পৌষ সংক্রান্তি উৎসব – গাছি

কামাল উদ্দিন ৯ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৮:৩০:৪৮পূর্বাহ্ন গল্প ৩৫ মন্তব্য

বটেশ্বর বাজারের পাশের অশথ্থ গাছের নিচের চা দোকানটায় সব সময় কম বেশী মানুষ থাকে। ছোট একটা টং ঘর, সামনে বাঁশ দিয়ে বানানো বেঞ্চিটা সব সময়ই নড়বড়ে থাকে। অশথ্থের কয়েকটি শেকড় আঁকিবুকি কেটে এমন ভাবে দোকানটার পাশে সেটে আছে যে, ইচ্ছে করলে ওখানেও কয়েকজন আরাম করে বসা যায়। আগে নাড়ুদা'র ( আসল নাম নারায়ন ) দোকানের চা আমরা খেতাম দুই টাকায়। তারপর জিনিস পত্রের দাম বাড়ার সাথে সাথে চায়ের দাম বেড়ে এখন পাঁচ টাকা। শুধু চা বেচে জীবন চলেনা বলে ইদানিং সন্ধ্যে বেলায় পুড়ি সিঙ্গারা, আলুর চপ, ডিম চপ ইত্যাদিও বিক্রি করে থাকেন। নাড়ুদা'র বয়স কখনো বাড়ে না, আমরা ছোট থাকতে যেমনটি দেখেছিলাম এখনো সেই একই রকম মধ্য বয়সী নাড়ুদা। টং দোকানটা পুবমুখো হওয়ায় শীতের সকালটা রোদ পোহানোর জন্য হলেও গ্রামের অনেক লোক এখানে জড়ো হয়।

ফরিদপুরের একজন গাছি ছিলো, যিনি পাশের গ্রাম রসুলপুর ও কান্দাপাড়া এলাকায় খেজুর গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করতেন। গ্রামে ঘুরে রস বিক্রি করার পর সব সময়ই কিছুটা রস থেকে যেত। তখন সেই গাছি ( ওনার নামটা জানা নাই ) বটেশ্বর বাজারের নাড়ুদা'র চায়ের টং এর সামনেই এসে বসত বাকি রসটা বিক্রি করার জন্য। তো অনেকে কম টাকায় রস খাওয়ার জন্য এই সময়টায় ওনার কাছে আসতো। কারণ বেলা যতো বাড়ে রসের মান ততোই কমে যায়।

গাছি ব্যাটা আমাকে বেশ খাতির করতো, প্রতি বছর এসেই আমার সাথে দেখা করে বলতো আপনার জন্য অমুক দিন রস নিয়ে আসবো, কতোটা লাগবে বলে দিন। আমিও পৌষ-মাঘে দুই তিন বার ওনার কাছে চাহিদা পেশ করে রস নিতাম। মাঝে মাঝে বিকেল বেলা রস খাওয়ার জন্য বন্ধু বান্ধব নিয়া ওনি যেখানে গাছ কাটে ওখানেও চলে যেতাম। রোগা পাতলা মানুষটা থাকতো কয়েকটি খেজুরের ডাল পাতা দিয়ে বানানো একটা ত্রিভুজের ভেতর, যার ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে কোন মতে শোয়া যেতো।

তিন বছর আগে গাছির সাথে যখন শেষ দেখা তখন তিনি কানে বেশ কম শুনতেন আর শরীরটাও বেশ ভাঙ্গা মনে হয়েছিলো। তাও বটেশ্বর এলাকার মানুষদেরকে সেবা দিয়ে গেছেন। কিন্তু গত দুই বছর উনার আর কোন হদিস পাচ্ছিনা। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না বলে ওনার বাড়ির কোন নাম্বারও জানা নেই আমার। আজ কুয়াশা ভেজা ভোরে একজন রস বিক্রেতাকে দেখে মনের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠল। জানিনা আমাদের সেই গাছি লোকটা এখন কোথায় কেমন আছে। সারা বছর ভুলে থাকলেও এই পৌষে ছিপ ছিপে গড়নের ঐ মানুষটা মনে পড়ছে ভীষণ। শুধু একটি বার সেই কাধে বার বয়ে চলা মানুষটা দেখতে খুব খুব ইচ্ছে করছে..........

0 Shares

৩৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ