পরিস্থিতি ভয়াবহ

রেহানা বীথি ২৮ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ১২:৩০:৫৫পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ২৩ মন্তব্য

পরিস্থিতি ভয়াবহ
----------------------------
কয়েকবছর আগের কথা, ছাত্রীকে উত্যক্ত করতো এক ছেলে। শিক্ষক যখন এই উত্যক্তের প্রতিবাদ করেন, ছেলেটি লোক ভাড়া করে শিক্ষককেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যত হয়। গুরুতর আহত হন শিক্ষক, তবে প্রাণে বেঁচে যান। সদ্য স্কুল পেরোনো সেই ছেলে পিতামাতার স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এবং বেশ সচ্ছল পরিবারের। ভীষণ অবাক হয়েছিলাম এই ঘটনায়। তাহলে কিনা আমাদের সন্তানদের ভেতরেই লুকিয়ে আছে নৃশংসতার বীজ। কিন্তু কেন? কেমন করে রোপিত হলো এই বীজ ছেলেটির ভেতর? এতটা প্রতিশোধমূলক মনোভাব কখন কখন তৈরি হলো ওর মধ্যে ? একটুও দ্বিধা নেই মনে, একজন মানুষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে ফেলছে! অথচ এ ধরণের কাজ করার, কিংবা নির্দেশ দেয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা তার একেবারেই নেই। এক ধাক্কায় একেবারে মানুষ খুন!!

এখন এসব ডালভাত। ধারালো খঞ্জর নিয়ে ধাওয়া করে পথে ঘাটে লোকালয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে মানুষ, খুনি নির্ভয়।
আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, ভিডিও করছি, ভিডিও ভাইরাল করছি। আততায়ী ধরাছোঁয়ার মধ্যেই, তবুও অধরা! এ প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমান এবং ক্রমে বোধহয় আমরা অবাক হতেও ভুলে যাচ্ছি। আমাদের সহ্য ক্ষমতাও বোধকরি চরমে পৌঁছেছে। তা না হলে এরকম রক্তারক্তি কাণ্ড চোখের সামনে ঘটতে দেখেও কেমন করে সুস্থ অবস্থায় করে চলেছি ভিডিও? যেন মজাদার কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি। কী আশ্চর্য! আমাদের চিন্তা চেতনা, বোধশক্তি কি লোপ পেয়ে যাচ্ছে?

বরগুনায় দিনের আলোয় প্রকাশ্যে যেভাবে কুপিয়ে মেরে ফেলা হলো রিফাতকে, সে ঘটনাটিও ভিডিও হয়েছে এবং সেই ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। ভিডিও করে সময়ক্ষেপণ না করে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করলে হয়তো খুনিকে প্রতিহত করা যেতো। দেয়া যেতো খবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। কিন্তু তা আমরা করিনি। আমরা ভয় পাই। খুনিদের ভয়ে আমরা সম্মিলিত হতেও ভয় পাই। এরা এতটাই বেপরোয়া। আইন এরা মুঠোয় পুরে ঘোরে। ঘোরে বলেই খুনের ঘটনাও তুচ্ছ করার প্রয়াস চলে। চলে আসে সামনে রিফাতের বউ মিন্নির চরিত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন। আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই নারী চরিত্রের বৈধ অবৈধর খোঁজ করতে। বলে ফেলি অনায়াসেই, নয়ন কেন খুন করলো দেখুন। দেখুন, এই চরিত্রহীন মেয়েটা অমন করার কারণেই তো নয়ন খুন করতে বাধ্য হলো! খুন কি আর সে সাধে করেছে? যেন খুনের কারণটা অতি যুক্তিযুক্ত। কারণ যাই হোক, একজন মানুষের প্রাণ সংহারের অধিকার তাকে কে দিলো?

পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা কেউই নিরাপদ নই। কখন, কার ওপর, কিভাবে আক্রমণ আসবে, কে জানে? আমাদের রাষ্ট্র অকার্যকর নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে? তবে কেন ঘটছে এমন নৃশংসতা? আমরা সচেতন নই। আমরা আমাদের পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হতে ভুলে যাচ্ছি। ভুলে যাচ্ছি শুধু নিজের নয়, অন্যের বিপদেও আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই তো অন্যরা আসবে আমার বিপদে এগিয়ে! শক্তিশালী জনগণ মানে শক্তিশালী রাষ্ট্র। জনগণ সচেতন হলেই আইন চলবে আইনের গতিতে। কোনো প্রকার অযাচিত হস্তক্ষেপ আসতে গেলেও ভাববে হাজারবার।

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ