পর্বতকন্যের ইতিকথা

প্রদীপ চক্রবর্তী ২৫ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ০৫:৫৯:২৬অপরাহ্ন উপন্যাস ১২ মন্তব্য

#পর্ব_৬৫

সুবর্ণ গ্রামে আমাদের শীতের স্নিগ্ধ সকাল।
শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় একে একে প্রজাপতির চিহ্নচাপ। অনুরাগ জমে আছে এই শিশির ভেজা ঘাসের ডগায়।
শীত এলেই যে সন্ধ্যা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুবর্ণ গ্রামে।
খানিকক্ষণ পর শুভ মধ্যাহ্ন। পুরো গাঁ ঘুরে বেড়ালাম আমি আর বিনোদ। ভালো একটা সময় অতিবাহিত করলাম আমরা। এ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের সাথে অনেক সুস্বাদু খাবার রয়েছে। শীতের মধ্যাহ্নে ভোজন ছিলো ঘৃত,মধু ও সুবর্ণ গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার বিখ্যাত রসমালাই।
যদিও বাংলাদেশের রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত কুমিল্লার মাতৃভান্ডার। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থাকাকালীনে আমি অনেক রসমালাই খেয়েছি।
তবে কলকাতার সুবর্ণ গ্রামের ন্যায় এতো ভালো রসমালাই আমি আর কোথাও খাইনি।
দুপুরবেলার খাবার বেশ জমজমাট ছিলো। কলকাতায় এসে এতো রাজভোগ খাবার আমাদের কপালে জুটবে বলে আগে কখনো মনে হয়নি। যাই হোক যেমন রাজভোগ খাবার তেমনি ছিলো আমাদের প্রতি তাঁদের
ভূয়সী প্রশংসা। কথায় বলে যার নুন খাবেন তার গুণ গাইবেন,আমি আর বিনোদ তাই করতাম।
ঘৃত,মধু,দুধ,দই ইত্যাদি আমাদের বাড়িতে সবসময় লেগে থাকতো। তাই এসবের প্রতি আমার অতি আগ্রহ নেই। তবে এসবের প্রতি বিনোদের লোভ ছিলো মারাত্মক।
অবশেষে আমাদের খাওয়াদাওয়া শেষ। তাই আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। ফেরার পথে সুবর্ণ গ্রামের এক ভদ্রলোক আমাদের জন্য নিয়ে এসেছেন কমলালেবু।
এ ভদ্রলোক কমলালেবু দিয়ে বলছেন বাবু এই নেন আমার বাগানের কমলালেবু।
ইতিমধ্যে বিনোদ একটা খেয়ে ফেলছে,বিনোদকে বললাম কেমন সুস্বাদু?
দাদা অনেক সুস্বাদু ও ভারী মিষ্টি বটে।
কমলালেবুর জন্য বিখ্যাত ছিলো বাংলাদেশের শ্রীহট্ট( সিলেট )। যখন বরিশাল বিভাগ হয় তখন সিলেটবাসীদের একটা দাবী ছিলো আমড়া কেন বিভাগ হয় কমলা কেন বিভাগ হবে না? যাই হোক পরবর্তী কালে কমলা অর্থাৎ আমাদের সিলেট বিভাগ হয়।
বাড়িতে কমলা বাগানে ভরপুর ছিলো।
আমি আর বিনোদ সুবর্ণ গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
তাঁদের অতিথিপরায়ণের আপ্যায়নে আমরা মুগ্ধ।
এদিকে পার্বতী আজ তার বাড়িতে ফেরার কথা। জানিনা বাড়িতে গিয়ে কী তার সাথে দেখা হবে কি না।
মনেমনে সংশয় জাগছে।
গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছি আমরা বলরাম দাদার বাড়িতে।
বাড়িতে উঠার ডানদিকে রয়েছে বড় একটা পুকুর।
পুকুরঘাটে জয়িতা বৌদি ও পার্বতী বাসন মাজছে।
মনে একটা স্বস্তি ফিরে এসেছে যাই হোক পার্বতী বাড়ি ফিরে নি। পুকুরের জলের গায়ে জমে আছে শ্যাওলা,পার্বতী থালা দিয়ে ঢেউ দিয়ে শ্যাওলা সরিয়ে বাসন ধুয়ে পুকুরঘাটে তুলে রাখছে। এদিকে জয়িতা বৌদি হাত - পা ধুয়ে একসাথে দুজন মিলে বাড়ি ফিরছে। আমি আর বিনোদ এক পা দু পা করে বাড়ির দিকে উঠছি। আবির আমাদের দেখে চিৎকার করে বলছে পার্বতী পিসি,পার্বতী পিসি ঐ দেখো দীপ দাদা ও   বিনোদ দাদা দুজন এসেছেন। আবিরের হাতে কমলালেবু দিয়ে বললাম তুমি খেয়ো ও তোমার পিসিমণি পার্বতীকে দিও। আবির ও পার্বতী  কমলালেবু পেয়ে দুজনি বেশ বড্ড খুশি।
হাজারো দুঃখের মাঝে প্রিয় মানুষটির মুখে যখন হাসি দেখতে পাই তখনি নিজের মন আনন্দে ভরে উঠে।

#পর্ব_৬৬

প্রতিটি মানুষের জীবনে কালের ঘূর্ণিতে লেখা আছে কালজয়ী উপন্যাসের ন্যায় এক ইতিহাস।
যে ইতিহাসে রয়েছে বেদনার বিষাদ আর চোখেরজলে আবেগের হাসি কিংবা কান্না। নদী রোজ ধারণ করে কত শৈবাল,বুকে তার ঘোলাটে পলি তবুও সে সকলকিছু উপেক্ষা করে অনায়াসে চলে। সকাল,দুপুর,সন্ধ্যা নদীর হৃদয় জুড়ে মাঝির বহে চলে কত সপ্ততরী।
অহর্নিশ চলছে নদী আপন আপন স্মৃতির স্রোতে।
জীবনের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে কত বাঁক,রয়েছে কত কুসংস্কার। এ বাঁক আর কুসংস্কারে আমাদের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমরা আলো মাখতে জানি কিন্তু তার স্বাদ কেউ আস্বাদন করতে জানি না। আমি অন্ধকার মাখি রোজ রাতে। যেমন করে চাঁদের আলোয়,আলো মাখে আকাশের নক্ষত্রকণা।
দুজন মিলে কাব্যে লেখার ফাঁকে দেওয়াল জুড়ে স্বপ্ন সাজাই। রোজ রাতে কিংবা প্রাতে বাজল সুরের শঙ্খধ্বনি। যে ধ্বনিতে রয়েছে রাজকীয়তা,
যে ধ্বনিতে রয়েছে মর্মরধ্বনির দেবদূত বীরগাঁথা।
বুকভরা কান্না নিয়ে ঈশ্বরকে ডাকলে হয়তো ঈশ্বরকে  পাওয়া যাবে। কিন্তুু সন্দেহের বেড়াজালে ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়া যাবেনা তাই ভালোবাসার হাল ছাড়ি নি বলে আজও আমরা একে অপরকে ছেড়ে নির্বাসনে যাইনি।
মৃত্যুের ডাকে যমদূত আসবে কেড়ে নিয়ে যাবে আমাদের দুটি আত্মা। দেহ থাকবে পড়ে ভূমিষ্ঠ হওয়া ভূমিতে। আমাদের গ্রথিত বন্ধন যত দৃড় হবে জন্মজন্মান্তরের ভালোবাসা ততো চির অটুট থাকবে।
এ ভালোবাসার বন্ধন কেড়ে নিবে না কখনো কোন যমদূত,যে ভালোবাসা হবে আমাদের চির অমর।
আমাদের মধ্যে কখনো অভিমান ছিলো না।
যদিও খানিকছোঁয়া অভিমান পেত পার্বতীর। ভালোবাসায় অভিমান,রাগ থাকবে তবে অহংকার আর অভিজাততন্ত্র নয়। আমাদের দুজনের মধ্যে অহংকার আর অভিজাততন্ত্র নেই বলে আমরা হাসি-কান্না আর ভালোবাসা নিয়ে এতোটা পথ পেরিয়েছি। ভালোবাসার মুহূর্ত অবধি পর্যন্ত আমরা আমাদের সম্মুখে রেখেছি আমাদের অন্তর্যামী ঈশ্বরকে। ভালোবাসার গ্রন্থি বন্ধন রেখেছি হোমে আর বাকিটা পথ নিয়তির কাছে।
আমরা একে অপরকে ভালোবাসতে গিয়ে ছাড়িয়েছি বহু সীমানা। কখনো ছুটেছি দিকভ্রান্তে।
ছুটতে চেয়েছি ডানামেলে পাখির মতো করে। দুজনের কাব্যরসে লুকিয়ে আছে ভালোবাসার প্রতিটা শব্দ।
যে কাব্যরসে মোহিত হয়েছিলেন বনলতা আর মীরাবাঈ। বৃষ্টির দিনে কাকডাকা ভোর মেতেছিলো রবীন্দ্রসংগীতে কিংবা মীরার তানপুরাতে।
কবির কাব্য বলতে আমরা ছিলাম একে অপরের।
স্পন্দিত সুরে নির্যাস ভালোবাসার আবেগে এক একটা কবিতা পাড়ি দেয় বহুদূর হতে দূরান্তে।

.

ক্রমশ....

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ