বছর চারেক আগের কথা।মৌচাক থেকে শান্তিনগরমুখী ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি।হাঁটছি মানে মানুষের স্রোতে ভেসে যাচ্ছি।যেহেতু হকারগণ জায়গাগুলো দখল করে রাখে পণ্য নিয়ে বসে।সেহেতু কিছুটা ভীড় থাকে এইটুকুন জায়গাতে।তো মৌচাকমুখী লাইনও যাচ্ছে মৌচাকের দিকে। হঠাৎ'ই এক মাঝ বয়সী আপু খপ করে একটা হাত ধরে ফেললো।এই লোক আপুর গায়ে হাত দিয়েছে ,এমন অভিযোগ করতেই লোকটা ঘেউঘেউ করে উঠলো,সে হাত দেয় নি। উল্টো আপুটাকেই শুনাচ্ছে বাজে কথা। লোকজন থেমে গেছে। কেউ আপুর পক্ষে ,কেউ ওই লোকের পক্ষে কথা বলছে।আপুর মুখ অন্ধকার।বিপক্ষের লোকজনের উৎকট কথার গন্ধে।সেই ধর্ষণ উপসর্গওয়ালা লোক চোরের মতো পালিয়ে গেলো ।আপুটাও চলে গেলো গন্তব্যের দিকে।সেদিন আপুটা কিছু না বলে কষে একটা থাপ্পড় দিলে অসভ্যটাকে উপযুক্ত জবাবটা পেয়ে যেতো।এই দেশে অভিযোগে কিছু হয় না তেমন। সময়ের অপচয় ছাড়া।
এই বদমাশ যে কোন মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করবে না তা'ই ভাবি কি করে?ভীড়ের মাঝে যে খুঁজে নারীর শরীর!
.
এবার আসি পার্বতীপুরের পূজার কথায়। পূজাকে ধর্ষণের আগে তাঁর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কাটে সাইফুল আর আফজাল কবিরাজ !কতো বড় জানোয়ার আর বিকৃত মানসিকতার হলে এমন চিন্তা মাথায় আসে ভাবুন একবার। মধ্য বয়সী সাইফুলের (কবিরাজকে যেহেতু এরেষ্ট করা যায় নি এখনও) পুরুষাঙ্গটি কেন কেটে নিয়ে জাতির সামনে ঝুলিয়ে রাখা হবে না তা ভেবে পাচ্ছি না।
ধর্ষকদের শাস্তিগুলো যদি যথাযথভাবে হতো তবে দেশ জুড়ে মেয়েদের এতো অনিরাপত্তায় ভুগতে হতো না।
সাইফুলদের সাহসও বাড়তো না এমনভাবে।
সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে ধর্ষকরা দিনের পর দিন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় । কাউকে ধরা হলেও অর্থ এবং প্রভাব দেখিয়ে বেরিয়ে তো যায়'ই উপরন্তু ভিকটিমের জীবনকে করে তুলে আস্ত এক নরক। তো , ধর্ষকদের সাহস কেন বাড়বে না?
.
পাঁচ বছরের একটা মেয়ের ভেতর নারীসুলভ কোন শারীরিক-মানসিক বিকাশই ঘটে না।দেহের ভেতর এমন কোন পরিবর্তনই হয় না যা তাঁকে ভাবনায় ফেলতে পারে। পিরিয়ডের আগ পর্যন্ত একটি মেয়ে শিশুই। পিরিয়ড শুরু হলেই অধিকাংশ মেয়ে কৌতুহলী হয় নিজেকে নিয়ে। এর আগে অপার বিস্ময়ে সে ফুল-পাখি-প্রজাপতি দেখে , পুতুল খেলে , খেলার সঙ্গীদের নিয়ে হইচই করে বেড়ায়।
পূজার এখন হইচই করার বয়স।এই বয়সেই
সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে! ভাবা যায় ?
আমরা কবে সভ্য হবো ?কবে মানুষ হবো ?
.
কোন মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলেই যেসব ইতরেরা পোশাকের দোহায় দেয় , সেই সাথে চলাফেরার ।এদের পাছার ছাল তুলে নেয়া দরকার সন্ধি বেত দিয়ে পিটিয়ে।অসভ্যগুলো কখনোই স্বীকার যায় না ,রুগ্ন মানসিকতার পুরুষই ধর্ষণ উপসর্গগুলো লালন করে অন্তরে।
এদের কাছে পাঁচ বছরের শিশু যা ,পঁচিশ বছরের তরুণীও তা।প্যান্ট-শার্ট পরা নারী যা , হিজাব পরা নারীও তা। ধর্ষকরা যৌনাঙ্গ খুঁজে,কে কি পোশাক পরলো ,বয়স কতো এগুলো নিয়ে এরা ভাবে না।এর উদাহরণ অহরহই আছে সামনে।
.
নারীর যৌনাঙ্গ আছে, নারীর স্তন আছে এগুলো ভাবার আগে যেন এ'ও ভাবি , ভালোবাসার জন্য নারীদের একটা কোমল হৃদয়ও আছে।
আমাদের মানসিকতার বদল হোক।
আমরা যেন মানুষ হয়ে উঠি।বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠার চে' আনন্দের আর কিছুই নেই।দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটলে নারীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ , চলাফেরা , স্বনির্ভরতা কিছুই দৃষ্টিকটু লাগবে না।
পুরুষেরা নারীদের কাছে হয়ে উঠুক সাহস ও নির্ভরতার জায়গা , ভয়ের না।পুরুষেরাও নারীদের মাঝে পাক শান্তির সুশীতল ছায়া। কোন নারী কোন পুরুষকে ভয় পায় , এর থেকে ভয়াবহ কথা হয় না।ভয়ার্ত নারীটি সেই পুরুষের কাজ-কর্মে যখন অনিরাপত্তার চিত্র দেখে ভয়টা তখনই দানা বাধে মনে।এই চিত্র পুরুষের জন্যই লজ্জার।
পুরুষেরা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করুক যেখানে নারীরা ভুগবে না অস্বস্তিতে , অনিরাপত্তায়।
.
ধর্ষকদের জন্য আমাদের মনে ঘৃণা থাকুক।ভালোবাসা না।আমি এমন পাপীকে ঘৃণাই জানাতে চাই।তার পাপকেও।' পাপকে ঘৃণা করো , পাপীকে নয়'এই বাণী সব পাপীর প্রযোজ্য জন্য হতে পারে না!

নারী-পুরুষ একে অপরের কাছে মানুষ হয়ে থাকুক।মানুষে -মানুষেই রচিত হয় পৃথিবীর সুন্দরতম পথটির।সুন্দরের পথ ধরেই
ধর্ষণ মহামারী থেকে মুক্ত হোক আমাদের সমাজ....

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ