পরিস্থিতি ভয়াবহ
----------------------------
কয়েকবছর আগের কথা, ছাত্রীকে উত্যক্ত করতো এক ছেলে। শিক্ষক যখন এই উত্যক্তের প্রতিবাদ করেন, ছেলেটি লোক ভাড়া করে শিক্ষককেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যত হয়। গুরুতর আহত হন শিক্ষক, তবে প্রাণে বেঁচে যান। সদ্য স্কুল পেরোনো সেই ছেলে পিতামাতার স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এবং বেশ সচ্ছল পরিবারের। ভীষণ অবাক হয়েছিলাম এই ঘটনায়। তাহলে কিনা আমাদের সন্তানদের ভেতরেই লুকিয়ে আছে নৃশংসতার বীজ। কিন্তু কেন? কেমন করে রোপিত হলো এই বীজ ছেলেটির ভেতর? এতটা প্রতিশোধমূলক মনোভাব কখন কখন তৈরি হলো ওর মধ্যে ? একটুও দ্বিধা নেই মনে, একজন মানুষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে ফেলছে! অথচ এ ধরণের কাজ করার, কিংবা নির্দেশ দেয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা তার একেবারেই নেই। এক ধাক্কায় একেবারে মানুষ খুন!!
এখন এসব ডালভাত। ধারালো খঞ্জর নিয়ে ধাওয়া করে পথে ঘাটে লোকালয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে মানুষ, খুনি নির্ভয়।
আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, ভিডিও করছি, ভিডিও ভাইরাল করছি। আততায়ী ধরাছোঁয়ার মধ্যেই, তবুও অধরা! এ প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমান এবং ক্রমে বোধহয় আমরা অবাক হতেও ভুলে যাচ্ছি। আমাদের সহ্য ক্ষমতাও বোধকরি চরমে পৌঁছেছে। তা না হলে এরকম রক্তারক্তি কাণ্ড চোখের সামনে ঘটতে দেখেও কেমন করে সুস্থ অবস্থায় করে চলেছি ভিডিও? যেন মজাদার কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি। কী আশ্চর্য! আমাদের চিন্তা চেতনা, বোধশক্তি কি লোপ পেয়ে যাচ্ছে?
বরগুনায় দিনের আলোয় প্রকাশ্যে যেভাবে কুপিয়ে মেরে ফেলা হলো রিফাতকে, সে ঘটনাটিও ভিডিও হয়েছে এবং সেই ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। ভিডিও করে সময়ক্ষেপণ না করে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করলে হয়তো খুনিকে প্রতিহত করা যেতো। দেয়া যেতো খবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। কিন্তু তা আমরা করিনি। আমরা ভয় পাই। খুনিদের ভয়ে আমরা সম্মিলিত হতেও ভয় পাই। এরা এতটাই বেপরোয়া। আইন এরা মুঠোয় পুরে ঘোরে। ঘোরে বলেই খুনের ঘটনাও তুচ্ছ করার প্রয়াস চলে। চলে আসে সামনে রিফাতের বউ মিন্নির চরিত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন। আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই নারী চরিত্রের বৈধ অবৈধর খোঁজ করতে। বলে ফেলি অনায়াসেই, নয়ন কেন খুন করলো দেখুন। দেখুন, এই চরিত্রহীন মেয়েটা অমন করার কারণেই তো নয়ন খুন করতে বাধ্য হলো! খুন কি আর সে সাধে করেছে? যেন খুনের কারণটা অতি যুক্তিযুক্ত। কারণ যাই হোক, একজন মানুষের প্রাণ সংহারের অধিকার তাকে কে দিলো?
পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা কেউই নিরাপদ নই। কখন, কার ওপর, কিভাবে আক্রমণ আসবে, কে জানে? আমাদের রাষ্ট্র অকার্যকর নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে? তবে কেন ঘটছে এমন নৃশংসতা? আমরা সচেতন নই। আমরা আমাদের পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হতে ভুলে যাচ্ছি। ভুলে যাচ্ছি শুধু নিজের নয়, অন্যের বিপদেও আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই তো অন্যরা আসবে আমার বিপদে এগিয়ে! শক্তিশালী জনগণ মানে শক্তিশালী রাষ্ট্র। জনগণ সচেতন হলেই আইন চলবে আইনের গতিতে। কোনো প্রকার অযাচিত হস্তক্ষেপ আসতে গেলেও ভাববে হাজারবার।
Thumbnails managed by ThumbPress
২৩টি মন্তব্য
শাহরিন
এসব খবর শুনে শুনে আমাদের মন এখন আর কেপে উঠে না, নিত্য দিনের খোরাক ভেবে ভূলে যাই। আবার নতুন খবর এর আসায় থাকি। পরিবারের সবাইকে ভালো সময় দিতে হবে ন্যায় অন্যায় শিখাতে হবে। তার হয়েছে আমার হবে না এটা ভাবার আর অবকাশ নেই।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন
ছাইরাছ হেলাল
সত্বর অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ে
বিচার সম্পন্ন করাই এখন এক মাত্র কাজ।
রেহানা বীথি
একদম
আরজু মুক্তা
প্রকাশ্যে বিচার হতে হবে।।তখন হয়তো কমবে এ অপরাধ।।তবে,মানবতা,নৈতিকতা সব পরাজিত আজ!!
রেহানা বীথি
মনটা ভারাক্রান্ত হয় ভীষণ
শিরিন হক
কিছু বলবার নেই। হতবাগ হই, বাগ রুদ্ধ হই বার বার কেনো সমাজের এতো অবনতি কেনো এ অবক্ষয়।
রেহানা বীথি
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের
জিসান শা ইকরাম
বিচারহীনতার একটি কালচার দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে,
আশ্রয়, প্রশ্রয় আমরাই দিচ্ছি। প্রভাবশালীরা সাধারন জনগনকে বৃদ্ধাংগুল প্রদশ্রন করে নিরাপদেই থাকছে। রিফাতের হত্যাকারীকে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। কিন্তু বাস্তবতা এই যে খুনী এখনো ধরা পরছে না।
রিফাতের স্ত্রীর নামে যেভাবে বলা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে খুনী খুন করে অপরাধ করেনি, অপরাধ করেছে রিফাতের স্ত্রী।
এমন পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া
নিতাই বাবু
বরগুনায় রিফাত নামের ছেলেটিকে দিনদুপুরে স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে রক্তাক্ত করার দৃশ্য যখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম, তখন আর ঠিক থাকতে পারিনি কিছুক্ষণ। কিছুই ভালো লাগছিল না। এঁরা কি মানুষ? নাকি জানোয়ার? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে লাগলাম। কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলাতে পারিনি। আসলে মানুষের ভাতরেও লুকিয়ে থাকে আরেক জানোয়ারের আত্মা। সেই রূপ শুধু লুকিয়ে থাকা।
রেহানা বীথি
একে একে যা ঘটছে, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছি
মাসুদ চয়ন
নৈতিকতার উদয় অবশ্যক,আইনের শাসনে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে।না হলে এমনি অগনিত প্রেক্ষাপটে সভ্যতা অন্ধকারে হারিয়ে যাবে”
রেহানা বীথি
এবং এখনই।
ইঞ্জা
বর্তমানে আইনের শাসন আছে বলে আমি দেখছিনা, যদি থাকতো তাহলে বিশ্বজিতের খুনিরা ছাড়া পেতোনা, বেশির ভাগ খুন, রাহাজানি আজকাল রাজনীতির ছত্রছায়ায় হচ্ছে, ধর্ষণ নিয়ে তো সরকারের কোন চিন্তা ভাবনা আছে বলে মনে হয়না, সুতরাং নিজেকেই নিজে বলি, “এ আমাদের মগের মুল্লুক”।
রেহানা বীথি
আসলেই মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। যার যা ইচ্ছে, সে তাই করছে
ইঞ্জা
দুঃখজনক
সাবিনা ইয়াসমিন
বর্তমানে আইন আছে কিন্তু সঠিক প্রয়োগ নেই। ক্ষমতাবল আর দূর্নীতিবোধের কারনে আইন দিনদিন কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। রিফাতের খুন এর যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, ওটা পুলিশ নিয়ন্ত্রিত রাস্তার সি সি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে। তবে পথচারীরা চাইলে বাধা দিতে পারতো। সবাই মিলে খুনিকে বাধা দিলে হয়তো রিফাত বেঁচে যেতো। তা না করে তারা দর্শকের মত পুরো ঘটনাটি কেবল দেখে গেছে।
শুভ কামনা 🌹🌹
রেহানা বীথি
শুভকামনা আপনার জন্যেেও
মনির হোসেন মমি
জনগণের উপর দোষ সবায় চাপায় যেমন চাপায় সরকার তেমনি আমরা।আমি বলবো না আমরা খারাপ যদি ভীতুই হতাম তাহলে এ দেশ স্বাধীনতার মুখ দেখতো না এ দেশে স্বৈরাচার হটতো না।ঠিক ভীতু সব কিছুতেই অনিহা একটু গা ছাড়া ভাব কারন হলো এ দেশের ঘূণে ধরা রাজনিতীর ক্ষমতার অপব্যাবহার আর বিরোধীদল বিহীন সরকার।স্বাধীনের পর হতে এ পর্যন্ত রাজনিতী দলগুলো এ যাবৎ জনগণের স্বার্থে জোরালো কোন আন্দোলনে নামেনি যেমন দূর্ণীতি,খাদ্যে ভেজাল,বাজার ব্যাবস্থা,গ্যাস বিদ্যুতের বিল বধিত করণ ইত্যাদি বিষয়ে কখনোই মাঠে নামেনি তারা মাঠে নেমেছে ক্ষমতার ভাগ ভাটোয়ার নিয়ে।আর বর্তমানে দেশে যে শাসন ব্যাবস্থা চলছে তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিচারের বাণী অন্ধকারেই কাদে, এমন অসংখ্য বিচার পড়ে আছে ফাইল বন্ধি হয়ে।আমরা দেখেছি সাগর রুনি দেখেছি বিশ্বজিৎ হত্যার লাইভ,কই বিচার কি হয়েছে? যদি বিচার না হয় জনগণের ভিতরেতো ভয় কাজ করবে,একটা রাষ্ট্রের মন্ত্রী এমপিদের ছেলে মেয়েদের জীবন গড়ে যদি বিদেশে লেখা পড়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে তখন এ সব মন্ত্রীদের এ সমাজ নষ্ট হয়ে গেলেও তাদের কিছুই আসে যায় না কারন তাদের পরিবার বিদেশে সেইফ তাহলে জনগণের দোষ কি? আগে আপনার ভোট আপনি দেয়ার অধিকার যখন ফিরে পাবেন তখনি এ দেশের সব কিছুতেই পরিবর্তন আসবে ভয়ও কেটে যাবে।
তৌহিদ
যে বা যারা খুনের সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। খুনের পিছনের কারন যাই হোক,,আগে খুনিদের বিচার চাই।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখাটি ভালো লাগলো আপু।
রেহানা বীথি
ধন্যবাদ ভাই
শামীম চৌধুরী
আসলে কি আপু যে কোন পরিস্থিতি আমরা যারা সমাজে বাস করি তারাই ভয়াবহ করে তুলি। নয়ন বন্ডের বেপরোয়ার পিছনে দূর্বল আইনের ফাঁক আছে বলে আমি মনে করি। যতবার সে অপরাধ করে আইনের আওতায় গিয়েছে ততবারই সে আইনের ফাঁকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আবারো সেই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। এখানে জনগনের জানমাল নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের দায়িত্ব শুধু অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা। পুলিশ তার কাজটি বারবারই করেছে। কিন্তু আইনের সহায়তায় সে আরো বড় মাপের সন্ত্রাসী হয়েছে। এখানে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রপ্রধানের কিছুই করার নেই। তার চেয়ে ক্রসফায়ারে নয়নের মৃত্যুটাই সংকেত বয়ে আনবে অপর সন্ত্রাসীদের জন্য। আর আমরা যারা অভিভাবক আছি তাদের প্রথম কাজটি হচ্ছে তার সন্তান কোন পরিবেশে ও কোন বন্ধুর সাথে চলাফেরা করছে সেটার খোঁজ রাখা।