প্রয়াত

মনিরুজ্জামান অনিক ১৬ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৫০:০৪অপরাহ্ন কবিতা ২০ মন্তব্য

আমাদের আর দেখা হয়নি!

বছর পাঁচেক আগের সেই স্মরণসভার পর।

 

সেদিন তুমি মঞ্চ কাঁপিয়ে তুলেছিলে কণ্ঠের ঝড়, প্রয়াত কবির লেখা কবিতায়।

আমি বসেছিলাম সেই হলরুমে পেছনের সারির ছত্রিশ নাম্বার চেয়ারে।

 

চুপচাপ শুনছিলাম, তোমার কণ্ঠ কি করে-নদী হয়ে যায় সাগর,চাঁদ ও কেমন প্রেয়সীর মুখের মতই উজ্বল।

রাস্তার কুকুর হয়ে যায় এলাকার অধিপতি।

ছিটকে মাস্তানও প্রেমের বসে নুইয়ে পড়ে লিকলিকে লাউ ডগার মতোই অবিকল।

কিভাবে তুমি প্রয়াত কবির কবিতা ব্যবচ্ছেদ করো আমি বিস্ময়ে দেখছিলাম!

 

তোমার চুল সিলিং ফ্যানের বাতাসে উড়ছিলো,

আর আমি উড়ে যাচ্ছিলাম সেই বাতাসের পথ ধরে।

তোমাকে কালো শাড়ি,লাল টিপে বেশ মানিয়েছিলো সেদিন।

চশমাটা জানান দিচ্ছিলো

তুমি কতোটা গভীর, কতোটা আত্মপ্রত্যয়ী,

কতোটা দৃঢ়, কতোটা কোমল ভালোবাসার নদী।

শুধু আমি পারিনি ছুঁতে তোমাকে, তোমার নোনা জলের সঙ্গীনি সেই রাতকে।

 

হঠাৎ বিকট শব্দে থেমে যায় সব!

আমি ও ছিটকে বেরুই স্মৃতির নগরী থেকে।

সবাই এখন মুখরিত কলরবে।

ভূয়সী প্রশংসায় ভাসছে তোমার নাম, ভাসছে প্রয়াত কবির কবিতা খানি।

আমিও ফিরে এলাম নিক্ষিপ্ত উল্কাপিণ্ডের মতো অতীত হতে বর্তমানে।

সেই হলরুমের ছত্রিশ নাম্বার চেয়ারে।

 

এরপর আর আমাদের দেখা হয়নি, কথা হয়নি।

অভিমানে কেউ কারো ছায়ার ও খোঁজ রাখেনি।

 

হঠাৎ একদিন, আবারো সেই পুরনো হলরুমে..

তুমি পাঠ করলে সদ্য প্রয়াত আরেক কবির কবিতা।

 

কবিতার নাম " ফেলে আসা বিষন্নতা। "

 

এতটুকুই পড়তে পারলে ঠিকঠাক,

কবির নামে এসে তুমি হতবাক____

ঠোঁট কাপছে তোমার, তোমার বুকের নদী পাড় ভাঙছে নিশ্চুপ অভিমানে।

চশমা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, কণ্ঠ বিঁধে যাচ্ছে বুকের হৃদপিণ্ডে।

 

ছত্রিশ নাম্বার চেয়ারটা শুধু খালি, কবি নেই।

বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে সব।

পুরো হলরুম নিথর নিরব।

মনে হচ্ছে সদ্য মৃত কোন এক যুবক।

এরপর আর কোনদিন ছত্রিশ নাম্বার চেয়ারটায় কেউ বসেনি..

কারণ , প্রয়াত কবি আর কোনদিন আসেনি।

 

❣উৎসর্গ:জয়ীতা জয়ী।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ