পর্বতকন্যের ইতিকথা

প্রদীপ চক্রবর্তী ২৯ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ০৬:১৭:৪৭অপরাহ্ন উপন্যাস ৭ মন্তব্য

#পর্ব_৬৭
...
ধুলোমাখা জীবনের পদে পদে রয়েছে কত বাঁক।
কে জানতো এ বাঁক সহজের পথে উত্তরণ হবে।
এ শহরে এসে কত রাত,কত প্রহর কাটিয়েছি একাকীত্বের নির্বাকে।
যদিও এই একাকীত্বের উপসংহারের শেষবেলা পার্বতী  নামক ভালোবাসার মানুষটি কাছে এসেছিলো। আমরা একে অপরের বদ্ধপরিকরে বেসেছিলাম ভালো দুজন দুজনাকে। নিয়তিকে অগ্নিহোমে সাক্ষী রেখেছিলাম। আজও দুজন নিয়তির উপর নির্ভর করে আছি।
পরিস্থিতির সাথে নিয়তি হয়তো পাল্টে যাবে কি না তা জানা নেই। তবে যে হাত ধরেছি দুমুঠো করে সে হাত ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নয়।
পার্বতীর বিয়ের দিন ধার্য হতে চলাতে পার্বতীর চোখে রোজ অশ্রু ঝরছে,নেই ঘুম,নেই খাবার। এ যেন তার জীবন এলোমেলো হয়ে পড়ছে। আমিও যে আছি এক সময়ের ক্রান্তিলগ্নে। বলা যেতে পারে জীবন জোয়ার বায়ান্ন তাসে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি। ঠিকমতো করে লেখা,নেই পড়া নেই  আছে মনে মধ্যে এক বিষন্নতার চাপ। শীত শরীর জুড়ে জ্বরের আনাগোনা। থার্মোমিটারে ঘিরে আছে শরীরের তাপমাত্রা একশত ডিগ্রী। যে জলপট্টি দিয়ে এনে দিবে জ্বর কমানো ভালোবাসার আর্দ্রতা,সে যে আছে অশ্রুঝরা বেদনার বিষাদে। তবুও তার প্রতি আমি আশাবাদী। আমরা যে একে অপরের অভিলাষী।
কত প্রেমিক ভালোবেসে তার প্রিয় নামক ভালোবাসার কত নাম দিয়েছে। আমরার একে অপরে ভালোবেসে রোজ কত নামের আদ্যক্ষর লেখেছি।
কত কাব্যউপন্যাস অনায়াসে গ্রথিত হয়েছে আমাদের হৃদয়ে। যেমন করে কবির কবিতা নামে চীনেরপ্রাচীর বেয়ে তেমনি করে আমাদের ভালোবাসা নামে শিউলি ঝরা মোহনীয়তার ঘ্রাণে।
মানুষ প্রেমে পড়ে একে অপরকে ভালোবাসতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যায়। আর আমাদের ভালোবাসার শেষ নির্যাসটুকু ছিলো সৃষ্টিকর্তা নিয়ে।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের নিয়তিকে অগ্নিহোমের বন্ধনে আমাদের দুজনকে আবদ্ধ করবেন। তা আমাদের দুজনের মধ্যে দৃড় বিশ্বাস শব্দটি জায়গা করে নিয়েছে।
হেমন্তের হিমেল পরশে কি শরতে মেতে উঠা কাশফুলের উন্মাদনা মানায়? অন্যদের সেখানে মোহনীয়তা না জমলেও আমাদের বেশ মানাতো।
আর এ শরতের প্রথমে শিশিরে ভেজেছি আমরা দুজন ভোরের শারদপ্রাতে। আজও চোখে ভাসে কত স্মৃতি আর কত ভালোবাসা। দুজন দাঁড়িয়ে রোজ নির্ঘুমে কেটেছি কত রাত,দেখেছি আলোকিত পূর্ণিমার চাঁদ।
আজ কেন ভাসছে দুজনের অশ্রু? আর বুকভরা কান্না।

#পর্ব_৬৮
..
অশ্রুঝরা আর বুকভরা কান্না নিয়ে আছি সময়ের স্রোতে। যেখানে দুজনের ভালোবাসা নামক শব্দটি আজ চারি দেওয়ালে বন্ধি।
শরৎচন্দ্রের পালামৌ ভ্রমণের চুলের খোঁপায় রজনীগন্ধা বাঁধানো মেয়েটিকে চাই। সে তো ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন। যে আমার জীবনকে সঞ্জীবিত করে তুলেছিল।
চাই মানে চাই!
শহর জুড়ে আদ্রতার চাপ। ললাটে বিষণ্ণতার বাঁক।
স্মৃতির স্রোতে বহমান সময়। এ সময়ে কেউ খুঁজে অযাচিত ভালোবাসা। ভালোবাসা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে উচ্চারিত হলে,ভালোবাসার রাজধ্বনি সকল জায়গা জুড়ে উচ্চারিত হয় না। আমাদের ভালোবাসার রাজধ্বনি বহুবার উচ্চারিত হয়েছে।
তবুও অনায়াসে কত রাত নেমেছে আমাদের স্মৃতি আর বুকভরা কান্না নিয়ে। শুধু একমুঠো ভালোবাসা পাওয়ার আশায়।
ইতিমধ্যে,পার্বতীর বাগদানের জন্য তাহার পিতা সকলকিছুর বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। হয়তো সময় আর দশ-পনেরো দিন। পার্বতীর বাবা দু-একদিনের মধ্য বলরাম দাদার বাড়িতে এসে পার্বতীকে নিয়ে যাবেন।
অমাবস্যার রাত পেরিয়ে শিশিরভেজা রৌদ্রময় সকাল।
দুদিন ধরে ভার্সিটি বন্ধ। তাই লেখাপড়ায় মন বসছে না।
আমরা বহমান গঙ্গা আর যমুনাকে নিয়ে কত কাব্যউপন্যাস লিখেছি সে এক অফুরন্ত অনুভূতির সমসন্ধিতে। আমাদের চোখ জুড়ে আজ গঙ্গা যমুনার ন্যায় স্রোত ভাসছে।
পূর্বে কাটানো হেমন্ত আর শীত আমাদের তো কোন যাতনা দেয়নি। কত অহর্নিশ কাটিয়েছি শিউলি ফুলের মোহনীয়তা আর রজনীগন্ধার গন্ধ নিয়ে। কত কবিতা দুজন দুজনকে নিয়ে লিখেছি। আজ চোখেরজলে তা স্মৃতি।
অতীতের স্মৃতি কাউকে ভালো থাকতে দেয় না।
কিন্তু আমাদের স্মৃতি ছিলো প্রকৃতি আর ফুলকে নিয়ে।
শিশিরে ভেজে আমাদের এলোমেলো রাতগুলো বড্ড ক্লান্ত হয়ে আছে।
স্নিগ্ধ সকাল কার্নিশে বেয়ে রৌদ্রতাপে ভেজা চুলের গন্ধ আর শিউলি ফুলের মালায় আজ আর এমন আলোর উদ্ভাসে রবি প্রভাত আর আসেনা। যদি এসে থাকে তাহলে আজ দুজন একসাথে থেকে আলোর প্রভাতের চিরসাক্ষী হতে পারছি না।
প্রিয় পার্বতীর চুলের গন্ধে ষড়ঋতুর প্রকৃতিকে অনুভব করতাম। তাকে নিয়ে পাহাড়সম স্বপ্ন দেখাতে রোজ বিহ্বল হতাম। আজ  দুজনকে বিষণ্ণতা চাপ বড্ড গিলে খাচ্ছে।
শীতের শীতল শিশির ভোরের সন্ধিকোণে উঠোনের একপাশ দিয়ে ঝরে পড়ে আছে শিউলি । পাড়ার কোমলতি শিশুরা কুঁড়িয়ে তুলছে ফুলের সাঁঝিতে।
শুভ্র শিউলি ফুল আর নীললোহিত অপরাজিতার এ দুই
শতবার শীতলে শিহরিত হচ্ছে,সে যে শীতের সকালে প্রকৃতি কন্যার এক অপরূপ দান।

..

ক্রমশ....

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ