পুরুষ

রোকসানা খন্দকার রুকু ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ০৩:৪১:৫৬অপরাহ্ন গল্প ১৩ মন্তব্য

আবেগের সময়গুলো দ্রুতই কেটে যায়। তখন অনেক ভুল ত্রুটিও চোখ এড়িয়ে যায়। কিংবা জানতেই ইচ্ছে করে না। কিন্তু বিয়ের ছমাস পর এমন প্রশ্ন একটু অবাকই করে। যদিও অতোটা গুরুতর কিছু না তবুও তখন সত্যিটা হারিয়ে গিয়ে চট করে মিথ্যা বলা হয়ে যায়। যদিও পরে মনে হয় সত্যিটা বলাই উচিত ছিলো। খোটা তো কোননা কোন একদিন শুনতেই হবে। অযথা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে যাবার আর কি প্রয়োজন?
আমার বাম বুকে লম্বা কাটা একটা দাগ রয়েছে। সাধারণত অপারেশনের পর সেলাই করলে এমন দাগ হয়। তবে সেটা একটু বড় হয় আর আমার এটা একটু লম্বাটে। জামার নিচেই থাকে তাই বিয়ের আগে বা পরে এমন প্রশ্ন না ওঠারই কথা। তবুও স্বামী আর বিবাহিত জীবন সহজ হয় না। তাই কোন না কোন একদিন সন্দেহ হয়ে মন থেকে মুখে আস্তে বাধ্য।
আমি রাশেদের দিকে পূর্নচোখে তাকিয়ে মিথ্যে উত্তরটা দিলাম- ব্রেষ্ট টিউমার হয়েছিলো। ডা: অপারেশান করার সময় দুবার কেটেছেন।
উত্তর সঠিক নয়, এটা বুঝতে রাশেদের একটুও সময় লাগলো না। সে বললো- ডাঃ কি উপরে নিচে দুজায়গাতেই কাটে। এতো নখের আঁচড়ের দাগ। আজ তোমার স্কুলের সিনিয়র হারুনের সাথে দেখা হয়েছিলো। অনেক কথা হলো।
আমার চেয়াল শক্ত হয়ে গেলো। বলতে মন চাইলো- আর কোথায় কোথায় দাগ ছিলো তা শুনেই বিয়ে করতে? এখন এতসবের মানে কি? আর হারুন যা বলেছে তার ভিত্তিতে সন্দেহ করা কি ঠিক? কিছু না বলে আমি সরে গেলাম, ছুটির দিনটা তেতো হবার ভয়ে।
আমার বয়স তখন ছয়-সাত হবে। পাশের বাড়ির ছেলেটা সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। তার বয়স পনের ষোল হবে। প্রায়ই যেখানে- সেখানে ওঁত পেতে থাকে। স্কুল থেকে ফেরার পথে কিংবা বন্ধুদের সাথে খেলতে বেরুলেই নানারকম ইশারা- ঈঙ্গিত করে। এতোসব বোঝার বয়স তখনো হয়নি তবুও কিছুটা বুঝতাম কারন সে প্রায়শই লুঙ্গি উঠিয়ে নেরে চেরে দেখাতো।
আমার বড় ভাই তার চেয়ে কিছুটা বয়সে বড়। কলেজে পড়ে। আমি ভাইকে সব বলে দিলাম। পরে সেই ছেলের কি বিচার হয়েছিলো আমার জানা হয়নি। তবে আমি আবারও সেই ছোবলে পড়েছিলাম।
একদিন সন্ধ্যায় হ্যারিকেন জ্বালিয়ে ভাইয়ের সাথে বিছানায় পড়তে বসেছি। হঠাৎ সে আমার কাছে জানতে চাইলো মিলন আমার সাথে কি কি করেছে? এই বলে সে চুমু দিলো।
আমি বললাম- না, এরকম করেনি।
এবার বুকে হাত দিয়ে টিপে দেখিয়ে বললো- এরকম কিনা।
আমি বললাম- না, এরকমও না।
এবার আমাকে উপুর করে পেছনে তার গোপনাঙ্গ ঢুকিয়ে জানতে চাইলো এমন কিনা।
এবার আমি খুব অবাক হলাম এবং বুঝতে শুরু করলাম সব কিছু। তবুও উত্তর দিলাম- না, এসবও নয়। সেতো আমার কাছেই কখোনো আসেনি। দুর থেকে ইশারা করে লুঙ্গি তুলেছে।
ব্যাথায় ভীষন কান্না পেলো। আমি বই খাতা নিয়ে নামতে যাবো। ভাই আমাকে চিত করে শুইয়ে প্যান্টে হাত দিতেই আমি বিদ্রোহী হয়ে নিজেকে বাঁচার চেষ্টা করতে লাগলাম। এসময় তার মুখ থেকে কেমন গোঙ্গানীর মতো শব্দ হতে থাকলো। হাত দিয়ে আমার বা বুকে খামচি মেরে ধরেছে।তার তীব্র নখের খামচিতে সাদা মাংস ছিঁড়ে উঠে এলো। আমি পান পন শক্তিতে তাকে এক লাথি মেরে পালিয়ে গেলাম।
এ ঘটনা কাউকে কখনো বলা হয়নি, বলাও যায়না। বাবাকে বলতে পারিনি কারন ভাই নিষেধ করেছিলো। আজ রাশেদকে বললে সে মোটেও বিশ্বাস করতো না কিংবা আমার নিজের ভাই এমন করেছে এ খোটা শুনতে শুনতে বাকি জীবন কাটতো।
রাতের খাবার টেবিল আজ হাসিশূন্য অবস্থায় শেষ হলো। রাশেদ হয়তো আরও জানতে পেরেছে। হয়তো আমার পুরনো কোন কিছু তাই মুখ গোমরা করে আছে। যেহেতু হারুনের সাথে দেখা হয়েছে। মনে মনে ভাবতেও পারে কপাল খারাপ না হলেতো একটা ভার্জিন মেয়েই পেতাম। এসবে আমার কতটুকু দোষ ছিলো তা জানতে চাওয়া বা বিশ্বাস করা পরের কথা।
ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে প্রায় মাস তিনেক রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা, সময় যেন কাটতেই চায় না। এসময় রাস্তায় বের হবার জো নেই। বিকেলটা এলাকার ছেলেদের দখলে। আমার থেকে বছর ছয়েকের বড় হারুন আমার স্কুলেই পড়েছে। লাল একটা সাইকেলে স্কুলে যেতো। আমিও সাইকেল চালাতে জানি কিন্তু বাডি থেকে অনুমতি নেই তাই হেঁটেই যাই। মাঝে মাঝে হারুন ভাই আমাকে তার সাইকেলে চড়িয়ে স্কুলে নামিয়ে দিতো।
নবম শ্রেণীতে ওঠার পর সে আমাকে চিঠি লিখলো একগাদা প্রেমের সংলাপ দিয়ে। এলাকায় আমরাই সবথেকে সম্ভ্রান্ত পরিবার। বাবা ছোটবেলা থেকে নানা স্বপ্নে আমায় বড় করেছে। তাই আমি এমন ছেলেকে বিয়ে করার চিন্তা কখনোই করিনি। ভালো পড়াশুনা করবো, বিসিএস করবো তারপর অন্যসব। অনেকগুলো চিঠি লেখার পর আমি কোন প্রতিউত্তর না দেওয়ায় হারুন ক্ষেপে গিয়ে একদিন আমার পথরোধ করলো।
মফস্বলের নির্জন চিকন রাস্তা। আমি একা কিন্তু তারা তিনজন। বরাবর আমি সাহসী, কৌশলে নিজেকে বাঁচাতে পারলেও এক প্রতিবেশী সে ঘটনা দেখে ফেলেছিলো। ঘটনাটি যেহেতু পাশের কবরস্থানে তাই পরদিন রটেই গেলে আমি গ্যাংরেপট হয়েছি। প্রতিবেশীরা পরদিন আমায় দেখতে আস্তে লাগলো। আমি তখন দিব্যি সাইকেল চালিয়ে বেড়াচ্ছি। এরপর বাবা আমায় শহরে রেখে পড়িয়েছেন।
সেই হারুনের কথা যদি রাশেদ বিশ্বাস করে তাহলে আমার করার কিছু নেই। আর আমি কেনোই বা তাকে প্রমান দিতে যাবো বিয়ের সময় আমি ভার্জিন ছিলাম। কিংবা সেই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ। আর পূর্বে যদি কোন ঘটনা থেকেও থাকে তা তো অনাকাঙ্খিত। আমার কোন হাত ছিলো না তাতে। আমাকে নিয়ে এতো এতো ভালোবাসার ডায়ালোগ দেয়া রাশেদ হঠাৎ অন্য রাশেদে পরিনত হলো এটা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগলো না। সমাজে নারী প্রতিষ্ঠা বলে কিছু নেই। আজ আমি প্রথম শ্রেণীর একজন মানুষও নই। আমি একজন শরীর সর্বস্ব নারী মাত্র।
জীবনে বেঁচে থাকা জরুরী, সম্মান জরুরী, নিজস্বতা জরুরী। এরপর একজন বিশ্বাসী বন্ধু জরুরী। যে আমার বর্তমানকে গ্রহন করে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে। একসাথে পথচলা তাকেই বলে।
অথচ আজ আমরা পাশাপাশি দুজন শুয়ে কোন কথা নেই। কেন যেন আমারও ইচ্ছে নেই কথা বলার। সম্পর্ক যদি বিশ্বাসের না হয় তাহলে কেনই বা শারিরীক হবার নাটক করা আর একসাথে বসবাস করা।
আমি সব আবেগী চিন্তা ফেলে ঘুমোনোর জন্য তৈরি হলাম। কাল অফিস আছে, সকালে উঠতে হবে। যে কোন সময় রাশেদ তাড়িয়ে দিলেও আমার ক্যারিয়ারই আমার ভবিষ্যত! সে আমাকে সম্মান দেবে, তাড়িয়ে দেবেনা!!!

ছবি- নেটের

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ