
তাঁরা তিন ভাইয়ের সংসার। বোনকে বিয়ে দিয়ে নিজেদের সংসারে মনোনিবেশ করেছেন। তাঁদের আবার আরও দুজন বোন ছিলেন। একজন সবার বড়। তিনি এক কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার পর মারা যান। আরেকজন বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই এ পৃথিবী ছেড়ে মুক্ত হয়ে যায়।
আচ্ছা…তাঁরা তাঁরা করছি কেনো? তাঁদের একটা নাম রাখলে ভালো হয় না???
তাদের মধ্যে বড় ভাই এর নাম কুদ্দুস। কুদ্দুস সাহেব JMC (জুট মার্কেটিং অ্যান্ড কর্পোরেশন)-এ।
মেজ ভাই এর নাম বাশার। বাশার সাহেব BJMC (বাংলাদেশ জুট মার্কেটিং কর্পোরেশন) এর চিফ একাউন্টেন্ট হিসেবে আছেন।
আর ছোট ভাই বখতিয়ার। বখতিয়ার সাহেব পূবালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। তাঁরা সবাই মোটামুটি যার যার অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকেই ভিষণ মেধাবী। আর আন্তরিকতায় তাঁদের জুড়ি নেই। তিন ভাইয়ের সংসার খুব সুন্দরভাবেই চলছে।
কুদ্দুস সাহেবের তিন পুত্র আর দুই কন্যা। কুদ্দুস সাহেবের বড় ছেলে নূরুল আজম। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে কয়েক মাস হলো। তার পরেরজন মেহেরুন্নিসা। সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠেছে। তারপরে আছে আলী আকবর। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বাকি দুজনের একজন লুৎফুন্নিসা আর সবার ছোট জহিরুদ্দিন মোঃ বাবর। বয়স বেশি ছোট হবার কারণে শেষের দুই বাচ্চাকে এখনো স্কুলেই ভর্তি করানো হয়নি।
কুদ্দুস সাহেবের যাতায়াতের ব্যবস্থা হিসেবে ছিলো বাস। বড় বড় বাসগুলোতে চড়ে তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে আসতেন। আর সবসময় এর মতো তাঁর বড় ছেলে আজমকে কে কলেজের উদ্যেশ্যে নামিয়ে দিয়ে যতদূর দেখা যায় ততদূরই দেখে থাকেন। আজ বাসে প্রচুর ভিড় জমে আছে। কুদ্দুস সাহেব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আজ অফিস যাচ্ছেন। যথারীতি আজম তার কলেজের রাস্তায় নেমে গেলে বরাবরের মতো কুদ্দুস সাহেব গলা বাড়িয়ে ছেলেকে দেখেই যাচ্ছেন। ছেলে ঠিকঠাক মতো রাস্তা পাড়া হয়েছে কিনা।
কুদ্দুস সাহেবের বাতের ব্যথা ছিলো৷ বাসের হ্যান্ডেল থেকে হঠাৎই হাত ফসকে গিয়ে কুদ্দুস সাহেব পরে যান বাসের চাকার নিচে। গাড়ির সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করলে বাস কুদ্দুস সাহেবকে দুমরে মুচড়ে একবার সামনের দিকে আর একবার পেছনের দিকে যায়। এরই মধ্যে কুদ্দুস সাহেব তার প্রাণ হারায়। এমন মর্মান্তিক দৃশ্য আজমের চোখের সামনেই ঘটে যায় মূহুর্তে। বাবার এমন করুণ অবস্থা দেখে নিজের জায়গা থেকে যেন এক চুলও নড়তে পারছে না আজম। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকে।
২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৮ সাল। এ সময়ে মোবাইল ফোন কী জিনিস সেটা সাধারণ মানুষের ধারনার বাইরে। এক মানুষ বহু কষ্টে একটা টেলিফোন বুথ খুঁজে বের করে আজমদের বাড়ি থেকে মাইলখানেক দূরের এক গ্রামে টেলিফোন করে অ্যাক্সিডেন্টের কথা জানায়। এ খবর গ্রামে এর-ওর হয়ে পুরো গ্রাম, গ্রাম হয়ে বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে।
আবার মানুষ সন্ধিহান হয়ে নিজের আত্মীয়ের খোঁজ খবর করে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আজমদের বাড়ি বখতপুরে সে খবর পৌঁছে যায়। যখন লাশ নিয়ে আসা হয়, দেখা যায় লাশের কিছুই ঠিক নেই। নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাচ্ছে। লাশের শরীরের কি এক বেহাল অবস্থা!পুরো গ্রামের মানুষ নিরব নিস্তব্ধ! কারো মুখ দিয়ে কোনো কথাই বেরুচ্ছেনা! এমন দৃশ্যের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না।
প্রচন্ড মেধাবী আজম আজ লেটার মার্ক পেয়ে প্রথম হয়েছে। পুরো গ্রাম আজ খুব খুশি। এত অল্প বয়সে টিউশান করে নিজের পরিবার আর নিজের পরাশোনার খরচ যুগিয়ে এমন একটা আনন্দঘন মূহুর্তে ঠিক কী করবে যেন ভেবেই পাচ্ছেনা! অশ্রুসিক্ত আঁখিতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে তার মা। ছেলের এমন সফলতার দিনে নিজের চোখের পানি যেন ধরে রাখতেই পারছেন না হাসনারা বেগম! পরীক্ষায় লেটার মার্ক নিয়ে পাশ করবার পরপরই একটা শিপিং কোম্পানিতে চাকুরী হয়ে যায় আজমের।
এখন সন ২০২২। চাকুরির বয়স আজ ২৮ বছর। সেপ্টেম্বর মাসের ছয় তারিখ এলেই আজম সাহেবের রিটায়ার্ড হবার দিন। চাকুরী জীবনের শেষ সময়ের কথা মনে এলেই থেকে থেকে বিষন্ন হয়ে উঠে তাঁর চেহেরাটা। মন মানতে চায়না। মন চায় শুধু…আর কিছুদিন হলেও যদি চাকুরীটা থাকতো…তাহলে বেশ হতো! মনের সবটুকু সরলতা নিয়ে আজম সাহেব তাঁর জীবন পাড় করে দিলেন। বর্তমানে আজম সাহেব এক পুত্রের বাবা। ছেলের নাম রেখেছেন সৌরভ। ছেলে সবেমাত্র মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। সামনে তার ফলাফল বের হবে৷ এরইমধ্যে একটা পেপার কোম্পানির (H.R)এইচ আর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে সৌরভ। হয়তো আজম সাহেবের পরের দায়িত্ব তারই।
জীবন কখন কীভাবে যেন দায়িত্বের পরম্পরা করে যায়!দেখতে দেখতে কখন যে জীবনের শুরুটা হয় আর কখন যে জীবনের এতো উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত হয় মানুষ তা টেরই পায় না। তাইতো জীবনের এতো মোহ!
দায়িত্ব ঠিকই তার পরের জনের কাঁধ নির্ধারণ করে যায় অনেক আগেই!
২১টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
প্রথম হাজিরা দিলাম চাচ্চু।।
মন্তব্যে আসছি৴৴
সায়মা নুর নাতাশা
থ্যাংক ইউ চাচ্চু 🥰🥰🥰🥰
you’re the best.
তুমি বলাতেই লিখতে পেরেছি
thank you so much chacchu ❤️❤️❤️
মনির হোসেন মমি
জীবনকে এভাবে ভাবা যায় ভাবতেই পারিনি। পরস্পরা জীবনের ছন্দময় গতি।এটা চিরন্তন সত্য।
খুবই চমৎকার হয়েছে।
সায়মা নুর নাতাশা
অনেক অনেক ধন্যবাদ চাচ্চু
দোয়া করো যেন আরও ভালো করতে পারি ❤️❤️
হালিমা আক্তার
শেষের লেখা টা ভালো লাগলো। আসলেই জীবন থেমে থাকে না। একজনের পর আরেক জন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। শুভ কামনা রইলো।
সায়মা নুর নাতাশা
অনেক অনেক ধন্যবাদ ❤️❤️
সাবিনা ইয়াসমিন
জীবন এবং সংসার চক্রের ধারাবাহিকতার দায় থেকেই দায়িত্ব নির্ধারিত হয়ে যায়। সম্পর্কের পরস্পরা এভাবেই চিরকাল চলবে।
লেখাটা আরেকটু ভালো হতে পারতো। যেমন, শুরুর দিকে গল্পটা ছিল তিন ভাইকে নিয়ে। পরবর্তীতে কেবল বড় ভাই কুদ্দুস সাহেব এবং তার সন্তান পর্যন্ত এসে থেমেছে। এখানের মুল গল্পটা যদি কুদ্দুস সাহেব এবং তার ছেলে আজম এবং আজম সাহেবের সন্তান, এই পরস্পরায় নির্মিত হয়ে থাকে তাহলে তার বাকি দুই ভাইদের নিয়ে বিস্তারিত লেখার দরকার ছিল না।
শুভ কামনা 🌹🌹
সায়মা নুর নাতাশা
অনেক অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা আপুনি ❤️❤️
তোমাকে খুব জ্বালিয়েছি।
আসকে কিভাবে লিখবো সেটা গোছাতে পারছিলাম না।
আবার লিখার সময় ভেবেছিলাম পরের দুই ভাই নুরুল বাসাহার আর নুরুল বখতেয়ারকে নিয়ে লিখবো।
হুম….তোমরা আছো তো….তোমাদের সবার লিখা পড়লে আস্তে আস্তে তোমাদের মতো লিখতে পারবো।
তুমি প্রচুর হেল্প করেছো আমাকে ❤️❤️
অনেক কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা রইলো আপু ❤️
সঞ্জয় মালাকার
অসাধারণ গল্প, পড়ে মুগ্ধ হলাম,
ভালো থাকবেন শুভ কামনা!
সায়মা নুর নাতাশা
অনেক ধন্যবাদ ❤️❤️❤️
আপনাদের কাছ থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পাই ❤️
রোকসানা খন্দকার রুকু
এভাবেই চলতে হয়। মানুষ থেমে গেলে তো পৃথিবীই থেমে যাবে। শুভকামনা অশেষ 🌹
সায়মা নুর নাতাশা
জ্বি আপু।
অনেক ধন্যবাদ আপু ❤️❤️
রিতু জাহান
এরই নাম জীবন চলা,,,
ড়/র এই বর্ণগুলো ঠিক করে নিবেন প্লিজ।
সায়মা নুর নাতাশা
আপু…কোন জায়গায় বানান ভুল হয়েছে….একটু দেখিয়ে দিবেন???
সায়মা নুর নাতাশা
তাদের মধ্যে বড় ভাই এর নাম কুদ্দুস। কুদ্দুস সাহেব JMC (জুট মার্কেটিং অ্যান্ড কর্পোরেশন)-এর Stenographer.
এর Stenographer এটা কোনোভাবেই লিখে দিতে পারছিনা ☹️☹️☹️
বন্যা লিপি
স্টেনোগ্রাফার? মানে কি?
বন্যা লিপি
আমি আউলাই গেছি এ গল্প পড়তে এসে। মাফ কর বইন🙏🙏 তোর চর্চা চালিয়ে যা।
বাই দ্য রাস্তা- তুই তোকারি করলাম বলে মাইন্ড খাইচ না। আদুরে ডাক তুই তোকারি। আমারে আবার বপত্তমিজ ভাবিস না। রাগ করলে আর কমুনা ‘তুই তোকারি’
লাভ ইউ🌹🌹
সায়মা নুর নাতাশা
আরে ধুর আপু তুই না বললে কে বলবে 😑😑
আমাকে সবসময় তুই কিরে ডাকবে। আমি খুশি হবো 😚😚❤️
আচ্ছা আউলাইয়া গেছো কেনো??? কি হয়েছে?
ভালো লাগে নাই??
বন্যা লিপি
আউলাইয়া গেছি সম্পর্কের পেচগি দেইখা। আরেকটা টিপস দেব তোকে, ইনবক্সে।
বন্যা লিপি
@সায়মা # বেত্তমিজ,বানানটা টাইপিং মিসটেক হইছে। বপত্তমিজ টাইপ হইছে😃😃😃😃
সায়মা নুর নাতাশা
আমি ঠিক করে পড়ে নিসি তো 😇😇