রাজ্য গুলোর অবস্থান: 

পুন্ড্র: বাংলাদেশ এর রাজশাহী বিভাগ, রংপুর, ঢাকা, দিনাজপুর, পূর্ব বিহারের কিছু অংশ, পশ্চম দিনাজপুর আর ওয়েস্ট বেঙ্গল এর নদীয়া, বীরভূম, বর্ধমান, মেদিনীপুর নিয়ে পুন্ড্রবর্ধন এর অবস্থান। বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় ছিল রাজধানী। 

কলিঙ্গ: কলিঙ্গর অবস্থান উড়িষ্যার পূর্বাংশে। তারা ছিল একটি সাহসী ও শক্তিশালী জনগোষ্ঠী।

অঙ্গ: মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বর্তমানে বিহারে ছিল তাদের অবস্থান। ভাগলপুর জেলার চন্দ্রাপুরি ছিল রাজধানী। 

বঙ্গ: গঙ্গার ডেল্টায় ছিল এর অবস্থান। বর্তমানে এর অবস্থান পশ্চিম বাংলার দক্ষিন আর বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে। নৃবিজ্ঞানীরা মনে করেন বর্তমানের কোটালিপাড়া বঙের রাজধানী ছিল। বঙের বীজয় সেনই শ্রীলংকা জয় করে সেখানে কলোনি স্থাপন করেন।

শুমাঃ পূর্ব ভারতে।

ফটো ক্রেডীটঃ উইকিপেডিয়া 

পুন্ড্র বর্ধন

আমরা জানি পুন্ড্রবর্ধনে মর্জ, গুপ্ত, পাল, সেন এর শাসনের অধীনে ছিল। আমার আগ্রহ প্রাক আর্যদের নিয়ে। ঠিক কতদিন আগে তারা এখানে ছিল তা দিনক্ষণ জানা না গেলেও তারা ছিল লৌহ যুগের। ১৮০৮ সালে নৃবিজ্ঞানী সি যে ডানেল প্রথমে দেখে এসে ছিলেন এই পুন্ড্রনগর এর ধংসাবশেষ আর ১৮৮৯ সালে নৃবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার কুনিঙ্ঘাম প্রথমে চিন্হিত করলেন মহাভারতে উল্লেখিত পুন্ড্রবর্ধন ই সেই পুন্ড্র এলাকা। মহাভারত আর অশকনামাতেও উল্লেখ করা হয়েছে “পুন্ড্রদের দ্বারা শাসিত এই পুন্ড্রবর্ধন”। 

ইতিহাসবিদ এবং নৃবিজ্ঞানী রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়, ১৮০৮ সালে ফ্রান্সিস বুকানন হামিলটন, ই, ভি, ওয়েস্ট ম্যাকেট এবং হেনরি বেভারিজ এখানে আসেন এবং তাঁরা ঐ একই প্রতিবেদণ দিয়ে যান। 

আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া থেকে কে, এন দীক্ষিত এর তত্ত্বাবধানে ১৯২৮-২৯ সালে খনন কাজ চালানো হয় ।

১৯৮৮- ১৯৯১ পর্যন্ত প্রতি বছর খনন কাজ চালনা করা হয়। কিন্তু দেখা যায় এর বিস্তৃতি অনেক গভীরে। বাংলাদেশ আর ফ্রান্স এর মধ্যে একটা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৯২ সালে, যৌথ উদ্যোগে পূর্বদিকের প্রতিরক্ষা প্রাচীরের মধ্যভাগে প্রতিবছর খনন কাজ চলে মূল মাটি পর্যন্ত। খনন কাজ দ্বারা ১৮ টি নির্মান স্তর উন্মোচন হয়। 

প্রাক আর্য স্তর হিসেবে সব শেষের যে স্তর উঠে আসে সেখানে উত্তর ভারতের কাল মসৃণ পাত্র, রুলেটেড পাত্র, লাল রঙ্গের পাত্র, প্রলেপযুক্ত পাত্র, পাথরের যাঁতা, মাটির রান্না ঘর, ইট বিছানো মেঝে পাওয়া যায়। এই স্তরের তেজস্ক্রিয় কার্বন তারিখ খ্রীস্টপূর্ব চার শতকের শেষ ভাগের প্রাক মর্জ যুগের। 

যে সমস্ত ঢিবি মহাস্থানগড়ের ভিতরে খনন করা হয়েছে সে গুলো ছাড়াও এখনো ৩৩ টির মত ঢিবি বাকি আছে। এর সন্নিহিত গ্রামগুলোতে আরও অনেক ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে, যেখানে প্রাচীন পুন্ড্রনগরের প্রাচীন ইতিহাস এখনো লুকিয়ে আছে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জয় সিংহ রায়ের মতে প্রাক মর্জ যুগের প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে থেকে মানব জাতির চিহ্ন এখানে পাওয়া যায়। 

পুন্ড্র একটা অনার্য জাত, যারা কিনা আর্যদের কে অনেক বাধা দিয়েছিল ভারতের পূর্ব দিকে আসার পথে। কলিঙ্গ এর যুদ্ধ হয়েছিল এই আর্য / অনার্য দের মধ্যে। আর্যরা বিহার পর্যন্ত আসার পর অনেক বাধাগ্রস্ত হয়েছিল অনার্যদের দ্বারা। আর্যরা বারে বারে অনার্য দ্বারা বাধা হওয়ার জন্য অনার্য দের ‘দস্যু’, ‘নোংরা’ বলে সম্বোধন করতো। 

সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল প্রায় ৫০০০ বছর আগে। সিন্ধু আর সরস্বতী নদীর তীরে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সরস্বতী নদী বর্তমানে নাই। 

কিছু কিছু পন্ডিতের মতে, 

পুন্ড্ররা সিন্ধু সভ্যতা শেষ হয়ে গেলে বা তার সমসাময়িক সময়ে তারা ভারতের পূর্ব দিকে এই সমতল ভূমিতে সরে আসে। 

কার্তিক চন্দ্র বর্মন এর লেখা গবেষণা “The Pundras and Their Real Home-Lands in Ancient Times” থেকে জানতে পারি “We know the history near about five thousand years ago Indus Valley civilization developed as an ancient Indian Sub continent. In the contemporary period Pundradesh was another powerful state which roused in the Eastern India. This civilization existed as contemporary to Egypt and Babylonian”। 

অর্থাৎ ‘পাক ভারত উপমহাদেশে পাঁচ হাজার বছর আগে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠে ঠিক সেই সমসাময়িক সময়ে ভারত বর্ষের পুন্ড্রদেশ নামে আর একটা শক্তিশালী রাজ্য গড়ে উঠে। এই সভ্যতা গুলো মিশরীয় আর বাবলনিও সভ্যতার প্রায় সমসাময়িক’। 

ফটো ক্রেডিটঃ উইকিপেডিয়া 

বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় মহাস্থানগড়ের (পুন্ড্র নগর) ধ্বংসাবশেষ

তথ্য সূত্রঃ গ্রন্থ সূত্রঃ 

The Pundra And Their Real Home Lands in Ancient Times, কার্তিক চন্দ্র বর্মন। 

বাঙলার ইতিহাস, রাখাল দাস বন্দোপাধ্যায়।

বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস: রাজশাহী বিভাগ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য, বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি। 

বাঙালির ইতিহাস, আদিপর্ব: নিহাররন্জন রায়।

Ancient Janapadas Of Bangladesh, Md. Harun Ur Rashid.

History And Culture of Bengal, Sur.A.K.

The Dynastic History Of Northern India, Roy.H.C. 

ক্রমশ ----দ্বিতীয় খণ্ড

* প্রথম পর্ব

লেখক এবং গবেষকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস, লন্ডন

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ