পরীমনি ঘটনায় বহু নারীবাদী পুরুষ তার পক্ষে ঝাঁপিয়ে পরেছিল। কেন সে জেলে? কি তার অপরাধ?
আমি লিখেছিলাম পরীর বিপক্ষে। কারন তার অনেক বিষয় রীতিমতো বাড়াবাড়ি ছিল। আমার লেখায় সমালোচনার শেষ ছিল না। কারন এডাল্ট কেউ নাকি স্বইচ্ছায় এমনটা করতেই পারে। তখন বুঝলাম পরী ভালো। কারন সে বিয়ে করেনি কিন্তু অনেকজনের সাথে যেটাই করুক সেটা তার পেশা বা দায় ছিল।
একদম চুপ মেরে গেলাম,,,
ফারজানা ব্রাউনিয়া কদিন আগে মোটিভেশনাল বক্তৃতা দিয়েছেন। সবাই মন্ত্র মুগ্ধের মতো শুনছে। সেটা নিয়ে মাতামাতি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পরীমনির সেই সব নারীবাদী পুরুষকেই আবার দেখছি ঝাঁপিয়ে পড়ল তার বিপক্ষে। সে কটা বিয়ে করেছে, কাকে করেছে, সে বাপের বয়সী না কার বয়সী এসব তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে রীতিমতো বিষফোঁড়া।
খুব করে খেয়াল করলাম, সমাজে একশ্রেণী নারীদের সবসময় করুনার পাত্র হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। কেউ বহুবিবাহের মত অপকর্ম করেও এমন বাহবা পাক এটা তাদের পক্ষে সহনীয় নয়। অবলা নারী বিপদে পড়বে পুরুষ পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্য আহা! উহু!করে ফেসবুক ভাসাবে, সহানুভূতির ভান্ডার খুলে বসবে এটাই নিয়ম!
ফারজানা ব্রাউনিয়া অসহায় নন, প্রতিবাদী একজন নারী আবার জেলেও যাননি। একজন উপস্থাপক হিসেবে তার মেধার পরিচয় দিয়ে বাহবা কুরোচ্ছেন এটা একশ্রেণীর সহ্য করার মতো না। তাদের মতে স্বামীবদলকারী নারী কারও আইডল হতে পারে না। তাই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তার নেগেটিভ দিকগুলো তুলে ধরে তাকে ছোট করা হল।
সামনের সারিতে যারা বসে মোটিভেশনাল কথাগুলো শুনল তারাও নিশ্চয়ই অনলাইনের সাথে যুক্ত। তারা এসব খবরে রীতিমতো কনফিউজড, কে আসলে তাদের আইডল হবে? তারা কার কথা শুনবে?
ভাই, কেন এতোসব খুচাখুচি করে নতুন জেনারেশানকে কনফিউজড করেন?
এটা যদি একজন পুরুষ হতো, তার বিয়ে নিয়ে আলোচনা হতো না। তাকে বাহবা দেয়া হতো! আর আমরা নারীরা কোনদিনই তার সমালোচনা করতে নেমে যেতাম না। নারীরা পুরুষের কোনকিছুতেই তেমন মাথা ঘামায় না। অথচ পুরুষরা এটা মনোযোগ দিয়ে করে।
যেমন- মেয়ে বন্ধু মেয়ে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলেও তাকে আটকানো হয়। কুৎসা রটানো হয়। সমকামী বলা হয়। বাংলাদেশে সেকশান ৩৭৭ আইন না থাকার পরও বলা হয় তারা বিয়ে করেছে। এরপর অনেক আলোচনার পর নারীদ্বয়ের বেহাল দশা হবার পর দেখা যায় তারা আসলে বন্ধুই ছিল।
আসলে পুরুষকূলের মনে নারীদের কব্জা করবার যে পায়তারা, দাসত্ব করানোর যে অভ্যাস তা থেকে যেন একটি নারীও না কমে এটাই তাদের আশা। অনেক নারীবাদী পুরুষকে দেখেছি নারীদের পাশে থাকার নামে, নারীবাদী হওয়ার নামে আসলে নারীদের ব্যবহার করবার, ফায়দা লুটবার পায়তারায় তারা ব্যস্ত। দিনের আলোয় নারী স্বাধীনতার বক্তৃতা দেয়া মানুষটি রাতের অন্ধকারে ফ্রিতে ঠাকুর ডুবানোর অফার খোঁজে, এবং অন্যের বউ জেনেও খোঁজে।
সমালোচক বা পুরুষকূলের কাছে আমার প্রশ্ন নারীদের নিয়ে এতো মাতেন কেন? কম বয়সে বিয়ে করলেও দোষ, বেশি বয়সে বিয়ে করলেও দোষ, বিয়ে না করলেও দোষ আবার আপনাদের মতো বহুবিবাহ করলেও দোষ। কোথাও কি আছে মেয়েদের ডিভোর্সী হওয়া যাবে না? কিংবা পূনরায় বিয়ে করা যাবে না। একজনের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে সেভাবেই সারাজীবন কাটাতে হবে? কিংবা কোন বয়স্ক মানুষকে বিয়ে করা যাবে না?
কোথাও নেই! আর বিয়েটা একটা কন্টাক্ট মাত্র। সেটা যেকোন সময় বনিবনা বা কোন কিছুর অবান্তর হলে অবসান ঘটাই স্বাভাবিক। একজন নারী পুরুষের মতোই মানুষ। তারও সমস্ত কিছুর অধিকার আছে। আর যতোক্ষন বিয়ের প্রয়োজন আছে ততোক্ষনে যে কোন মানুষই বিয়ে করতে পারে। এটা তার শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। বহুবিয়ে করেছে বলে একজন অণূপ্রেরক হতে পারবে না এটা ভাবা ভুল!!!
তরুণ প্রজন্মকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে ফারজানা। কারণ তিনি ১৮ তে বিয়ে করতে না করেছেন। আমাদের ফতোয়া সমাজ ওয়াজ করছেন। ইউটিউব এ নানা নছিয়ত পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি নিউট্রিশন ঘাটতির জন্য এ কথা বললেও কেউ কেউ _ এখানে মূতিবেন, না মুতিলে ১০০ টাকা জরিমানা'! এমন মনমতো দাঁড়ি,কমা বসিয়ে আলোচনায় নেমে যায়। এবং তার চরিত্র যথেচ্ছ ভাবে উদঘাটন করে তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে এমন মহিলার কোন কথাই গ্রহনযোগ্য নয়।
অবস্থা এমন যেন আমাদের সমাজে, ধর্মে কোথাও তালাক, বহূবিয়ে, কিবা অসম বিয়ে কোনকালেই হয়নি।
কৃস্ন করলে লীলা,,আর আমি করলে,,,,,বিষয় আসলে এমন।
আমরা যতোই নারীবাদ আর পরিবর্তনের শ্লোগান বলি। সেসব আসলে মুখেই বলি কিন্তু প্রাচীণ থেকে এখনও বেড়িয়ে আসতে পারিনি। তাইতো সমাজে দুজন নারীপুরুষ প্রেম করে। ধরা পরে গেলে ১০০ দোররা মারা হয় নারীকে। বাচ্চা পেটে বিচারে দোষী হয় নারী। ধর্ষনের রফাদফা হয় কয়েকহাজার টাকায় কিংবা হাতেপায়ে ধরে। ভাই নারীদের নিজেদের মতো করে ভাবতে শিখুন। নারীরা কি পরবে, কি খাবে, কাকে বিয়ে করবে কি করবে না এগুলো নিয়ে আপাতত বন্ধ থাকাই ভালো!!!!
২১টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
এখনকার সমাজে দায় দায়িত্ব উভয়ের উপর পরে এখন নারী রা অনেক শিখিত হয়েছে তাদের ভাল মন্দ বুঝে
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
“ধরা পরে গেলে ১০০ দোররা মারা হয় নারীকে।” এখানে দায় আইন প্রয়োগকারীর, আইনের নয়। আইনে অপরাধী দুইজনকেই একই ১০০ দোররা . আর আমি একজন বেকুব মানুষ এগুলো নিয়ে লিখা ও মন্তব্য থেকে বিরত থাকি কারণ আসল তথ্য আমি অবগত নই। আমি গিবতকারী হতে যাবো কেন?
আর যাইবলেন পৃথিবি যেভাবে চলছে সেই ভাবেই চলবে মাঝে আমাদের এই ফেত্না গন্ডগোল থাকবেই মনে হই। এটা আমার ধারনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
নিয়ম থাকলেও সেটা আদৌ পালন করা হয় না। কারণ কোন শক্তি তাকে বাঁচায়। তখন দূর্বল ই সাজা পায়।।।
মোঃ মজিবর রহমান
সহমত আপু।
ফয়জুল মহী
সমালোচক বা পুরুষকূলের কাছে আমার প্রশ্ন নারীদের নিয়ে এতো মাতেন কেন?- পুরুষকূল নয় কিছু পুরুষকে এই প্রশ্ন হবে।
কিছু নারী আছে তাদের দলের কেউ যে কোনো সমস্যায় পড়লে পাশে দাড়াবেই ঘেউ ঘেউ করবেই। কিন্ত “ওই কিছু নারীর” পছন্দমত না হলে একদম চুপ। এরা যেমন সমাজের কীট তেমনি“ কিছূ” পুরুষও সমাজের কীট। অতএব সমান সমান চলতেই থাকবে নোংরামি ।
আর বিয়ে হলো সামাজিক এবং ধর্মীয় বন্দন। এইটা মোটেই একটা কন্টাক্ট নয়। ইসলামী দেশ সৌদিতে সবচেয়ে বেশী তালাক হয় কারণ নারীর ইচ্ছাই বড় সেখান ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সরি কিছু পুরুষ। সিগনেচার থাকলেই কন্ট্রাক্ট। এটা মিন করেছি।
অশেষ কৃতজ্ঞতা মহী ভাই।।।
নার্গিস রশিদ
সাহসী এবং যুগ উপযোগী লেখা। অনেক ধন্যবাদ ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ম্যাম।
তির্থক আহসান রুবেল
যখনই কেউ এদেশের শিশু-কিশোর-তরুণদের আলো দেখাতে চায়, তখনই একটা চক্র সেখানে চলে আসে সেই মানুষটিকে নিম্ন থেকে নিম্নস্তরে ফেলে দিতে। কারণ যখনই প্রজন্ম সভ্যতার শিক্ষা পাবে, আলোর দেখা পাবে তখনই অসামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
একদম ঠিক বলেছেন ভাই। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
দুনিয়াতে কোন আচারই পাল্টায়নি আপু,
ধরণ পরিবর্তন করেছে মাত্র!
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুভকামনা আপনার জন্যও।।।
খাদিজাতুল কুবরা
নারী প্রগতির কথা বলেছে বলেই ফারজানার চারিত্রিক পোস্টমর্টেম করা শুরু করেছে। সে যদি নানান অসংগতি নিয়ে শতশত সাধারণ মেয়েদের মত একজন স্বামীর ঘরে থেকে যেত তাহলে কোন কথা হতোনা। সে নিয়ম ভেঙে বেরিয়েছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করতে মানা করেছে নতুন প্রজন্মের মেয়েদেরকে।
জানিনা এ দেশের মানুষের মনের উন্নতি আদৌ কখনো হবে কিনা।
খুব ভালো লিখেছ
রোকসানা খন্দকার রুকু
মূল্যবান মন্তব্য। অশেষ কৃতজ্ঞতা।।।
হালিমা আক্তার
নারী তুমি খুব ভালো যদি মুখ বুজে সব সহ্য কর। যদি কর প্রতিবাদ তোমার থেকে নয় কেউ খারাপ। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা এরকম। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঠিক বলেছেন আপা। ধন্যবাদ।
নবকুমার দাস
বলিষ্ঠ লেখা । এই দুনিয়ায় নারী পুরুষ উভয়ের সমান অধিকার কায়েম হোক পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা অশেষ।
জিসান শা ইকরাম
ফারজানা ব্রাউনিয়া আমার কাছে একজন আইডল।
তার বিরুদ্ধে কুৎসাকারীরা হীন মানষিকতার লোক।
তিনি বহু বিবাহ করে অন্যায় করেননি। তিনি আইনসিদ্ধ ভাবেই বিয়ে করেছেন।
নারীদের উত্থান অনেকেই পছন্দ করেননা, তাদের দমিয়ে রাখার যত ধরনের অপকৌশল আছে, তা তারা অবলম্বন করে।
এমন পোষ্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনাকে ও ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।।।