জন্মের পর আমাদের জীবন চলার পথ আরম্ভ হয় । প্রথমে শৈশব ক্রমান্বয়ে কৈশোর , যৌবন , মধ্য বয়স তারপর সর্ব শেষ বার্ধক্য । বাচ্চাদের সামনে বিরাট ভবিষ্যৎ থাকে আর তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা অনেক আশা করতে থাকি । কিন্তু বার্ধক্য যখন চলে আসে আর কিছু তাদের কাছ থেকে আশা করার থাকেনা ।

বৃদ্ধরা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে চিরাচরিত ভাবে উত্তর না পাওয়া সেই একই প্রশ্নের সম্মুখীন হয় আর তা হল “ জীবন মানে কি ?”

বেশীর ভাগ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, পাক-ভারত উপমহাদেশে, চায়না এবং আফ্রিকার দেশ গুলতে এই ধারনাই প্রচলিত যে বুড়ো হলে সন্তান রাই তাদের বুড়ো বাবা মা দের দেখা শুনা করার দায়িত্ব নেবে ।

কিন্তু বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময় এটা আর হয়ে উঠেনা । দেখার ইচ্ছা থাকলেও হয় না । তার পেছনে অনেক বাস্তব কারন আছে।
প্রধান কারন হল আগে নারী দের কাজ ছিল বাড়ীর ভিতরে । যেমন রান্নাবান্না ,বাচ্চা জন্ম দান আর তাদের দেখাশুনা এবং বয়স্ক দের দেখভাল করা ।

তা ছারা চাকুরীর ব্যাপারে সন্তান দূরে থাকে বা বিদেশে থাকে । অনেক গরীব পরিবারের পক্ষে টাকার অভাবে ভালো যত্ন দিতে পারেনা ।
তা ছাড়া প্রায় পত্রিকা তে দেখা যায় বয়স্ক দের প্রতি অবহেলার খবর ।

যেহেতু মেয়েরা এখন সংসারের ইনকাম এর জন্য অর্থনৈতিক দিকটার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে ,নিতে বাধ্য হয় বা নিতে বলা হয় সরকার থেকে বা পরিবার থেকে , তখন তাদের জন্য দুই দিক সামলানো কঠিন হোয়ে পড়ে ।
অনেক সময় বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা থাকে বয়স্ক দের যা কিনা করার জন্য স্কিল নার্স দরকার । যা বাড়ীর সদ্যসদ্যের দ্বারা সম্ভব নয় ।

অনেকের ধারনা ওয়েস্টার্ন দেশ গুলো মাবাবা কে বুড়ো বয়েসে দেখেনা । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি নার্সিং হোম গুলো এত ভালো সেবা দেয় বয়স্ক দের সেই জন্য তাঁরা সেখানেই থাকতে পছন্দ করেন । স্বাধীনতা আর সন্মানের সাথে থাকা টা তো আছেই । তা ছাড়া সেই একই সমস্যা সন্তান দের ব্যাসতো জীবন । ইচ্ছা থাকলেও সময় থাকে না । সব কিছুই সেই লজিকের কথা “ কার্জ কারন সম্পর্ক যুক্ত” ।
এই সমস্ত দেশ গুলোতে দেখা যায় আরও কিছু সুন্দর ব্যাবস্থা প্রবীণ দের জন্য । যেমন যারা বাড়ীতেই থাকতে চান কিন্তু কিছু সময়ের জন্য কত গুলো যায়গা থাকে যেখানে সকলে তাঁরা একসাথে বসেন , গল্পগুজব করেন তার সাথে খাওয়া দাওয়ার বাবস্থা থাকে । থাকে বেড়ানর ব্যাবস্থা । হালকা ব্যায়ামের ব্যবস্থা ।
প্রবীণ দের জন্য থাকে হোম ডেলিভারি খাবার সরবরাহর ব্যাবস্থা ।

তা ছাড়া তো আছেই নানা রকম যন্ত্র পাতি যা তাদের চলাচলের ব্যাপারটাকে সহজ কোরে দায়। যেমন recliner chair, হুইল চেয়ার , mobility equipment। রাস্তাতে চলাচল ,বাসে, ট্রেনে আর এম্বুলেন্সে সহজে চলাচল আর উঠা নামার সুন্দর বাবস্থা ।

সব চেয়ে ভালো বাবস্থা একটা যা কিনা মৃত্যু যন্ত্রণা কে সহজ করতে সাহায্য করে ।যাকে বলে Palliative care. মৃত্যু আসবেই এবং সেটাকে মেনে নিতেই হবে । জীবনের শেষ সময় টিতে দরকার হাতেনাতে সাহায্য আর emosonal সাহায্য। উন্নত দেশ গুলোর হাসপাতাল গুলোতে তার সুন্দর ব্যাবস্থা আছে । যাকে বলা হয় যন্ত্রণা হীন মৃত্যু ।

আমাদের দেশে আছে নানা রকম সীমাবদ্ধতা । এখনো আমরা উন্নত দেশের সাথে তুলনা করতে পারবনা । যেহেতু আমরা উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি তাই আমরাকেও এসব নিয়ে ভাবতে হবে ।

চায়না , জাপান এ একই ব্যাপার । বাড়ীতেই যতদিন পারা যায় থাকে । বেগতিক হলে নার্সিং হোমে যায় । সেদিনই এই দেশ দুটোতে আমাদের দেশের মতোই নিয়ম প্রচলন ছিল । সন্তান দেখবে বাবামাকে । কিন্তু ঐ একই ব্যাপার ছেলেমেয়ে কাজে নিয়ে দূরে থাকে বাবামাকে দেখভাল এর সময় দিতে পারেনা । বাবামাকে ভালবাসে না বা তাদের দায়িত্ব নিতে চায় না তা কিন্তু না ।

এমন একটা সময় আসে যখন কিনা ২৪ ঘণ্টা দেখভালের দরকার হয় । ডাক্তার এর দরকার হতে পারে যখন তখন ।
প্রয়োজন হতে পারে নিয়মিত থেরাপিসট ।
এই সব কাজ সামলানোর জন্য শ্রম ভাগাভাগির দরকার । একলা কেউ সামলাতে পারবেনা ।

এখন সময় এসছে ভাবনা চিন্তা বদলানোর । আগর চিন্তা নিয়ে বসে থাকলে চলবেন । বুড়ো বয়স টা সবার আসবে । বুড়ো বয়স তা সন্মানের মধ্যে পাড়ি দেয়া দরকার । আমদের দরকার সবকিছুর সুবিধা সম্পন্ন ভাল নার্সিং হোম এর বাবস্থা । যেখানে থাকলে সন্তানও স্বস্তিতে থাকতে পারবে আর বয়স্করাও ভালো দেখভালের মধ্যে থাকবে ।

তার জন্য দরকার টাকা পয়সা । তা দেয়ার বা যোগাড়ের বাবস্থা আমরা কেই করতে হবে । যদি প্রথম থেকে উপার্জন করার পর থেকেই তা থেকে ইন্সুএরেন্স এর ম্যাধধমে বা ট্যাক্স প্রদানের মাধ্বমে এর ব্যাবস্থা করা যায় ,তবে তার সমাধান করা যায় ।

সরকারের সমাজ কল্যাণ দফতর কে এ ব্যাপারে এগিয়ে আস্তে হবে।আমরাকেও পুরানো ভাবনা থেকে বেরিয়ে আস্তে হবে ।
যেমন ভাবে বাচ্চা দের দেখাশুনা করার জন্য নার্সারি এবং সবার চিকিৎসার জন্য হেলথ সেন্টার থাকে তেমন ভাবেই বয়স্ক দের দেখা শুনার জন্য নার্সিং হোমের প্রয়োজন এখন সময়ের দাবী ।

বেসরকারি ভাবেও নার্সিং হোম খোলার বাবস্থা করা যেতে পারে । যা কিনা থাইল্যান্ড আরম্ভ করেছে । পশ্চিমের উন্নত দেশ গুলো এই দেশের নার্সিং হোমে গিয়ে বুড়ো বয়সে থাকে ,কারন ভালো ভাবে দেখাশুনার করার জন্য নাম আছে থাইল্যান্ড এর মানুষ দের । থাইল্যান্ড যেমন হলিডে করার জন্য একটা সুন্দর গন্তব্য স্থান , ঠিক এই দেশ টা নার্সিং হোম করেও সুনাম অর্জন করেছে ।

থাইল্যান্ড ,ভারত মানব সেবা বিষয় টিকে ব্যাবসাতে পরিণত করেছে । চিকিৎসা করা তার সঙ্গে হলিডে, এ ব্যাবসা যেমন চলছে তেমন নার্সিং হোমের ব্যাবসা টাও ভালো । আমাদের দেশের মানুষ এটা ভেবে দেখতে পারে ।

আমাদের দেশের মানুষ সম্পত্তি করে ছেলে মেয়েদের জন্য রেখে যায়। এই প্রথা তেমন প্রচলন নায় পশ্চাৎত্ব দেশে ।সন্তান রা নিজেদের সম্পত্তি নিজেরাই কোরে নায় । নার্সিং হোমের খরচ দরকার মতো সেই বাড়ী দ্বারা চালানো হয় অনেক সময় ।
এই ব্যাবস্থা আমাদের দেশে করা যায় কিনা দেখা যেতে পারে ।

ধনী দেশ গুলোতে দরিদ্র প্রবীণরা নার্সিং হোম বিনাপয়সাতে থাকতে পায় । তা ছাড়া প্রবীণ হোলেই যে কেউ ফ্রি মেডিসিন ,ফ্রি বাস আর ট্রেন পাস পায়, পায় শীতের সময় ঘর গরম করা এলাউন্স । আমাদের দেশেও এই সুযোগ দেয়া এখন সময়ের দাবী ।

বয়স্ক দেরও অধিকার আছে সন্মানের সাথে শেষ দিন গুলো গুজরান করা । এটা তাঁদের প্রতি হবে মানবিক সুবিচার । সরকার ,সমাজ পরিবার সবার এ দিকটাতে নজর দিতে হবে ।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ