বারান্দার ঝুলানো বেতের চেয়ারে বসে ধীরে ধীরে দোল খাচ্ছে সান্তনু কায়সার। রোজ সন্ধ্যার পরে কিছুক্ষণ  এখানে বসে থাকা তাঁর অভ্যাস। আজও সন্ধ্যার পরেই বসলো। তবে প্রতিদিন যেভাবে রাত আটটার দিকে উঠে বারান্দা হতে ঘরে চলে আসে, আজ উঠলো না সে। কি সব ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

সেই বিদ্যালয় জীবন হতেই হাতের রেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ। ক্লাসের সমবয়সীরা যখন বিদ্যালয়ের লাইব্রেরী হতে হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলনের গল্প উপন্যাসের বই নিয়ে পড়ছে। সান্তনু তখন পড়ছে হাতের রেখার উপর কিরোর বই। বিদ্যালয় জীবন শেষ হবার পরে মহা বিদ্যালয় জীবনেও এই আগ্রহটা প্রবল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ণের সময় পড়াশুনার চাপে এই সম্পর্কে আর পড়াশুনা করা হয়নি। তবে নীলক্ষেতে পুরাতন বই এর দোকানগুলোর সামনে দিয়ে যতবার ও হাটাচলা করেছে, প্রতিবারই এই হস্তরেখার উপর নতুন কোন বই আছে কিনা তা একনজরে তাকিয়ে দেখতো। এমনি একদিন একটি প্রাচীন বই পেলো, যার উপরের মলাট প্রায় নেই বললেই চলে। এটি আর পড়া হয়নি আগে।

করোনা ভাইরাসের কারণে গত কয়েকদিন যাবত সে বাসায়। বেড় হচ্ছে না বাইরে। অলস সময়টা কিভাবে অতিবাহিত করবে ভাবতে ভাবতে সেই পুরাতন বইটির কথা মনে পরলো। বইটা পড়ে সে হাতের রেখা সম্পর্কে এমন কিছু জানল যা পূর্বে একেবারেই অজানা ছিল।

কখনো সে নিজের হাতের রেখা দেখার আগ্রহ পায় নি। হঠাৎ করেই চিন্তা আসলো নিজের হাতের রেখাই দেখুক সে। গত তিনদিন যাবত নিজের হাতের রেখা দেখছে সে। প্রতিদিন দশ পনের বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ায় হাতের রেখা গুলো একদম স্পষ্ট। এত ঝক্‌ঝকে হাত কারো থাকতে পারে!

জীবনের সব কিছুই একেবারে মিলে গিয়েছে। শুধু দুটো বিষয় নিয়ে ভাবছে সে,
১। তাঁর বিয়ে দেড় খানা, অর্থাৎ একটি ও অর্ধেক।
২। সে কাউকে অচিরেই খুন করবে।
বিয়ে তো সে করেছে একটাই। বাকী অর্ধেক বিয়ে নিয়ে সে কিছুটা বিচলিত। দুইদিন ভাবার পরে সে এই অর্ধেক বিয়ের রহস্যের সমাধান করে ফেললো। এত সহজ বিষয়টা বুঝতে তাঁর দুইদিন লাগলো কেন? এটি ভেবে সে কিছুক্ষণ একা একাই হাসলো।

বাকী থাকলো কাউকে খুন করা। তাও আবার অচিরেই! এটি কি করে সম্ভব? নিজে মুরগী জবাই দেয় না, রক্ত দেখলে সে ভয় পায় তাই। আর সে কিনা একজন মানুষকে খুন করবে? খুন করার মত এমন শত্রু তাঁর নেই। আর সে কেন খুন করবে? সামান্য মনোমালিন্য আছে দু একজনার সাথে, তাতে তাদের শাস্তি দেয়ার চিন্তাই সে করে না, খুন তো পরের কথা।

রাত এগারোটার দিকে বারান্দা থেকে ডাইনিং এ এসে রাতের খাবার খেলো। খেয়ে আবার বারান্দায়। কেমন এক অস্থিরতায় পেয়ে বসেছে তাঁকে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। সমস্ত শহর লক ডাউনের কারণে নিস্তব্ধ। দূর থেকে ভেসে আসছে একটি কুকুরের বিষন্ন ডাক।

রাত বারোটা এক মিনিটে বারান্দা থেকে উঠে কিচেনে গেলো সে। লাইট অন করে মাংশ কাটা ছোট ছুরিটা হাতে নিয়ে এসে আবার বারান্দায় বসলো। মুখে তাঁর হাসি। কাকে খুন করবে সে জেনে গিয়েছে।

পর দিন সকালে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া গেলো ঝুলন্ত বেতের চেয়ারের উপরে বসা অবস্থায়। ঘাড়টা কাত হয়ে আছে, মুখে হাসি। ডান হাতে তাঁর রক্ত মাখা ছুরি, বাম হাতের রিস্টের শিরার ওখানে গভীর কাটা দাগ। শিরা থেকে শরীরের সমস্ত রক্ত বের হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

 

0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ