প্রতীক্ষা (৩)

বনলতা সেন ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩, শনিবার, ০৩:৪৬:২৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩২ মন্তব্য

দেখা হয়েছিল বহুকাল পরে সাব-ওয়েতে,
দেখা হয়েছিল বহুকাল পরে আহসান মঞ্জিলের চওড়া সিঁড়িতে ,
ঝলমলে অতিকায় শপিং মলে বা বড় কাটরার মুসাফির খানায় ।

পনির দেয়া বাকরখানি ছিল নাছরিনের প্রিয় , পুরোন ঢাকায় ছিল আমাদের প্রিয় দোকান । শাহ সুজার বড় কাটরার মুসাফির খানায় কাটিয়ে দেব কয়েকদিন , পরিকল্পনা ছিল । কিন্তু কিছুতেই যাব না ছোট কাটরায় বিবি চম্পার কবর দেখতে । দু’জনে মিলে এক ভিস্তিওয়ালার মশক ছুঁয়ে দেখেছিলাম নিভাঁজ কৌতূহলে। রোদ-ছায়ায় বেঞ্চে পা তুলে বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে দেখছি গাছের পাতার ঝিলিমিলি , বীর হত্যার সাক্ষী এই ভিক্টোরিয়া পার্ক । পাটুয়াটুলীর ‘রামমোহন রায় লাইব্রেরি’তে কাটিয়েছি অগুনিত সময় ।

কিন্তু পরি বিবির মাজারে গিয়ে সোনার কাঠি রুপোর কাঠি পাল্টিয়ে পারিনি পরি বিবির ঘুম ভাঙ্গাতে ।

নাছরিন আর আমি ভালো ও বেসেছিলাম একজনকেই । ও ও তা জানত ।

কোন এক ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে সোনালী রদ্দুরের চোখ সীমায় দেখা-দেখা খেলার মত করে সিতারা মসজিদের ধার ঘেঁসে হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ যদি হয়ে যায় দেখা ... শত বাঁধা-বিপত্তি , আনন্দ-বেদনা বা কাজ-অকাজের কথা ফেলে চোখ তুলে হাসতে পারব কী ?

নাছরিনের প্রাণ প্রিয় টাইপরাইটারটির ঠিকানা ভাঙ্গারির দোকানি জানাতে পারেনি ।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

    • বনলতা সেন

      দেখুন বিবি চম্পার আইডেন্টিটি নিয়ে প্রশ্ন আছে , তিঁনি শায়স্তা খাঁ এর মেয়ে না বাদী এ প্রশ্নের
      সুরাহা হয়নি । তাই যাওয়া হয়নি । এটি সাধারণ অর্থে ।
      “নাছরিন আর আমি ভালো ও বেসেছিলাম একজনকেই ।” এটি রূপক ।
      কমন ইন্টারেস্টের ব্যাপকতা বোঝাতে এটি বলা হয়েছে ।

      লেখাটির টেনস্‌ লক্ষ্য করুন , একটু কঠিন বিষয় নিয়ে লেখা ।

      ‘বড় কাটরার মুসাফির খানায়’ এই মুসাফির খানাটি ছিল ১৬৪১ সালে , এখন ২০১৩ তে সেখানে দেখা
      হয় কী করে ?
      বিষয়টি জটিল । সম্ভব হলে আর এক বার পড়ুন ।

      • বনলতা সেন

        আমি ইতিহাসের উপর নির্ভর করেছি বলার সুবিধের জন্য , মুল বিষয়টি
        ইতিহাস নয় , ইতিহাস পড়তে হবে না । আমি আরও ভাল করে বুঝিয়ে লিখে রাখব রাতে ।
        আপনি ইচ্ছে হলে পড়ে দেখবেন ।

      • বনলতা সেন

        “দেখা হয়েছিল বহুকাল পরে সাব-ওয়েতে,
        দেখা হয়েছিল বহুকাল পরে আহসান মঞ্জিলের চওড়া সিঁড়িতে ,
        ঝলমলে অতিকায় শপিং মলে বা বড় কাটরার মুসাফির খানায় ।”

        দেখুন প্রথম লাইনটিতে বর্তমান কাল , দ্বিতীয় লাইনটিতে নিকট অতীত ও শেষে দূর অতীত
        বোঝানোর চেষ্টা । যেহেতু বনলতা পুরোন ঢাকার প্রতি দুর্বল জানা-অজানা কারণে তাই নাছরিনের সাথে
        তার নিজের বন্ধুত্ব বোঝাতে এখানেই বিচরণ করেছে নানা স্থাপনায় । তিন ধরনের সময় দিয়ে তাদের সম্পর্ককে সময়ের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে ।

        ‘ভিস্তিওয়ালার মশক ছুঁয়ে’

        মশকে থাকে পানি , পানি জীবনের প্রধানতম অংশ । পানির উপমায় বন্ধুত্বকে পানির ন্যায় প্রয়োজনীয়
        জীবন ঘনিষ্ঠতা বোঝান হয়েছে ।

        ‘পরি বিবি ’

        আমারা পরি বিবিকে সেইন্ট মানি , বন্ধুত্বটি পরম পূজনীয় কিন্তু এখন ছিন্ন , তাই সোনার কাঠি রূপোর
        কাঠি পাল্টিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা ।

        ‘বীর হত্যার সাক্ষী এই ভিক্টোরিয়া পার্ক’

        প্রবল বন্ধুত্ব ছিন্ন হয়েছিল যা হত্যার নামান্তর মাত্র ।

        ‘রামমোহন রায় লাইব্রেরি’

        দু’জনের পড়াশোনার সুগভীর আগ্রহ বোঝায় ।

        ‘সিতারা মসজিদ’

        মসজিদ অত্যন্ত পবিত্র স্থাপনা আমাদের জন্য । বনলতা চায় এমন স্থানেই আবার তাদের
        চির অম্লান বন্ধুত্ব পুন-স্থাপিত হোক ।

        ‘নাছরিনের প্রাণ প্রিয় টাইপরাইটারটির ঠিকানা ভাঙ্গারির দোকানি জানাতে পারেনি’

        ছিন্ন সম্পর্কের ছিটেফোঁটা স্মৃতি খুঁজে ফেরা ।

        এই হল একান্তই আমার এলোমেলো ভাবনা ।

  • ক'রেখেলা_কাটেবেলা

    মাথার ওপর দিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল …. ব্যাখ্যা করে না দিলে জীবনেও বুঝতাম না |
    কালের ব্যবধান বোঝাতে দেখা হওয়ার জায়গাগুলোর রেফারেন্স যেভাবে টেনেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর এবং আপনার গভীর মননের পরিচয় বহনকারী |

    সৃজনশীলতায় এগিয়ে যাওয়ার পথে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল | ঈশ্বর/আল্লা/গড্ আপনার সহায় হোন |

    • বনলতা সেন

      ‘ঈশ্বর/আল্লা/গড্’ এঁদের সাথে সম্পর্কটি ঠিক তেল তেলে যাচ্ছে না ।
      অতএব সহায়তার লক্ষন ও তেমন সুবিধের নয় । তাই সৃজনশীলতা নিয়ে নিরাশাবাদী হতেই হচ্ছে ।
      অবশ্য তাতে সমস্যা তেমন হচ্ছে না ।
      আউল-ফাউল লেখা মাথার ওপর দিয়ে গেলে মাথাকে তো আর দোষ দেয়া যায় না বা দোষ দেয়া ঠিক ও না ,
      আপনি কী বলেন ? কী যে কখন লিখি কে জানে ! খুব খুউব অভাব আমার পড়াশোনার , আরও জানা দরকার , আরও জানার চেষ্টা করা উচিৎ । দিন গুলো ৭২ ঘন্টার হলে কিছুটা চেষ্টা করা যেত ।

      নিয়মিত পড়ছেন , কষ্ট করে মন্তব্য দিচ্ছেন তাতে ভাল বৈ মন্দ লাগছে না ।

  • শুন্য শুন্যালয়

    হুম মন্তব্য টা পড়ে লেখাটি আসোলেই ভালো লেগেছে, তবে লেখাটি পড়েই যদি বুঝতে পারতাম আরোও ভালো লাগতো …এতো গভীর চিন্তা ভাবনা কেমন করে আসে বনলতা দি?

  • আদিব আদ্‌নান

    সবিনয় প্রশ্ন ,
    আপনি কি ইতিহাসবিদ ?

    অনুগ্রহ করে পরের লেখাগুলোতে কষ্ট করে এমন একটু আলোচনা যোগ
    করে দিলে উপকৃত হব । তা না হলে কিন্তু সবই মাথার এক কিম্বা একশত হাত উপ্রে দিয়ে যাবে ।

    এমন বন্ধুত্ব , বিচ্ছিন্নতা ও আবার মিলনের প্রতীক্ষা এবং তা বোঝানোর জন্য যে ঐতিহাসিক স্থানের ও কালের
    উপমা ব্যবহার করেছেন এক কথায় তা অসাধারন ।
    যদিও সময়ের ঊর্ধ্বের ব্যাপারটি এখনও মাথার উপ্রেই রয়ে যাচ্ছি ।

    লেখালেখি ছেড়ে না দেয়ার কোন কারণ আর অবশিষ্ট রইল না ।

    • বনলতা সেন

      জ্বী না জনাব , আমি কোন বিদ-ফিদ নই ।
      তবে আমি একটু চর্চা-ফর্চা করি মাঝে-মধ্যে , যদিও তা হিসেবের মধ্যে পরে না ।

      ঠিক আছে চেষ্টা করব , তবে মনে করিয়ে দিলে উপকার হবে ।
      কী আশ্চর্য , মাথার উপর দিয়ে যাবার কিছু নেই ।

      প্রশংসা শুনলাম , ভালো ।
      দুঃখিত , সময়ের ব্যাপারটি এখনই বুঝিয়ে বলছি না । অনেক লিখতে হবে তাতে ।

      এখনই ছেড়ে দেবেন ! আরও অপেক্ষা করুন ।

  • নুরুন্ননাহার শিরীন

    লেখাটি দীর্ঘ গল্প-কবিতাময় হতে পারতো … ঐতিহাসিক পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে গল্পচ্ছলেই আরও বহুদূর বিস্তৃত হতে পারতো … “শেষ হয়েও হইলো না” … তাতে কি!! চলতে থাকুক এই প্রতীক্ষা পর্ব … 🙂 🙂

  • হতভাগ্য কবি

    কি সুন্দর করে লিখেছেন, দেখেই হিংসা হয়।
    অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়েই তো স্মৃতি। আমার মনে হয় কিছু ইচ্ছা স্মৃতি হয়ে যায়, হাজার বছর বাঁচে, সেই স্মৃতিগুলোর ডানা থাকে প্রজাপতির মত, তারা উড়ে বেড়ায় তাদের হয়তো ধরা যায় আটকিয়ে রাখা যায় না।

    আপনার অসম্ভব সুন্দর লিখায় এই অবুঝের ভালোলাগা রেখে গেলাম। -{@

  • প্রহেলিকা

    সালাম জানবেন প্রথমেই। আমি আগেও লিখাটি পড়েছি। ছাইরাছ হেলাল ভাইয়া কিছুদিন আগে একটা কথা বলেছিলেন যে একটি লেখক যেই দৃশ্যপট থেকেই লেখুক না কেন একেক জন পাঠক একেক রকম দৃশ্যপট তৈরী করে থাকে তার আপন মনের সাজিয়ে নিজের মত করে। আমি যখন আপনার এই লিখাটি পড়ি তখন আমিও কিন্তু লিখাটির প্রেক্ষাপট আমার নিজের মত করেই সাজিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু যখন মন্তব্যগুলো পড়লাম তখন কিছু কিছু আপন দৃশ্যপটে আঘাত হেনেছিল। দুর্ভাগ্য আমার যে যেদিন লিখাটি দিয়েছিলেন সেদিন আমি পড়তে পারিনি তাহলে হয়তো নিজের প্রেক্ষাপট থেকে কিছু বলতে পারতাম যা আজ আর পারছিনা কারণ আপনি ইতিমধ্যেই ব্যাখ্যা করে ফেলেছেন তাই আপনার ব্যাখ্যাটি এখন মেনে নিতে হচ্ছে।

    তারপর প্রথম যেদিন আমি লিখাটি পরি সেদিন আমি কিভাবে সাজিয়েছিলাম সেটাই উল্লেখ করছি।

    **দেখা হয়েছিল বহুকাল পরে সাব-ওয়েতে,
    দেখা হয়েছিল বহুকাল পরে আহসান মঞ্জিলের চওড়া সিঁড়িতে ,
    ঝলমলে অতিকায় শপিং মলে বা বড় কাটরার মুসাফির খানায় ।**

    নাছরিন চলে যাবার পর তার সাথে আপনার বার বার দেখা হয় কখনো বর্তমানের সব-ওয়েতে আবার কখনো বোর কাটরার মুসাফির খানায়। লেখক এখানে তার প্রিয়বঁধুকে হারালেও তাকে সে খুঁজে পেত সর্বস্তরে হোক সেটা বর্তমান অথবা অতীত। ৩ ম্যাচ সিরিজে ২ ম্যাচ হেরে গেলেই কিন্তু ইনিংস পরাজয় ঠিক তেমনি জীবনের তিনটি ক্ষণের মাঝে নাছরিন- এর সাথে আপনার অতীতেও দেখা হয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়, বর্তমানেও হচ্ছে সো –ভবিষ্যতেও হয়ে যাবে যেখানে বন্ধুত্বের খুব গূঢ়তা প্রকাশ পায়।

    লক্ষ্য করলে দেখা যাবে লেখক সবসময় তার বন্ধুটির পছন্দকৃত জিনিসগুলো তুলে ধরে গিয়েছেন তার কাছে তার বন্ধুটিই ছিল সব কিছু, সে চেয়েছিল তার মাঝে অবগাহন করে তার রুচি ও চাহিদার বহির্প্রকাশ ঘটাতে যেখানে লিখক সম্পূর্ণ সার্থকতা পেয়েছেন এই লাইনে।
    **পনির দেয়া বাকরখানি ছিল নাছরিনের প্রিয় , পুরোন ঢাকায় ছিল আমাদের প্রিয় দোকান ।**

    **ভিস্তিওয়ালার মশক ছুঁয়ে**
    **‘পরি বিবি ’**
    **‘বীর হত্যার সাক্ষী এই ভিক্টোরিয়া পার্ক’**

    এই লাইনগুলোতে প্রথমে দ্বিধায় থাকলেও পরে আপনার মন্তব্য পড়ে আয়ত্ত করেছি।

    আসলেই প্রগাঢ় এক বন্ধুত্বের বাঁধন ছিলো লেখক ও তার বন্ধুটির মাঝে যেটা লেখক তার লিখনিতে সার্থক ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন।

    **নাছরিনের প্রাণ প্রিয় টাইপরাইটারটির ঠিকানা ভাঙ্গারির দোকানি জানাতে পারেনি’***
    আপনি এই লাইনটার ব্যাখ্যা করার পরও আমি অপদার্থ মিলাতে পারছিনা কোনভাবেই।

    আসলেই সন্মান প্রদর্শন করছি আপনাদের বন্ধুত্বের তবে আমি আশা করব শ্রেষ্ঠ ও শেষ বলে কোনো শব্দ আসবেনা তাকে নিয়ে প্রতিটি লিখায় হবে শ্রেষ্ঠ যেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট শ্রেষ্ঠ লিখা থাকবে না।

    ভালো থাকুন শ্রদ্ধেয়া। -{@

  • বনলতা সেন

    অনেক কষ্ট করে এত সুন্দর করে লিখেছেন দেখে আনন্দিত ।
    আশা করব আরও সামান্য দু’চারটি লেখায় সুন্দর করে লিখে ভবিষ্যতেও আমাকে লিখতে সাহায্য করবেন ।

    টাইপরাইটারটি নাছরিনের , যা এক সময় সে ব্যবহার করত পরম যত্নে । কালের প্রবাহে সেটি পুরনো
    লোহা লক্কড়ের দোকানে এসেছে নষ্ট হয়ে । কিন্তু এই দোকানদার এত সাধের টাইপরাইটারটির মালিকের খোঁজ
    জানেনা । বিস্মৃত হয়ে গেছে নাছরিন ।
    ধন্যবাদ অগণিত আপনাকেও ।

  • অপরাজিতা সারাহ

    আমি বাকরুদ্ধ।যত না লেখাটি পরে,তার চেয়ে বেশি ব্যাখ্যা পড়ে।কেননা ব্যাখ্যাটি পড়েই বুঝতে পেরেছি যে কি বোঝাতে চেয়েছেন।এত গভীরতা!!!ভাবেন কি করে আর লেখেন কি করে?

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ