু ধর্ম প্রচার করতেই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট খুলেছে বলে মনে হয়! এঁরা সময় সময় যখন কিছু অশিক্ষিত হিন্দু ফেসবুকার জেনে-না-জেনে নিজেদের ধর্ম প্রচারের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দিয়ে থাকে, তখনই শুরু হয় পোস্টদাতার নিজ এলাকায় হুলুস্থুল। মুহূর্তেই ঘটে যায় লঙ্কাকাণ্ড। এঁদের ওইসব ছোট্ট একটা পোস্টের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক নিরীহ অনেক হিন্দু পরিবার। তাঁদের থেকেও আমি কিছু শিখছি! তাঁদের কাছ থেকে একটু দুরে থাকার চেষ্টা করছি। কারণ ঝামেলা বাড়ানোর চেয়ে এড়িয়ে চলা অনেক ভালো, তাই।

৪। প্রতিদিন ফেসবুকে লগইন করে দেখি ধর্মীয় বানী লিখে বা ছাপা অক্ষরের পোস্ট। সেই পোস্টে লাইক দিয়ে থাকি। পারলে মন্তব্য দেই, না পারলে আর দেই না। দেখি অনেক অনেক ছবি পোস্ট। কারোর নিজের। কারোর পরিবার পরিজনদের। কারোর প্রেমিক প্রেমিকার। কারোর মা-বাবার। সেসব পোস্টেও লাইক/কমেন্ট করি। আবার ভাবি! এঁরা কেন নিজের মা-বাবা, ভাই-বোনদের অনলাইনে থাকা একটা সামাজিক যোগাযোগম সাইটে লক্ষলক্ষ মানুষের সাথে পরিচয় করে দিচ্ছে? এতে পোস্টদাতার ভালোটা-ই-বা কী? আমি নিজে আজ পর্যন্ত নিজের সহধর্মিণীর ছবি তো দূরের কথা, আমার আদরের দুটো নাতিনের ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করিনি। এতে কি আমার কোনও ক্ষতি হচ্ছে? এসব নিয়ে অনেকসময় নিজে নিজেই ভাবতে থাকি এবং এসব প্রিয় বন্ধুদের কাছ থেকেও প্রতিদিন কিছু-না-কিছু শিখছি!

ছবি ইন্টারনেট থেকে।  

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ