দেশের সরকারী বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে গেলে বুঝা যায় রোগীরা এক শ্রেণী অসাধু নামদারী ডাক্তার আর দালালদের নিকট জিম্মি।অসহায় রোগীর স্বজনরা অসহায়ের মতন চাতক পাখির মতন চেয়ে থাকেন কখন নির্দেশ আসে এ টেষ্ট করো ঐ টেষ্ট করো এখানে করো ঐখানে করো যেন এক প্রকার বাধ্য হয়েই ডাক্তাদের পরামর্শ মত রোগীর সকল টেষ্ট পরীক্ষাগুলো করাতে হয়।আর এর জন্য প্রতিটি হাসপাতালেই ডাক্তারদের আশপাশে ঘুর ঘুর করে এক শ্রেনী অসাধু প্যাথলজি ব্যাবসীদের এজেন্ট।অতিরিক্ত টাকা দিলে ওরাই সব টেষ্টগুলো করিয়ে দেয়।কিছু ডাক্তার আছেন যাদের কথা মত নিদিষ্ট করে দেয়া স্থান হতে টেষ্টগুলো না করালে ঐসব রিপোর্টে হাতই দেন না।এ দেশে ভাল ডাক্তার যে নেই তা নয় তবে অধিকাংশই টাকার নেশায় সেবক।

কন্যা শিশুটির ডেলিভারীটি খুব সফল ভাবেই হল।শিশু ভুমিষ্টের প্রথম চিৎকার তার পরিবারের সবার মনে প্রশান্তি এনে দিল।সূর্যের দায়ীত্ব শেষ এখন তার নিজ কাজে ফেরার পালা।বন্ধুরাও পর্যায়ক্রমে যে যার কর্মস্থলে চলে গেল শুধু সমর ছিল তার সাথে।ভোরের আলো এসে পড়ল তার নাক বরাবর।কখনো এমনটি হয়নি আজ ব্যাস্ত  শহরের নিস্তব্ধ পরিবেশ অবাক হয় সুর্য।
-কিরে আজকে শহরটা এতো ফাকা ফাকা লাগছে কেন!নেই কোন যানবাহনের কোলাহল শুধু দলে দলে স্কুলের ছেলে মেয়েরা রাস্তায়,কেন?
-কেন তুই জানিস না গত ২৯ জুলাই ২০১৮ ঢাকার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমান বন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো এবং একটি বাস থামলে সেটাতে ওঠার চেষ্টা করে।সে সময় জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস বেশি যাত্রী পাওয়ার আশায় প্রতিযোগিতা করতে করতে অতিরিক্ত গতিতে এগিয়ে আসলে,যার মধ্যে একটি বাস বে-পরোয়াভাবে প্রথম বাসের পাশে ফুট পাথে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় তখনি নিহত হয়  দুইজন শিক্ষার্থী এবং আরো ১২ জনের মতন  আহত হয়।
সহ-পাঠীদের এরূপ মৃত্যুতে অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।কয়েক ঘন্টা পরে,সাংবাদিকরা এই ঘটনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সভাপতি শাহজাহান খান এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি হাসি মুখে বলেন,"ভারতের মহারাষ্ট্রে গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছেন।এখন সেখানে কী...আমরা যেভাবে এগুলোকে নিয়ে কথা বলি, এগুলো কি ওখানে বলে?" তাঁর এমন বক্তব্যে দেশ ব্যাপী অত্যন্ত সমালোচিত হয় এবং আন্দোলনরত ছাত্র ছাত্রীরা তার ক্ষমা প্রার্থনা ও পদত্যাগের দাবি তোলে।তুইতো দুই দিন যাবৎ এ হাসপাতালেই পড়ে রইলি।
-কি বলিস!আসলে আমার চরিত্রটাই এমন কোন একটি কাজে ঢুকে গেলে অন্য সব নিষ্ক্রীয় হয়ে যায়।তারপর?
-তারপর আজকের এ অবস্থা।গতকাল হতেই স্কুলের কচি মনের কিশোররা ট্রাফিকের দায়ীত্ব নিজেদের কাধে তুলে নিলেন।ওরা নিজেরাই এখন রাস্তায় রাস্তায় গাড়ীর ফিটনেস কাগজপত্র দেখছে,ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না....ওয়ানওয়ের ন্যায় কোন তাড়াহুড়া নয় সিরিয়ালে গাড়ী চলাচলে বাধ্য করছেন।
-হুম,ভালই লাগছে আশাও জাগছে এ জাতি এখনো অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সোচ্চার হতে জানেন।এ আন্দোলনে বন্ধু রকিব লিখনের চার লাইনের একটি প্রতিবাদী বাক্য তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
"যদি তুমি ভয় পাও
তবে তুমি শেষ,
যদি তুমি রুখে দাঁড়াও
তবে তুমি বাংলাদেশ"।

সব চেয়ে আশ্চর্য এই ভেবে যে কোন শুভ আন্দোলনে দেশের নোংরা রাজনিতী ঢুকানোর চেষ্টা থাকে।
-এটাইতো ভয়।আসছে সামনে জাতীয় নির্বাচন ২০১৯।এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধীদল যে কোন স্বার্থ হাসিলের নোংরা কাজ করতে পারে।সরকার খুজছেনঁ এটাতে জামাত শিবিরের গন্ধ আর বিরোধীদল ভাবছেন কি ভাবে এ আন্দোলনকে সরকার পতনের দিকে ধাপিত করা যায়।ইতিমধ্যে গুজব শুরু হয়ে গেছে।বাঙ্গালী জাতি কতটা নীচ হলে দেশবিরোধী এমন জগণ্য কাজ করতে পারে!নিজ স্বার্থের জন্য ওরা ভুলে যায় এ দেশ জন্মের কারন বেদনাময় ভয়ংকর ইতিহাস।গুজব ছড়াতে বাদ যায়নি দু'বারের ক্ষমতাসীন দল বি এন পি'ও।তবুও ভাল ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের দেখানো পথে যদি আমরা হাটতে পারি।
-আর কৈ হাটতে পারলাম আমরা নিজেরাইতো আইন ভাঙি।তাছাড়া পরিবহনের বিরুদ্ধে সরকার যতবারই কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন ততবারই হেরে গেছেন।ওরা লাগাতার ধর্মঘট করে বসে।ওদের কাছে এক প্রকারে এ দেশটাই জিম্মি।

দুই দোস্ত কথার ছলে হাটতে হাটতে পাবলিক লাইব্রেরীর এড়িয়ায় ঢুকে পড়ল।এখানে আজ পূর্ব নির্ধারিত সাহিত্য আড্ডা ছিলো।ভিতরে প্রবেশ করে থ খেয়ে থমকে দাড়ায় ওরা।কি ব্যাপার কাউকেতো দেখছি না।গেলো কই সব!তবে কী আড্ডা আজ হচ্ছে না!।এর মধ্যে আড্ডায় বেশ কয়েকজনকে  ডান দিকের ঐ কফিসপে দেখতে পেলেন কফি পান করছেন।ওরা এগিয়ে গেল।চেনা অচেনা সবার সাথে পরিচয় হল সূর্য ও সমরের।
-আড্ডাটা কি এই কফিসপেই হবার কথা ছিলো?সূর্য প্রশ্ন করল আড্ডার সমন্বয়ক উজ্জ্বলকে।
-না,আড্ডার স্থান ছিলো মেইনরোডের এক সাইটে।আড্ডায় সাহিত্যপ্রেমিদের উপস্থিতিও ভাল ছিলো কিন্তু আপত্তি তুলে প্রশাসন।তাই আড্ডাটা ভেঙে দিয়ে নীরব দর্শকের মতন আমরা ক'জন এখানে এসে চা পান করছি।
-পূলিশের কার্যকলাপ একটু বেশীই মনে হচ্ছে।যখনি কোন গণতান্ত্রীক সরকার প্রশাসনের উপর পুরো নির্ভরশীল হয়ে পরে তখন ক্রমশত সরকারের স্বৈরাচারী ভাবটাই ফুটে উঠে।এই তো সেদিনও বেশ কয়কজন স্কুলের ছাত্রদের বেদম প্রহার করে পুলিশ গ্রেফতার করল।অথচ ভাবলো না এ কাজগুলো কি ঠিক না বেঠিক।আশ্চর্য আমাদের শাসন ব্যাবস্থা।
-এখানে আমার দ্বিমত আছে বন্ধু।আমরা সব সময় সরকারকে দোষী সরকার এটা করলনা ওটা করল না আসলে ভাবতে হবে আমরা সরকার মানে দেশ উন্নয়ণে কি সহযোগিতা করছি!এই যে কিশোরদের আন্দোলন এটা আমাদের ব্যার্থতারই প্রতিফলন তাই বলে দীর্ঘদিন রাস্তায় এভাবে আন্দোলনেরও কোন মানে হয় না।ওরা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পরিবহন সেক্টরটা কতটা অনিয়মের ভেতর আছে।বাস্ ওখানেই ওদের ঘরে ফেরে যাবার উচিত ছিল।কিন্তু তারা তা না করে রাজনিতীর নোংরামী ঢুকাতে সুযোগ করে দিল।
-তুমি পুরোটা জানো না বন্ধু....ওরা ওদের আন্দোলন থামিয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছে,এখন যারা রাজপথে আছে তারা কোন এক রাজনৈতিক দলের ইশারায় আছে।বললেন উজ্জল।
-তাহলেতো খুশির খবর।কিন্তু কিশোর যাদের গ্রেফতার করল পুলিশ তাদেরতো আর ছাড়ল না।
-সব ঠিক হয়ে যাবে সময় কথা বলবে।আচ্ছা বলো সূর্য কি খবর তোমার?খালাম্মা,নন্দিনী কেমন আছে?
-ভাল আছে সবাই।মা তোমার কথা অনেক বলেন তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতেও বলেছেন কয়েক বার।
-তা আর সময় কই!আমি ভবঘুরে মানুষ কখন কোথায় থাকি নিজেও জানি না।খালাম্মাকে বলো সময় করে একদিন আসব।তা বিয়েতো করলে কয়েক বছর হয়ে গেল।ঘরে ঘর আলো করতে লক্ষী কি আসবে?
-দোয়া করিস।আড্ডাস্থল হতে সূর্য ও সমর ওদের কাছ হতে পরবর্তী আড্ডার সময় জেনে চলে গেলেন যার যার বাসার দিকে।

বাড়ীতে প্রবেশ করেই সূর্য অবাক হন।ইট পাথরের শহরে যদিও গ্রামীন পরিবেশ নেই তবুও মায়ের সাজানোঁ কিছু গাছ গাছালীর কারনে বাড়ীটি সব সময় শীতল থাকে।সন্ধ্যা হলেই ঘরে ফেরা পাখিদের কিচিমিচি শব্দ শুনা যায়।আজ যেন একটু অন্য রকম লাগছে।ঢুকতেই রোহিঙ্গা চাচা চাচী আর শিশু কিশোরদের মুখের হাসি এ যেন কোন এক সু-খবরের পূর্বাভাস।ঘরে ঢুকতেই মিষ্টির একটি প্লেট নিয়ে আসল নন্দিনী।
-কি ব্যাপার!কিসের মিষ্টি?
-খেয়ে নেও আগে তারপর বলছি।
নন্দিনী প্লেট হতে একটি মিষ্টি নিয়ে নিজ হাতে সূর্যের মুখে পুড়ে দিলেন।মিষ্টি আধাভাঙা শব্দে বললেন।
-আহা বলো না কি হয়েছে।
-না,আমার লজ্জা করছে।
নন্দিনী লজ্জামাখা মুখে দৌড়ে নিজ রুমে  চলে গেলেন।সূর্য বোকার মতন মিষ্টি মুখে চেয়ে রইলেন।এরই মধ্যে অভি এসে হাজির।অভির সাথে নন্দিনীর মামীও আছে।সবাই কেমন উৎসব মুখর মনে মেতে আছে শুধু সূর্য ছাড়া।নন্দিনীর মামীকে দেখে সূর্য পা ছুয়েঁ সালাম করল।সে চলে গেলেন নন্দিনীর কাছে সেখানে সূর্যের মায়ের সাথে কথা বলছেন।এ দিকে অভি সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছেন।
-কিরে এ ভাবে তাকিয়ে আছত কেন?
-বাহ্ কস কি আমাগো আগেই তুই বাপ হইয়া গেলি আর আমরা একটু আশ্চর্য হব না?
-মানে?
-মানে টানে বুঝি না আমি সমরকে ফোন করছি ওযেন ওর বউকে সাথে নিয়ে আসে আমরা আজকের ডিনারটা বড় কোন হোটেলে করব।
অভি সমরকে ফোন দিয়ে আসতে বলে টিভি অন করল।টিভি খুলতেই একটি নিউজের ভিডিও মনকে নাড়া দিল।
-এই এই সূর্য দেখ দেখ কি জগণ্য পাষান্ড ড্রাইভার...।খবরে দেখাচ্ছে বাসের ধাক্কায়  ছিটকে পড়ে শিশুর মৃত্যু।

যাত্রী তুলতে বাসটি অনেক আগে থেকেই থামিয়ে ড্রাইভার বায়ু দূষণ হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছিলেন।ঠিক সেই মুহুর্তে এক মহিলার বুক কোলে দুধের শিশুটিকে নিয়ে বাস ড্রাইভারের
নাক বরাবর বাসটির সম্মুখ দিয়ে রাস্তা পার হতেই হঠাৎ গাড়িটি চলতে শুরু করে মহিলাটিকে ধাক্কার মতন আঘাত করে,অমনি কোল হতে শিশুটি ছিঁটকে পড়ে পাকা রোডে।রক্তাক্ত শিশুটির পুরো দেহ।কি ভয়ংকর সেই সব দৃশ্য।এ দেশ আটকে গেছে যানবাহনের চাকার পিষে।এ থেকে যে কোন উপায়ে পরিত্রান পেতে হবে নতুবা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন সোনার বাংলা তা স্বপ্নই থেকে যাবে।প্রজন্ম তাদের(মুক্তিযোদ্ধা) রেখে যাওয়া ঋণের শোধ ক্রমশতঃ অন্ধকারের দিকে ধাপিত হবে।

দেশ আটকে গেছে
যানবাহনের চাকার পিষে,
মানুষ না গরু ছাগল
মনবিকতায় টের পাবি কবে।

দেশ আটকে গেছে
যানবাহনের চাকার পিষে
ভন্ড যত মাতাল তত অর্থ ধান্দায় রাজনিতী
আদালতের রায়কেও তারা দেখাচ্ছে বৃদ্ধাঙ্গলী।

দেশ আটকে গেছে
যানবাহনের চাকার পিষে
অন্ধ আমি নেতা খেতা,বোবা আমি ওমুক কর্তা
পুলিশী তান্ডবে রক্তে লাল কেবলি কিশোর যুদ্ধা।

দেশ আটকে গেছে
যানবাহনের চাকার পিষে;
রাষ্ট্র হাসে অট্ট্রো হাসিতে।

এইতো আমার সোনার বাংলা
আমি কাঙ্গাল মরি তোমায়
ভাল বাসিতে বাসিতে।

চলবে.....

গত পর্ব এখানে

 

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ