Killer morning habit: Drink 16oz of water, right after you wake up | A Life  of Productivity

বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। আমাদের দেশে কেউ পকেটের পয়সা দিয়ে পানি কিনে খাবে এটি কল্পনারও বাইরে ছিল। কিন্তু এখন মানুষ পানি কিনে খাচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর জন্য। সুন্দর আর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য।  আসলেই আমরা জানিনা আমাদের পানীয়টি কতটুকু সুপেয় এবং শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকুই বা নিরাপদ। কেননা বিভিন্ন ভেজালবিরোধী অভিযানে পানীয় জলের মধ্যেও ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে অহরহ যা মানুষকে আতঙ্কিত ও শঙ্কিত করে তুলছে।  প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ছাড়াও বিভিন্ন নামের ও ব্র্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানির অনেক ধরণের পানির বোতলে বাজার এখন সয়লাব। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বড় বড় জারের পানি কোন রকম পরিশোধন বা বিশুদ্ধকরন না করেই বিক্রি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পানি জীবনের একটি মৌলিক চাহিদা এবং অপরিহার্য অনুষঙ্গ। খাওয়, ব্যবহার, শস্য উৎপাদন, শিল্প কারখানায় পণ্য উৎপাদন, নির্মাণ কাজ, অগ্নিনির্বাপণ সহ আমাদের জীবনে কোথায় নেই পানির ব্যবহার। আমাদের দেশের পানির উৎস দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শহর, উপ শহর ও গ্রামের নদ নদী, খাল বিল, ডোবা, জলাশয়, পুকুর, দীঘি দখল ভরাট, দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।  দেশের সবচেয়ে করুণ চিত্র হচ্ছে নদ-নদী ও খাল-উপখাল দখল, ভরাট, রাসায়নিক বর্জ্য, শিল্প বর্জ্য, মানব বর্জ্য, বাজারের বর্জ্য, জীব্জন্তুর বর্জ্য, গৃহস্থালির ব্যবহার্য বর্জ্য, কৃষি বর্জ্য সরাসরি পানিতে ফেলে নদীর পানিকে দূষিত করা।  মানুষের অতি লোভী, আগ্রাসী, দখলদারী মনোভাবের কারণে নদীর বালু উত্তোলনের, নদী ভরাটের, দখলের, স্থাপনা নির্মাণের অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে। এসব দুর্বৃত্তরা কোন নিয়মনীতিকে তোয়াক্কাই করছে না।  মূলত নদীর তীর বা নদীর তীর অনতিদূরবর্তী শিল্প কারখানাগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য ইটিপির মাধ্যমে পরিশোধন না করে খাল, উপ খালের মাধ্যমে বা সরাসরি নদীর পানিতে গিয়ে মিশছে। পাশাপাশি কৃষকদের অতিমাত্রায় ব্যবহৃত সার ও কীট নাশক সেচের পানির সংগে মিশ্রিত হয়েও নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। গেল বছরের আগাম বৃষ্টি ও বন্যায় চট্টগ্রামের হালদা নদীর পানিতে প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর অ্যামোনিয়ার পরিমাণ মানমাত্রার চেয়ে বেশী হওয়ায় রুই কাতাল মৃগেল জাতীয়সহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় অনেক মাছ মারা যায়। এক তথ্য থেকে জানা যায়, বিভিন্ন রাসায়নিক অপরিশোধিত বর্জ্যের কারণে বিভিন্ন নদীর পানিতে ক্রোমিয়াম, আয়রন ও জিংকের মতো ভারী ধাতু নদীর পানিতে পাওয়া যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এতে নদীর পানি স্বচ্ছতা হারাচ্ছে, ঘোলাটে আকার ধারণ করছে, পানির ঘনত্ব বেড়ে চলেছে, পলি জমছে, নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। পাশাপাশি দূষিত পানির কারণে ভারসাম্য হারাচ্ছে জলজ জীববৈচিত্র। এর কুপ্রভাব পড়ছে দেশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর।  

এক তথ্য থেকে জানা যায়, দেশের ২৯ টি নদীর পানি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীও।  ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, নভেম্বর থেকে এপ্রিল এই শুষ্ক মৌসুমে পানির দূষণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছায়। মৎস্য অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ দেশের মাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৯টি নদী নিয়ে আরেকটি সমীক্ষায় করেছে। তাতে দেখা গেছে, মাছের এসব উৎস মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। এসব নদীর পানিতে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর মাত্রার ভারী ধাতু পাওয়া গেছে’ {সূত্রঃ প্র/ আলো, ২২ মার্চ’১৯}। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশে প্রকাশিত গত ২২ মার্চ’১৯ এক প্রতিবেদনে “গভীর নলকূপের পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানানো হয়”। গভীর নলকূপের পানি কতটুকু বিশুদ্ধ সেই হিসেব কারো কাছেই নেই বরং মানুষ তা নিরাপদ ভেবে অবাধে পান করছে। তাছাড়া ওয়াসা জানায়, হালি শহরের পানিতে লবণ ও আয়রনের মাত্রা অতিরিক্ত হওয়ায় এ পর্যন্ত সেখানে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। আরেক তথ্য থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের পানির উৎসের একটি হচ্ছে গভীর ও অগভীর নলকূপ আরেকটি হচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে লাইনের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়া ওয়াসার ব্যবহৃত গভীর নলকূপের পানি কালুরঘাটের আয়রন রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট থেকে পরিশোধন করা হয় বলে জানা যায়। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ পানি নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ গভীর নলকূপের অনিরাপদ পানি পান করছে।  শহরে কি পরিমাণ গভীর নলকূপ রয়েছে সে ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ‘আমাদের অনুমোদিত রয়েছে প্রায় ৩ হাজার, কিন্তু আমাদের অনুমোদনের বাইরে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার’ {সূত্রঃ সুপ্রভাত, ২২ মার্চ’১৯}।  ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ পানির জন্য জনসাধারণকে গভীর নলকূপের পানি পান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার এম ডি।

অত্যন্ত দুঃখ এবং বেদনাদায়ক ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র  প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীও অবৈধ দখল, দূষণ, বালু উত্তোলন, মাছ শিকার সহ নাব্যতা হারিয়ে দিন দিন মরা নদীতে পর্যবসিত হচ্ছে। আরও একটি শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ‘কক্সবাজারের মাতামুহুরী, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সহ দেশের ১২ টি নদী থেকে ইলিশের আবাসস্থল হারিয়ে গেছে’{ সুত্রঃ আজাদী, ২২ মার্চ’১৯}।  জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষে এক সেমিনারে একথা জানান বক্তারা। কারণ হিসেবে বলা হয় বাঁধ নির্মাণের ফলে পানিপ্রবাহ হ্রাস পাওয়া, পলি জমে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলজ পরিবেশ দূষণ এর জন্য দায়ী। অন্যদিকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি পানি দিবসের বিবৃতিতে বলেন, ‘পানি ব্যবস্থাপনার ওপর খাদ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভরশীল। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন, সেচ কাজে পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের কোন বিকল্প নেই’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীববৈচিত্র টিকিয়ে রাখতে, কৃষি, শিল্পসহ সবক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, জীবন ও পরিবেশের মৌলিক উপাদান পানি’। 

দেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের নিরাপদ পানি পান, কৃষি, শিল্প, কল কারখানা, দেশের উন্নয়নমূলক ও নির্মাণ কর্মকাণ্ড সহ মানুষের নিত্য ব্যবহারের জন্যে পানির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের আবাসন, শিল্প কল কারখানা স্থাপন সহ বিভিন্ন কারণে সারা দেশের নদী খাল, বিল, পুকুর, দীঘি, জলাশয়, ডোবা, বিল দখল হয়ে এসব বিলুপ্তির পাশাপশি পানির উৎস আশঙ্কাজনকভাবে সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। নদী, নদী তীর দখল দূষণ, ভরাট হয়ে পানির প্রবাহও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে পানির উৎসগুলো রক্ষা ও সংরক্ষণ করার পাশাপাশি দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষা, প্রজনন বৃদ্ধি করার জন্য ডোবা, জলাশয়, পুকুর, দীঘি ভরাট বন্ধ করা বিশেষভাবে জরুরী। তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। নদী দখল দূষণ ভরাট বন্ধের জন্য নদী ও নদীর তীর দখলকারীদেরকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী যদিও কৌশলগত কারণে আপাতত ২য় ধাপের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে এবং ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদের মতো বিনা বাঁধায়, নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে দেশের সকল নদ নদীর উচ্ছেদ কার্যক্রম অতি শীঘ্রই শুরু করা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অতীব জরুরী হয়ে উঠছে। যেহেতু মাননীয় হাইকোর্ট ডিভিশন নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করেছে সেহেতু সরকারের আইনগতভাবে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করতে কোন বাঁধা নেই।  তাছাড়া সরকারী কাজে বাঁধা দেয়ার দুঃসাহসিকতা কারোই নেই বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। শুধু দরকার সরকারের আইনের প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা।  যা ইতোমধ্যেই দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পাশাপাশি হালদা নদীকে মা মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অচিরেই অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রমের নির্দেশ দেয়া উচিৎ। দেশের মাছের চাহিদা পূরণ করে যেন মাছ রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় সে জন্য নদীর অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং নদীর পানি দূষণের জন্য দায়ী সকল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। পাশাপাশি শিল্প কল কারখানা থেকে যদি ইটিপির মাধ্যমে পরিশোধিত না করে দূষিত পানি নদীতে ফেলে তাহলে সেসব শিল্প কল কারখানা আইন করে বন্ধ করে দিতে হবে দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে।  নদী রক্ষা কমিশন, জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনকে নদীর জীবন্ত সত্ত্বা যেন দূষিত, বিঘ্নিত, বাঁধাগ্রস্থ না হয় সে ব্যাপারে কঠোর ও কঠিন অবস্থানের পাশাপাশি সজাগ, সতর্ক, সচেতন ও নজরদারীতে থাকতে হবে। আমরা নিরাপদ খাবার পানি চাই। চাই মাছ, জীবজন্তু নদী খাল বিল থেকে নিরাপদ পানি পান করতে পারে সে ব্যবস্থা করা।  দেশের বিভিন্ন খাতে পানির চাহিদা, প্রাপ্যতা ও যোগান নিশ্চিত করা।  অগ্নিনির্বাপণের জন্য চাহিদা মতো পানি যোগানের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে।  দেশের পানিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তা রক্ষা, সংরক্ষণ, দূষণরোধ করা, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার নির্মাণের পাশাপাশি দেশের মৎস্য সম্পদকে রক্ষার জন্য সদাশয় সরকার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহ বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা জরুরী ভিত্তিতে গ্রহণ করবেন বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা।  নদীমাতৃক বাংলাদেশ থেকে নদী হারিয়ে যাবে বা ভরাট হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তা যে আমাদের  কল্পনারও অতীত।  
0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ