
লক্ষ কোটি বছর আগে
যেদিন পাথরে পাথর ঘষে প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিলাম;
সেদিন যদি জানতাম এর লেলিহান শিখাকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার দ্বারা সম্ভবপর নয়,
সত্যিই বলছি সে আগুন আমি সেদিন কিছুতেই জ্বালাতামনা।
এরপর আরো হাজার বছর পেরিয়ে গিয়েছে,
জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস আর পুজিয়ামাও শীতল হতে হতে
হিমালয়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
অথচ আমার হাতে যে আগুনের হাতেখড়ি হয়েছিলো,
তাকে আইসিসের হাতপাখার পরশ বুলিয়েও
সামান্যতম শীতল করতে পারিনি আমি।
গঙ্গা নেমে এলো,
পদ্মার স্রোতধারা বারংবার আগুনের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।
নায়েগ্রার জলপ্রপাত তার শেষ ফোঁটাটুকু ঢেলেও
সেই আগুনকে আর বশে নিতে পারেনি সেদিন।
ইদানীং উলঙ্গ থেকে বসন পরা শিখেছি।
চুলের জটা ছাড়াতে আমি নরসুন্দরের ক্ষুরের ধারকে বিশ্বাস করে
নিজেকে সঁপে দিতে পেরেছি।
শুধু এখনো পারিনি সেই প্রথম স্ফুলিঙ্গকে নিম্নগামী করা শিখতে।
স্বার্থের জন্য আমি পৃথ্বীদেবকে বশীকরণ মন্ত্রে করেছি জর্জরিত।
নীলনদের অবগাহনে গাত্র শুদ্ধ করে
আমি বর চাইতে গিয়েও বিফল মনোরথে ফিরে এসেছি।
আমার আত্মা যে শুদ্ধ নয়!
তবে জেনেছি হাপী’র নোনা জল আগুন নেভাতে জানে।
অবশেষে ভরা পূর্ণিমায় একদিন
যমুনার কালো পানিতে স্নানরত আমি চন্দ্রের পুজারী হয়ে।
দেবী হাপি’র অন্তঃজঠরের নিষিদ্ধ একফোঁটা জল পান করবো বলে
সেদিন ঝিনুকমালাটিকে তার নিম্নদেশে প্রতিস্থাপন করতে সফলও হয়েছিলাম।
কিন্তু হায়!
উরুবেয়ে নেমে আসা সে জলের ফোঁটায়
আমার জিহ্বা যে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলো।
আগুন নেভাবো কিভাবে ইশ্বর?
বুঝলাম এ আগুন নেভানো আমার কম্ম নয়।
বরং খুব বেশী হলে পঞ্চপাণ্ডবের শুকনো তীরগুলোকে
অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত রাখতে পারি।
শকুন্তলা এসে নাহয় একটু ভালোবাসা যোগ করবে!
তাতেও হয়তো রিপুর প্রজ্জ্বলিত শিখা মৃয়মান হবেনা।
তবে কোটি বছর ধরে আগুনে পুড়ে ফসিল হয়ে যাওয়ার হাত থেকে
এ হৃদয়তো সুরক্ষিত হবে!
২৫টি মন্তব্য
প্রহেলিকা
ফাস্টু
তৌহিদ
আপনাকে অভিনন্দন ভাই🌹
আমি কেন ফাস্টু হইতে পারিনা, এটা এখনো আমার কাছে আশ্চর্য লাগে!!
প্রহেলিকা
লেখকের লেখা! লেখক বলতে যাকে প্রকৃত লেখক বুঝায়। এত দারুণ ভাবে লিখেছেন লেখাটি যে মন্তব্যের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এ যেন নতুন তৌহিদ ভাই আমাদের। অনেক সুন্দর সুন্দর উপমায় আর এত সামঞ্জস্যপূর্ণ উদাহরণে লেখাটিকে সাজিয়েছেন, প্রশংসা আপনার প্রাপ্য। লেখার বিষয়বস্তু অসাধারণ। যখন আমরা কিছুকে দমাতে পারি না তখন তার সাথে সখ্যতাই গড়ে তুলতে হয়। এই লেলিহান শিখাকে আগলে রেখেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। গল্পের ভুত সেজেই বাঁচতে হবে।
অদ্ভুত সুন্দর একটি লেখা, সম্ভবত এই প্রথম আপনার কোনো লেখা প্রিয়তে নিলাম। অপেক্ষায় থাকবো এমন আরও লেখা পড়ার জন্য।
তৌহিদ
এত প্রশংসায় লজ্জা পাই ভাইজান। আর সব কিছুর জন্য সোনেলার অবদান অনেক। যত পড়ছি ততই শিখছি।
ঠিকই বলেছেন ভাইয়া, কাম শিখাকে দমন করতে পারবই না, আর এটা সম্ভবওনা; কারন সৃস্টিকর্তা মানুষ আর কাম দুটোকেই একসাথে করে পাঠিয়েছেন। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে একসাথে বাস করাটাই উত্তম।
লেখাটি প্রিয়তে নিয়েছেন জেনে খুশিখুশি লাগছে। কৃতজ্ঞতা জানবেন।☺
ছাইরাছ হেলাল
এ দেখছি আপনার লেখার এক অসম্ভব দিকবদল।
অদ্ভুত ভাবেই লেখাকে সমন্বয়ে এনেছেন, কী করে পারলেন তা অজানা।
লিখতে থাকুন মন দিয়ে।
তৌহিদ
এসবই সোনেলার অবদান ভাইয়া। আপনাদের লেখা এবং উৎসাহ আমাকে কত কিছু যে শেখাচ্ছে!
পাশে থেকে লেখার ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেবেন, তবেইতো শিখতে পারবো। হ্যা এটা ঠিক ভুল ধরিয়ে দিলে মন একটু খারাপ হয়, তবে তা থেকে যা শেখা যায় সেটাই আমার লেখায় সফলতা এনে দিতে পারে বলে বিশ্বাস করি।
ধন্যবাদ ভাইয়া।🌹
মাহমুদ আল মেহেদী
বিস্ময়! লেখাটা সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মত। অসাধারণ লেখাটা কি করে যে লিখেছেন! মুগ্ধতা রেখে গেলুম।
তৌহিদ
লিখতে বসে লেখা হয়ে গেলো ভাই। ভালোবাসা জানবেন।🌹
মাহমুদ আল মেহেদী
অদ্ভুত সুন্দর একটি লেখা। পড়বো বার বার । ধন্যবাদ আমাদের এমন একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
তৌহিদ
বার বার পড়ার মত লেখা কি এটা? জানিনা, আপনারাই বলবেন।
শুভেচ্ছা জানবেন ভাই।
বন্য
সুন্দর! অসহায় আত্নসমর্পণ। ভালো লেগেছে।
তৌহিদ
ধন্যবাদ জানবেন🌹
আরজু মুক্তা
একরাশ মুগ্ধতা!
তৌহিদ
শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাটি কয়েকবার পড়েও মন ভরলো না। এতো চমৎকার একটি লেখা দেয়ার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই।
লেখার ছন্দ আর নিজেকে সপে দেয়ার বারংবার প্রয়াসকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, আমি মুগ্ধ হতে বাধ্য হয়েছি।
এটি আমার প্রিয় পোষ্টের তালিকায় থাকবে। শুভ কামনা অফুরন্ত রইলো 🌹🌹
তৌহিদ
লেখাটি ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগছে আপু, উৎসাহ পেলাম।
আপনাকেও শুভেচ্ছা অফুরন্ত 🌹
জিসান শা ইকরাম
ভাই, আপনার যত লেখা পড়েছি, এটিই তার মধ্যে সেরা লেখা মনে হয়। এমন বিষয়বস্তু নিয়ে লেখায় আমার প্রচন্ড আগ্রহ, কিন্তু সময় সুযোগ ইত্যাদির অভাবে লেখা হয়ে ওঠেনা। আপনি আমার লেখার তৃস্না মেটালেন।
এমন একটি লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ,
আরো লেখা চাই এমন।
তৌহিদ
লেখাটি আপনার চোখে সেরা কারন আপনার দেখার চোখ সুন্দর ভাই ☺
আসলে কিছু চিন্তা করে লিখিনি, লিখতে বসেই লেখা হয়ে গেলো। রিপুকে অস্বীকার করার উপায় নেই কিন্তু রিপুর তাড়নায় জর্জরিত আমরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এটি মাথায় রেখেই লেখা।
পাঠক তৃষ্ণা সামান্য হলেও মেটাতে পেরেছি জেনে উৎসাহ পেলাম।
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।🌹
নীলাঞ্জনা নীলা
এ কাকে দেখছি! কী পড়লাম!!
মন্তব্য কি করবো আমি! শুধুই ভেবে চলছি, খুঁজে যাচ্ছি শব্দ।
এমন লেখা একবারই হয়, বারবার আসেনা। এমন পোস্টের পর আরেক নতুন তৌহিদ ভাইকে আশা করছি আরেক নতুন কিছু’র জন্য।
তৌহিদ
এমন করে বলেননা লজ্জায় পড়ে যাই আপু। ব্লগিং এ আমি শিশু এখনো, অনেক কিছু শেখার বাকী আছে যে!!
আর যা কিছু শব্দের ভান্ডার তার জন্য সোনেলার কাছে কৃতজ্ঞতা। পাশে থাকবেন আপু।
শুভেচ্ছা জানবেন🌹
নীলাঞ্জনা নীলা
ব্লগিং ভাববেন কেন! আপনি লিখতে জানেন, তাই পারেন।
ভালো থাকুন।
সকাল স্বপ্ন
ভাল লাগার ছিল
তৌহিদ
ধন্যবাদ
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
অসাধারন লেখেন আপনি, ভালো লাগে আপনার লেখা গুলো
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকবেন।