হেমন্ত বন্দনা- ফিরে এসো হেমন্ত

তৌহিদুল ইসলাম ১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ১২:১১:০০পূর্বাহ্ন চিঠি ৪০ মন্তব্য

তুমি ফিরে এসো হেমন্ত।

শিউলি ফুলের শুভ্রতায়, দুর্বাঘাসে একফোঁটা শিশিরবিন্দুতে উদিত সূর্যের আলোকছটায়। এই অনিত্যের প্রাঙ্গণে আমার সৌন্দর্যপ্রেম আর দ্যাখেনা অনির্বচনীয় কোন দর্শন। যে প্রেম ধরাকে চিরন্তন নিত্যনবীনতায় সতেজ করে তোলে, তোমার বিচ্ছেদে সে প্রেম সেজেছে বিরহী কাক। হেমন্ত, তুমি ফিরে এসো উত্তরোত্তর বর্ধিত মধুমালতি হয়ে।

আমার হেমন্তরা যে হারিয়ে গিয়েছে আগেই। এখন যা আছে তা পা মাড়ানো পাতায় মুহুর্মুহু মর্মর ধ্বনি ছাড়া আর কিছুই নয়। যে হেমন্তকে আমি ভালোবাসি সেতো আর ফিরে আসেনা, ফিরে আসে তার চাপা কান্নার আওয়াজ। নিভৃতচারী একলা আমায় জানান দিয়ে যায় তীব্র শীতের আগমনী বার্তা।

হেমন্ত, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালকে তোমার মনে পড়ে? স্টেনগান কাঁধে নেয়া টগবগে সেই তরুন যে বৈঠা হাতে নৌকা বেয়ে তিস্তা নদীর চরে দাপিয়ে বেড়াত পাকিস্তানী সৈন্যদের ঝড়া রক্ত দেখবে বলে? রাজাকার পানু মিয়া যখন কামালের বৃদ্ধ বাবা এবং ভাইকে নির্যাতন করেছিলো তখনো তুমি তোমার শীতল বাতাসে গা জুড়িয়ে দিয়েছিলে নির্যাতিতদের, এত সহজে কি করে ভুলে যাও তুমি?

নিরন্তর প্রবহমান বিশ্ব-প্রবাহের স্বরুপ তুমি, লক্ষ লক্ষ বর্ষব্যাপী অতীতের রুপ তুমি। কি করে পারো আমায় ভুলে যেতে হেমন্ত? এই অসম্পূর্ণ সংসার, অনিত্য জীবনের কোলাহল মুখরিত দিন এসবই কি শুধু অভিনয়ের অভীষ্টতা ছিলো তাহলে? কথা বলো হেমন্ত, আর চুপ করে থেকোনা।

হেমন্ত, সোনালী ফসলের আল বেয়ে দৌঁড়ে বেড়ানো সেই ছোট্ট শিশু তমালকে কি মনে পড়ে? উড়ন্ত লাল ফড়িঙ হাতের নাগালে পাবার জন্য যখন বার বার পিছলে পড়তো তখনো তুমি মৃদু বাতাসে ফসলের ছোঁয়া দিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছিলে তমালের। সত্যিই কি তুমি ভুলে গেছো ছোট্ট তমালকে?

এখন আর আবেগের চাঞ্চল্যতা নেই, দুর্জ্ঞেয় লীলারহস্যের ধাঁধায় আটকে পড়েছে আমার আনন্দ বেদনারা। এসব কি তুমি জানো হেমন্ত? যুগ যুগান্তরের অরণ্যানী কতো রাজারা এলো আর গেলো, তাদের রাজ্যের ধ্বংসলীলার নীরব সাক্ষী যে ছিলো সেতো তুমিই হেমন্ত।

দুপুরের রৌদ্রদগ্ধ কৃষক আসলাম, সেলিম শেখ যখন একটু বিশ্রাম নিতে পাকুরতলায় বসতো তুমিইতো তাদের শোনাতে আশা জাগানিয়া গান। পাখির কলতানে তাদের বঁধুরা বুনতো নকশিকাঁথা। সেসবই আজ স্মৃতিময় অতীত। তবুওতো তোমার ভোলার কথা নয় হেমন্ত!

এই চঞ্চল বীথিকাতে তুমি ফিরে এসো হেমন্ত। ক্ষণভঙ্গুর মানব জীবনে ক্ষনিক প্রেমের স্পর্শকে নিত্যকালের সমারোহে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখতে। দৃষ্টির মায়াজালে রহস্য-আবিলতার প্রত্যক্ষ দর্শণের স্বচ্ছতা নিয়ে তুমি থেকে যাও গদ্যে, কবিতায় আর আমার লেখা গল্পে।

আর একটিবার তুমি ফিরে এসো হেমন্ত।

--------------------

লেখার চরিত্রগুলি বাস্তব।

** মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল- আমার বাবা।

** পানু মিয়া- রাজাকারদের দোসর। সঠিক নাম জানিনা। কেউ বলেন মানু মিয়া, কেউ বলেন পানু মিয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত।

** আসলাম, সেলিম শেখ- মৃত। আমার পরিচিত অন্যতম ভালো মনের মানুষ।

** তমাল - আমার ছোটবেলার ডাক নাম। কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে সে নাম।

0 Shares

৪০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ