
বেশ অনেকদিন ধরে বিভিন্ন রাস্তার ধারের দেওয়ালে এক ধরণের ছবি আঁকা থাকতে দেখা যেতো, সেই ছবি গুলো হতো প্রতিবাদী চিত্র, এইসব ছবি দেখে বারেবারে নিউজে আসতে লাগলো, সরকার লোক লাগালো কে সে ব্যাক্তি যে এইসব ছবি আঁকছে, সরকারের ধারণা বিরোধী কেউ এই কাজে জড়িত, বিরোধীরা বলছে এ সরকারের কেউ করছে, কিন্তু জড়িত ব্যক্তি ধরা পড়লোনা।
এই সব চিত্রকে গ্রাফিতি বলা হয়, আসলে গ্রাফিতিকে বেশির ভাগ সময় প্রতিবাদের ভাষা হিসাবেই আঁকা হয়, এমনি এক গ্রাফিতি চিত্রকর হলো বানক্সি।
এই বানক্সি কে, কোথায় থাকে কেউ জানেনা, কিন্তু তার আঁকা গ্রাফিতি পুরা তাবত তাবত রাজনীতিবিদদের নাড়িয়ে দিয়েছে।
তেমনি একটি ছবি যা বানক্সি এঁকেছে বৃটিশ পার্লামেন্টকে ব্যঙ্গ করে যা ব্রেক্সিট আন্দোলনের সময় প্রতিবাদ স্বরূপ আঁকা হয়েছিলো, যেখানে দেখা যায় যে শিম্পাঞ্জিরা বৃটিশ পার্লামেন্ট চালাচ্ছে, বুঝুন অবস্থা।
শুধু কি ইংল্যান্ড, ইরাক, ইরান, ইসরায়েল, আমেরিকা, আবুধাবি, চিলি, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া সহ প্রায় সব দেশেই গ্রাফিতিকে প্রতিবাদ স্বরূপ ব্যবহার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে আরও কয়েকটি গ্রাফিতি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যেমন- রোকেয়া হল আর জগন্নাথ হলের দেয়ালে আঁকা ‘সহমত ভাই’ আর ‘হেলমেট ভাই’। দর্শনার্থীরা ‘সহমত ভাই’কে সম্পর্কিত করছিলেন সমাজে বিদ্যমান তোষামোদকারীদের সাথে, যেখানে তারা ‘হেলমেট ভাই’কে ভাবছিলেন ওই তোষামোদকারীদের পক্ষে কাজ করা নিপীড়ক। এছাড়া বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর রিমান্ড কক্ষের বাতি, পাশে লেখা ‘বাংলাদেশ রিমান্ডে’, এই চিত্রটিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এছাড়া আমাদের সেই বিখ্যাত কামরুল হাসানের এরশাদ সময়কার বিশ্ব বেহায়ার ছবি।
বা একাত্তরের ইয়াহিয়ার সেই গ্রাফিতির কথা কি ভুলা যায়?
রাজাকারদের বিচারের জন্য গ্রাফিতি
আসুন বানক্সির কয়েকটা গ্রাফিতি দেখিঃ
বানক্সির বিখ্যাত যে ছবি ৯ মিলিয়নের উপরেও বিক্রি হয়েছে যা বৃটিশ পার্লামেন্টকে ব্যঙ্গ করে আঁকা হয়েছে।
আসুন আমাদের দেশের কিছু গ্রাফিতি দেখিঃ
আসুন গ্রাফিতি কি তা জানিঃ
গ্রাফিতি হল অনুমতি ব্যতিরেকে জনসাধারণের অভিমতকে শিল্পীয় উপায়ে দেয়ালের উপরে লেখনী কিংবা অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরা, স্প্রে পেইন্ট বা মার্কার পেন সাধারণত গ্রাফিতি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
গ্রাফিতি একটি বিতর্কিত বিষয়। অধিকাংশ দেশে গ্রাফিতিকে বিকৃত ও ধ্বংসাত্মক শিল্প হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ অনেক সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের সক্রিয়তা গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রচার করে। জেন মিচেল বাস্কুইট যার গ্রাফিতি জনসাধারণের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। তার তৈরি একটি গ্রাফিতি ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
রোম ও পম্পেই নগরীর সমাধিস্থলের দেয়াল ও ধ্বংসাবশেষে গ্রাফিতির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। দক্ষিণ সিরিয়া, পূর্ব জর্ডান এবং উত্তর সৌদি আরবে শিলা ও পাথরের উপরে কিছু লেখা পাওয়া গিয়েছে স্যাফাইটিক ভাষায় এবং ধারণা করা হয় এই স্যাফাইটিক ভাষার উৎপত্তি গ্রাফিতি থেকে।
প্রাচীন গ্রীক নগরী এফেসাসেই আধুনিক গ্রাফিতির উদ্ভব এবং সেখানে গ্রাফিতি পতিতাবৃত্তির বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হত। বর্তমান সমাজের চেয়ে প্রাচীন সমাজের গ্রাফিতিগুলো আরো বেশি অর্থপূর্ণ এবং ভিন্ন ভিন্ন ধারায় বহমান ছিল। প্রাচীন গ্রাফিতিগুলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটাতো। ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুত্পাতের সময়কার গ্রাফিতিগুলো পম্পেই নগরীতে সংরক্ষিত ছিল। নভেলিয়া প্রিমিগেনিয়া নামের এক পরমা সুন্দরী পতিতার ব্যাপারে জানা যায় গ্রাফিতি থেকে।
সমসাময়িক গ্রাফিতি মূলত হিপহপ দ্বারা প্রভাবিত এবং অসংখ্য গ্রাফিতির উদ্ভব ফিলাডেলফিয়া এবং নিউ ইয়র্ক শহরের সুড়ংগের গ্রাফিতি থেকে। এছাড়াও এখন শৌচাগার, সেতুতেও গ্রাফিতির কাজ পরিলক্ষিত হয়। সবচেয়ে পুরাতন আধুনিক গ্রাফিতি হল “মনিকাস” যা ভবঘুরে এবং রেলশ্রমিকদের দ্বারা তৈরি হয়েছিল। মনিকারসের উপর চলচ্চিত্র নির্মাতা বিল ড্যানিয়েল ২০০৫ সালে “হু ইজ বোজো টেক্সিনো” নামের একটি ডকুমেন্টারিও তৈরি করেছিলেন।
সূত্রঃ গুগল।
সহজ ভাষায় গ্রাফিতি বলতে দেয়ালে আঁকা ছবিকে বোঝায়। গ্রাফিতি হলো সাধারণ কোনো চিত্রকর্ম বা দেয়াল লিখন, যাতে শিল্পীর সূক্ষ্ম বার্তা লুকনো থাকে। দেশে দেশে সামাজিক অবিচার, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিল্পীরা গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের বার্তা সমাজে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। শান্তির পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহ্বান ফুটে ওঠে কোনো কোনো দেয়ালচিত্রে। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক চিত্রের মাধ্যমে সমাজের বাস্তবতাও শিল্পী তার তুলির আঁচড়ে নিখুঁতভাবে তুলে আনেন। মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে গ্রাফিতিও বিকশিত হয়েছে, বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে আজকের বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা ‘সুবোধ’ পর্যন্ত পথচলায় গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে সাধারণ চিত্রকর্ম থেকে প্রতিবাদের ভাষা।
বিশ্বজুড়ে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে গুহা ও ভবনের দেয়াল, রাস্তা, ট্রেনসহ নানা জায়গায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা, ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই আছে এই দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতি। বিভিন্ন দেশে গ্রাফিতি আঁকা জনগণের সম্পত্তি বিনষ্টকারী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, আছে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আইনও। তা সত্ত্বেও শিল্পীদের গ্রাফিতি আঁকা থেকে বিরত রাখা যায়নি। অনেক দেশেই নগর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয় নগরের দেয়াল জুড়ে থাকা এসব গ্রাফিতি মুছে দিতে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ থেকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও গ্রাফিতি আঁকার শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ডের বিধান প্রচলিত।
তাহলে আজ স্বল্প কিছু ধারণা আপনাদের সাথে, ভবিষ্যতে এমনই কিছু নিয়ে নিশ্চয় আসবো, ততক্ষন ভালো থাকবেন সবাই।
তথ্য সূত্রঃ গুগল এবং Roar Bangla.
ছবিঃ গুগল।
৩৬টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
তথ্যমূলক লেখা । অজানা ছিল পড়ে জানা হলো।
ইঞ্জা
নিরন্তর ধন্যবাদ ভাই
রোকসানা খন্দকার রুকু।
বাহ্! নতুন শিশিক্ষনীয় বিষয় জানা হলো।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইঞ্জা
ব্লগের আনন্দই যে এখানেই, নিত্যনতুন বিষয়ে জানা যায় এবং লেখা যায়।
ধন্যবাদ অবিরত।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার গ্রাফিতি অনেক বুঝলাম দাদা
ইঞ্জা
সবাই জানবে এ জন্যই লেখা ভাই।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই।
সাদিয়া শারমীন
খুব ভালো লেগেছে।গ্রাফিতি সম্পর্কে জানতাম কিন্তু এত কিছু জানতাম না। ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
আপনারা সবাই জানবেন এই জন্যই আমার এই পরিবেশনা।
ভালো থাকবেন।
রেজওয়ান
তথ্যবহুল লেখা ভাইজান!
তবে সত্যি বলতে সত্যের পথে কলম, রং-তুলি ধরা হাতকে এ সমাজের বিধায়কগণ বেঁধে দেয় বা কেটে দেয়😭
ইঞ্জা
দুঃখজনক, এ জন্যই তো গ্রাফিতির সৃষ্টি।
ধন্যবাদ রেজওয়ান।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গ্রাফিতি নিয়ে আজ পুরোটা জানা হলো আপনার সুন্দর লেখনীতে। ছবি গুলো সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে গেল। এতো বিস্তারিতভাবে জানানোর জন্য অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
জীবনে জানার শেষ নেই আপু, আর ব্লগ হলো এক ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গ্রাফিতি নিয়ে আগ্রহ থেকেই আমার জানা, বানস্কির কথা শুনে সত্যি জানার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো।
ধন্যবাদ আপু সাথে থাকার জন্য।
ইঞ্জা
আপু লেখাতে নতুন কিছু ছবি সংযুক্ত করেছি, যা আমার লেখাটিকে পরিপূর্ণ করলো, দেখবেন আরেকবার।
সুপায়ন বড়ুয়া
প্রতিবাদের ভাষা গ্রাফিতি নিয়ে একটি তথ্য সমৃদ্ধ লেখা পড়ে অনেক কিছু জানা হলো।
শিল্পী কামরুল হাসানের বিশ্ববেহায়া আর একাত্তরের ঘাতকদের ছবি থাকলে আরও সমৃদ্ধ হতো।
শুভ কামনা ভাইজান।
ইঞ্জা
দাদা আবার দেখুন, সব সংযুক্ত করলাম আপনার নির্দেশনায়, ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
সুপায়ন বড়ুয়া
ওয়াও !
এখন পরিপূর্নতা পেলো।
অশেষ ধন্যবাদ যোগ করার জন্য।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
অনিঃশেষ ধন্যবাদ দাদা, সত্যি এইসব গ্রাফিতি সংযুক্ত না করলে আমার লেখাটি পরিপূর্ণতা লাভ করতোনা।
আবারও ধন্যবাদ।
তৌহিদ
দাদা, গ্রাফিতি এবং বানক্সি সম্পর্কে এই প্রথম জানলাম। আমি ভাবতাম দেয়াল লিখন কিন্তু একে যে গ্রাফিতি বলে তা আজই আপনার লেখা পড়ে শিখলাম। চমৎকার একটি বিষয়ে লিখেছেন। ছবিগলো অর্থবহুল।
শুভকামনা রইলো ভাই।
ইঞ্জা
ভাই, সুপায়ন দাদার অনুরোধে আরও কিছু বিখ্যাত গ্রাফিতি দিলাম, দেখুন আরেকবার।
তৌহিদ
হ্যা, চমৎকার হয়েছে কিন্তু!
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অশেষ ভাই
প্রদীপ চক্রবর্তী
তথ্যমূলক লেখনী শেয়ার করার জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি, দাদা।
গ্রাফিতি কি তা জানতাম না আজ জেনে ভালো লাগলো।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ দাদা, জ্ঞান আহরণের বয়স নেই, আজ এইটা জানলেন, আগামীতে অন্য কিছু জানবেন। 😊
নিতাই বাবু
জানা হলো অনেককিছু। দেখাও অনেক অনেক নিদর্শন গ্রাফিতি। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদ।
ইঞ্জা
দাদা আমরা অনেকেই আছি গ্রাফিতির ভাষাটা বুঝি, আমি যে দেশেই যায়না কেন গ্রাফিতি দেখলেই থমকে দাঁড়িয়ে দেখি।
নিতাই বাবু
গ্রাফিতির চিত্রকরদের চিত্রিত ছবিগুলো কিন্তু খুবই ভাবায়! তাই থমকে দাঁড়ানো।
ইঞ্জা
এই গ্রাফিতিকেই এজন্য প্রতিবাদের ভাষা বলে দাদা।
আরজু মুক্তা
গ্রাফিতি সম্পর্কে এই প্রথম জানলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে
ইঞ্জা
তাই, সত্যি বলতে কি দেওয়ালে যা আঁকা হয় তাই গ্রাফিতি।
ধন্যবাদ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
এত এত কিছু জানা ছিল না, তবে গ্রিফিতি (দেশি-বিদেশি) কেন জানিনা আমাকে খুব টানে,
কত অল্পে কত কিছু কত সুন্দর করেই না বলা যায়।
ইঞ্জা
হাঁ ভাইজান, দেশে বিদেশে যখনই কোনো গ্রাফিতি দেখেছি থমকে গিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছি, আপনার মতোই গ্রাফিতি আমাকে টানে।
সুরাইয়া পারভীন
দারুণ একটি বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। এই চিত্র গুলো দেখেছি একটু একটু বুঝতাম বটে তবে এর নাম যে গ্রাফিতি সেটা জানতাম না।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
চমৎকার একটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য
ইঞ্জা
অনেক দিন পরে আপনাকে পেয়ে ভালো লাগলো আপু, গ্রাফিতি নিজেই এক প্রতিবাদের ভাষা, এ শুধু চরিত্র বিশ্লেষণ করে, সমাজের কালো অধ্যায়কে আঙ্গুল তুলে দেখায়।
আবারও ধন্যবাদ আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রতিবাদের ভাষা বোঝাতে গ্রাফিতির শক্তিশালী ভূমিকার কথা জানা হলো। জানলাম এর সম্পূর্ণ ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্য।
চমৎকার পোস্ট।
শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
ইঞ্জা
গ্রাফিতি যদিও বেশির ভাগ প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, আবার কোথাও কোথাও তা উৎসবের জন্যও ব্যবহার করা হয়।
মন্তব্য পেয়ে খুব খুব খুশি হলাম আপু, ধন্যবাদ।