শ্রাবণ আহমেদ, বয়স চল্লিশের দোরগোড়ায়। বেশ লম্বা ফর্সা ও সুঠাম দেহের অধিকারী। এক কথায় সুদর্শন পুরুষ। হুটহাট বেড়িয়ে পড়েন লং ড্রাইভে। আজ যখন বেড়িয়ে পড়লেন তখনও রাত্রির মায়া কাটিয়ে প্রভাত আসেনি প্রকৃতির কোলে। বলা চলে অনেকটা রাত্রির শেষ প্রহর। রাস্তার চারপাশে নিয়ন বাতির আলো সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক অন্যরকম ভালোলাগায় ভেসে যায় বলেই সে এমন সময়টাতেই বেড়িয়ে পড়ে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গাড়ির জানালার গ্লাস খুলে দিয়ে উপভোগ করছে হেমন্তের শির শির হাওয়া। বেশ রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। সফট মিউজিক চালিয়ে আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে শ্রাবণ।
সামনের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো একটা মেয়ে হাত তুলে সংকেত দিল গাড়ি থামাতে। গাড়ির আলোতে স্পর্ষ্ট দেখা যাচ্ছিল মেয়েটিকে। আকাশী রঙের শাড়ি ছিল পরনে। সাথে একটা লাগেজও। শ্রাবণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটি গাড়িতে উঠে সামনের সিটে ওর পাশে বসে বললো
~চলো
-কোথায়?
~তুমি যেখানে যাচ্ছো।
-মানে!
~লং ড্রাইভে।
শ্রাবণ মনে মনে ভাবছে, আমি লং ড্রাইভে যাচ্ছি তা এই মেয়েটি জানালো কী করে?
~কি হলো শ্রাবণ, কী এতো ভাবছো বলো তো?
শ্রাবণ এবার রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো। মেয়েটি তার নামও জানে!
-না মানে কিছু ভাবছি না। আপনি কে বলুন তো, আমার নাম জানেন কী করে ?
~এটা কেমন প্রশ্ন শ্রাবণ! কি হয়েছে তোমার? তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?
-না আমি সত্যিই আপনাকে চিনতে পারছিনা। দয়া করে বলুন কে আপনি?
~আমি তিলত্তোমা। এবার নিশ্চয়ই চিনতে পারছো! কেনো যে অমন অপরিচিতদের মতো আচরণ করছো বুঝতে পারছি না।
-তিলোত্তমা! এ নামে তো কাউকে চিনি না।
~মানে কি! এবার নিজের দেওয়া নামটাও ভুলে গেলে।
-কি বলছেন এসব বলুন তো? আমি তো আপনাকে আগে কখনো দেখিইনি। তাহলে নাম দিলাম কখন?
~শ্রাবণ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। কাল নিজেই ফোন করে বললে এবারের লং ড্রাইভে আমাকে সাথে নেবে। আমি যেনো তোমার পছন্দের তোমার দেওয়া আকাশী রঙের শাড়িটা পরে আসি। আর এখন বলছো আমাকে কখনো দেখোইনি। এবার বলবে শাড়িটাও তুমি আমাকে দাওনি!
মেয়েটি কী বলছে এসব, কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না? মনে মনে ভাবছে শ্রাবণ। মেয়েটিকে কস্মিন কালেও দেখিনি অথচ সে বলছে আমি তাকে আমার প্রিয় রঙের শাড়ি দিয়েছি, গতকাল কথা হয়েছে। কী হচ্ছে এসব? কিছুতেই মনে করতে পারছি না আমি তাকে চিনি। আমার স্মৃতি শক্তি এতো দুর্বল নয় যে পরিচিত কাউকে মনেই থাকবে না।
~কী হলো শ্রাবণ? এমন অস্বাভাবিক আচরণ কেনো করছো আমার সাথে? ঠিক আছো তো তুমি
-এই আপনার মতলবটা কি বলেন তো! ছিনতাইকারী তাই না। সাথে আর কে কে আছে বলুন! চলুন আপনাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাবো। তখন বুঝবেন এমন ফাজলামির মজা।
~হা হা হা
চারপাশ থেকে গাড়ির হর্ণ বাজতে শুরু করলো। একজন এসে বললেন কী মশাই কানে শোনেন না? এতোক্ষণ ধরে হর্ণ বাজানো হচ্ছে। কোন রাজ্যে বিচরণ করছেন?পুরো রাস্তা যানযট লেগে গেছে, রাস্তা ছাড়ুন তাড়াতাড়ি। শ্রাবণ লজ্জিত হয়ে সরি বলে গাড়ি স্টার্ট দিল।
২৭টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
অবচেতন মন চায়, কেউ পাশের সিটটা ঠিক এইভাবে এসে দখল নিক। একাকীত্বের কোনো এক বিমূর্ত ভাবনার চিত্রায়নে নিজেই পুলকিত। বেরসিক ভেঁপু সব টেনেটুনে নামিয়ে নিয়ে এলো যান্ত্রিক জ্যামের মাঝখানে।
ছোট গল্প পড়ে ভালো লাগলো। শুভ কামনা সুরু💜💚💛
সুরাইয়া পারভীন
একদম ঠিক আপু। মানুষ যখন একাকীত্বের অতল গহ্বরে তলিয়ে যায় ঠিক তখনই অবচেতন মনে চায় কেউ আসুক, পাশে বসুক, সঙ্গ দিক, সঙ্গী হোক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্নতায় বেঁধে দেয় মানুষ জাগতিক জীবন। প্রথম এবং চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা, ধন্যযোগ ভালোবাসা রইলো আপু।❤️❤️❤️
মনির হোসেন মমি
অচেন মনের গভীতম ভাবনাগুলো চমৎকার সব শব্দশৈলী দিয়ে গল্পাকারে সাজালেন।খুব সুন্দর।
সুরাইয়া পারভীন
অবচেতন মনের কথা গুলো ই কল্পকথা হয়ে থরে থরে সাজিয়ে হয়ে যায় গল্প। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গভীর নিঃসঙ্গতা, আকাঙ্ক্ষা থেকেই এমনটা ঘটে থাকে । বেরসিক হর্ন সুন্দর মুহুর্তের বারোটা বাজিয়ে দিল। চমৎকার হয়েছে গল্পটা। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ নিরন্তর
সুরাইয়া পারভীন
সেটাই তো সব কিছু মাটি করে দিল বেরসিক হর্ণ। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদিভাই। আপনিও ভালো থাকুন সবসময়
মোঃ মজিবর রহমান
এই রকম অবচেতন যারা হতে পারে তারা অনেক সাধনা করতে পারে।
অবচেতন মন।
সুরাইয়া পারভীন
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় ভাইয়া
মোঃ মজিবর রহমান
প্রহেলিকা নামটি পড়ে এখানের একজন ব্লিগারের নাম সচেতন মনে টক্কর দিল।
প্রহেলিকা।
বন্যা লিপি
আপনার আবার তা মনে করা লাগল দাদা? শিরোনাম দেখে আমারও মনে হয়েছিলো ইহা😊😊 বেঈমান আর ভালো মানুষ, এই দুই শ্রেনীর প্রাণীদেরকে ভোলা সহজ না।
মোঃ মজিবর রহমান
রাইট। এরাই ঝড় তুলেছিল।
ধন্যবাদ আপু।
সুরাইয়া পারভীন
কিছু না বুঝলেও আপনাদের কমেন্ট পড়ে মনে হলো যারা সোনেলার ক্ষতি চেয়েছিলো তাদের ই একজন প্রহেলিকা।
দুঃখিত নিজের অজান্তেই আপনাদের কষ্ট দিয়েছি বলে
মোঃ মজিবর রহমান
দুখ নেই প্রহেলিকা নামিটি খারাপ মিন করেনা আপু। এই নাম ঐতিহ্য।
খাদিজাতুল কুবরা
প্রথম বার পড়ে আমার মোটা মাথায় কিছুই ঢুকলোনা। তারপর আবার পড়লাম কেসটা কী?
বুঝলাম শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ!
এ যে ছোট গল্পের রেশ!
দারুণ হয়েছে আপু!
সংলাপ গুলো প্রানবন্ত ছিল।
অনেক ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা রইল
সুরাইয়া পারভীন
বাহ্ কি দারুণ মন্তব্য! গল্প টল্প লেখার চেষ্টা করছি। হয়তো গল্প হচ্ছে না টল্প নিশ্চয়ই হচ্ছে। সে যা হোক কষ্ট করে দুবার পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
আমার কাছে ভুতের গল্প বলে মনে হচ্ছে কেন!!
কল্পনার রঙ এর কোন মাথা মুণ্ডু থাকা লাগে না।
চালু থাকবে।
সুরাইয়া পারভীন
হয়তো কল্পনায় এমন অনেক কিছুই ঘটে যার মাথা মুন্ডু থাকে না। গল্পে শ্রাবণ যে নারীকে দেখছিল, কথা বলছিল তা লেখকের সৃষ্টি ধোঁয়াশা মাত্র।
ধন্যবাদ অশেষ
ভালো থাকুন সবসময়
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ রোমান্টিক গল্প পড়লাম আপু
সুরাইয়া পারভীন
ধন্যবাদ অশেষ
ভালো থাকুন সবসময়
তৌহিদ
স্বপ্ন হচ্ছে কচুপাতার জল। টুক করে এই আছে এই নেই। অবচেতনে প্রহেলিকা মায়ায় জড়ানো জীবন শুধু বিষময় কিন্তু!
চমৎকার লেখা।
সুরাইয়া পারভীন
শুধু যে বিষময় তা কেনো ভাবছি ভাইয়া
হতেও তো পারে এই ভাবনাতেই রয়েছে কারো কারো সুখানুভূতি
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
ভালো থাকুন সবসময়
শামীম চৌধুরী
আপনার সবগুলি ছোটগল্প পড়েছি। এটাও পড়লাম। দারুন লিখেন আপনি। সুযোগ ও সময় হলে ছোটগল্প নিয়ে একটি বই বের করুন।
সুরাইয়া পারভীন
ইচ্ছে আছে দাদাভাই। বাকীটা আল্লাহ ভরসা
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
আরজু মুক্তা
ভাবুক নায়ক।
সুরাইয়া পারভীন
হয়তো নায়ক চায় কেউ আসুক, এমনি করেই পাশের সিটে বসুক। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপু ভালো থাকুন সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
ওরে আল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ভাবুন মন। সত্যি হলে ভালো হতো। সবাই চায় এমন কেউ পাশে থাকুক সঙ্গী হোক।
ভালো লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
চাইলেই যেনো পাওয়া যায়! হা হা হা হা হা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়