“প্রকৃতির লীলাখেলা”

রেজওয়ানা কবির ২ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ০৬:৪৪:১৩অপরাহ্ন গল্প ১৩ মন্তব্য

পাশের বাড়ির রহিম মিয়ার ছোট আর সুখী পরিবার। রহিম মিয়া একজন সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তি এবং সরকারী চাকুরীজীবি। তার স্ত্রীও শিক্ষিত। তাদের এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার। ভালোই চলচিল তাদের জীবন । সবাই তাদের এক নামেই চেনে "ডাক্তার বাড়ি।

কিন্তু হঠাৎ ঝড়ের আহবানে তাদের সাজানো, গুছানো সংসার নষ্ট হওয়ার পথে। কারন কী?

কারন হল, রহিম মিয়ার পরকীয়া। রহিম মিয়া নিজেই প্রেম করে বিয়ে করেছে, কিন্তু কি হল সে আরেক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছিল,এর ফলে তাদের সংসারে ফাটল শুরু হচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করেও রহিম মিয়াকে আটকানো যায় নি। যত দিন যাচ্ছিল, রহিম মিয়া তত সেই সমাজের বাইরের সম্পর্কে ঝুঁকে যাচ্ছিল আর নিজের সংসার থেকে বের হচ্ছিল ধীরে ধীরে। সে এতটাই আসক্ত হয়ে গিয়েছিল যে তার ৪ বছরের সন্তানের কথাও ভুলে যাচ্ছিল। সংসারে এত নিগ্রহ আর সহ্য করতে পারছিল না রহিম মিয়ার স্ত্রী জোতি।  এভাবেই আরও কেটে গেল কয়েক বছর। কিন্তু রহিম মিয়াকে আর ফেরানো যায় নি। এক পর্যায়ে রহিম মিয়া সংসার ছেড়ে সেই মেয়েকে বিয়ে করে আলাদা সংসার সংসার খেলায় মেতে ওঠে। আর ধীরে ধীরে ভুলে যায় আগের সংসার, আগের সন্তানকে। জোতি শিক্ষিত ছিল কিন্তু চাকরি করার ইচ্ছা কখনো হয় নি। কিন্তু যখন সে সন্তান নিয়ে একা হয়ে গেল, তখন পাগলের মত চাকরি খুঁজতে লাগল। কিন্তু বাস্তব বড়ই কঠিন, চাকরি পাওয়া দুস্কর হয়ে উঠেছিল, তখন কিন্তু রহিম মিয়ার বাবা,মা, ভাই, বোন কেউই এগিয়ে আসেনি বরং জোতিকেই যা তা বলেছে, এও শুনতে হয়েছে, কেমন মেয়ে স্বামীকে ধরে রাখতে পারে না???তবুও জোতি হাল ছাড়েনি ছেলেকে বড় করে মানুষ করার দৌড়েই উঠে পরে লেগেছিল। ছেলেকেও সবচেয়ে সেরা স্কুলে পড়ানো শুরু করল,ছেলে স্কুল কলেজ খুব ভালোভাবে পাশ করলেও ছেলে বাবা মায়ের ভাংগন দেখে বড় হয়ে সে খারাপ সংগে জড়িয়ে পরছিল। তখনও জোতির পরিবারের সবাই পরিস্থিতিকে দায়ী না করে সমাধানের পথ না দেখে ছেলের পিছনে টাকা পয়সা খরচ করতে নিষেধ করে। এখন সেই ছেলে ভার্সিটিতে পড়ে,কিন্তু তবুও ছেলেটির একটাই সমস্যা মায়ের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে, বাবাকে সে খুব মিস করে, তার পাশেই তার চাচাতো ভাই বোন কে বাবার ভালোবাসা দেখে সেও তার বাবার সবকিছু মিস করে,সে না পারে বাবাকে কিছু বলতে, না পারে তার পরিস্থিতি চেঞ্জ করতে তাই তার সব রাগ, জিদ শুধু তার মায়ের উপর ঝারে। যদিও এলাকার সবাই অনেক বকে তাকে কিন্তু সে আর কারো সাথেই কিছু করে না, শুধু মায়ের কাছে মা সব আবদার পুরন করতে পারে না বলে সবকিছু ঝারে। ছেলেটির দিক থেকে চিন্তা করলে সে বড়ই হয়েছে এসব দেখে। যাইহোক এভাবেই মা ছেলের জীবন যাচ্ছিল। মা তবুও হাল ছাড়ে নি। কষ্ট করেই ছেলেকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে শুধু একা।।।

১০ বছর এর মাঝেই চলে গেছে, রহিম মিয়ার ঐ সংসারে আজ এক ছেলে যার বয়স ৩। রহিম মিয়া তার পারিবারিক জীবনে সুখী নয়, এই মেয়ের হাতেই তার শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । এই মেয়ের এত চাহিদা যে রহিম মিয়ার চাকরির সব টাকা ব্যাংক কাটে লোনের কারনে, এন জিও থেকে শুরু করে প্রত্যেক যায়গায় তার লোন, তবু সে এত কিছু দিয়েও আর ভালো থাকতে পারছে না, এক পর্যায়ে তার বাবার পাওয়া অনেক সম্পত্তি ধীরে ধীরে বিক্রি করতে থাকে, তার ভাইয়েরা একটা বারো চিন্তা করে না যে জোতি কত কষ্ট করছে, শুধুমাত্র তাদের ভাইয়ের সন্তানকে মানুষ করার জন্য। সে চাইলেই সন্তান ছেড়ে যেতে পারত?কিন্তু পারে নি, কারন সে মা।।। রহিম মিয়ার ভাইয়েরাও তার ভাইয়ের লোন পরিশোধ করার জন্য একের পর এক জমি কিনে টাকা দিচ্ছিল। এভাবে সব জমি শেষ। রহিম মিয়ার সেই মহিলার চাহিদা তবুও মেটে না। শেষ জমি বাড়ি ভিটে আর ২ এক জায়গায় কিছু আছে। সেই দু এক জায়গা বিক্রির জন্য আবার আসে তার লোন পরিশোধের জন্য তার ভাইয়ের কাছে। ভাইদের হয়ত এবার বোধদয় হয় যে তাদের ভাই এত অন্যায় করছে তাই এবার অন্তত ভাইয়ের ছেলের শেষ আশ্রয় বাড়ি এটা বাঁচাই। তাই তারা তাদের ভাই কে বোঝাতে চেষ্টা করে শেষ পর্যায়ে আসে। কিন্তু রহিম মিয়া চাহিদার অত্যাচারে,সুইসাইড করার চেষ্টা করে। সবাই পাগলের মত ছুটে যায় তাকে আপ্রাণভাবে বাঁচায়, সুস্থ করে, তাকে ভাইয়েরা সেই সংসার থেকে ফিরে আসার কথা বলে, কেস, মামলা,লোন, ভরনপোষন সব দায়িত্ব নিবে বলে আশ্বাস দেয়, শুধুমাত্র ডিভোর্স দিতে বলে, জোতি তার ছেলে রহিম মিয়া এত অবহেলার পরেও রহিম মিয়াকে সুস্থ ও বেঁচে থাকা দেখতে চায় । রহিম মিয়া একটুও ভালো নেই সেই সংসারে, তার চোখ সে কথা বলে কিন্তু ইগো প্রব্লেমের কারনে সে মুখ ফুটে কিছুই বলে না। বরং সে মিথ্যে ভালো থাকার নাটক করে,সাফাই গায়, তার এককথা সে ফিরবে না। ভাইয়েরা ও ব্যর্থ হয় বোঝাতে, সে তার সব কিছু দিয়ে ঐ মেয়ের সাথে থাকবে, এমনকি রিটায়র্ডের টাকা রিটায়র্ড করার আগেই উইল করে দেয় ঐ মেয়েকে। মেয়েটি লোভী হওয়া সত্বেও এত নির্যাতিত হয়েও এভাবেই অনিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়ায়  রহিম মিয়া।

অপরদিকে জোতি তার সন্তান নিয়ে একাই লড়াই করে শুধু সন্তানকে এসটাব্লিস্ট করার জন্য । আজ তার সন্তান ইট মাথায় তুলে মাঝে মাঝে  নিজের পকেট খরচের জন্য ।যদি ছেলেটি জন্মগতভাবে গরীব থাকত, তবে এইসব ব্যাপার ছিল না, কিন্তু সে কত বড় পরিবারে বেড়েওঠা  তার জন্য অনুভূতি কেমন সে ছাড়া কেউ জানে না😭😭😭😭

এরকম গল্প আমাদের সমাজে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে আছে, এখানে আমি কিছু মেসেজ দিতে চেয়েছি,,,,,,

 

রহিম মিয়া যখন পরকীয়ায় আসক্ত হয়েছিল তখন পরিবারের মা ভাইদের তাকে খুব ভালো করে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারত, তা হয় নি।

রহিম মিয়া চলে গেল, তার সন্তানের অন্তত মানসিক সাপোর্ট দিত,ছোটবেলা থেকে সন্তানটাকে শাসন করত তবে ছেলেটা হয়ত এত বেপরোয়া হত না

জোতিকে সবার মানসিক সহযোগীতা করা উচিত ছিল।

অনেকেরই মা থাকে না,বাবা থাকে না, বা শুধু মা থাকে, বা শুধু বাবা থাকে কিন্তু তাদের ছেলেমেয়ে ভালো থাকে।

কিন্তু একটা ভাংগন ধরা পরিবারের ছেলে মেয়েরা কখনোই সমাজে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন তাদের এই অবহেলিতভাবে থাকতে হয়। অথচ তারা কিন্তু সমাজের নামকরা এক পরিবারের। আজ কোথায় তাদের যশ,কোথায় নাম আর কোথায় খ্যাতি???

সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন ঃ

রহিম মিয়ার মত মানুষের বিবেক কিভাবে জাগ্রত করবে?

জোতি ও  তার সন্তানের কি দোষ???

প্রকৃতির চরম লীলাখেলা,,, যখন জোতির স্বামী ছেড়ে চলে যায়, তখন তার ছেলেটির বয়স যত ঠিক একইভাবে এখন সেই ঘরেও তার এখনকার সন্তানের বয়স প্রায় একই। বাবার ভুল করার ফলস্বরুপ হয়ত সেই বাবার আজ শাস্তি প্রকৃতি নিজেই তাকে দিচ্ছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জোতি আর তার ছেলে,তাদের ক্ষতি কেউ পুরন করতে পারবে না।।।।

প্রকৃতি তার ঋন কখনো নিজের কাছে রাখে না।

বিঃ দ্রঃ একটা ব্রকেন ফ্যামিলির শিশুটার মানসিক ও শারীরিক সাপোর্ট খুব জরুরী, কেননা শিশুটির সারাজীবন এই ক্ষতি বহন করতে হয়।

 

 

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ