পৌষ সংক্রান্তি উৎসব – বাতি আছে পথে পথে

এস.জেড বাবু ১৪ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:০০:৪৫পূর্বাহ্ন কবিতা ২২ মন্তব্য

এখনো আমাবর্ষা নামে,
ঘোর অন্ধকার নিশিথে, ভাঙ্গা কবরে ডাকে ক্ষুধার্ত শেয়াল,
কখনো দুই চারটে, কখনো এক ঝাঁক জোনাকি নিরবতা ভাঙ্গে আঁধারের,
এক ঝাঁক মৌমাছি বাসা বদল করে নতুন রাণীর পিছু,
ডেকে উঠে কোনা ব্যাঙ,
নাহ্ - এ যেন আর্তচিৎকার।
দু’টি জোনাকি এগিয়ে গেলে,
আহার ফেলে আড়ালে লুকায় চকচকে লিকলিকে সরিসৃপ।
মচমচ শব্দে শুকনো পাতা মাড়িয়ে, খানিক দুরে থমকে দাড়ায় নেড়ে ইঁদুর।
দু-ইঞ্চি মাটির নিচে, অন্ধকার সুরঙ্গ পথে নড়েচড়ে উঠে শীতার্ত পিপড়ের বাসা।

যে মাটিতে শিউলি ঝড়ে, সে মাটি ভিষণ ভেজা।
তবুও একপিঠ ঠান্ডা হলে, ঘন্টা শেষে টোকাই ঘুড়েই শোয়,
গেল রাতের চটের বিছানা কুকুর ভিজিয়েছে মুতে।
আজ যেন অন্ধকার আর কুয়াশার মহাসন্ধি,
দেহের তড়িৎ কম্পনের সাথে লম্বা নিদ্রা বিরতি,
দু-চোখের মেঘে’ জোড়া লাগে না পাপড়ি।
চোখ বলে,
পথের ওপাশে ল্যাম্প পোষ্টের নিচে আছে খানিক ওম !
ঠিক হলুদ আলো পড়েছে যেখানে।
এতোক্ষনে নিচের ইঁটগুলো অনেকটা গরম হয়েছে নিশ্চই।

ন’বছরের টোকাই ভাবে, আটটি পৌষ মাস কেমনে গেল !!
এতগুলি বসন্তের আগে,
মায়ের ছেড়া, ফাঁড়া আঁচলের নিচে পৌষের পরশ পায়নি মলিন দেহ।
অতঃপর আধুনিক লোডশেডিংএ নিয়ন আলোর তাপ লাগানো চোখে নামে অন্ধকার-
এতোক্ষনে নিরেট আমাবস্যার স্বাধ পায় নামিদামি শহরের গলি।
দুরত্ব জয় করে দুরের আকাশ ছোঁয় টোকাইয়ের দৃষ্টিসীমা।

মা-গো, এক কাপড়ে বিদায় নিয়ে তাঁরা হলে আকাশে,
ওখানে কি পৌষের মেঘ জমে না ?
তোমার পাশেও আজ কেউ নেই-
সব তাঁরারা লুকিয়েছে আমাবস্যার পিছনে-
একা একা শীত লাগে না তোমার ?
তুমিও আজ চলে যাও, আর সব তাঁরাদের সঙ্গে।
আমার যে আলোর বাতি আছে পথে পথে,
তোমার আঁচলের মত না হলেও,
আছে গাড়ির কালো ধোঁয়ায় গরমের পরশ।
কাল সকালের সূর্য্য দেখতেই বেঁচে আছি।
তুমিইতো বলতে,
মা ছাড়া টোকাইদের নাম হয় না,
পথের টোকাইদের পৌষ আর ভাদ্র হয় না,
টোকাইদের এভাবেই বাঁচতে হয়,
টোকাই’রা এভাবেই বাঁচে।
-০-

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ