তুমি ফিরে এসো হেমন্ত।
শিউলি ফুলের শুভ্রতায়, দুর্বাঘাসে একফোঁটা শিশিরবিন্দুতে উদিত সূর্যের আলোকছটায়। এই অনিত্যের প্রাঙ্গণে আমার সৌন্দর্যপ্রেম আর দ্যাখেনা অনির্বচনীয় কোন দর্শন। যে প্রেম ধরাকে চিরন্তন নিত্যনবীনতায় সতেজ করে তোলে, তোমার বিচ্ছেদে সে প্রেম সেজেছে বিরহী কাক। হেমন্ত, তুমি ফিরে এসো উত্তরোত্তর বর্ধিত মধুমালতি হয়ে।
আমার হেমন্তরা যে হারিয়ে গিয়েছে আগেই। এখন যা আছে তা পা মাড়ানো পাতায় মুহুর্মুহু মর্মর ধ্বনি ছাড়া আর কিছুই নয়। যে হেমন্তকে আমি ভালোবাসি সেতো আর ফিরে আসেনা, ফিরে আসে তার চাপা কান্নার আওয়াজ। নিভৃতচারী একলা আমায় জানান দিয়ে যায় তীব্র শীতের আগমনী বার্তা।
হেমন্ত, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালকে তোমার মনে পড়ে? স্টেনগান কাঁধে নেয়া টগবগে সেই তরুন যে বৈঠা হাতে নৌকা বেয়ে তিস্তা নদীর চরে দাপিয়ে বেড়াত পাকিস্তানী সৈন্যদের ঝড়া রক্ত দেখবে বলে? রাজাকার পানু মিয়া যখন কামালের বৃদ্ধ বাবা এবং ভাইকে নির্যাতন করেছিলো তখনো তুমি তোমার শীতল বাতাসে গা জুড়িয়ে দিয়েছিলে নির্যাতিতদের, এত সহজে কি করে ভুলে যাও তুমি?
নিরন্তর প্রবহমান বিশ্ব-প্রবাহের স্বরুপ তুমি, লক্ষ লক্ষ বর্ষব্যাপী অতীতের রুপ তুমি। কি করে পারো আমায় ভুলে যেতে হেমন্ত? এই অসম্পূর্ণ সংসার, অনিত্য জীবনের কোলাহল মুখরিত দিন এসবই কি শুধু অভিনয়ের অভীষ্টতা ছিলো তাহলে? কথা বলো হেমন্ত, আর চুপ করে থেকোনা।
হেমন্ত, সোনালী ফসলের আল বেয়ে দৌঁড়ে বেড়ানো সেই ছোট্ট শিশু তমালকে কি মনে পড়ে? উড়ন্ত লাল ফড়িঙ হাতের নাগালে পাবার জন্য যখন বার বার পিছলে পড়তো তখনো তুমি মৃদু বাতাসে ফসলের ছোঁয়া দিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছিলে তমালের। সত্যিই কি তুমি ভুলে গেছো ছোট্ট তমালকে?
এখন আর আবেগের চাঞ্চল্যতা নেই, দুর্জ্ঞেয় লীলারহস্যের ধাঁধায় আটকে পড়েছে আমার আনন্দ বেদনারা। এসব কি তুমি জানো হেমন্ত? যুগ যুগান্তরের অরণ্যানী কতো রাজারা এলো আর গেলো, তাদের রাজ্যের ধ্বংসলীলার নীরব সাক্ষী যে ছিলো সেতো তুমিই হেমন্ত।
দুপুরের রৌদ্রদগ্ধ কৃষক আসলাম, সেলিম শেখ যখন একটু বিশ্রাম নিতে পাকুরতলায় বসতো তুমিইতো তাদের শোনাতে আশা জাগানিয়া গান। পাখির কলতানে তাদের বঁধুরা বুনতো নকশিকাঁথা। সেসবই আজ স্মৃতিময় অতীত। তবুওতো তোমার ভোলার কথা নয় হেমন্ত!
এই চঞ্চল বীথিকাতে তুমি ফিরে এসো হেমন্ত। ক্ষণভঙ্গুর মানব জীবনে ক্ষনিক প্রেমের স্পর্শকে নিত্যকালের সমারোহে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখতে। দৃষ্টির মায়াজালে রহস্য-আবিলতার প্রত্যক্ষ দর্শণের স্বচ্ছতা নিয়ে তুমি থেকে যাও গদ্যে, কবিতায় আর আমার লেখা গল্পে।
আর একটিবার তুমি ফিরে এসো হেমন্ত।
--------------------
লেখার চরিত্রগুলি বাস্তব।
** মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল- আমার বাবা।
** পানু মিয়া- রাজাকারদের দোসর। সঠিক নাম জানিনা। কেউ বলেন মানু মিয়া, কেউ বলেন পানু মিয়া। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত।
** আসলাম, সেলিম শেখ- মৃত। আমার পরিচিত অন্যতম ভালো মনের মানুষ।
** তমাল - আমার ছোটবেলার ডাক নাম। কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে সে নাম।
৪০টি মন্তব্য
নিতাই বাবু
হেমন্তের শুভেচ্ছা জানবেন, দাদ।
তৌহিদ
আপনাকেও শুভেচ্ছা রইলো দাদাভাই। হেমন্ত উৎসব চলছে ব্লগে জানেন কি?
হেমন্ত নিয়ে লেখা দিন। এ নিয়ে গ্রুপে পোষ্ট দেয়া হয়েছে। আপনার লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
নিতাই বাবু
দাদা, আমি আপনার এই পোস্টে তো গতকাল মন্তব্য দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ দেখছি আবার নতুন করে। যা আমার করা পোস্টের পরে। এর মানে আমি বুঝতে পারছি না।
তৌহিদ
লেখাটি ভুলবশত ট্রাসে চলে গিয়েছিলো, আবার প্রকাশিত করতে হয়েছে দাদা।
শবনম মোস্তারী
আবেগীয় হেমন্ত বন্দনা ।
প্রকৃতি কোনো কিছুই ভোলেনা। সময়ের আবর্তনে সব কিছুই মনে করিয়ে দেয় ।
অনেক ভালো লাগলো।
তৌহিদ
বাহ! সুন্দর বললেনতো!! প্রকৃতি কিছুই ভোলেনা!! হেমন্ত ফিরে আসুক আমাদের সকলের মাঝে, উজ্জ্বলিত আলোকবার্তা নিয়ে এটাই কাম্য।
শুভকামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
অতীত সব মনে করিয়ে যায়, কিন্তু সময়ের স্রোতে যে যায় সে ফিরে আসিবার নয়, ভাললাগা ভালবাসার গতিতে মন্থর বা কারেন্ট গতি যায় হোক না কেন।
সৃতির মানস পটে থেকে যায় থাকুক এই ভরসায় আমরা। ৭১’ এর সকল মাতৃ মুক্তি যোদ্ধারা ভাল থাকুক এই কামনা করি।
তৌহিদ
সময়ের স্রোতে অনেক ভালো স্মৃতিও হাড়িয়ে যায়। হেমন্ত সকল ভালোলাগা নিয়ে ফিরে আসুক আমাদের মাঝে। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
শুভকামনা ভাই।
জিসান শা ইকরাম
হেমন্ত বন্দনা ভাল হয়েছে,
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলী,
তমাল হয়ে গেলো তৌহিদ 🙂
তমাল নামটা আমার খুব পছন্দের।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা ভাই। তমাল নামটি নিয়ে এক মজার গল্প আছে। দেব কোন একদিন, পড়বেন কিন্তু।
শুভকামনা জানবেন।
ইঞ্জা
বেশ আবেগ নিয়ে লেখাটি মন ছুঁয়ে গেলো ভাই, স্যালুট বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচার প্রতি, ধিক্কার জানাই রাজাকার পানু মিয়ার প্রতি।
তৌহিদ
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। রাজাকার নিপাত যাক।
শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
জয় বাংলা
প্রদীপ চক্রবর্তী
হেমন্ত বন্দনা নিয়ে আবেগপ্রবণ লেখা চিঠি বেশ ভালো হয়েছে দাদা।
নতুন ঋতুতে নতুনত্বের আবেগছোঁয়া সত্যিই অসাধারণ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলী,
আপনার ছোটবেলার নাম তো বেশ সুন্দর দাদা।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা, মন্তব্যে খুশি হলাম। হেমন্ত নিয়ে আপনার লেখা চাই কিন্তু।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
হেমন্তকে নিয়ে লেখা বরাবরের মতই খুব ভালো হয়েছে।
তৌহিদ
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। হেমন্ত বন্দনায় আপনার লেখা চাই।
মনির হোসেন মমি
বাহ্ হেমন্তকে খুব সুন্দর করে সাজাঁলেন নিজেকে দিয়ে। আপনার বাবার প্রতি রইল অসীম সাহসীকতা শ্রদ্ধাঞ্জলী। অবাক হচ্ছি দিন দিন লেখা উন্নতির দিকে। শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
লিখতে লিখতেই হচ্ছে। আর এটা সোনেলারই অবদান।
হেমন্ত নিয়ে লেখা দিবেন কিন্তু।
সুরাইয়া পারভিন
প্রকৃতি কিছু ভুলে যায় না, ভুলে যেতে দেয় না কিছুই।
চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালকে অবশ্যই বিনম্র শ্রদ্ধা।
হেমন্তরা হারায় না,বার বার ফিরে আসে স্বমহিমায়।
হেমন্তে অবগাহন সুন্দর হয়েছে।
তৌহিদ
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই। আব্বার স্মৃতিবহুল ঘটনাগুলি নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে আমার।
আরজু মুক্তা
তমালের মাঝে আমি আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম। ভাবলাম, কমেন্টে বলবো। কিন্তু শেষে আপনি বললেন। হেমন্ত, সাথে মুক্তিযুদ্ধ। আর তমাল।
দেশপ্রেম আর আবেগি চিঠি। ভালো লাগলো
তৌহিদ
হেমন্ত নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে। সাথে আছে আব্বাকে নিয়েও নিজের অনেক গল্প। লিখবো হয়তো কোন একসময়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
মাহবুবুল আলম
আপনার হেমন্ত বন্দনায় মুক্তিযুদ্ধের তুমুল সময়টাকে ধারণ করেছেন। আপনার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে প্রণতি!
ভাল থাকবেন তৌহিদ ভাই!
তৌহিদ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই। আপনাকেও অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
মাহবুবুল আলম
আপনার হেমন্ত বন্দনায় মুক্তিযুদ্ধের তুমুল সময়টাকে ধারণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে প্রণতি!
ভাল থাকবেন তৌহিদ ভাই!
তৌহিদ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই। আপনাকেও অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
রেহানা বীথি
বাবার প্রতি অতল শ্রদ্ধা।
এমন একটা সময়কে তুলে ধরেছেন লেখায়, হৃদয় নাড়িয়ে দেয়। আমাদের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবনত হই।
তমাল? বেশ নাম। আমরা আবার ডাকি না কেন হারিয়ে যাওয়া নামটি ধরে?
তৌহিদ
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এটা ভাবতেই গর্ববোধ করি। দেশমাতৃকার স্বাধীনতায় তাদের অবদান কি করে ভুলি?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
জানলাম, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে,
চিনলাম, এক কৈশোর ফেলে আসা দুরন্ত ছেলেকে,
শুনলাম, এক রাজাকারের কথা,
পরিচিত হলাম তৌহিদের ছোট্টরুপ তমালের সাথে।
হেমন্ত উঠে এসেছে লেখার প্রতি অক্ষরের সাথে। আবেগীয় লেখনিতে ডুবে গেছি পাঠকের মুগ্ধতায়।
চমৎকার লেখা। 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
মন্তব্যে সত্যি অনেক ভালোলাগা আপু। আব্বাকে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু লেখার আছে।
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
আর একটিবার তুমি ফিরে এসো হেমন্ত।
অনেক ভালো লাগলো,
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু।
মাছুম হাবিবী
ভাই প্রথমেই স্যালুট! এত সুন্দর করে লিখেছেন কমেন্ট করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। লেখা পড়ছি আর মনে হচ্ছে হেমন্তের বাতাস লাগছে সারা শরীরে! উফ্ কি যো বলবো এক কথায় অসাধারণ।
আমিও লেখার ট্রাই করবো
তৌহিদ
অবশ্যই মাছুম। এসব লেখা কিচ্ছুনা ছাইপাঁশ সব। তুমি আমার থেকে আরও ভালো লিখতে পারবে কিন্তু।
ভালো থেকো ভাই।
এস.জেড বাবু
আপন জীবনের সত্য আবহের সাথে হেমন্ত বন্দনা-
দেশের এক ক্রান্তি লগ্নে ঘটে যাওয়া মহাবীর এবং নরকের কীটদের অজানা গল্পে হেমন্তের নিবিড় পরিচয় আমার কাছে নতুন।
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালক সাহেব কে।
ভিষন চমৎকার প্রিয় তমাল ভাই।
তৌহিদ
মন্তব্য্র অনেক ভালোলাগা ভাই। অনুপ্রাণিত হলাম।
ভালোবাসা জানবেন।
তৌহিদ
দুঃখিত, মন্তব্যে হবে ☺