পরিচয় (২য় কিস্তি)

বোকা মানুষ ৩১ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ১০:১৪:১৪অপরাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

 

কর্নেল খোখার চোখ তুলে চাইল ফাতমীর দিকে। তার চেহারা ভাবলেশহীন। ফাতমী সামরিক কায়দায় একটা স্যালুট করে স্পষ্ট উচ্চারণে শুধু বলল, “স্যার!” সে লক্ষ্য করল কর্নেল খোখারের সামনে এই দিনে দুপুরেই একটা হুইস্কির গ্লাস, যেটা সে মুখের কাছে নিচ্ছে কিন্তু চুমুক দিচ্ছেনা। সেদিকে তাকাতে দেখে খোখার পাঞ্জাবীতে বলল, “গত এক সপ্তাহ ধরে ড্রিঙ্ক করছিনা। কিন্তু অভ্যাসটা ভুলে না যাওয়ার জন্য গ্লাসভর্তি হুইস্কি সামনে রেখে চুমুক দেয়ার ভান করছি।” শুনে একটু অবাক হলেও ফাতমী তার চেহারায় তা ফুটে উঠতে দিল না। কথা বলতে বলতেই কর্নেল খোখার মাথাটা হালকা ঝাঁকিয়ে ফাতমীকে ইশারায় সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল। তারপর ভুরু নাচিয়ে ফাতমীকে জিজ্ঞেস করল, “সো, হোয়াট ডু ইউ থিঙ্ক?” ফাতমী বসতে বসতে বলল, “সিচ্যুয়েশন ইজ নট এ্যাট অল গুড স্যার।” ফাতমীর উত্তর শুনে কর্নেলের চেহারায় কোনো ভাবান্তর হলো না। নির্বিকার চেহারায় ফাতমীকে পাঞ্জাবীতে বলল “বিস্তারিত বলো আমাকে।” ফাতমীও পাঞ্জাবীতেই বর্ণনা করল তার গত কয়েকদিনের দেখা সমস্ত ঘটনা। বলল যে, মানুষজনের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করছে। বিপদের ব্যাপার হচ্ছে যে এই ক্ষোভ এখন আর অপ্রকাশ্য নেই। লোকজন প্রকাশ্যেই তাদের ক্ষোভের কথা আলোচনা করছে। এবং শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের উপর সফলভাবে তার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এরা এখন শেখ মুজিবের কথায় উঠছে আর বসছে।

সব শুনে খোখার চুপ করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে একমনে সিগ্রেটের ধোঁয়া ছাড়তে লাগল গল গল করে। এই অস্বস্তিকর নিরবতার মধ্যে ফাতমী অপেক্ষা করতে লাগল কর্নেলের পরবর্তী কথার জন্য। মিনিটখানেক এরকম ধোঁয়া ছাড়ার পর আধখাওয়া সিগ্রেটটা এ্যাশট্রেতে গুঁজে একটু নিচু হয়ে নিজের ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে ফাতমীর হাতে দিল। ফাতমী ফাইল কাভারের উপর চোখ বুলিয়ে দেখল তাতে শুধু ‘টপ সিক্রেট’ আর ‘আইজ অনলি’ কথাগুলো লেখা। একটু বিভ্রান্ত হয়ে কর্নেলের দিকে তাকাতেই সে বলল, “প্রথমেই বলি, যে ফাইলটা তোমাকে দিলাম, সেটা ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের নিচের কোনো অফিসারের দেখার ক্লিয়ারেন্স নেই। তোমাকে দিচ্ছি, কারন এই ফাইলে ওয়াসিম আকবর চৌধুরী নামে একটা ছেলে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, ছবি ইত্যাদি আছে, যে তোমার পরবর্তী মিশনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই তুমি এই ফাইলটা দেখতে পারছ। আর আমি যেহেতু তোমার হ্যান্ডলার, তাই আমি বিশেষ অনুমতি পেয়েছি এটা দেখার। এখান থেকে বেরিয়ে তুমি যাবে আমাদের পুরানা পল্টনের সেইফ হাউজে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তুমি সেখানেই থাকবে। তুমি আমার সিভিল গাড়িটা নিজে চালিয়ে সেখানে যাবে। তোমাকে যাতে কেউ অনুসরণ না করে সেটা নিশ্চিত করবে। মনে রাখবে এই ফাইল যাতে অন্য কারো হাতে না পড়ে! সেরকম সম্ভাবনা দেখলে দেরি না করে ফাইলটা পুড়িয়ে ফেলবে। মনে রেখো, ফাইল অন্য কারো হাতে পড়লে তোমাকে কোর্ট মার্শালে দাঁড়াতে হবে। আর সেইফ হাউজে থাকাকালীন তোমার একমাত্র কাজ হবে ফাইলের সব তথ্য বার বার পড়ে ওয়াসিম সম্পর্কে একেবারে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা।”

কথাগুলো বলা শেষ করে ফাতমীকে রুমের একপাশে রাখা টাইপরাইটার দেখিয়ে গত ক’দিনের রিপোর্টটা টাইপ করে ফেলতে বলল খোখার। আরো বলল যে, সে একটু বেরুবে; ফাতমী রিপোর্টটা টাইপ করা শেষ করে তার টেবিলে রেখে সোজা যাতে চলে যায় পুরানা পল্টনের সেইফ হাউজে। খোখার বেরিয়ে যেতেই ফাতমী চিন্তিত মুখে টাইপ করতে বসল। ঝড়ের বেগে টাইপ করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই রিপোর্টটা শেষ করল। তারপর কর্নেল খোখারের দেয়া ফাইলটা একটা এটাচি কেসে ভরে বেরিয়ে এল বাইরে। ড্রাইভওয়েতে কর্নেল খোখারের পুরানো ফিয়াটটা রাখা। সেটা নিয়ে সে রওয়ানা করল পুরানা পল্টনের দিকে।

(চলবে...)

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ