যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্বরত ভারতের নারী কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়কে নিউইয়র্কে অপমানের প্রতিবাদে সব মতপার্থক্য ভুলে ভারতের সরকারী দল বিরোধী দল নির্বিশেষ
সকলস্তরের মানুষ প্রতিবাদে আজ পথে নেমে এসেছে। শুধু প্রতিবাদ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। ভারতে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে নিরাপত্তা বেষ্টনী সরিয়ে নয়াদিল্লীতে মার্কিন কূটনীতিকদের সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করে দিয়েছে ভারত সরকার। স্থগিত করা হয়েছে মার্কিন দূতাবাসের আমদানি ছাড়পত্র। খবর, পিটিআই, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএফপি ।
যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের কর্মরতদের জন্য শুল্কমুক্ত মদ ও অন্য খাবার আমদানি বন্ধ করেছে ভারত। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটে নিযুক্ত ভারতীয়দের কাজের পরিবেশ যাচাই করে শ্রম আইন লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ। ভিসা আবেদনে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে গত সপ্তাহে ৩৯ বছর বয়সী এই কূটনীতিককে আটক করা হয়েছিল। এর পর বিবস্ত্র করে তাঁর দেহ তল্লাশি করার পর মাদক মামলায় আসামি এবং যৌনকর্মীদের সঙ্গে এক কারাকক্ষে আটক রাখা হয়। এ ঘটনা জানাজানির পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় নয়াদিল্লী।

কিন্তু বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর ফাঁসির প্রতিবাদে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত ‘নিন্দা প্রস্তাব’র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চললেও বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপির পাকিস্তানপ্রেমি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। দেশব্যাপী পাকিস্তানের এই ধৃষ্টকাপূর্ণ আচরণের সারাদেশ প্রতিবাদে উত্তল হলেও এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের পার্লামেন্টের এই নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ জানায়নি বিএনপিসহ এর নেতৃত্বধীন ১৮ দল এবং সুশীল নামধারী বাংলাদেশের বিখ্যাত নাগরিকরাও! প্রতিবাদ জানাননি শান্তিতে নভেল নভেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস সাহেবও। বরং তারা এখন ষড়যন্ত্র হেচিং এ ব্যস্স্ত কি করে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায়।
এ নিয়ে সয়ং প্রশ্ন তুলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি গতকাল শনিবার ২২ ডিসেম্বর এক আলোচনা অনুণুষ্ঠাকে বিএনপি নেত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন,“ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়া এতদিন মুখোশ পরে থাকলেও পাকিস্তানের অবস্থান প্রশ্নে নীরব থাকার কারণে তাঁর আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। মানুষ বুঝতে পারছে বিএনপি কিসের জন্য রাজনীতি করে? পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলতে উনার (খালেদা জিয়া) লজ্জা হয়! পাকিস্তানের জন্যই ওনার এত দরদ, এত কষ্ট। তাহলে আর বাংলাদেশে থাকার দরকার কী? পাকিস্তানে চলে গেলেই তো পারেন। এখানে থেকে জনগণকে কষ্ট দিয়ে লাভ কী? তিনি আরও বলেন ‘কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে পাকিস্তান পার্লামেন্টে নেয়া নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে তাঁর মুখ দিয়ে ‘টু’ শব্দ বের হলো না। অথচ পাকিস্তানের একজন সাবেক রিটায়ার্ড (অবসরপ্রাপ্ত) সেনা কর্মকর্তা জানজুয়া মারা গেলে আপনি শোকবার্তা পাঠান। এর রহস্যটা কী? এটা আমি জানি না, জানতে চাই “ পাকিস্তানের যেসব দল নিন্দা প্রস্তাবে সমর্থন করেনি তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কাদের মোল্লার পক্ষে বিবৃতি দেয়ায় নিয়াজির ভাতিজা সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান নিয়াজিরও কঠোর সমালোচনা করেন।

বিএনপি নেত্রী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন কথাতো বলেনইনি বরং রবিবার বিকেল চারটার বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ড. মঈন খান ও শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে আরও দুই নেতা পাকিস্তান হাইকমিশনারের বাসায় বৈঠক করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা। পাকিস্তান হাইকমিশনারের সঙ্গে এই গোপন বৈঠক তা হলে কিসের আলামত। তাছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে বাংলাদেশে বর্তমানে যে সন্ত্রাস চলছে এর পেছনে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই হাজার হাজার কোটি অর্থ ব্যয় করছে। এই অর্থ সংগ্রহের জন্যই কি বিএনপি নেতারা পাকিস্তানী দূতাবাসে গিয়েছিলেন?

বিএনপি বা তথাকথিত ১৮ দলীয় জোট পাকিস্তানের এ ঔদ্ধাত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ না করলেও মুক্তিযোদ্ধা বি এন পি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন যা একটি ফেইসবুক স্টেটাসের কল্যাণে জানতে পারলাম। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন,“কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পাকিস্তান যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে এ জন্য একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেছেন. ‘একাত্তর সালে এদেশের জনগণ পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। একটি স্বাধীন দেশ সম্পর্কে পাকিস্তানের বক্তব্য কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।’ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়, দলমত নির্বিশেষে এদেশের আপামর জনগণের মতো আমিও এ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।” আব্দুল্লাহ আল নোমান এর এমন সাহসী অবস্থানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। বিএনপির নেত্রীর এ নির্লিপ্ততায় বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ ই বাড়ছে। তা ছাড়া বিএনপির নেত্রীর এধরণের পাকিস্তান প্রীতিতে দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষের প্রশ্ন বেগম জিয়া আসলেই বাংলাদেশ কে ভালোবসেন ? না শুধু ক্ষমতা কে ?

দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী কামাল লোহানী ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত তাঁর এক নিবন্ধে বলেছেন,“পাকিস্তানীদের বুকে যে ব্যথা লেগেছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হয়েছে এরা সবাই- এই জামায়াত-শিবির এবং এদের সমর্থক বা সঙ্গী যারা তারাও আইএসআইর পেটোয়া দালাল। বাংলাদেশে বাস করছে আত্মপরিচয় গোপন করে। ...এই বিএনপির দলপ্রধান ও তদীয়পুত্র বহুদিন আগেই বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক কোন ধরনের বিরোধ নেই। তাই যদি হয় এবং জামায়াতকে যদি ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্ত্রাসী দল বলে মন্তব্য করা হয়ে থাকে, তাহলে বিএনপি নেত্রীর ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সংগঠনকে কী বলা হবে? আর যদি লজিক্যাল কনক্লুশন এমন করি যে, এরাও অপরাধী, তাহলে তো এদেরও অবৈধ করা উচিত নির্বাচন কমিশনে।
এদিকে, বিএনপি কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি। বোধহয় বেদনাটা বুকে চেপে রেখেছে। আবার পাকিস্তানীরা যে ন্যক্কারজনক মন্তব্য এবং ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়ায়, সে সম্পর্কেও কোন মন্তব্য করার সাহস দেখাতে পারেনি। এ সব নীরবতা কিংবা স্বদেশের বিরুদ্ধে ভিনদেশীয় ঘৃণ্য আচরণে বিএনপির কি কিছুই আসে যায় না? সংবাদ সম্মেলন করে কিংবা নানা আলোচনাসভায় বক্তৃতার মাধ্যমে কত কথা বলছেন নির্বাচন প্রসঙ্গে কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসি বা পাকিস্তানী ঔদ্ধত্য নিয়ে কোন কথা বলছেন না। হায় দেশপ্রেম! গোপন ভিডিও না হয় পাঠিয়ে দেন।
এ সব কপটতা, দেশপ্রেমহীনতার ঔদ্ধত্য কি বিচারের আওতায় আসতে পারে না?”

পরিশেষে একটি কথা, বিএনপি নেত্রীর দেহটি বাংলাদেশে থাকলেও তার আত্মা যে পাকিস্তানে তা তার নির্লিপ্ততায়ই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাক্যাম্পে আদর আপ্যায়নে! থাকার কারণে জিয়াউর রহমান তাকে গ্রহণ করতে চায়নি। কিন্তু শেখ হাসিনার অনুরোধ বঙ্গবন্ধু খালেদা জিয়াকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জিয়াউর রহমানকে অনুরোধ করলে তিনি বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেননি। তাই বেগম জিয়াকে তিনি ঘরে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়া পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তার প্রতি কতটা অনুরক্ত ছিলেন তারে প্রমান পাওয়া যায়, জানজুয়ার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও সকল প্রটোকল ভেঙে শোক প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এই নিয়ে দেশে বেগম জিয়ার কি পরিমান সমালোচনা হয়েছিল, সে সময়ের পত্র-পত্রিকা খোঁজলেই জানা যাবে। তাই খালেদা জিয়ার পাকিস্তানপ্রেম নতুন নয়। সেই কারণেই পাকিস্তান যখন কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করে তখন তিনি টু-শব্দটি পর্যন্ত করতে পারেন না। তাহলে প্রভুরা যে নাখোশ হবে।

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ